নজরুল সাহেবের উপলব্ধি


কোন এক বিখ্যাত মনিষী বলেছিলেন, “এসেছিস যখন দাগ রেখে যা” কিশোর কবি নজরুল কিভাবে যেনো কথাটি শুনে ফেলেন, নজরুলও সিরিয়াস, হ্যা! আমাকে দাগ রাখতেই হবে। এই দুনিয়াতে যখন এসেছি কিছু একটা না করে ছাড়ছিনা।
কিন্তু কিভাবে দাগ রাখবে ভেবে পাচ্ছিলোনা নজরুল, তখন সবে মাত্র গ্রামের মক্তবে পাঠদান করতো কিশোর কাজী নজরুল ইসলাম। একদিকে পেটের দায়, অন্যদিকে দাগ রাখার চিন্তা। নজরুলের মাথায় তখন কেবল কবিতা আর কবিতা, কবিতার ছন্দগুলো মাথার ভেতরে বড্ড বেশি যন্ত্রনা করে, যতক্ষণ পর্যন্ত ছন্দগুলো কবিতার খাতায় উগড়ে না দিচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত এই যন্ত্রণা হতে রেহাই নেই।
নজরুল ভেবে পায়না, এভাবে গদ্য-পদ্য নিয়ে পরে থাকলে জীবনে দাগ রাখবে কি করে, তারচাইতে গদ্যে পদ্যে তালাক!

প্রথমেই নজরুল চিন্তা করে, অনেক টাকার মালিক হতে হবে, ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে, পেটে ক্ষুধা নিয়ে অন্তত দুনিয়াতে দাগ রাখা যাবেনা। মক্তবের স্বল্প বেতনের চাকরী ছেড়ে দিয়ে নজরুল যোগ দেয় রুটির দোকানে। কঠোর পরিশ্রম করে নজরুল, চোখে তার স্বপ্ন, একদিন সেও এমন একটি রুটির দোকানের মালিক হবে, অনেক অনেক টাকা হবে, তারপরেইনা দুনিয়াতে দাগ রাখা যাবে।
অল্প দিনের চাকরীতে বেশ কিছু টাকাও জমিয়ে ফেলে নজরুল, এরই মধ্যে পরিচয় হয় এক সরকারী অফিসারের সাথে, এতো সুন্দর একটা ছেলে রুটির দোকানে চাকরী করবে তা তিনি মেনে নিতে পারলেননা। নজরুলকে ভর্তি করে দিলেন বিদ্যালয়ে।
নজরুলের চোখে নতুন স্বপ্ন, অনেক অনেক পড়ালেখা করবে, জর্জ-ব্যারিস্টার হবে। জর্জ-ব্যারিস্টার হয়ে দুনিয়াজুড়ে দাগ রেখে যাবে, গভীর রাতে নজরুল আনমনেই চিৎকার করে ওঠে “তোমরা সবাই শোনো, এই দুনিয়াতে একজন ব্যাক্তি এসেছিলো, তার নাম কাজী নজরুল ইসলাম, সে অনেক বড় ব্যারিস্টার হয়েছিলো”।
নজরুলের মাথায় এখনো কবিতার লাইনগুলো যন্ত্রনা করে, অনেক বেশি যন্ত্রনা। নজরুল আর কবিতাকে প্রশ্রয় দেয়না।তাকে বড় হতে হবে, অনেক বড়, এইসব কবিতা লিখে টাইম নষ্ট করার মতো টাইম নজরুলের হাতে নেই।

কঠোর পরিশ্রম করে নজরুল, এসএসসি’তে গোল্ডেন এ প্লাস, এইচএসসি’তেও গোল্ডেন এ প্লাস, স্কলারশিপ নিয়ে বিবিএ-এমবিএও শেষ করে ফেলে নজরুল। জর্জ-ব্যারিস্টার হওয়ার চাইতে এমবিএ করাটাকেই নজরুল প্রাধাণ্য দিয়েছে, কারণ এখন বিজনেসের জয়-জয়কার, হাতে একটা এমবিএ থাকলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা সহজ় হবে। দুনিয়াতে দাগ রাখার প্রচেস্টাও সফল হবে।

নজরুল এখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর বড় কর্তা, ব্যাস্ত অফিসের বিশাল ডেস্কের ওপাশে রিভলভিং চেয়ারে দোল খায়, আর মনে মনে স্বপ্ন দেখে, একদিন দারুণ কিছু করে ফেলতে হবে, মরার আগে এই দুনিয়াতে দাগ রেখে যেতে হবে।
নজরুল একসময় বিয়ে করে। হ্যা, নিজের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করে, মেয়ের বাবা-মা অমত করেননি, এতো বিশাল চাকরী! মেয়ের বাবা দুই পায়ে খাড়া।
বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে ব্যাক্তিগত গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে নজরুল এখনো চিন্তা করে, একদিন দারুণ কিছু করে ফেলবে, এই দুনিয়াতে এসেছি যখন দাগ রেখে যেতে হবে।

শোনা যায় মৃত্যুর পূর্বে নজরুল সাহেব একটা চিরকুট রেখে গিয়েছিলেন, সেখানে লেখা ছিলো, “হায় আফসোস! খাইলাম-দাইলাম মরে গেলাম, দুনিয়াতে দাগ রেখে যেতে পারলামনা। অথচ আমিতো চাইলে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হতে পারতাম! দুনিয়ার মানুষ আমাকে কবি নজরুল ইসলাম নামেই চিনতো!”

চেয়েছিলাম অমর হতে, রেখে যেতে দাগ,
খেয়ে-দেয়ে বিদায় নিলাম, ব্যার্থ হলো ত্যাগ।
এইযে বাড়ি, এইযে গাড়ি, কোটি টাকার চেক,
আমার নামে রইলো নাতো, সবি মিছে ভেক!
যোগ্য ছিলাম আমি যেটার, সেটা দিয়ে বাদ,
মায়ার পিছে ছুটে গেলাম, মিছে মায়ার স্বাদ!

গল্পঃ নজরুল সাহেবের উপলব্ধি
© শামীম রেজা
১০/০২/২০১৪

Post Comment

ভালোবাসা দিবস


গাছের চিপায়, মালির কৃপায়, যুগল হলো দেখা
এমন সুযোগ পায়নি যুগল, হয়নি কভু একা।
পাগল যুগল পাগলামীতে, ভালোবাসা বেশ,
একটা সময় নিঃস্ব যুগল, নোংরামীতেই শেষ!
মালি পেলো ফিফটি টাকা, পুলিশ পেলো একই,
কলেজ ফাঁকি নিয়মিত, যাচ্ছে যুগল দেখি।
মালির মেয়েও পার্কে ঘুরে, তবে সেটা ভিন্ন,
একশো টাকা দিচ্ছে প্রেমিক, মালি সেথায় অন্য।
পুলিশেরও একটা মেয়ে, সাথে আছে ফ্রেন্ড,
নিরিবিলি দেখা করা মডার্ণ প্রেমের ট্রেন্ড।
চৌদ্দ তারিখ স্পেশালি ভালোবাসা চলবে,
প্রাইভেট আর কোচিং নামে, মিথ্যে প্রলাপ বলবে।
ওইযে যুগল যাচ্ছে দেখা, গাছের আড়াল হলো,
ভাইটি কাহার, বোনটি কাহার, চক্ষু এবার খোলো।
তোমার বোনের মূল্য কতো, একশো টাকার নোট?
বোনের কথায় পাচ্ছো নাকি, দিলে তোমার চোট?
তোমার পাশে যেই মেয়েটি সেওতো কারো বোন,
নিরিবিলি বসার আগে, কাপলোনাকি মন?!

কবিতাঃ ভালোবাসা দিবস
© শামীম রেজা
১০/০২/২০১৪

Post Comment

নারীর স্বাধীনতা


তুমি হিজাব করো? শিক্ষকের চোখ বড় বড়,
মাথা নিচু করে ছাত্রী, দ্বিধায় জড় সড়।
এগুলোতো আরবের পোশাক, সেথায় বড্ড গরম,
বাঙালী মেয়ে, আরবের পোশাক, নাইকি একটু শরম?
হিজাব তোমায় কি দিয়েছে, পরাধীনতা ছাড়া!
চোখ খুলে দেখ, স্বাধীন সতেজ, হিজাব বিহীন যারা।
যেনো বাগানের পরী, কলকাকলী মুখরিত চৌদিক,
হিজাব পরে ঘরে বসে থাকো, ধিক! শত ধিক!
ওই মেয়েটিকে দেখো, বন্ধু, আড্ডা, গান,
ইচ্ছে করেনা নাচতে গাইতে, নেইকি তবো প্রাণ?
ইচ্ছে হলে প্রেম করবে, ইচ্ছে হলেই গান,
এই বয়সে না করিলে, করবে কবে ফান!
ছাত্রী চুপ, একেবারে নিশ্চুপ, অবাক তাকিয়ে রয়,
শিক্ষক তার, বকে নির্বিকার, একি কথা কয়!
বলুনতো স্যার, পশুতে মানুষে পার্থক্যটা কিসে?
শিক্ষকের কথা শেষে, ছাত্রী মুখ খোলে অবশেষে।
মন যাহা চায় তাহাই যদি, করি পশুর মতো,
পশুতে মানুষে দূরত্বটা রইলো তবে কত?
আরবের পোশাক বোরখা বটে, বাঙালির পোশাক কি?
আপনার গায়ে বাঙালী পোশাক, কবে দেখেছি?
ইসলামেই মূল এলার্জি, ইসলামেই জ্বর,
জাতির মাথায় নাস্তিক-লীগ, করে বসেছে ভর!
বন্ধু, আড্ডা, গানে, মেতে আছে যে নারী,
বলুনতো স্যার, বাবা-মা কোথায়, কোথায় তাদের বাড়ি?
হিজাবের মাঝে পরাধীনতা, কোথায় আছে লেখা?
মিনি স্কার্ট আর শর্ট কাপড়ে, নারীর স্বাধীনতা?
হিজাবের মাঝেই উচ্ছল মোরা, হিজাবের মাঝেই চঞ্চল,
অশালীন পোশাক নারীর পেছনে, লুল পুরুষের ঢল।
হিজাব নিয়ে কটু কথা বলবে যে জন কিছু,
আমার চোখে সেজন হলো, মস্তবড় লুচু!

