সিরিয়াল


এক ছিলো খুকি আর এক ছিলো মা,
মা-মেয়ে খুব ভাব, বাবা যা তা।
মা দেখে সিরিয়াল, ভারতীয় টিভি,
কোলে বসে শিখে নেয়, মেয়ে তার সবি।
পরকীয়া, দেহক্রিয়া, খুব বেশি সোজা,
শ্বশুর আর শাশুড়ী, সংসারে বোঝা।
মেকাপে-গেটাপে টাকা যায় সব,
বাবা খায় হিমশিম, খুব ছোট জব।
দামী দামী শাড়ি আর গহনার লোভে,
অন্যের হাত ধরে, মা যায় চলে।
বাবাটির মন ভার, আর নয় বিয়ে,
সৎ মায়ে খুব ভয়, একটাই মেয়!
মেয়েটাও বড় হলো, সাথে আছে টিভি,
হাতে তার ধরা থাকে, যুবকের ছবি।
ভারতীয় নায়কের চওড়া বুক,
ওই বুকে খুজে ফিরে মেয়ে তার সুখ।
একদিন খুব ভোরে বাবা হায় হায়,
এদিকে ওদিকে ছুটে ছুটে যায়।
মেয়েটিও চলে গেছে প্রেমিকের সাথে,
বাবাটির মন ভার, কেউ নেই পাশে।
ভারতীয় সিরিয়াল এখনো আছে,
প্রতিবেশী মা-মেয়ে সেটা খেয়ে বাঁচে

কবিতাঃ সিরিয়াল
শামীম রেজা
৩১/০১/২০১৪

Post Comment

বাংলাকে ভালোবাসি


ও দাদা, ও দাদা! ওরা বলে, আমি নাকি ভাদা,
তুমিই বলো, ওরা কত্ত বড় হাদা?
যতই বলি, আমি দালালতো নই, করছি বটে চাকরী।
এতো আমার সাত জনমের ভাগ্য, ভারত দিয়েছে নকরী!
মোল্লা গুলো, হল্লা করে বেশ, ইজ্জত ধরে টানে,
বাড় বেড়েছে খুব, চেতনায় আঘাত হানে!
ওরা মৌলবাদী, ধর্ম মানে বেশ,
মেরে দাওতো ওদের, বংশ করো শেষ।
দেখলে দাদা, সাতক্ষিরায়কি কান্ড ঘটে গেলো?
মোল্লাগুলো পাড়ায় পাড়ায় সংগঠিত হলো!
কি বললে? সেনা পাঠাবে? প্রণাম তোমায় হায়,
বঙ্গের যত নারী-শিশু আছে, লুটাবো তব পায়।
বলি চায় যদি কালী দেবী, কত লাগে বলো কল্লা,
সব দিয়ে দিবো বাংলাদেশে যতগুলো আছে মোল্লা।
বাংলাতে ওরা মিছিল করে, নারায় তাকবীর।
যেমন করেছে ওদের দাদা, শরীয়তউল্লাহ, তিতুমীর।
ওরা বেকুব, ভারতের পেটে বসে হাসে অট্ট হাসি!
তুমি যদি চাও সবগুলাকে, একে একে দিবো ফাঁসি!
যতই বলি, ওরে ছাগুরা, ভারত তোদের মাসি,
ততই ওরা, স্লোগানে বলে, বাংলাকে ভালোবাসি!

২৯/০১/২০১৪

Post Comment

প্রথম গল্প লেখা


facebook link

দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ের কথা। প্রচুর রুপকথার গল্প পড়তাম। দৈত্য-দানবের উদ্ভট সব গল্পে ভরপুর এক ফর্মার চিকন বইগুলো স্কুল থেকে ফেরার পথেই কিনে আনতাম। 
সেইসব রুপকথার গল্প পড়েই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও গল্প লিখবো। যেই ভাবা সেই কাজ, শুরু করে দিলাম লেখার কার্যক্রম।

কাঠ পেন্সিল হাতে নিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লিখলাম,
একদেশে ছিলো এক কাঠুরিয়া, কাঠুরিয়ার অনেক কষ্ট, সারাদিন সে বনের মধ্যে কাঠ কাটে। একদিন কাঠ কাটতে কাটতে ক্লান্ত হয়ে গেলো কাঠুরিয়া, বিশ্রাম নিচ্ছিলো একটি গাছের নিচে, আর ভাবছিলো নিজের ভবিষ্যত জীবনের কথা।
হঠাৎ কাঠুরিয়া দেখতে পেলো একটা পরী আকাশে উড়ে উড়ে যাচ্ছে, কাঠুরিয়াকেও পরীটি দেখতে পেলো।
পরী নেমে এলো মাঠিতে, জিজ্ঞাসা করলো, ও কাঠুরিয়া ভাই, তোমার মনে এতো দুখঃ কেনো?
কাঠুরিয়া জবাব দিলো, সারাদিন কাঠ কাটি, এই কাঠ বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলেনা! তাই এতো দুখঃ।
পরী কাঠুরিয়ার হাতে ছোট একটা কৌটা দিয়ে বললো এই নাও। এটা দিয়েই তোমার সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
কাঠুরিয়া মনের আনন্দে সেই কৌটাটি হাতে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলো, বউকে বললো, বউ দেখো কি এনেছি। এটা দিয়েই আমাদের ভাগ্য ফিরে যাবে।

কাঠুরিয়া এবং তার বৌ কৌটাটির ঢাকনা খুললো, ঢাকনা খুলেই তারা হতাশ হলো। নাহ! কিছু নেই, সোনা গহনা কিচ্ছু নেই, শুধু একটা কাঠের ছোট বাক্স রয়েছে কৌটাটির মধ্যে।
হতাশ মনেই কাঠুরিয়া এবং তার বউ এবার কাঠের বাক্সটির ঢাকনা খুললো, ঢাকনা খুলেইতো তারা অবাক! একটা বিশাল লোহার সিন্দুক ছিলো সেই কাঠের বাক্সটির মধ্যে।
আনন্দে ঝলমল করে উঠলো কাঠুরিয়া এবং তার বৌয়ের মুখ! ঝটপট তারা সিন্দুকের ঢাকনা খুলে ফেললো।
সিন্দুক খুলতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা দৈত্য, বিশাল একটা দৈত্য!
দৈত্যকে দেখেতো কাঠুরিয়ার বৌ ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কাঠুরিয়া বললো, আমরা গরীব মানুষ, আমাদের মেরোনা।
দৈত্য বললো, ভয় পাবেননা জাহাপনা, আপনি এখন এই দেশের বাদশা, আপনি যাই বলবেন আমি তাই করবো।
কাঠুরিয়া ভয়ে ভয়ে বললো, আমি বিশ্বাস করিনা। যদি আমাদের এই কুড়ে ঘড়কে বিশাল একটা রাজ প্রাসাদে পরিণত করতে পারো তবে বিশ্বাস করবো।
দৈত্য বললো, জো হুকুম জাহাপনা, চোখের পলকে একটা রাজপ্রসাদ তৈরী হয়ে গেলো।
এরপর কাঠুরিয়া এবং তার বৌ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।

গল্পটি লিখেই খুশিতে আমিতো বাকবাকুম! ছুটে গেলাম আব্বার কাছে, আমি একটা গল্প লিখেছি।
আব্বা-মা দুজনেই খুব আগ্রহ নিয়ে গল্পটি পড়লেন।
আব্বা মুচকি হেসে বললেন, গল্পটা অনেক সুন্দর হইছে, কিন্তু ছোট কৌটার মধ্যে বিশাল সিন্দুক ঢুকলো কিভাবে?
মা ও দেখলাম মুচকি মুচকি হাসছেন।
আমিও চিন্তায় পড়ে গেলাম, ঠিকইতো! ছোট একটা কৌটার মধ্যে বিশাল একটা সিন্দুক কিভাবে ঢুকলো?!

২৭জানুয়ারী২০১৪

Post Comment

মূর্খ


শোনো মিয়ারা এই দেশের মূল সমস্যা হইলো গিয়া মানুষ! হাটে মাঠে তুমি যেখানেই যাইবা দেখবা মানুষ। এতো মানুষ কি খায়? কই ঘুমায়? রাস্তায় জ্যাম লাইগাই থাকে।
মানুষ যদি কনট্রোল করা যায়, তাইলে মনে করো এই দ্যাশ সোনার বাংলায় পরিণত্ হইবো।

চারিদিকে সম্মতি সূচক রব ওঠে, ‘হ! হ! ঠিকই কইছেন চ্যারমান সাব!’
আমি ঠিক নাকইলে, ঠিক কতা কইবো কেডা? ওই গমচোর কলিম উদ্দিন কইবো?!
আমি চেয়ারম্যান হওনের পর গম চুরি করছি? বাঘের মতো গর্জন করে উঠেন সাদেক মৃধা।
শ্রোতাদের মধ্যে গুঞ্জন উঠলো, না না চ্যারমান সাব, আপনার লাহান ভালা মানুষ অয়না। আপনি আছেন বইলাইতো আমরা দুই বেলা খাইতে পারি। আপনি অইলেন গিয়া আমাগো বাঘা চ্যারমান।

হই মিয়া চাইয়া রইছো ক্যা, সবাইরে চা দ্যাও, আব্দুর রহিমের দিকে তাকিয়ে মৃদু ধমক দেয় চেয়ারম্যান সাদেক মৃধা। বুঝা যাচ্ছে সাদেক মৃধা আজ বেশ খোশ মেজাজে রয়েছেন।
মাঝ বয়সী আব্দুর রহীম চায়ের কাপে ঝড় তুলে, টুং টাং, টুং টাং কাপের সাথে চামচের সংঘর্ষ হয়। উৎসুক শ্রোতারা লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কাপের দিকে।

শোনো মিয়ারা এইযে এইখানে আব্দুর রহীমের চায়ের দোকানের সামনে এখন তোমরা কতজন মানুষ আছো? আবার কথা শুরু করেন সাদেক মৃধা।
একজন উঠে দাঁড়িয়ে মাথা গুনে, আমরা ২০জন আছি।
এই বটতলা বাজারে সব মিলিয়ে কতজন মানুষ অইবো?
শ্রোতাদের একজন মাথা চুলকায়, তার দৃষ্টি চায়ের কাপের দিকে, কম কইরা হইলেও হাজার খানিকতো অইবোই।
এইবার বুঝো, মানুশ বেশি হইলে কি কি সমস্যা অয়! জিনিসপত্র কেনার জন্য কাড়াকাড়ি অয়, বাড়তি দাম দিয়া জিনিস কেনা লাগে। যদি কাস্টমার কম অইতো তাইলে কিন্তু এতো বেশি দামে জিনিসপত্র কেনা লাগতোনা।

এইডা কি কন চ্যারমান সাব, কাস্টমার না থাকলে আমি বেচমু কেমনে? খামু কি? না না, মানুষ বেশি হওয়া ভালো, মানুষ বেশি থাকলে বেচা বিক্রি ভালো অয়। আমতা আমতা করে জবাব দেয় আব্দুর রহিম।
খেকিয়ে উঠেন চেয়ারম্যান, তুমি মিয়া কি বুঝবা, অশিক্ষিতের মতো কতা কও ক্যা? তুমি তখন কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারবা, কমদামে বিক্রি করতে পারবা। তোমারতো ক্ষতি হইবোনা। আব্দুর রহীমকে আশ্বস্ত করার চেস্টা করেন, সাদেক মৃধা।
ক্ষতি হইবোনা কেমনে কইলেন, এখন আমি যদি দৈনিক ১০০কাপ চা বেচি, মানুষ কম থাকলেতো ৫০কাপও বেচতে পারুমনা!
শ্রোতাদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে, না না এইটা ঠিক অইবোনা চ্যারমান সাব, তাইলে মানুষ বেশি হওনই ভালা।

বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে সাদেক মৃধার কপালে, এই অশিক্ষিত মানুষগুলারে দুইটা জ্ঞানের কথা শুনাইবো, সেই উপায় নাই, কি সব উলটাপালটা কথা বলে, বিব্রত করে দেয়।
মাথার উপর বটগাছের পাতার মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়, কোথা থেকে চুন এসে পড়ে সাদেক মৃধার হাতের হাতের উপর। কা কা করে উড়ে যায় কাক।
মোটা ফ্রেমের চশমাটা মুছতে মুছতে, চেচিয়ে উঠলেন সাদেক মৃধা, এই!পান খায় কেরে?
চুন না চ্যারমান সাব, এইডা কাউয়ার কাম। একজন পানি ভর্তি জগ নিয়ে ছুটে আসে।

হাত ধুতে ধুতে আবার কথা শুরু করে চেয়ারম্যান, এইযে দেখো আমেরিকা, ইউরোপ, সিঙ্গাপুর, তারা অনেক ধনী রাষ্ট্র, আমাগো দ্যাশের মানুষ হেই দেশে যায় কামলা খাটতে। কতা ঠিক কিনা?
হ, কতা ঠিক চ্যারমান সাব, সমস্বরে সম্মতি জানায় উপস্থিত শ্রোতারা।
তারা ধনী অইলো কিভাবে? এইটা অইছে গিয়া তাগো দেশে মানুষ কম কিন্তু সম্পদ বেশি, হেই সম্পদ কাজে লাগাইয়া তারা এখন অনেক ধনী অইছে, বহু মিল-কারখানা তৈরী করছে।
এইডা কি হুনাইলেন চ্যারমান সাব, আমিতো হুনছি হেগো দেশে মানুষ নাই দেইখা হেরা সমস্যায় পইরা গেছে। হেগো মিলকারখানা চালাইতে পারতাছেনা। সিঙ্গাপুরে নাকি সরকার ঘোশণা দিছে, দুইটার বেশি সন্তান নিলে পুরস্কার দিবো। পিঠ চুলকাতে চুলকাতে প্রশ্ন করে চাষীদের একজন।
আরেকজন তাকে সমর্থন জানায়, ‘হ চ্যারমান সাব, আমি নিজেও হুনছি, কোরিয়াতে নাকি সরকার কইছে একটার বেশি বাচ্চা নিলে সরকারী সুযোগ সুবিধা বাড়াইয়া দিবো’।

চেয়ারম্যানের চোখ থেকে অগ্নিদৃষ্টি ঝড়ে পড়ে, চুপসে যায় উপস্থিত শ্রোতারা। এই মিয়ারা তোমাগো পড়ালেহা কতদূর? কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়ছো?
শ্রোতার নিশ্চুপ, কারো মুখে কথা নেই,
তোমরা বেশি বুঝো, নাকি আমি বেশি বুঝি?
আপনি শিক্ষিত মানুষ আপনি বেশি বুঝেন,
তাইলে আমার কথা শেষ করতে দাও, কতা না হুইন্নাই কতা কও ক্যা?
রাগে গজ গজ করতে থাকেন চেয়ারম্যান, এইযে দেখো আমাগো দেশে সম্পদ নাই, খাদ্যের অভাব। আমাগো দেশে যদি মানুষ কম হইতো তাইলে কি সম্পদের অভাব হইতো? যা আছে তা দিয়াই আমরা আরাম করে থাকতে পারতাম, এখন মানুষ বেশি, চাহিদা বেশি।
একজন হাত তুলে চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে,
তুমি আবার কি কইবা?
চ্যারমান সাব, আমাগো দেশে মানুষ বেশি হওয়াতেতো আমাগো ভালোই অইছে। যেমন ধরেন, আল্লায় আমাগো দেশে সম্পদ দেয়নাই, কিন্তু মানুষ দিছে, আবার ধণী রাষ্ট্র গুলাতে সম্পদ দিছে কিন্তু মানুষ দেয়নাই।
এখন আমাদের দেশে যে অতিরিক্ত মানুষ আছে সেগুলারে যদি ট্রেনিং দিয়া ধণী রাষ্ট্রে পাঠাইয়া দেই, তাইলেতো তারা সেখানে গিয়া টাকা পয়সা কামাই কইরা দেশে পাঠাইতে পারে। এইডা আমাগো লাভ।
আবার দেখেন, পোশাক তৈরী এবং রপ্তানিতে আমাগো দেশ ফাস্ট অইছে, আমাগো দেশে মানুষ যদি বেশি না অইতো তাইলে কি এইডা সম্ভব অইতো?
তাছাড়া ধনী রাষ্ট্রগুলা শিক্ষাদীক্ষায় অনেক উন্নত, আমরাও যদি শিক্ষাদিক্ষায় উন্নত অইতে পারি, তাইলেতো আমাগো দেশও ধনী অইয়া যাইবো। নতুন নতুন মেশিন আবিস্কার অইবো, মিলকারখানা অইবো, আমাগো দেশে অনেক মানুষ আছে, বিদেশ থিকা মানুষ আনা লাগবোনা, নিজেগো মানুষ দিয়াই বাংলাদেশ ধনী অইয়া যাইতে পারবো।

তোমার কতায় যুক্তি আছে, সম্মতি সূচক মাথা ঝুলায় সাদেক মৃধা। তা কতা কইলেইতো অইলোনা, ধণী রাষ্ট্রগুলার মতো আমাগো পোলাপানরে শিক্ষা দেয়ার মতো টাকা কি আমাগো আছে?
তাদের মতো টাকা নাই ঠিকই, তবে যা আছে হেইডাওতো চুরি অইয়া যাইতাছে। শুনলাম, কাগজে কলমে আমাগো স্কুল বিল্ডিং হওয়ার কতা আছিলো তিনতলা, এখন দেখি অইছে দুই তলা। আরেক তলার টাকা কই গেছে?
আবার হুনলাম, শিক্ষামন্ত্রী নাকি আমাগো দেশে সস্তায় বই না ছাপাইয়া, বেশি টাকা দিয়া ভারতে বই ছাপাইতে দিছে, কমিশন খাওয়ার লোভে। আর আমাগো দেশের প্রেস মালিকরা কাজ না পাইয়া প্রেস বন্ধ করে দিতাছে।

খুক খুক করে কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করলেন চেয়ারম্যান সাদেক মৃধা, হেইডা ভিন্ন প্রসঙ্গ! ওগুলা তোমরা বুঝবানা। তোমরা অইছো গিয়া কুয়ার ব্যাঙ, কুয়ার ব্যাঙ বুঝো? কুয়ার ব্যাঙ কুয়ারেই বিশ্ব মনে করে, দুনিয়ার আর কোনো কিছু তাদের বুঝাইলেও বুঝেনা। তোমাগো পড়ালেখা কম এগুলা তোমরা বুঝবানা।

সাদেক মৃধা দ্বিধায় পড়ে যায়, এই অশিক্ষিত মানুষগুলাকে কিভাবে বুঝাবে জনসংখ্যা সমস্যা হচ্ছে এদেশের প্রধান সমস্যা। বাড়তি জনসংখ্যা সমস্যার কারণেই এদেশ পিছিয়ে রয়েছে।
পানের কৌঠা ভর্তি খিলি পান থেকে চট করে একটা মুখে পুড়ে দেয় সাদেক মৃধা। নাহ! ছোট বউয়ের হাতে যাদু আছে, দারুন পান বানায়।পানতো নয় যেনো মধু!

আচ্ছা তোমাগো একটা উদাহরণ দেই, নড়ে চড়ে বসে শ্রোতারা, মনে মনে কথা গুছিয়ে নেন চেয়ারম্যান। এইযে হারিছ উদ্দিন তার পোলারে কোলে করে বসে আছে। এই পোলার বয়স কতো?
হারিছ মিয়া পরম মমতায় ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জবাব দেয়, ৫বছর চ্যারমান সাব, আল্লাহ দিলে ব্রেন অনেক ভালো।
তোমার পোলা মাইয়া কয়ডা?
আল্লায় দিলে ৬জন চ্যারমান সাব।
আচ্ছা তোমার মাসিক ইনকাম কতো?
দশ-বারো হাজার টাকার মতো রোজগার করি।মাথা নিচু করে জবাব দেয় হারিস মিয়া।
এই ইনকাম দিয়ে এতোবড় পরিবার চালাতে তোমার কষ্ট অয়না? নিজের যুক্তির দিকে আত্মবিশ্বাসী ভাবে এগিয়ে যান সাদেক মৃধা।
একটু কষ্ট অয়, তারপরেও আল্লার কাছে শুকরিয়া, আল্লায় ভালোই রাখছে।
ধরো তোমার পোলা-মাইয়া মাত্র দুইটা, তাইলে এই ইনকামে তোমার সংসার এরচাইতে ভালো চলতোনা?
ছেলেটিকে বুকে চপে ধরে মাথা নিচু করে থাকে হারিস মিয়া।
নিজের মনেই মৃদু হেসে ওঠে সাদেক মৃধা, বিজয়ের আভা চোখে মুখে। দেখলাতো মিয়ারা, জনসংখ্যা যে আমাদের একটা বিরাট সমস্যা হেইডা এইবার বিশ্বাস অইছে?

মৃদু স্বরে প্রতিবাদ করে ওঠে হারিস মিয়া, আমার পোলা-মাইয়াগুলা আল্লাহ দিছে, আবার আমার এই আয়ের টাকাও আল্লায় দিছে। আমার পোলা-মাইয়া যদি দুইডা অইতো তাইলে যে এরচাইতে কম ইনকাম অইতোনা হেইডা আমি কেমনে কমু? রিজিকের মালিক আল্লাহ!

ও এখন আল্লাহ’র কথা কও? আল্লায় কি তোমারে সাত-আটটা পোলা-মাইয়া নিতে কইছে? এখন এই পোলা-মাইয়া গুলানরে মানুষ করবা কেমনে? সবগুলাতো মূর্খ অইবো! তুমি ভুল করছো হেইডা স্বীকার করো।
না, মূর্খ অইবোনা, ওগোরে স্কুলে ভর্তি করছি, সবগুলা উচ্চশিক্ষিত অইবো, প্রতিবাদ জানায় হারিস মিয়া।
শুনছি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি হের বাবা-মায়ের চৌদ্দ নম্বর পোলা। চিন্তা কইরা দেখেন, যদি হের বাবা-মা দুইটা সন্তান জন্মের পরেই আপনার এই বক্তব্য শুনতো তাইলে রবীন্দ্রনাথের জন্ম অইতো?
হারিসের কথা শুনে, উচ্চস্বরে হেসে ওঠে উপস্থিত শ্রোতারা। হারিছ মিয়া কতাডাতো মিছা কয়নাই চ্যারমান সাব।
থামো তোমরা! খেকিয়ে উঠেন সাদেক মৃধা। এতো হাইসোনা! কই আগরতলা, আর কই চোকীর তলা! তোমার পোলায় কি রবীন্দ্রনাথ অইবো নাকি?

উঠে দাড়ায় হারিস মিয়া, চ্যারমান সাব, বাড়িতে ম্যালা কাম পইরা আছে, এখন যাইতে অইবো।
যাওয়ার আগে একটা কতা কই, আপনারাতো ছয় ভাই, ভাইগো মইধ্যে আপনিই ছোড, আপনার মরহুম আব্বা হুনছি আপনাগো নিয়া অনেক পরিশ্রম করছে, অনেক কষ্টে আপনার ভাইগো মানুষ করছে।
মরহুম পিতার কথা মনে হতেই আবেগে চোখের পানি চলে আসলো চেয়ারম্যান সাদেক মৃধার। রুমালে চোখ মুছতে মুছতে তিনি বললেন, তুই ঠিকই শুনেছিস, আমার আব্বার মতো মানুষই অয়না।
আচ্ছা চ্যারমান সাব, আপনিতো ছয় নম্বর পোলা, আপনার বাবায় কি আপনারে জন্ম দিয়া ভুল করছিলো?

জবাবের অপেক্ষা করেনা হারিস মিয়া। ছেলেকে কাঁধে চাপিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দেয়। বিশাল কাঁধে চরে বাবার মাথার চুল নিয়ে খেলা করে হারিসের ছেলে।
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সাদেক মৃধা। অস্ফুট স্বরে মুখ হতে বেরিয়ে আসে, মূর্খ! মূর্খ!

২৬জানুয়ারী২০১৪

Post Comment

মিছিলে যাবো।

কে ওখানে?
শব্দটা আবার হলো ঠক ঠক, ঠক ঠক!
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো, এখন বাজে রাত ৩টা, এই অসময় ঘুমের বারোটা বাজানোর জন্য আবার কে এলো! শালার ব্যাচেলর লাইফের এই এক সমস্যা, রাতনেই দিননেই, নানান কিসিমের মানুষের আনাগোনা, আরে ব্যাটা আসবিতো দিনের বেলা আসলে সমস্যা কি, এই শীতের রাতে কি তোকে পাগলা কুত্তায় কামড়াইছে!
আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ, ঠক ঠক। ঠক ঠক
অনেক কস্টে হাচড়ে পাচড়ে কম্বলের নিচ হতে শরীরটা টেনে বের করে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে দরজার কাছে পৌছলাম, তীব্র ঠান্ডায় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
কপাট খুলতেই হতভম্ব হয়ে গেলাম, ‘হাসান তুই! এতো রাতে! কোনো সমস্যা হয়নিতো?!’
‘বলছি, আগে গায়ে কিছু একটা দে, ঠান্ডায় মরে যাচ্ছি’।
বিস্মিত ভাবটা কেটে যেতেই দেখলাম এই তীব্র শীতের রাতেও খালি পায়ে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি এবং লুঙ্গি ছাড়া হাসানের গায়ে আর কিছু নেই।
আয় আয় ভেতরে আয়, দ্রুত হাতে রশিতে ঝোলানো জ্যাকেটটা হাসানের হাতে তুলে দিলাম। ছোট্ট ব্যাচেলর রুম আমার, একটা চকি, একপাশে একটা টেবিল এবং চেয়ার এটাই সম্বল। কাপড় রাখার মতো আলনা নেই, দেয়ালে পেরেক দিয়ে রশি টানিয়েই কাপড় রাখার ব্যবস্থা করেছি।
কোথায় বসতে দেই, একটা মাত্র চেয়ার, তার আবার পায়া ভাঙা, ‘নে বিছানাতেই বসে পর’।

হাসান আমার বাল্যবন্ধু, সেই প্রাইমারী হতে শুরু করে এখন ভার্সিটির লাইফ একসাথেই পড়ছি। বিত্তশালী-প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য এই হাসান, বাজারের সবচাইতে বিশাল দোকানের মালিক হাসানের পিতা, আট-দশটা বড় কোম্পানীর ডিলারশীপ আছে। আর সেই হাসান কিনা খালি পায়ে,খালি গায়ে আমার বাসায় ছুটে এসেছে, নিশ্চই বড় কোনো অঘটন ঘটেছে!
‘চা খাবি?’
‘না না এতো রাতে তোকে বিরক্ত করলাম, এখন কষ্ট করার প্রয়োজন নেই’।
‘আরে রাখ তোর কষ্ট! ফ্লাক্সে গরম পানি আছে, টিব্যাগ ভেজালেই হয়ে যাবে’। অভ্যাস্ত হাতে দুটো চা বানিয়ে ফেললাম, ‘নে চা খা! এই শীতের রাতে এক কাপ চা দারুণ জমবে!’
‘রাতে কিছু খেয়েছিস, নাকি না খেয়েই ঘুরছিস?’
‘খেয়েছিলাম’।
‘দেখ একদম সঙ্কোচ করবিনা, যদিও অধিকাংশ সময়ে হোটেলেই খাওয়া হয়, তবে একটা কেরোসীনের চুলা আছে, মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হলে ঘরেও রান্না করি। আজ আলু ভর্তা এবং ডিম ভাজি করেছিলাম, সাথে ডাল ছিলো হেব্বি খাওয়া হয়েছে। ডাল বোধহয় খানিকটা রয়ে গেছে, ঘরে ডিম আছে, খাবি কিনা বল’।
‘না না, তোর কাছে সঙ্কোচ কিসের, রাতে খেয়েই ঘুমিয়েছিলাম। তারপরতো এখানে’।
‘আচ্ছা এবার শুরু কর, কি হয়েছে, তোর এই অবস্থা কেনো?’

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কিছুক্ষণ আনমনা হয়ে বসে রইলো হাসান, তারপরে ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করলো।
‘তুইতো জানিস, আব্বা ব্যবসায়ী মানুষ। কখনো কোনো ঝুট ঝামেলায় জড়াতে চায়না, পাড়ার মাস্তানরা যখন যা চায় নির্দিধায় দিয়ে দেয়। ব্যবসা করতে হলে ওদের সাথে বিবাদ করা যাবেনা’।
‘হ্যা সেটা জানি, এলাকার জাফর মাস্তানের লোকজন মাঝে মধ্যেই তোদের দোকানে আসতো, আমার সামনেই চাচা বেশ কয়েকবার ওদেরকে বিভিন্ন উপলক্ষে চাঁদা দিয়েছে। চাচা হাসতে হাসতেই একদিন বলেছিলেন, বুঝলা ভাতিজা এরই নাম রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, দাও চাঁদা। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিন দাও চাঁদা, বঙ্গবন্ধু পাকিস্থান হতে দেশে আসছে এই দিনে, দাও চাঁদা। স্বাধীনতা দিবস দাও চাঁদা, বিজয় দিবস দাও চাঁদা। ভাষা দিবস দাও চাঁদা। এই চাঁদা দিতে দিতে আমাদের ব্যবসা চাঁদের দেশে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে’।
‘হ্যা, দিন দিন ওদের চাহিদার পরিমান বৃদ্ধি পেতে লাগলো, সাফ জানিয়ে দিলো, নিয়মিত টাকা দিতে না পারলে ব্যবসা করতে দিবেনা। নিরুপায় হয়ে আব্বাও সাধ্যমতো ওদের টাকা-পয়সা দিয়ে দিতো। সেদিন জাফর এসে জানালো এলাকায় যৌথ বাহিনী আসবে, লিস্টে আমাদের দুই ভাইয়ের নাম উঠেছে আমরা শিবির করি। এখন লিস্ট থেকে নাম কাটাতে হলে ৩লাখ টাকা দিতে হবে, নইলে ক্রস ফায়ারে আমাদের মৃত্যু হলে তার কিছু করার নাই’।
‘কি বলছিস এসব! তুই আবার শিবিরে জয়েন করলি কবে থেকে! আমিতো জানি তুই রাজনীতিকে দুই চোখে দেখতে পারিসনা’
‘তুই ঠিকই জানিস, আমরা দুই ভাইয়ের একভাইও শিবির করিনা, তাছাড়া রাজনীতি যদি করতেই হয়, দেশে অনেক দল আছে ওই রাজাকারদের দল কেনো করতে যাবো!’
‘তারপর কি হলো?’
‘চায়েরকাপে চুমুক দিয়ে আবার কথা শুরু করলো হাসান, আব্বা সাফ জানিয়ে দিলো এতো টাকা দিতে পারবেনা। ওই রাতেই যুবলীগের মিছিল হতে আমাদের দোকানে আগুন লাগানো হলো’।
‘কি বলছিস এসব!’ হাসানের কথা শুনে আতকে উঠলাম। ‘আমিতো শুনেছি বাজাড়ে জামায়াত-শিবির আগুন দিয়েছে’।
‘হ্যা, মিডিয়াতে তেমনই এসেছে, আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম, মিডিয়া সেটা ছাপেনাই। আব্বা থানায় গিয়েছিলেন জাফর মাস্তানের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য, থানা মামলা নেয়নাই’।
‘আজব! মামলা নিবেনা কেনো? দোকানে আগুন লেগেছে মামলা নিতে সমস্যা কোথায়?’
‘সমস্যা অন্যখানে, থানা থেকে বলা হয়েছে এমপি সাহেব ফোন করেছিলেন, আগুন লাগানোর ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হয়েছে। যদি আমরা রাজি হই তবে এমপি-সাহেব নিজে দোকান পরিদর্শনে আসবেন এবং কিছু ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করবেন, টিভি ক্যামেড়া আসবে, পত্রিকায় আসবে। মিথ্যা মামলা করতে আব্বা রাজী হননাই’।
‘অদ্ভুত এদেশ! নোংরা রাজনৈতিক খেলার বলি আমরা সাধারণ জনগণ, তারপর কি হলো?’
‘বলছি, তোর ঘরে পানি হবে? পায়ে কাদা লেগে আছে একটু ধুয়ে আসি’।
‘ওইতো বালতিতে পানি আছে, যা ধুয়ে আয়, কাদা লাগলো কিভাবে?’

আবার কথা শুরু করলো হাসান, ‘বাড়িতে এসেই শুনতে পেলাম আমাদের দুই ভাই এবং আব্বার নামে মামলা হয়েছে’
‘তোদের নাম আবার কি মামলা’?
‘ঘোশের পাড়ার কালি মন্দির ভাঙচুরের মামলা’
‘মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো! আরে কালি মন্দিরতো জাফর মাস্তান এবং তার দলবল ভাঙচুর করেছে মন্দিরের জমি দখল করার জন্য, এটাতো এলাকার সবাই জানে! এই মামলায় তোদেরকে জড়ানো হইছে কেনো?’
‘দোকানে আগুন দেয়ার ঘটনায় আমরা জাফরের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় গিয়েছিলাম, সেকারণে এমপি’র সহযোগীতায় জাফর এই মামলায় আমাদের জড়িয়েছে। মন্দিরের পুরোহীত হারান কাকার সাথে আমি কথা বলেছিলাম, তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “বাবা সবইতো বুঝ! আমরা গরীব মানুষ, নিজেদের জান বাঁচাইতে অনেক কিছু করা লাগে, তোমরা আমাদের মাফ করে দিও”।
পরেতো এলাকায় হুলস্থুল বেধে গেছে, ঢাকা থেকে সাংবাদিক এসেছে, টিভি ক্যামেড়া এসেছে, স্থানীয় গণজাগরণমঞ্চ দেখলাম মন্দির ভাঙার দায়ে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী জামায়াত শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। আর সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেছে জাফর মাস্তান, তার একপাশে দাড়িয়ে ছিলো মন্দির কমিটির সভাপতি হারাধন চাচা আর অন্যপাশে মন্দিরের পুরোহীত হারান কাকা। ঘোশের পাড়ার হিন্দুরা জামায়াত-শিবিরের বিচার দাবী করেছে। আর এমপি সাহেব শুনলাম মন্দির পূণনির্মানের আশ্বাস দিয়েছেন এবং হিন্দুদের মধ্যে ত্রান বিতরণ করেছেন’।
‘হায়রে রাজনীতি! বহুত খারাপ হয়ে গেছে। এই রাজনীতি! তোর গল্প শুনেতো মাথা ভন ভন করতেছে, তারপর কি হলো বল’
‘বলছি, ফ্লাক্সে গরম পানি আছে কিনা দেখতো, আরেক কাপ চা খাবো’
পানি তখনো পর্যাপ্ত গরম ছিলো, ঝটপট দু’কাপ চা বানিয়ে ফেললাম।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হাসান আবার শুরু করলো। ‘মন্দির ভাঙার মামলার কারণে জাফর মাস্তানের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে, আমরা প্রতিবারই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছি’ আজ রাতে আর সেটা সম্ভব হয়নাই’।
মানে! হাসানের কথা শুনে চমকে উঠলাম। ‘চাচা কই, হোসেন ভাই কই? চাচী, বড় আপা? তারা সবাই এখন কোথায়?’
বিষণ্ণ হয়ে গেলো হাসানার কন্ঠ ‘আম্মা আর বড় আপাকে দুই-দিন আগে নানু বাড়ি দিয়ে এসেছি। আব্বা আর বড় ভাইয়াকে যৌথবাহিনী ধরে নিয়ে গেছে, আমি ঝোপের পাশে লুকিয়ে ছিলাম, আমার চোখের সামনেই সেকি নির্যাতন! ছলছল করে উঠলো হাসানার চোখ, দূর থেকে দেখলাম বুলডোজার দিয়ে বাড়িটিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে!’
কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লো হাসান, কি বলে শান্তনা দিবো বুঝতে পারছিলামনা। আসলে শান্তনা দেয়ার মতো ভাষাও অবশিষ্ট নেই। মাথায় একটা হাত রেখে বললাম কান্না করে কি হবে, এখন কি করা যায় সেটাই ভাবতে হবে। চাচা আর বড় ভাইয়াকে কিভাবে ছাড়িয়ে আনা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।

কথা শেষ হতে হতে ফজরের আজান দিয়ে দিলো, এমনিতে তেমন একটা নামাজ পড়া হয়না। কিন্তু আজ কেনো যেনো খুব করে নামাজ পড়তে ইচ্ছে হলো, এমনিতেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে আছে, মনে হলে নামাজ পড়লে প্রশান্তি অর্জন করা যাবে।
‘চল হাসান নামাজ পড়ে আসি’
হাসানও উঠে দাড়ালো, চল!

কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর, নামাজ শেষ, মসজিদ চত্ত্বরের এখানে সেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জটলা, দুই একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কি ব্যাপার এতো মানুষ কেনো?’
কেউ কোনো কথা বলছেনা, অধিকাংশই ইয়াং বয়সী ছেলে-পেলে।
হাসান জিজ্ঞাসা করলো, ‘এতো তরুন মুসল্লী এরা কারা, এখানেতো মাদ্রাসা দেখছিনা’।
চিন্তিত ভঙ্গিতে বললাম, ‘জানিনা, এরা মাদ্রাসা ছাত্র নয়, তবে মনে হচ্ছে শিবিরের মিছিল হবে, এতো ইয়াং ছেলে পেলে এই মসজিদে একসাথে নামাজ পড়েনা, বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়ো হয়েছে মিছিলের কারণে। আর যদি আমার ধারণা ঠিক হয় তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই এখানে কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে, দ্রুত পালাতে হবে’।
‘কেয়ামত শুরু হবে মানে?’ উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করলো হাসান।
‘শিবিরের মিছিলে স্লোগান দিতে দেরী হয়, পুলিশের গুলি করতে দেরী হয়না। যেখানে শিবিরের মিছিল সেখানেই পুলিশের গুলি,টিয়ারশেল,সাউন্ড গ্রেনেড থাকবেই। দ্রত এখান থেকে কেটে পড়তে হবে, চল বাসায় যাই’
‘না, আমি যাবোনা, তুই বাসায় যা’। হাসানের কন্ঠে দৃঢ়তা।
অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি বলছিস তুই?
‘হ্যা, তুই যা, আমি মিছিলে যাবো’।
তুই পাগল হয়েছিস! এটা রাজাকার শিবিরের মিছিল।
হ্যা, আমি শিবিরের মিছিলেই যাবো, হাসানের কন্ঠে প্রত্যয়।
ততক্ষণে মিছিল শুরু হয়ে গেছে, হাজার হাজার কন্ঠে একসাথে স্লোগান,
নারায়ে তাকবীর,
আল্লাহু আকবর!
মিছিলের সাথে মিশে গেলো হাসান, মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উচিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মিছিলের সামনের দিকে, ঠিক সেদিকটায় যেদিকে তাক করা আছে পুলিশের বন্দুকের নল!
আমি এখান থেকেও হাসানের কন্ঠে শুনতে পাচ্ছি,
নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর।
বিপ্লব বিপ্লব, ইসলামী বিপ্লব।
শিবিরের বিপ্লব, ইসলামী বিপ্লব।
শিবির দিচ্ছে আলোর ডাক, ছাত্রসমাজ জাগরে জাগ।

১৩জানুয়ারী২০১৪

Post Comment

“জামায়াত শিবির নিপাত যাক, সুমিতা মুক্তিপাক!”

ধানমন্ডির একটি পাঁচতলা বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোর। এটাই বঙ্গদেশের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উজ্বল আলোয় আলোকিত হলরুম, বিশাল ডেস্কের চারপাশে গোল হয়ে বসেছেন আগত অতিথিরা। হলরুম জুড়ে পিনপতন নিরবতা, ভারতের অর্থে পরিচালিত বঙ্গদেশের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে মি.কাও এর বক্তব্য শোনার জন্য। বিরানী জাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে ডাঃ কামরান কিছু একটা বলার জন্য হাত উচু করলো, তাকে থামিয়ে দিলেন মি.কাও। পাশেই কিছুটা উৎফুল্ল হয়ে বসে আছেন বঙ্গদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য সংঘের সভাপতি হরিদাস পাল।
গম গম করে উঠলো কাওয়ের কন্ঠ, আপনি যাই বলেন আজরফ সাহেব, জামায়াত-শিবিরের জনপ্রিয়তা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা কিন্তু আমাদের বিরাট ব্যার্থতা।
নড়েচড়ে বসলেন সৈয়দ আজরফ, এই একটি মাত্র লোকের সামনে তিনি কুকড়ে যান। অসীম ক্ষমতার মালিক মি.কাও। তার আঙুলের ইশারায় যেকেউ উঠে যেতে পারে ক্ষমতার শীর্ষে, আবার হতে পারে ধপাস পতন।

আমরাতো চেস্টার ত্রুটি করিনাই, আপনাদের ইচ্ছেমাফিক সবকিছুই করেছি। সাজানো ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির ব্যবস্থা করেছি, গ্রেপ্তার করেছি লক্ষ লক্ষ জামায়াত-শিবির কর্মীকে, দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল হতে শুরু করে সবগুলো দলীয় কার্য্যালয় বন্ধ করে দিয়েছি। মিছিলে গুলি করে হত্যা করেছি শত শত জামায়াত-শিবির কর্মীকে। আমাদের আর কি করার ছিলো, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলেন সৈয়দ আজরফ।

আমি কিছু বলতে চাই, হাত উচিয়ে মাইক চাইলেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান ঐক্য সঙ্ঘের সভাপতি হরিদাস পাল। সবগুলো মুখ তার দিকে ঘুরে গেলো। মাথা ঝুকিয়ে সম্মতি দিলেন মি.কাও।
আমরা জঙ্গী ইস্যুকে কাজে লাগাতে ব্যার্থ হচ্ছি কেনো, দেখা যাচ্ছে আমেরিকা সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জামায়াতকে জঙ্গীবাদী সংগঠন মনে করেনা, তাহলে আমাদের টাকায় লালিত-পালিত মিডিয়া কি করছে? তারা কি বসে বসে আঙুল চুষে! একটা ইসলামী দলকে জঙ্গী প্রমান করা কি কঠিন কিছু? রাগান্বিত কন্ঠেই কথাগুলো বললেন হরিদাস পাল।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মতিলালের দিকে জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে তাকালেন কাও। মতিলাল বাংলাদেশের সবচাইতে প্রভাবশালী পত্রিকার সম্পাদক। কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করে কথা শুরু করলেন মতিলাল। দেখুন হরিদাস সাহেব যেটা বললেন, আমরা কিন্তু চেস্টার ত্রুটি করছিনা। জামায়াত-শিবিরের হাতে লাঠি দেখলে সেটার বিশাল ছবি পত্রিকার পাতায় প্রকাশ করি, এবং ‘র’ এর কমান্ডোরা যেসব অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা প্রায় সবগুলো ঘটনার জন্যই জামায়াত-শিবিরকে অভিযুক্ত করার চেস্টা করেছি। এমনকি পুলিশের গুলিতে শিবির কর্মী নিহত হলেও আমরা ‘জামায়াত-শিবিরের তান্ডব’ শিরোনাম করি।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমেরিকা সহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোতো অন্ধ নয়। সরকার জামায়াত-শিবিরের উপর এতো দমন নিপীড়ন পরিচালিত করার পরেও আমরা এখন পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারলামনা। পত্রিকা বলেন টিভি মিডিয়া বলেন কোথাও একটা ছবি,ভিডিও প্রকাশ করতে পারলামনা যেখানে শিবিরের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তাহলে তারা কোন যুক্তিতে জামায়াতকে জঙ্গী সংগঠন বলবে?

মুফতি মাসুদের দিকে আঙুল তুললেন মি.কাও। আমাদের এই ব্যার্থতার কারণ কি, আমরা কেনো জামায়াত-শিবিরের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারিনাই? এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?
বঙ্গদেশের সবচাইতে বড় জঙ্গি সংগঠন “জমিয়তে আনসার উল্লাহ”র প্রতিষ্ঠাতা প্রধান এই মুফতি মাসুদ। কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ কন্ঠেই তিনি শুরু করলেন, জামায়াত-শিবিরের হাতে অস্ত্রতুলে দেয়াকে আমরা যতটা সহজ মনে করেছি কাজটা আসলে ততটাই কঠিন। ওরা শিক্ষিত এবং বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস অধ্যায়ন করে ওরা এসব ব্যাপারে খুব বেশি সচেতন।
সরকারের অব্যাহত দমন পীড়ন এবং পুলিশ বাহিনীর গুলি করার ঘটনার সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা শিবিরকে প্রথমে স্বল্পমূল্যে এবং পরবর্তীতে বিনামূল্যে অস্ত্র সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা রাজী হয়নাই। তবে আমরা পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছি কথাটা ভুল, আমরা এখনো চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রুট লেভেলের কর্মীদের মধ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি তাদের চাপেই জামায়াত-শিবির সশস্ত্র সংঘাতের দিকে পরিচালিত হবে।
আমরা যদি সফল হই তবে জামায়াত-শিবিরকে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়া সহজ হবে এবং জঙ্গিবাদের অজুহাতে পুরো বিশ্বহতে বিচ্ছিন্ন করে ওদের ধ্বংশ করতে সক্ষম হবো বলেই আশা করছি।

কামরান কিছু বলতে চাও? জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে কামরানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন কাও।
না, আমি আর কি বলবো। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচী কি হবে সে ব্যাপারে ইন্সট্রাকশন চাচ্ছিলাম। তাছাড়া আমরা আগেরমতো অর্থনৈতিক সাপোর্ট পাচ্ছিনা, টাকা ছাড়াতো আন্দোলন জমানো যাবেনা। মিছিলে লোক আনতে হলে প্রচুর টাকা প্রয়োজন হয়।
টাকা পেয়ে যাবে, আর কোনো বিষয়?
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আমার নিরাপত্তার কি হবে, দেশের যা অবস্থা এই সরকার যদি সারভাইভ করতে পারে তবে ভালো। কিন্তু যদি আমরা পরাজিত হই! আবেগে কন্ঠ বুজে এলো কামরানের।
ওটা নিয়ে ভেবোনা, সেই চিন্তা আমাদের হাতে ছেড়ে দাও।

ঝেড়ে কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করলেন মি. কাও, একে একে সবার মুখের দিকে একবার করে দৃস্টিপাত করলেন। তটস্থ হয়ে বসলো আগত অতিথিরা। টান টান উত্তেজনা সবার মধ্যেই, নতুন কি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ভারত সেটা জানার আগ্রহে কিছুটে ঝুকে বসলো আগত অতিথিরা।
বক্তব্য শুরু করলেন মি.কাও, সম্মানিত অতিথিরা জীবনের চরমতম ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আপনারা যেভাবে নিষ্ঠার সাথে ভারত সরকার প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ভারত সেই বন্ধুত্বের উত্তম প্রতিদান প্রদান করবে। আপনারা অবগত আছেন ইতোপূর্বে আমাদের বেশ কয়েকটি প্রকল্প ব্যার্থ হয়েছে, কিন্তু আমরা হতাশ নই। আমরা নতুন পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোবো। এই পরিকল্পনা সম্পর্কে এইমূহুর্তে আমি বিস্তারিত কিছু বলছিনা, তবে সবার সামনে একটা করে খাম রয়েছে সেখানেই আপনাদের করনীয় কি সে ব্যাপারে ইন্সট্রাকশন দেয়া আছে, সভা আজকের মতো সমাপ্ত। সবাইকে ধন্যবাদ।

কর্মক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়লেন মতিলাল, ফিচার সম্পাদকদের ডেকে জামায়াত-শিবিরের হাতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মর্মস্পর্ষী গল্প রচনার নির্দেশ দিলেন, আগামী চার-পাচ দিনের মধ্যেই এই গল্পগুলো পত্রিকায় আসবে। ফিচার সম্পাদকরা কিছুটা অবাক হলেও বিনা বাক্যব্যায়ে নির্দেশ মেনে নিলো, তাদের জানা আছে মতিলাল অনর্থক কিছু বলেননা। এর পেছনে নিশ্চই কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।

বিরানী জাগরণ মঞ্চের জরুরী সভা আহ্বান করেছেন ডাঃ কামরান। জামায়াত-শিবিরের হাতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে শত শত ব্যানার ফেস্টুন তৈরি করার পরিকল্পনা করা হলো। সভার একদম পেছনের দিক হতে একজন প্রশ্ন করলো, আচ্ছা কামরান ভাই দেশের কোথাওতো মন্দির ভাঙা হয়নাই, তাহলে ব্যানার ফেস্টুন কেনো? কামরানের মুখে রহস্যময় হাসি, ভাঙেনাই ভাঙতে কতক্ষণ!

হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য সংঘও বসে নেই। হরিদাস পালের নেতৃত্বে সভা হলো। জাতীয় বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতি মেনে নেয়ার আহ্বান জানানো হলো উপস্থিত হিন্দু ধর্মীয়ে নেতাদের কাছে। ধর্মীয় নেতাদের অনেকেই বিস্তারিত জানতে চাইলেন, কেউ কেউ ক্ষেপে গিয়ে প্রশ্ন করলো কি ধরনের ক্ষতি? আর ক্ষতির প্রশ্নইবা আসছে কেনো?
বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করলেন হরিদাস পাল, সবাইকে জানিয়ে দিলেন ব্যানার ফেস্টুন তৈরি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাই কিছু ঘটুক ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মিছিলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

হাম্বালীগ মহাসচিব সৈয়দ আজরফ তার টিম নিয়ে প্রস্তুত, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের জন্য গঠন করা হলো আলাদা আলাদা টিম।

কেয়ামত শুরু হয়ে গেলো বঙ্গদেশে, দাউ দাউ করে জ্বলছে মন্দির, জ্বলছে হিন্দুপাড়া, জ্বলছে মানবতা। দীর্ঘদিন ধরেই পাড়ার নামকরা মাস্তান সজিবের কু-দৃস্টি হরিদাস পালের একমাত্র মেয়ে সুমিতার দিকে। কেন্দ্র হতে গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে আর দেরী করলোনা সজিব। সহযোগীরা বারবার নিষেধ করে বললো হরিদাস পালের বাড়ির ধারে কাছেও যাওয়া নিষেধ আছে, কে শোনে কার কথা, আমি হরিদাস-বড়িদাস চিনিনা, এমন সুযোগ আর পাওয়া যাবেনা। অপহৃত হলো হরিদাসের মেয়ে সুমিতা।

দেশব্যাপী হিন্দু এলাকায় আগ্নিসংযোগ,লুটপাট এবং সুমিতা অপহরণের জন্য জামায়াত-শিবির’কে দায়ী করে রিপোর্ট প্রকাশ করা হলো মতিলালের পত্রিকায়। বিক্ষোভ মিছিলে ফেটে পড়লো বিড়ানী জাগরণ মঞ্চ। হিন্দু,বৌদ্ধ,খৃস্টান ঐক্য সংঘের মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে সাম্প্রদায়ীক জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবী জানালেন। বঙ্গদেশের হিন্দুদের রক্ষার জন্য ভারতের রাজনৈতিক দল সমূহের পক্ষ হতে বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপের দাবী উত্থাপন করা হলো।

আর্তনাদ করে উঠলো হরিদাস, সুমিতার সন্ধানে ছুটে গেলো আজরফের কাছে। ছুটে গেলো মি.কাও এর কাছে, সুমিতার সন্ধান কারো কাছেই নেই। হরিদাস এখন মিডিয়ার অফিসে অফিসে ঘুরে, সাক্ষাৎকার প্রদান করে, “জামায়াত-শিবির নয়, আমার মেয়েকে অপহরণ করেছে হাম্বালীগের সন্ত্রাসীরা! মন্দিরে, হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে হাম্বালীগের সন্ত্রাসীরা”।

পরের দিন মতিলালের পত্রিকায় বিশাল হেডিং-এ নিউজ হয়, “জামায়াত শিবির নিপাত যাক, সুমিতা মুক্তিপাক!”


১০জানুয়ারী২০১৪

Post Comment

কারাগারের দিনগুলো বইয়ের প্রস্তাবিত চারটি প্রচ্ছদ

জীবনের প্রথম ভোট দিতে পারেননাই বলে মনে দুঃখ রয়ে গেছে? এবার ধুমাইয়া ভোট দেন।

কারাগারের স্মৃতিচারণমূলক ধারাবাহিক লেখাটি নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে বই, এটা পুরান কথা। নতুন কথা হচ্ছে আপাতত বইটির নাম দেয়া হয়েছে “আমাদের মিছিল”

বইয়ের জন্য চারটি প্রচ্ছদ প্রস্তাব করা হয়েছে, আপনাদের ভোটেই একটিকে চূড়ান্ত করা হবে। যে প্রচ্ছদটি আপনার পছন্দ হবে সেটাতে কমেন্ট করে মন্তব্য জানানোর অনুরোধ রইলো।

আর দক্ষ অভিজ্ঞ ভাইদের মধ্যে হতে কেউ যদি এর চাইতেও সুন্দর প্রচ্ছদ করে দিতে পারেন, তবে ওয়েলকাম 
 —






৭জানুয়ারী২০১৪

Post Comment

ইসলামী বিপ্লব এবং গণতন্ত্র

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন জামায়াত-শিবির গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে কেনো?
আসলে প্রশ্নটাতেই গলদ রয়ে গেছে। জামায়াত-শিবির গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতি করেনা, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করে। গণতন্ত্র হচ্ছে ইসলাম প্রতিষ্ঠার অনেকগুলো পদ্ধতীর মধ্যে একটি পদ্ধতি।
ইসলাম প্রতিষ্ঠার অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে, যেমনঃ
১। সশস্ত্র সংঘাতের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল
২। দুনিয়ার সকল মানুষকে দাওয়াত দিয়ে ভালো বানিয়ে ফেলবেন এবং এই ভালো মানুষরাই রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে
৩। গণতান্ত্রিক উপায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা।

এক নম্বর পদ্ধতির ত্রুটি হচ্ছে আমাদের তিনদিকে ভারত একদিকে বঙ্গোপসাগর, অস্ত্র দিয়ে যে ক্ষমতা দখল করবো সেই পরিমান অস্ত্র আমাদের হাতে নেই, তাছাড়া যুদ্ধকালীন যে পাশবর্তী রাষ্ট্র হতে অস্ত্র সংগ্রহ করবো সেটাও সম্ভব নয়। আপনি একটি বিষয়ে জেনে থাকবেন, বাংলাদেশই হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র মুসলিম দেশ যে দেশের সীমান্তে অন্য কোনো মুসলিম দেশ নেই।
সুতরাং অস্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চিন্তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এবং এটার কারণে যা হবে সেটা হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন অঙ্কুরেই ধ্বংশ হয়ে যাবে যেমন হয়েছিলো জেএমবি। এবং অনৈসলামীক শক্তি জাসদ।

দ্বিতীয় পদ্ধতির ত্রুটি হচ্ছে, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি নিয়ে তাদের যেটা কমন আইডিয়া সেটা হচ্ছে দেশের সব মানুষ ভালো হয়ে গেলে ইসলাম এমনিতেই রাষ্ট্রক্ষমতায় চলে আসবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এই সংগঠনের অনুসারীরা কেউ নৌকা এবং কেউ ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিয়ে আসে। এবং এটাও সত্যযে দেশের ভালো মানুষগুলো রাজনীতি হতে দূরে সরে যাওয়ার কারণে শয়তানের অনুসারীরা ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে দেয়।

তৃতীয় যে পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে সেটা হচ্ছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা চাইলেই প্রতিষ্টিত হবে একটি পরিপূর্ণ ইসলামীক রাষ্ট্র। এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন যাচাইয়ের জন্য ভোটের আয়োজন করা হবে। এই পদ্ধতিই হচ্ছে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি।
বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত ইসলামীক সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়না।

এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, যে তিনটি পদ্ধতির কথা এখানে আলোচনা করা হয়েছে এর একটি পদ্ধতিও এককভাবে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ফলো করেননাই। তার কর্মপদ্ধতি ছিলো এই তিনটা পদ্ধতিরই কম্বিনেশন, স্থান ও কাল বুঝে তিনি সেগুলো বাস্তবায়ন করেছিলেন।
১। তিনি দাওয়াতী কাজ করেছিলেন
২। পরামর্শ করেছিলেন (ভোটিং সিস্টেম) , ওহুদ যুদ্ধে রাসূল (সঃ) এর মতামত ছিলো শহরের ভেতরে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করা কিন্তু অধিকাংশ সাহাবীর পরামর্শে তিনি মদিনার বাইরে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
৩। আল্লাহর রাসূল (সঃ) যুদ্ধ করেছিলেন

তারপরেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে, চলমান উপায় উপকরণকে সামনে রেখে, বিশ্বের অধিকাংশ ইসলামী সংগঠন এই পদ্ধতিগুলোর একটিকে বেছে নিয়েছে।
এবং এসকল ইসলামী সংগঠনগুলোর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেহেতু অনৈসলামীক রাষ্ট্রে বসবাস করে পরিপূর্ণভাবে ইসলামীক নীতিমালা পালন করা সম্ভব নয়, সেহেতু রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে পরিপূর্ণ খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করা হবে।

৭জানুয়ারী২০১৪

Post Comment

আমরা যারা পিকেটিং করি

মাঝেমধ্যেই মিডিয়ায় নিউজ হয়, 'গাড়িতে আগুন ড্রাইভার নিহত'। সেই গাড়িটি যদি প্রাইভেটকার হয় তবে আমার আপত্তি নেই, ওইগাড়িটাকেতো পোড়াতে হবেই সাথে গাড়ির মালিক যদি গাড়িতে থাকে তবে তার কাপড় খুলে রেখে দিতে হবে। দেশের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে আর আপনি হরতালের দিন ফুটানি করতেছেন।
কিন্তু মনকাঁদে তখুনি যখন শুনি, সেটি সিএনজি চালিত টেক্সি ছিলো, এবং এর চালক অগ্নিদগ্ধ। এই মানুষটি আজ হরতাল অবরোধের দিন নিজের পেটের দায়ে, পরিবারের শিশুদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেয়ার তাগিদে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছে। আপনি-আমিতো সেই ড্রাইভারকে গাড়ির ভেতরে রেখে আগুন লাগাতে পারিনা।

জানি বাংলাদেশের মানুষের গন্ডারের চামড়া, সিরাজউদ্দৌলারা ইংরেজের গোলামীর বিরুদ্ধে জীবন দেয়, আর এদেশের সাধারণ মানুষ তামাসা দেখে।
রাজপথে আতঙ্ক সৃষ্টি না করলে মানুষ হরতাল মানবেনা, দুই চারটা গাড়ি পোড়াতেই হবে, দশ টাকা দামের পটকা ফুটাতেই হবে, এছাড়া উপায় নেই।
আমি এটাও জানি, জালিম সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনীর বুলেটের সম্মুখে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে, জীবনের ঝুকি নিয়ে পিকেটাররা রাজপথে অবস্থান নেয়।
আপনি হয়তো বলবেন, পুলিশের বুলেটের সামনে এতো কিছু দেখার টাইম থাকেনা। তারপরেও ভাই, নিজের বিবেকের কাছে আমাদের জবাবদিহী করতে হয়। ওরাতো অমানুষ! দিনে দুপুরে ঠান্ডা মাথায় আমাদের ভাইদের হৃদপিন্ড লক্ষ করে গুলি করতে ওদের বিবেকে বাধেনা। কিন্তু আমরাতো আওয়ামীলীগ নই, আমরা মুসলিম। ওই সিএনজি ড্রাইভার কিংবা ট্রাক ড্রাইভারের পরিবারের কান্না দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা। আমরা তখন বিবেকের কাছে অসহায়ত্ববোধ করি।

আজকে খবরে দেখলাম ঠাকুরগাঁতে গণপিটুনিতে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিহত, আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুক। এই লোকটাকে হত্যা করতে যতটুকু সময় ব্যায় হয়েছে ততটুকু সময় ব্যালটবাক্স এবং ব্যালটপেপারগুলো পুড়িয়ে ফেলা যেতোনা! তবে কেনো এই প্রাণহানী?
আমাদের উদ্দেশ্য কি, নির্বাচন বাঞ্চাল করা নাকি আওয়ামীলীগের উপর নিজের প্রতিশোধ বাস্তবায়ন করা। এই নিহত ব্যাক্তিটির কি দোষ ছিলো?
ভেবে দেখেছেন, আপনি আমি যেমন এই সরকারের জুলুম নির্যাতনের স্বীকার। এই ব্যাক্তিটিও সেই একই রকম জুলুমের স্বীকার হয়েই নিজের চাকরী বাচানোর স্বার্থে সেখানে গিয়েছিলো।
এই নিহত ব্যাক্তির পরিবারের কথাটা একবার চিন্তা করেন, তার ঘরেওতো ছোট ছোট শিশুরা রয়েছে, তাদের মানসিক অবস্থা একবার চিন্তা করেন। দুনিয়ার সকল সম্পদ ঢেলে দিলেও এই শিশুরা আর কোনদিন তাদের বাবার আদর ফিরে পাবেনা।

আমরাতো চাইনা ছোট ছোট শিশুদেরকে পিতৃস্নেহ হতে বঞ্চিত করতে। আমরাতো চাইনা একটি পরিবারের মুখের খাবার কেড়ে নিতে। পিকেটিংয়ের সময় আমাদের একটু সতর্কতাই পারে একটা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তির জীবন রক্ষা করতে।

৫জানুয়ারী২০১৪

Post Comment

কষ্ট করে ভোট দেয়ার প্রয়োজন নেই, সরকার দিয়ে দিবে।

আমার এক দূরসম্পর্কের মামার কাছে শুনেছিলাম, তিনি তখন অনেক ছোট, হাফপ্যান্ট পড়ে চলাফেরা করতেন। সম্ভবত জিয়া কিংবা এরশাদের সময় কালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হ্যা/না ভোটের ঘটনা।

তো যা বলছিলাম, মামা একটি স্কুলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এক শিক্ষক তাকে ডাক দিলো এই পিচ্চি ভোট দিবি?
মামা দৌড়ে গেলো ‘হ দিমু’
‘তাইলে ভেতরে আয়’।
মামা সারাদিন সেই সকাল হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ব্যালট পেপারে সিল মারলেন এবং ভাজ করে বাক্সে ঢুকালেন। দুপুরে তাকে বিরানী খাওয়ানো হলো এবং ভোট দিয়ে বাসায় আসার সময় হাতে কিছু টাকাও ধরিয়ে দেয়া হলো।

কি সুন্দর ভোটের টেকনিক ছিলো তাইনা? আপনার আমার কষ্টের কথা বিবেচনা করে সরকার এই পদ্ধতীর এপ্লাই করেছিলো। কষ্ট করে আর ভোট দিতে হতোনা।

সেদিন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন, জনগণকে আর কষ্ট করে বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দিতে হবেনা, জনগনের কষ্ট কমে গেছে।
আজ শুনলাম ভোটের সেই সোনালী দিন ফিরে এসেছে, এখন আর কষ্ট করে ভোটই দেয়া লাগবেনা, প্রধানমন্ত্রী জনগনের সেই কষ্টও কমিয়ে দিয়েছেন।
আপনার-আমার পক্ষ হতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই ভোট দিয়ে দিবে। এতো কষ্ট করে ভোট দিতে যাওয়ার কি দরকার!
আওয়ামীলীগ সরকারের হাজার হাজার সফলতার মধ্যে এই সফলতাও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়।

আওয়ামীলীগ এম্পি শেখ আফিলউদ্দিন ঘোষণা করেছেন, “মাঠ যেন ফাঁকা না হয়ে যায়। ১০০ ছেলে থাকবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের লাইনে। ওরা বুথে গিয়ে ভোট দেবে, আবার এসে লাইনের পেছনে দাঁড়াবে। ওরা বাড়ি যাবে না। ১০০ ছেলে সারা দিন লাইনে থাকবে।” প্রতিটি কেন্দ্রে তার উপজেলা থেকে ১০০ নির্ভীক কর্মী উপস্থিত থাকবে।
ওই কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই এমপি বলেন, “প্রশাসনিক কোনো ভয় নেই; সেটা আমি দেখব। লোক ও সাংবাদিকরা এসে দেখবে মাঠ ভরা।”

শেখ হাসিনা ওয়াদা করেছিলেন দেশ সিঙ্গাপুর বানাবেন, দেশ এখনো সিঙ্গাপুর হয়নাই তবে ইন্ডিয়াতো হইছে, এটাই বা কম কিসে। আরেকবার ক্ষমতায় আসলে সিঙ্গাপুর বানানো হবে নিশ্চিত।
আসেন সবাই ভোট দেই। জয় বাংলা, ভোটার সামলা।

http://www.youtube.com/watch?v=8g44t_XGs7I&feature=youtu.be

২জানুয়ারী২০১৪

Post Comment

আল্লাহর পরীক্ষা এবং মুনাফিকের পরিচয়

গতকাল এবং আজকে বেশ কয়েকজন সাংগঠনিক এবং অসাংগঠনিক ভাই ইনবক্সে প্রশ্নের ঝড় তুলেছেন। তাদের একটাই প্রশ্ন, কুষ্টিয়ার ঘটনা কি সত্য, নাকি বানোয়াট নিউজ?
এক্ষেত্রে সংগঠনের ভাইরা প্রশ্ন করেছেন উদ্বিগ্ন হয়ে, অন্যদিকে অসাংগঠনিক ভাইরা প্রশ্ন করেছেন অবাক হয়ে। কারণ জামায়াতের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল।
ঘটনাটি হচ্ছে কুষ্টিয়াতে এক জামায়াত নেতা আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন, যুগলীগের সমাবেশ মাহবুবুল আলম হানিফের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করেন।১

যেসব ভাই প্রশ্ন করেছেন তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলছি, আপনারা পত্রিকার মাধ্যমে যা শুনেছেন সেটা সত্যি। এবং এই ঘটনার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।

আমরা মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথা জানি, স্বয়ং রাসূল (সঃ) এর সাথে সে মুনাফিকী করেছিলো, সে ছিলো মুনাফিকদের সর্দার। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইরা সব যুগেই ছিলো এখনো আছে।
ওহুদের প্রান্তর হতে মুজাহীদ বাহিনীর বিরাট একটা অংশকে নিয়ে ফিরে এসেছিলো এই আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই, সে ইতিহাস আমরা ভুলিনাই।
ইসলামী আন্দোলনের উপর আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে সাময়ীক বিপদ আপতিত হয় মুনাফিকদের ভেজাল হতে সংগঠনকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য।
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন, এই লোক সংগঠনের বড় কোনো ক্ষতি করার আগেই আল্লাহ তাকে সংগঠন হতে সরিয়ে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।


১জানুয়ারী ২০১৪

Post Comment

সেই ভয়ঙ্কর চুক্তি এবং সিকিমের পথে বাংলাদেশ।

সেই ভয়ঙ্কর চুক্তি এবং সিকিমের পথে বাংলাদেশ।
যে ৭দফা মৈত্রি চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষ নিয়েছিলো সেটা বিশ্বব্যাপী গোলামী চুক্তি নামেই অধিক পরিচিত লাভ করে। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
যদিও পরবর্তীকালে শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে সে চুক্তি তখন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু বর্তমানে তারই কন্যা শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপই চুক্তি বাস্তবায়নের দিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

আসুন দেখা যাক কি ছিলো সেই ৭ দফা গোলামী চুক্তিতেঃ
১. যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে শুধু তারাই প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত থাকতে পারবে। বাকীদের চাকুরীচ্যুত করা হবে এবং সেই শুন্যপদ পূরণ করবে ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

২. বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে (কতদিন অবস্থান করবে, তার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি)। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাস থেকে আরম্ভ করে প্রতি বছর এ সম্পর্কে পুনরীক্ষণের জন্য দু'দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

৩. বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না।

৪. অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে।

৫. সম্ভাব্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব দেবেন ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়কত্বে থাকবে।

৬. দু'দেশের বানিজ্য হবে খোলা বাজার (ওপেন মার্কেট) ভিত্তিক। তবে বাণিজ্যের পরিমান হিসাব হবে বছর-ওয়ারী এবং যার যা পাওনা, সেটা স্টার্লি-এ পরিশোধ করা হবে।

৭. বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশ্নে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে এবং ভারক যতদূর পারে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে।

প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সাত দফা গোপন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর দানের পরপরই তিনি মুর্ছা যান।

( দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা-৩২৫, লেখকঃ মুহাম্মদ নূরুল কাদির, সাবেক ভ্রাম্যমান কূটনৈতিক প্রতিনিধি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার-মুজিবনগর) (সোর্স লিঙ্ক)

এপর্যায়ে আমরা দেখবো কিভাবে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ধীরে ধীরে চুক্তির বিভিন্ন ধারাগুলো বাস্তবায়ন করছেন, মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা।
১। চুক্তির ১নম্বর ধারা অনুযায়ী, ভারতীয় কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে 
বাংলাদেশের আইটি খাতের উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে ভারতীয় নাগরিক বিক্রম দাশগুপ্তকে। (রেফারেন্সলিঙ্ক)
এরপূর্বেও বিটিআরসিতে ৫জন ভারতীয় কর্মকর্তাকে নিয়োগের তথ্য ফাঁস করেন মাহমুদুর রহমানের আমারদেশ।,পরবর্তীতে এই নিউজের জন্য মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে হয়রানী মূলক মামলা দায়ের করে বিটিআরসি (রেফারেন্সলিঙ্ক)

২। চুক্তির দুই নম্বর ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে গোপনে অবস্থান করছে ভারতীয় সেনাকর্তারা। (রেফারেন্স লিঙ্ক)

