একাত্তর, মেধাহীন শিবির এবং পাষণ্ড ধার্মিক ব্যাক্তি।


বাম নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার অব্যাহত প্রচারণার কারণে একথাটি এখন প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে জামায়াত নেতারা একাত্তরে হত্যা এবং ধর্ষনে লিপ্ত ছিলো।
বর্তমান সভ্যতা নামের অসভ্য সময়ে যখন আমরা নিজেদের চোখের পরিবর্তে মিডিয়ার চোখে দেখি, নিজেদের মাথার পরিবর্তে মিডিয়ার মাথা দিয়ে চিন্তা করি। ঠিক তখনি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, আচ্ছা জামায়াত নেতাদের পুত্র কন্যারা তাদের বাবাদের কোন চোখে দেখে, তারা কি তাদের বাবাদের ঘৃণা করে?

এই প্রশ্নের সুন্দর জবাব দিয়েছেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বড় মেয়ে মহসিন ফাতেমা। তিনি বলেছেন, “সেফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমার বাবাকে যে মানসিক টর্চার করা হয় তার মধ্যে ১টি প্রশ্ন ছিল “আপনার সন্তানরা আপনাকে ঘৃণা করে না?” আমি বলতে চাই যিনি এ প্রশ্নটি করেছেন সম্ভবত তার সন্তানেরা তাকে ঘৃণা করে আর তিনি সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রশ্ন করেছেন। আমরা আমাদের বাবাকে ফেরেস্তার চেয়েও ভাল জানি, কারণ ফেরেস্তাদের স্বাধীনতা নেই খারাপ কাজ করার কিন্তু মানুষের আছে। যদি মানুষ এই স্বাধীনতাকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী কাজ করে তাহলে সে ফেরেস্তার চেয়েও ভাল হতে পারে।
আমরা ’৭১ দেখিনি, মুক্তিযুদ্ধও দেখিনি তবে বর্তমানকে দেখছি, ইতিহাসও পড়েছি। কারও চরিত্র সহজে বদলায় না। যারা বর্তমানে ভালোমানুষ হিসেবে পরিচিত, যাদের দ্বারা এই ৪০ বছরে একটিও কুকর্ম সাধন হয়নি তারা কি হঠাৎ বদলে গেছে? আর যারা বর্তমানে প্রতিনিয়ত অন্যায় করে বেড়াচ্ছে তারা কি তখন খুব ভালো ছিল? কখখনো না-কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। ভালোরা সবসময়ই ভালো”।

তারপরেও চলমান ঘটনা প্রবাহে আমাদের মনে আবারো প্রশ্ন জাগে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মেয়ের মতোই কি অন্যারা ভাবে? তারাও কি তাদের বাবাদের সম্মান করে, নাকি ঘৃণার চোখে দেখে?
এই প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা সন্ধান করতে যাই তবে সেই প্রশ্নের উত্তর হবে না।
কেউ কেউ একাত্তর ইস্যুতে হীনমন্মতায় ভোগে, একাত্তরের ময়লা নিজেদের শরীর হতে ঝেড়ে ফেলতে চায়, তারা তাদের বাবার কৃতকর্মের দায়ভার নিজেদের কাধে চাপাতে রাজী নয়।

আমি জানি উপরের প্যারাটি পড়ে কেউ কেউ অলরেডি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছেন, জ্বলে ওঠাটাই স্বাভাবিক, কারণ আমরাতো পীরতন্ত্রে বিশ্বাসী! যেই পীরতন্ত্র আমাদের শিক্ষা দেয়, নেতার ছেলেরাও নেতা হবে। নেতার ছেলে মেয়েদেরকেও সম্মান করতে হবে। নেতাদের ছেলে-মেয়েরা যদি ভুল কিছু করে সেটাও সঠিক, মারহাবা মারহাবা বলে হাতে তালি দিয়ে তাদের সমর্থন জানাতে হবে।

এমনও নেতার মেয়েকে দেখেছি, যিনি সদম্ভে ঘোশনা দিয়েছেন, জামায়াত নেতাদের সন্তানরা জন্মসূত্রেই মেধাবী। ব্যাক্তি পুজা কোথা হতে আসে? মেধা কোথা হতে আসে?
জামায়াত নেতাদের সন্তানরা জন্মসূত্রে মেধাবী কিনা আমি জানিনা, না জানার কারণ হচ্ছে জামায়াতে ব্যক্তিপূজা নেই, যোগ্যতার ভিত্তিতেই জামায়াতে নেত্রীত্ব প্রদান করা হয়। যেহেতু জামায়াত নেতাদের সন্তানদের মধ্য হতে এখন পর্যন্ত কেউ শীর্ষ নেতৃত্ব আসতে পারেননাই, সেহেতু ধরে নিতে হবে এটা ওই লেখিকার ব্যাক্তিগত অহমিকার বর্হিপ্রকাশ!
সেই যাই হোক, জামায়াত নেতাদের সন্তানরা জন্মসূত্রে মেধাবী কিনা সেটা জানা সম্ভব না হলেও জামায়াত নেতাদের কারো কারো ঘরে যে কুলাঙ্গার সন্তানের জন্ম হয় সেটা কিন্তু আমরা চাক্ষুশ দেখতে পাই।
আমরা ফারুক মৌদুদীকে দেখি, একটা মাতাল কিভাবে ইসরাইলের টাকায় পরিচালিত হয় জামায়াতের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করে সেটা আমাদের দৃষ্টি সীমার বাইরে নয়।