কবিতাঃ নারীর স্বাধীনতা
© শামীম রেজা
০৮/০২/২০১৪

Post Comment

মুজিববাদের গান


এই মেয়েটা বোরখা পড়ে, ঐ মেয়েটাও তা,
এইগুলা সব জন্মগত মুসলমানের ছা!
হিজাব পড়ে ক্লাস করে, ধর্মে দিয়ে মন,
ক্যাম্পাসে নয়, আরব যাবি, সেথায় খেজুর বন।
নেকাব করিস? সাহস বটে! বুদ্ধি মাথায় জিরো,
কলেজ গেটে ওয়েট করে, ছাত্রলীগের হীরো।
সিঁদুর দিবি ওই কপালে, খোপায় দিবি জুই,
লুল পুরুষের ইচ্ছে হবে, একটু তোকে ছুই!
আরব দেশে বড্ড গরম, বোরখা তাদের ড্রেস,
আমার দেশে সবুজ ঘেরা, বাতাস অনেক ফ্রেশ।
পেটে পিঠে উদোম রবে, শাড়ী অনেক নাইস,
যুবক গুলো তোদের দেখে, হয়ে যাবে সাইজ!
আবার যদি বোরকা দেখি, সোজা কথা কই,
কেড়ে নিবো, ফেলে দিবো, খাতা, কলম, বই।
শেখ হাসিনার বাংলাদেশে মুজিব বাদের গান,
কোরান হাদিস বাতিল করে, সঙ-বিধানের শান!

কবিতাঃ মুজিববাদের গান
(c) শামীম রেজা
০৭/০২/২০১৪

Post Comment

পান্ডুলিপির মোরক উন্মোচন


জমজমাট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে "কারাগারের দিনগুলো" বইয়ের পান্ডুলিপির মোড়ক উন্মোচন উদযাপিত হলো।
কারাগারের দিনগুলো বইয়ের পান্ডুলিপি'র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাতকানিয়া লোহাগাড়া হতে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র সংসদীয় দলের হুইপ, আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চ.সি.ক কাউন্সিলর মাহফুজুল আলম মাহফুজ।

অনুষ্ঠানে প্রদত্ত আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের ভিডিও আসছে শীঘ্রই...

বইঃ কারাগারের দিনগুলো
লেখকঃ শামীম রেজা
প্রকাশকঃ ফেরদৌস বারী
 — with Ferduse Bari and Shahjahan Chowdhury.

Post Comment

শিক্ষাব্যাবস্থা


হুংকার ছাড়িলো বনের রাজা, সব গুলোকে দিবো সাজা,
কোথায় গেলি মন্ত্রী উজির, মূর্খ কেনো রইলো প্রজা?
ভয়ে কাপে উজির-নাজির, ভয়ে কাপে বন,
আমরা আপনার গোলাম হুজুর, অতি আপনজন।
হুকুম করুন শিক্ষা নিবে, বনের যতো পশু,
শাস্তি পাবে মূর্খ যারা, বাদ যাবেনা কিছু।
শিয়াল পন্ডিত, চশমা চোখে, ছড়ি ঘুড়ায় হাতে,
বিদ্যালয়ের সম্মুখেতে সব পশুকে ডাকে।
হাজির হলো, হাতি ঘোড়া, হাজির হলো পাখি,
বনের রাজা দেখেন সবি, জুড়িয়ে গেলো আঁখি।
বানর এলো, গাঁধাও এলো, আরো এলো মাছ,
শিয়াল স্যারের কান্ড দেখে, হাসিলো বট গাছ।
এইযে গাধা, এইযে বানর, এইযে জলের মাছ,
বনের মাঝে এত্তো বড়, বিশাল সেগুন গাছ,
বাওতো দেখি সবার আগে ধরবে যে মগ ডাল,
বনের রাজা অনার দিবে, একশো কেজি চাল।
বানর হলো সেরা ছাত্র, মৎস মিয়া ফেল
শিক্ষা ছেড়ে গাধা এখন ঘানি ভাঙে তেল।
হুক্কা হুয়ায় অনার নিলো, সব শিয়ালের ভাই।
শিল্পী বাবুই, গায়ক কোকিল, বিদ্যালয়ে নাই।

কবিতাঃ শিক্ষা ব্যবস্থা
শামীম রেজা
০৪/০২/২০১৪

Post Comment

নারী মুক্তি


facebook link
এখন সাড়ে নটা বাজে, আর আধাঘন্টা পরেই শুরু হবে অনুষ্ঠানের মূল কার্যক্রম। অডিটরিয়ামের সিলিং এর এখানে সেখানে ঝুলছে নানান রঙের বেলুন এবং রঙিণ ফিতে।বাহারী ফুলের স্তুপ দিয়ে সাজানো হয়েছে মূল মঞ্চের টেবিল।
বিশাল হলরুম, সারাদেশ হতে আগত নারী প্রতিনিধিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হলরুমের প্রতিটি অংশ। দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের প্রতিনিধীরা আজ এই নারী উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছে।ছকিনা, জরিনা, ফুলবানু, কদবানু বাদ যায়নাই কেউই।

ফুলবানু অবাক হয়, এতো ফুল! অথচ ঢাকায় আসার পরে একটা ধাণক্ষেত পর্যন্ত কোথাও চোখে পড়েনাই। ফিস ফিস করে জরিনার কানে কানে জিজ্ঞাসা করে, ‘বুবু এতো ফুল আইলো কই থিকা?’
বোকা নাকি! গেট দিয়ে ঢোকার সময় দেহছ নাই, মাডির আড়ি ভর্তি ফুল গাছ? ওইহানেই অইছে, জরিনার কন্ঠে বিরক্তির সুর।

ফুলবানু আবার কিছু বলতে যায়, স্পিকারের শব্দে ঢাকা পড়ে যায় ফুলবানুর কন্ঠ। ঘোশকের কন্ঠে গম গম করে ওঠে বিশাল অডিটরিয়াম।
সম্মানিত উপস্থিতি, ইতোমধ্যেই আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন, নারী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক সুলতানা জামাল।অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি আমাদের মাঝে বক্তব্য রাখবেন। আপনারদেরকে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

বেশ খোশ মেজাজের মানুষ এই সুলতানা জামাল, দারুন স্মার্ট। কপালে আজ বিশাল টিপ পড়েছেন, লাল টিপ! কড়া মেকাপের আড়ালে হারিয়ে গেছে বয়সের ছাপ, সত্তুর ছুই ছুই বয়সটাকে দেখলে পঞ্চাশের বেশি কেউ বলবেনা।
জরিনার পেটে কুনুই দিয়ে গুতো দেয় ফুলবানু, ফিস ফিস করে দৃস্টি আকর্ষণ করে, ‘জরিবু, ও জরিবু।ওই মাতারী কেডা?’
বিরক্ত হয় জরিনা, ‘তুই হুনছ নাই? এই মাতারীর নাম সুলতানা জামাল’।
‘ওমা, তুই এইডা কি কও জরিবু! নোমো বেডি’র নাম সুলতানা জামাল?’
‘তোরে কেডা কইছে ঐ বেডি নোমো?’
‘তুমি কি কানা? দেহনা ওই মাতারির কপালে লাল টিপ! লাল টিপতো নোমোরাই পরে’।
‘ওইডা তুই বুঝবিনা, ঢাকার মাতারীরা সবাই লালটিপ পরে, হিন্দু-মুসলিম ব্যাপারনা।ব্যাডারা কি কয় হোন, বেশি কথা কইচনা।ইতস্ততভাবে জবাব দেয় জরিনা’।

ডায়াচের দিকে এগিয়ে যান সুলতানা জামাল, অডিটরিয়াম জুড়ে পিনপতন নিরবতা। বেশ কয়েকটি টিভি ক্যামেড়াও হাজির হয়েছে অনুষ্ঠানের নিউজ কাভার করার জন্য।
হাসি মুখে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কথা শুরু করেন সুলতানা জামাল।‘সম্মানিত উপস্থিতি, আজ আমি আপনাদের মাঝে বক্তব্য রাখতে আসিনাই, আমি এসেছি মত বিনিময় করতে। আমি আপনাদের কথা শুনবো, আবার আমার কিছু কথা আছে সেটাও আপনাদের সাথে শেয়ার করবো’।
হাত তালি দিয়ে সুলতানা জামালকে স্বাগত জানালো অডিটরিয়াম ভর্তি নারী প্রতিনিধীরা।

সুলতানা জামাল আবার শুরু করলেন, ‘সম্মানীত উপস্থিতি এই পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারী আজ বন্দী, নারীর মেধা যোগ্যতাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঘৃণ্য পর্দা প্রথার নামে নারীকে করা হয়েছে গৃহবন্দী। আমাদের নারী উন্নয়ন সমিতি এই বন্দিদশা হতে নারীকে মুক্ত করার লক্ষে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
আমরা নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে ঋণ সহায়তা প্রদান করবো, নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো, পুরুষের নির্যাতনের হাত হতে নারীকে সুরক্ষা দিতে আইনি সহায়তা প্রদান করবো’।
তুমুল কড়তালীতে ফেটে পড়ে অডিটরিয়াম। নারী নেত্রীরা স্লোগান ধরেন, “নারী মুক্তি, নারী মুক্তি।বিজয় হবে, বিজয় হবে!”

পেটে কুনুইয়ের খোচা অনুভব করে জরিনা, অগ্নিদৃষ্টিতে ফুলবানুর দিকে তাকায়, ‘কি কবি ক’।
‘আচ্ছা বুবু, আইজ কি ইলেকশন?’
‘হ, তোর মাতা! এতো কথা কস ক্যা?’
‘আরে, রাগো ক্যা? সবাই মিছিল করতাছে এললাইগ্যা জিগাইলাম’।
‘কেউ মাইকে কতা কইলে মাঝে মধ্যে মিছিল করতে অয়, নাইলে যে কতা কয়, হে কতা কইয়া মজা পায়না’।
বুবু আরেকটা কতা জিগাই? ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে ফুলবানু।
‘জিগা’।
‘আচ্ছা বুবু ওই মাতারীযে কইলো, নারী আজ বন্দী, নারীরে ঘরে আটকাইয়া রাখছে। এগুলা কার কতা কইতাছে?’
‘এগুলা আমাগো সবার কতা কইতাছে, পুরুষরা আমাগো শাসন করে, আমরা আর পুরুষগো শাসন মানমুনা। আমরাও ব্যাডাগো মতো টাকা কামাই করমু। আমরা ঘরে বন্দি থাকমুনা’।
‘কিযে কওনা বুবু! আমার জামাইতো আমারে খুবই আদর করে। লাজুক লাজুক কন্ঠে জবাব দেয় ফুলবানু। আমার জামাইতো আমারে বন্দী কইরা রাখেনা। তোমার জামাই কি তোমারে বন্দী কইরা রাখে? তাইলে এইহানে আইলা কেমন কইরা?’
‘আরে বুদ্ধু আমি কি একলা আইছি? আমার জামাই আমারে পাহাড়া দিয়া লইয়া আইছে’।
‘তাইলেতো আরো ভালো অইছে, ঢাকায় আসার সময় পতে-ঘাটে অনেক বিপদ অইতে পারতো। জামাই লগে থাকায় সমস্যা ছাড়াই আইতে পারছো।আমার জামাইও আইছে, সে এহন বাইরে খাড়াইয়া আছে। বুঝলা বুবু মানুষটা এতো ভালো, আমারে একটু সময়ের জন্যও চোহের আড়াল করতে চায়না’।
‘অইছে তোর বকবক বন্ধ কর, ম্যাডাম কি কয় মনযোগ দিয়া হোন। এই মাতারী অনেক শিক্ষিত, দামী দামী কতা কয়’।

বক্তব্য দিচ্ছেন সুলতানা জামাল, ‘পর্দা প্রগতির অন্তরায়, নারী মুক্তির পথে প্রধান বাধা পর্দা।যতদিননা আমরা এই ঘৃণ্য পর্দা প্রথার কবল হতে বেরিয়ে আসতে পারছি ততদিন নারী মুক্তি অসম্ভব’।
কড়তালিতে ফেটে পড়ে পুরো অডিটোরিয়াম।
‘শিক্ষায়-চাকরীতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, সমাজের প্রতিটি সেক্টরে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সাম্প্রদায়ীকতা-মৌলবাদের বিরুদ্ধে নারী সমাজ সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, ফতোয়াবাজদের কবল হতে এই দেশকে মুক্ত করতে মূল ভূমিকা পালন করবে নারী সমাজ।
মোল্লারা আমাদের ভয় দেখাবে, তারা উদ্ভট সব যুক্তি দেখাবে। তারা বলবে পর্দাহীনতার কারণেই সমাজে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আর মুখ বুজে থাকবোনা, আমরা প্রতিবাদ জানাবো। আমাদের স্লোগান একটাই, “আমরা পর্দা করবোনা, তোমাদের দৃস্টি সামলাও”। এভাবেই নারী এগিয়ে যাবে প্রগতির পথে, উন্নতীর চরম শিখড়ে’।

স্লোগানে স্লোগানে পরিপূর্ণ হলরুম, “নারী মুক্তি, নারী মুক্তি। বিজয় হবে, বিজয় হবে”।
অবাক দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকে ফুলবানু, চোখ ভরা প্রশ্ন নিয়ে তাকায় জরিনার দিকে। ভয়ে ভয়েই ডাক দেয়, ‘জরিবু!’
জরিনা সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করেনা, হাত উচিয়ে স্লোগানে মগ্ন।
এবার জোড়ে ডাক দেয় ফুলবানু, সাথে মৃদু ধাক্কা, ‘জরিবু ও জরিবু!’
বিরক্ত হয় জরিনা, ‘এতো ক্যা ক্যা করস ক্যান?’
‘জরিবু, আমারতো ভালো ঠেকতেছেনা!’
‘কি ভালো ঠেকতেছেনা, শরীর খারাপ?’ উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে জরিনা।
‘না জরিবু, শরীর ভালো। কিন্তু ওই মাতারীর কতা-বার্তা ভালো ঠেকতাছেনা’।
‘ক্যা, ওই মাতারী ভুল কি কইছে? হেতো ঠিকই কইছে’।
‘দেহোনা হুজুরগো গালাগালি করতাছে? কি কয় হুজুরগো বোলে প্রতিরোধ করবো! হুজুররাতো ভালো মানুষ, হেগো বিরুদ্ধে কতা কইতাছে ক্যান? যদি কইতো চোর-বদমাইশগো প্রতিরোধ করবো তাইলে একটা কতা আছিলো। হেইডা না কইয়া কয়, হুজুরগো প্রতিরোধ করবো। কি সব উল্ডা-পাল্ডা কতা কয়!’
‘হইছে, তোর এতো বোঝার কাম নাই, হেরা কি কয়ে মনদিয়া হুনতে থাক’।
‘বুবু আরেকটা কতা’, ফুলবানুর কন্ঠে অনুরোধ।
‘আবার কি কতা?’
‘বুবু ওই মাতারী যে কইলো, পর্দা করলে নাকি নারীগো মুক্তি অইবোনা। পর্দার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলো। এইডা কি ঠিক? আমিতো দেখলাম অনেক বেডিরাই পর্দা কইরাও চাকরী করে। এই মাতারী এতো মিছা কত কয় ক্যা?’
‘ওইগুলা তুই বুঝবিনা, শিক্ষিত মাইনষের কতা বুঝার মতো জ্ঞান তোর অয়নাই’।ধমক দিয়ে ফুলবানুকে থামিয়ে দেয় জরিনা।

চিন্তিত ফুলবানু, বুকভরা প্রশ্নের জাল, এই জাল ছিন্ন করবে সাধ্যকার। বক্তব্য দিচ্ছেন সুলতানা জামাল, কড়তালি এবং স্লোগানে সমর্থন দিচ্ছে উপস্থিত শ্রোতারা।
একসময় দুপুর হয়ে যায়, সবার হাতে হাতে পৌছে যায় বিড়ানীর প্যাকেট। খাওয়া শেষ, প্রগ্রাম শেষ। দলে দলে বেরিয়ে যাচ্ছে নারী উন্নয়ন কর্মীরা। সবার মুখে একটাই স্লোগান, “আমি পর্দা করবোনা, তোমার দৃস্টি সামলাও”

বাড়ি যাওয়ার জন্য বোরখাটাকে ঠিক-ঠাক করে নিচ্ছে ফুলবানু।শাড়ির আচলটাকে কোমড়া বেধে জরিনাও প্রস্তুতি নিচ্ছে। কানের,গলার এবং হাতের স্বর্নের গয়নাগুলো খুলে একটা কাপড়ের পুটলিতে বেধে সেটাকে কোমড়ের গোপন স্থানে চালান করে দিলো জরিনা।
অবাক দৃস্টিতে জরিনার দিকে তাকিয়ে থাকে ফুলবানু। বিস্মিত কন্ঠেই প্রশ্ন করে, ‘বুবু এইটা কি করলা, গয়নাগুলা খুইলা রাখলা ক্যান?’
‘বাড়ি যাইতে যাইতে অনেক রাইত হইবো, পথে-ঘাটে ছিনতাইকারী ধরতে পারে, তাই সাবধান থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ’। জরিনার ঠোটে বিজ্ঞের হাসি।
‘তোমারতো দেখি অনেক বুদ্ধি! বুবু তারাতারি বোরখা পইরা রেডি হও, নাইলে বাস পাবানা’।
তুই এতোক্ষণ কি শিখলি? জরিনার কন্ঠে বিরক্তি। ‘আমি আইজ থিকা পর্দা করমুনা। পুরুষগো কমু চোখ সামলাইতে’।
বোরখার নেকাব লাগাতে লাগাতে প্রশ্ন করে ফুলবানু, ‘বুবু স্বর্ণের জিনিসগুলা লুকাইয়া রাখলা, আর শরীরটা খুইলা রাখলা! ঐ স্বর্ণগুলাকি তোমার শরীরের চাইতে বেশি দামী?’
‘কি কইলি তুই?!’ রাগত কন্ঠে প্রশ্ন করে জরিনা।
‘না, কিছু কইনাই।নতুন একটা স্লোগান মাথায় আইলো, হেইডাই কইতাছিলাম। ফুলবানু জরিনার কন্ঠ কপি করে,“আমি স্বর্ণের গয়না লুকাবোনা, ছিনতাইকারী তোমার লোভ সামলাও’

দরজার দিকে এগিয়ে যায় ফুলবানু, নিশ্চল পাথরের মূর্তি জরিনা, কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায়। কন্ঠ চিড়ে বেরিয়ে আসে, “ফুলবানু ইট্টু খাড়া, আমি বোরখা পইড়া আইতাছি”।

আঞ্চলিক ভাষা সমাধাণঃ ১।মাতারী=মহিলা, ২।নোমো=হিন্দু

গল্পঃ নারী মুক্তি
শামীম রেজা
০২/০২/২০১৪

Post Comment

একাত্তর, মেধাহীন শিবির এবং পাষণ্ড ধার্মিক ব্যাক্তি।


বাম নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার অব্যাহত প্রচারণার কারণে একথাটি এখন প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে জামায়াত নেতারা একাত্তরে হত্যা এবং ধর্ষনে লিপ্ত ছিলো।
বর্তমান সভ্যতা নামের অসভ্য সময়ে যখন আমরা নিজেদের চোখের পরিবর্তে মিডিয়ার চোখে দেখি, নিজেদের মাথার পরিবর্তে মিডিয়ার মাথা দিয়ে চিন্তা করি। ঠিক তখনি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, আচ্ছা জামায়াত নেতাদের পুত্র কন্যারা তাদের বাবাদের কোন চোখে দেখে, তারা কি তাদের বাবাদের ঘৃণা করে?

এই প্রশ্নের সুন্দর জবাব দিয়েছেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বড় মেয়ে মহসিন ফাতেমা। তিনি বলেছেন, “সেফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমার বাবাকে যে মানসিক টর্চার করা হয় তার মধ্যে ১টি প্রশ্ন ছিল “আপনার সন্তানরা আপনাকে ঘৃণা করে না?” আমি বলতে চাই যিনি এ প্রশ্নটি করেছেন সম্ভবত তার সন্তানেরা তাকে ঘৃণা করে আর তিনি সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রশ্ন করেছেন। আমরা আমাদের বাবাকে ফেরেস্তার চেয়েও ভাল জানি, কারণ ফেরেস্তাদের স্বাধীনতা নেই খারাপ কাজ করার কিন্তু মানুষের আছে। যদি মানুষ এই স্বাধীনতাকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী কাজ করে তাহলে সে ফেরেস্তার চেয়েও ভাল হতে পারে।
আমরা ’৭১ দেখিনি, মুক্তিযুদ্ধও দেখিনি তবে বর্তমানকে দেখছি, ইতিহাসও পড়েছি। কারও চরিত্র সহজে বদলায় না। যারা বর্তমানে ভালোমানুষ হিসেবে পরিচিত, যাদের দ্বারা এই ৪০ বছরে একটিও কুকর্ম সাধন হয়নি তারা কি হঠাৎ বদলে গেছে? আর যারা বর্তমানে প্রতিনিয়ত অন্যায় করে বেড়াচ্ছে তারা কি তখন খুব ভালো ছিল? কখখনো না-কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। ভালোরা সবসময়ই ভালো”।

তারপরেও চলমান ঘটনা প্রবাহে আমাদের মনে আবারো প্রশ্ন জাগে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মেয়ের মতোই কি অন্যারা ভাবে? তারাও কি তাদের বাবাদের সম্মান করে, নাকি ঘৃণার চোখে দেখে?
এই প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা সন্ধান করতে যাই তবে সেই প্রশ্নের উত্তর হবে না।
কেউ কেউ একাত্তর ইস্যুতে হীনমন্মতায় ভোগে, একাত্তরের ময়লা নিজেদের শরীর হতে ঝেড়ে ফেলতে চায়, তারা তাদের বাবার কৃতকর্মের দায়ভার নিজেদের কাধে চাপাতে রাজী নয়।

আমি জানি উপরের প্যারাটি পড়ে কেউ কেউ অলরেডি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছেন, জ্বলে ওঠাটাই স্বাভাবিক, কারণ আমরাতো পীরতন্ত্রে বিশ্বাসী! যেই পীরতন্ত্র আমাদের শিক্ষা দেয়, নেতার ছেলেরাও নেতা হবে। নেতার ছেলে মেয়েদেরকেও সম্মান করতে হবে। নেতাদের ছেলে-মেয়েরা যদি ভুল কিছু করে সেটাও সঠিক, মারহাবা মারহাবা বলে হাতে তালি দিয়ে তাদের সমর্থন জানাতে হবে।

এমনও নেতার মেয়েকে দেখেছি, যিনি সদম্ভে ঘোশনা দিয়েছেন, জামায়াত নেতাদের সন্তানরা জন্মসূত্রেই মেধাবী। ব্যাক্তি পুজা কোথা হতে আসে? মেধা কোথা হতে আসে?
জামায়াত নেতাদের সন্তানরা জন্মসূত্রে মেধাবী কিনা আমি জানিনা, না জানার কারণ হচ্ছে জামায়াতে ব্যক্তিপূজা নেই, যোগ্যতার ভিত্তিতেই জামায়াতে নেত্রীত্ব প্রদান করা হয়। যেহেতু জামায়াত নেতাদের সন্তানদের মধ্য হতে এখন পর্যন্ত কেউ শীর্ষ নেতৃত্ব আসতে পারেননাই, সেহেতু ধরে নিতে হবে এটা ওই লেখিকার ব্যাক্তিগত অহমিকার বর্হিপ্রকাশ!
সেই যাই হোক, জামায়াত নেতাদের সন্তানরা জন্মসূত্রে মেধাবী কিনা সেটা জানা সম্ভব না হলেও জামায়াত নেতাদের কারো কারো ঘরে যে কুলাঙ্গার সন্তানের জন্ম হয় সেটা কিন্তু আমরা চাক্ষুশ দেখতে পাই।
আমরা ফারুক মৌদুদীকে দেখি, একটা মাতাল কিভাবে ইসরাইলের টাকায় পরিচালিত হয় জামায়াতের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করে সেটা আমাদের দৃষ্টি সীমার বাইরে নয়।

যেকথা বলছিলাম, জামায়াত নেতাদের সন্তানরা তাদের বাবাকে কিভাবে মূল্যায়ন করে। শাহবাগের আন্দোলনের যখন সূত্রপাত হলো, সারাদেশে তখন তুমুল হৈচৈ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, নিজামীর ফাঁসি চাই, সাঈদীর ফাঁসি চাই, ফাঁসি ছাড়া দাবী নাই!
ঠিক সেই মূহুর্তেই সেই জামায়াত নেতার সন্তান ব্লগে কলম ধরলেন স্লোগান কন্যা লাকী আক্তারের পক্ষে, সে কি আবেগ, সে কি দরদ, লাকীর জন্য তার কলিজা জ্বলে যাচ্ছে।
মাশাআল্লাহ! নিজের পিতার ফাঁসির দাবীতে আন্দোলনরত এক নারীর পক্ষে কলম ধরে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমান করতে, নিজেকে সুশীল হিসেবে উপস্থাপন করতে সে কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা!
একাত্তরের কাদা কি এতো সহজে উঠে? তারচাইতে শাহবাগে গিয়ে ফাঁসি চাই আন্দোলনে কন্ঠ মেলালেইতো হতো!

সেই একই জামায়াত নেতার কন্যা কিছুদিন পূর্বে আবার কলম ধরলেন। ফেসবুকে তার চেহারা প্রদর্শণ নিয়ে সম্ভবত কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলো।অন্য কিছু নয়, নিজের চেহারা প্রদর্শনের স্বার্থেই তিনি শিবিরের ছেলেদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়লেন। শিবিরের ছেলেদের মেধাকম, জ্ঞান কম, সব জ্ঞান ঐ বামদের হাতে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
শিবিরের ছেলেদের মেধা কম সেটা তিনি কিভাবে বুঝলেন? তিনি বুঝেছেন, কারণ হচ্ছে শিবিরের ছেলেরা নেকাব নিয়ে কথা বলে, আর বামরা নেকাব নিয়ে কথা বলেনা। বামরা যুক্তি তর্ক দিয়ে কথা বলে আর শিবিরের ছেলেরা চেহারা খোলা থাকবে নাকি ঢাকা থাকবে এটা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে। একারণেই শিবিরের ছেলেদের ইন্টেলেকচুয়াল লেভেল বামদের তুলনায় কম।
এই হচ্ছে জন্মসূত্রে পাওয়া অতিরিক্ত মেধার পরিচয়!

সে যাই হোক, আজ একটি গল্প পড়লাম, যদিও এই একই বিষয়ে ইতোপূর্বে কোথাও একটা মন্তব্যে সম্ভবত পড়েছিলাম। আজকের লেখাটিতে ছিলো, আবেগ তাড়িত উপস্থাপনায় এক শিশুর পুতুল খেলার আকাঙ্খা এবং তার ধার্মিক পাষন্ড পিতার নির্মমতার হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা।
লেখাটি পড়ে মনে হচ্ছিলো, তারেক মাসুদের মাটির ময়না দেখছি, কিংবা শাহরীয়ার কবির পরিচালিত ডকুমেন্টারীতে মৌলবাদী ইসলামের বর্বরতার দৃশ্য দেখছি।
সেখানে এক পাঠকের মন্তব্য ছিলো, “খুব সম্ভবত একটা হাদিস আছে যেখানে আয়েশা (রাঃ) পুতুল নিয়ে বান্ধবিদের সাথে খেলছিলেন এবং নবীজিকে দেখে ভয় পেয়েছিলেন কিন্তু নবীজি তাকে খেলতে দিয়েছিলেন”।
এই মন্তব্যের জবাবে লেখিকার তাচ্ছিল্য মূলক রিপ্লাই ছিলো, “গল্পের ছোট মেয়েটাকে হাদীস পড়তে বলি চলো! তাইলে এই ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং শব্দ থেমে যাবে। ছোট-বড় সকলেই আসুন আমরা দলে দলে মুহাদ্দীস হই!”

না, শাহরীয়ার কবির কিংবা তারেক মাসুদ স্টাইলের এই গল্পটির লেখিকা বাম কিংবা নাস্তিক কেউ নয়, তিনি হচ্ছেন উপরে উল্লেখিত সেই জামায়াত নেতার কন্যা।

কি ভাবছেন, আমি ক্ষুব্ধ? না আমি ক্ষুব্ধ নই। এই টাইপের মানুষের প্রতি আমার ক্ষোভ জন্মায়না যেটা হয় সেটা হচ্ছে ঘৃণা এবং সহানুভূতি। কারণ আমাদের সামনে উদাহরণ হয়ে আছে, হজরত নূহ (আঃ) এর ছেলে কেনান এবং মাওলানা সাঈয়েদ আবুল আলা মওদূদীর কুলাঙ্গার পূত্র ফারুক মৌদুদী।

০১ফেব্রুয়ারী২০১৪

Post Comment