৩। চুক্তির তিন নম্বর শর্ত অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে ধ্বংশ করা হচ্ছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে। আওয়ামী সরকারের এই মেয়াদে,
প্রথম দফায় পিলখানাতে অভ্যুত্থান নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয় ৫৭জন সেনা অফিসারকে
দ্বিতীয় দফায় চাকরীচ্যূত করা হয় ১৯৭ কর্মকর্তাকে (রেফারেন্স লিঙ্ক)
তৃতীয় দফায় চাপপ্রয়োগ করে অবসর গ্রহণে বাধ্য করা হয় ১৬১ সেনা অফিসারকে (রেফারেন্স লিঙ্ক)

৪। চুক্তুতির চতুর্থ ধারায় ছিলো অভ্যান্তরীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে। 
শেখ মুজিব গঠন করেছিলেন রক্ষিবাহিনী, শেখ হাসিনার সেটা প্রয়োজন হয়নাই, তিনি বিরোধী মত দমনে র‍্যাবকে রক্ষিবাহিনীতে রুপান্তরিত করেছেন, এবং সীমান্তরক্ষীবাহিনীকেও সন্ত্রাসী বাহিনীতে রুপান্তরিত করে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন।

৫। পাঁচ নম্বর ধারা অলরেডি বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, মুক্তিযুদ্ধকে ভারতীয়রা ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ নামেই আখ্যায়িত করে এবং এ যুদ্ধে পাকিস্থানীরা ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে। 
চুক্তির এই অনুচ্ছেদটির কথা মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনাআয়ক জেনারেল ওসমানীকে জানানো হলে তীব্র ক্ষোভে তিনি ফেটে পড়েন এর প্রতিবাদে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্থান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকতে অস্বীকার করেছিলেন। (সোর্স লিঙ্ক)

৬। ছয় নম্বর দফার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলবোনা, আপনার ঘরের পাশের দোকানে গেলেই বুঝতে পারবেন, ওপেন মার্কেট এখন একতরফা মার্কেটে পরিণত হয়েছে, ভারতীয় পণ্যে সয়লাভ বাংলাদেশের বাজার।

৭। সাত নম্বর ধারার মূল বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কি হবে সেটা ভারত ঠিক করে দিবে, ভারতের কথা অনুযায়ীই বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক নির্ধারণ করবে।
চুক্তির এই ধারাটিও অলরেডি বাস্তবায়ন হয়ে গেছে
বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রকাশ্যই আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ (রেফারেন্সলিঙ্ক)

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, চীনের রাষ্ট্রদূতের একটা বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, তিনি বলেছিলেন, "চীন স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতেচায় 
সর্বশেষ একটাই প্রশ্ন, সিকিম হতে কত দেরী পাঞ্জেরী? আমরা কি সত্যিই স্বাধীন, নাকি সিকিমের আপগ্রেডেড ভার্সন?

৩১ডিসেম্বর ২০১৩


Post Comment

তাবলীগ, কম্বললীগ, চর্মোনাই লীগ এবং একটি পর্যালোচনা।

গণতন্ত্র হত্যা করে নব্যবাকশাল প্রতিষ্ঠার যে ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা করেছেন, তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বধীন ১৮দলীয় জোট। ঘোষণা করা হয়েছে মার্চ ফর ডেমোক্রেসির। এই ঢাকা অভিমুখী মার্চ ফর ডেমোক্রেসির কর্মসূচীতে নির্যাতিত নিপীড়িত দেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করবে। তবে যারা মানুষ নয় নিজেকে আওয়ামীলীগ মনে করে তারা এই কর্মসূচীকে বর্জন করবে।

এপর্যন্ত আমরা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন ব্রাঞ্চের সাথে পরিচিত হয়েছি, আজ আপনাদেরকে আওয়ামীলীগের নতুন কিছু ব্রাঞ্চের সাথে পরিচিত করিয়ে দিবো, যারা প্রত্যাক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে আওয়মীলীগকে ক্ষমতায় রাখার পেছনে ভূমিকা রাখছে।

তাবলীগঃ
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ, যুবকবয়সে যুবলীগ, মধ্যবয়সে আওয়ামীলীগ এবং বৃদ্ধবয়সে তাবলীগ নামেই যারা খ্যাতিমান।
এই সংগঠনটি মসজিদে বসে সারাদিন ঢিলা কুলুখ, মেসওয়াক, দাড়ি, পাগড়ী, জুব্বা নিয়ে আলোচনা করে। সুবহানআল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহ পড়লে কত সওয়াব হবে সে নিয়ে লিপ্ত হয় বিস্তর গবেষণায়।
দেশের শাসন ক্ষমতায় ফেরাউন, নমরুদ নাকি দজ্জাল অধিষ্ঠিত এই নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। তবে হ্যা একটা বিষয়ে তারা রাজনীতি সচেতন, সে বিষয়টা হচ্ছে মসজিদে বসে বসে দিনরাত তারা জামায়াত-শিবিরের চৌদ্ধগুষ্ঠি উদ্ধার করে বয়ান করে। তবে ভুলেও কখনো আওয়ামীলীগের ইসলাম বিরোধী ভূমিকার সমালোচনা করেছে বলে কেউ বলতে পারবেনা।

কম্বল জিহাদি লীগঃ
“জিহাদ, জিহাদ, জিহাদ চাই, জিহাদের টাইমে আমি নাই”, এটাই হচ্ছে কম্বল মুজাহীদদের স্লোগান।
এই কম্বল মুজাহীদদের বক্তব্য হচ্ছে, ইট পাথর এবং গুলতি দিয়ে জিহাদ হয়না। জিহাদ করতে হলে একে ফোর্টিসেভেন ইউজ বাধ্যতামূলক, নইলে জিহাদের হক আদায় হবেনা। স্বয়ং রাসূল (সঃ) যেখানে বলেছেন যুদ্ধ একটি কৌশল, সেখানে এই কম্বল মুজাহিদদের বক্তব্য হচ্ছে, কৌশলের টাইম নাই! ধর তক্তা, মার পেরেক।
এই কম্বল মুজাহীদরা শেখ হাসিনার নব্য বাকশালের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত জিহাদের ঘোষণা দিয়েছে বলে কেউ বলতে পারবেনা। তবে হ্যা, শেখ হাসিনাকে আরো কিছুদিন ক্ষমতায় রাখার ব্যাপারে তাদের কারো কারো বক্তব্য শোনা গেছে। তাদের ভাষায় হাসিনাকে আরো কিছুদিন ক্ষমতায় রাখা উচিত, তাহলে জনগণ বাধ্য হয়ে, হাসিনার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অস্ত্র ধারণ করবে।

হিজবুত লীগঃ
“গণতন্ত্র হারাম, আওয়ামীলীগে আরাম” এটাই হচ্ছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে হিজবুত লীগের মূলমন্ত্র।
এরা চাতক পাখির মতো খিলাফতের আশায় হা করে বসে আছে, কবে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে টুপ করে তাদের মুখে নিক্ষেপ করবে, আর তারা সেখান থেকে খিলাফতের স্বাদ আস্বাদন করবে। আওয়ামীলীগ চিরজীবন ক্ষমতায় বসে থেকে দেশ হতে ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিলেও এদের চামড়ার নিচের অনুভূতিরা জাগ্রত হয়না।
গত সিটি নির্বাচনে হিজবুত লীগের এক সদস্য ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছিলো, আওয়ামীলীগ জিতলেই আমাদের কি আর বিএনপি জিতলেই আমাদের কি? দুইটাই কুফফার!
ওইতো সেনাবাহিনী আসছে, খিলাফত প্লেটে ঢেলে দিয়েছে, এবার খিলাফত মাখাচ্ছে, আর কিছুক্ষণ পরে খিলাফত মুখে তুলে খাইয়ে দিবে।
আওয়ামীলীগের ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ড এবং জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে এদের কোনো কর্মসূচি নেই।

চর্মোনাই লীগঃ
নারী নেতৃত্ব হারাম! তবে সেটা শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, হাসিনার ক্ষেত্রে নয়। আপাতত এটাই হচ্ছে চর্মোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মূলনীতি।
এখন পর্যন্ত আওয়ামীলীগ বিরোধী কোনো কর্মসূচীতেই এই দলটির খুব একটা সক্রিয়তা চোখে পড়েনাই, এমনকি হেফাজতের সমাবেশের আগে পড়েও এই দলের পক্ষ হতে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।
আওয়ামীলীগ সরকারের ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ড এবং জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে যে “মার্চ ফর ডেমোক্রেসি” কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেখানে ১৮দলীয় জোটের বাইরের বহু দল অংশগ্রহণের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত চর্মোনাই পীরের দলের পক্ষ হতে কোনো ঘোষণা আসেনাই।
তবে কি আমরা ধরে নিবো, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের কর্মকান্ডে এই দলটি সন্তুষ্ট?

সর্বশেষ যে কথাটি বলতে চাই, উপরে যে দলগুলোর কথা বলা হলো, তাদের একটিও আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠন নয়। তবে আমরা জানি “নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ”। অতএব যে বা যারাই চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন প্রদান করবেনা, তারা নিশ্চিত ভাবেই মানুষ নয় আওয়ামীলীগ।
এই দলগুলো প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামীলীগকে সমর্থন না করলেও পরোক্ষভাবে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় রাখতে সহায়তা করছে। আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ না করে তাদের জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রাখতে ভূমিকা পালন করছে।

২৭ডিসেম্বর২০১৩

Post Comment

শেখ হাসিনার হাইকোর্ট

অন্ধকে হাইকোর্ট দেখানো বাক্যটির সাথে আমরা বেশ পরিচিত, এই বাক্যটির উৎপত্তি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানতে না পারলেও এনিয়ে মুখরোচক একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো।
এক বাংলাদেশী শ্রমিক আমেরিকা গিয়েছে একটু উন্নত জীবন যাপনার ইচ্ছায়। স্বভাবতই বাংলাদেশীরা একটু চাপাবাজ স্বভাবের, সে তার সহকর্মীদের কাছে নিজের দেশের গুণগান বর্ণনা শুরু করে দিলো, আমার দেশ হ্যান, আমার দেশ ত্যান, দেশের বাড়িতে আমার এই আছে, সেই আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন তার