যেকথা বলছিলাম, জামায়াত নেতাদের সন্তানরা তাদের বাবাকে কিভাবে মূল্যায়ন করে। শাহবাগের আন্দোলনের যখন সূত্রপাত হলো, সারাদেশে তখন তুমুল হৈচৈ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, নিজামীর ফাঁসি চাই, সাঈদীর ফাঁসি চাই, ফাঁসি ছাড়া দাবী নাই!
ঠিক সেই মূহুর্তেই সেই জামায়াত নেতার সন্তান ব্লগে কলম ধরলেন স্লোগান কন্যা লাকী আক্তারের পক্ষে, সে কি আবেগ, সে কি দরদ, লাকীর জন্য তার কলিজা জ্বলে যাচ্ছে।
মাশাআল্লাহ! নিজের পিতার ফাঁসির দাবীতে আন্দোলনরত এক নারীর পক্ষে কলম ধরে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমান করতে, নিজেকে সুশীল হিসেবে উপস্থাপন করতে সে কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা!
একাত্তরের কাদা কি এতো সহজে উঠে? তারচাইতে শাহবাগে গিয়ে ফাঁসি চাই আন্দোলনে কন্ঠ মেলালেইতো হতো!

সেই একই জামায়াত নেতার কন্যা কিছুদিন পূর্বে আবার কলম ধরলেন। ফেসবুকে তার চেহারা প্রদর্শণ নিয়ে সম্ভবত কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলো।অন্য কিছু নয়, নিজের চেহারা প্রদর্শনের স্বার্থেই তিনি শিবিরের ছেলেদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়লেন। শিবিরের ছেলেদের মেধাকম, জ্ঞান কম, সব জ্ঞান ঐ বামদের হাতে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
শিবিরের ছেলেদের মেধা কম সেটা তিনি কিভাবে বুঝলেন? তিনি বুঝেছেন, কারণ হচ্ছে শিবিরের ছেলেরা নেকাব নিয়ে কথা বলে, আর বামরা নেকাব নিয়ে কথা বলেনা। বামরা যুক্তি তর্ক দিয়ে কথা বলে আর শিবিরের ছেলেরা চেহারা খোলা থাকবে নাকি ঢাকা থাকবে এটা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে। একারণেই শিবিরের ছেলেদের ইন্টেলেকচুয়াল লেভেল বামদের তুলনায় কম।
এই হচ্ছে জন্মসূত্রে পাওয়া অতিরিক্ত মেধার পরিচয়!

সে যাই হোক, আজ একটি গল্প পড়লাম, যদিও এই একই বিষয়ে ইতোপূর্বে কোথাও একটা মন্তব্যে সম্ভবত পড়েছিলাম। আজকের লেখাটিতে ছিলো, আবেগ তাড়িত উপস্থাপনায় এক শিশুর পুতুল খেলার আকাঙ্খা এবং তার ধার্মিক পাষন্ড পিতার নির্মমতার হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা।
লেখাটি পড়ে মনে হচ্ছিলো, তারেক মাসুদের মাটির ময়না দেখছি, কিংবা শাহরীয়ার কবির পরিচালিত ডকুমেন্টারীতে মৌলবাদী ইসলামের বর্বরতার দৃশ্য দেখছি।
সেখানে এক পাঠকের মন্তব্য ছিলো, “খুব সম্ভবত একটা হাদিস আছে যেখানে আয়েশা (রাঃ) পুতুল নিয়ে বান্ধবিদের সাথে খেলছিলেন এবং নবীজিকে দেখে ভয় পেয়েছিলেন কিন্তু নবীজি তাকে খেলতে দিয়েছিলেন”।
এই মন্তব্যের জবাবে লেখিকার তাচ্ছিল্য মূলক রিপ্লাই ছিলো, “গল্পের ছোট মেয়েটাকে হাদীস পড়তে বলি চলো! তাইলে এই ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং শব্দ থেমে যাবে। ছোট-বড় সকলেই আসুন আমরা দলে দলে মুহাদ্দীস হই!”

না, শাহরীয়ার কবির কিংবা তারেক মাসুদ স্টাইলের এই গল্পটির লেখিকা বাম কিংবা নাস্তিক কেউ নয়, তিনি হচ্ছেন উপরে উল্লেখিত সেই জামায়াত নেতার কন্যা।

কি ভাবছেন, আমি ক্ষুব্ধ? না আমি ক্ষুব্ধ নই। এই টাইপের মানুষের প্রতি আমার ক্ষোভ জন্মায়না যেটা হয় সেটা হচ্ছে ঘৃণা এবং সহানুভূতি। কারণ আমাদের সামনে উদাহরণ হয়ে আছে, হজরত নূহ (আঃ) এর ছেলে কেনান এবং মাওলানা সাঈয়েদ আবুল আলা মওদূদীর কুলাঙ্গার পূত্র ফারুক মৌদুদী।

০১ফেব্রুয়ারী২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment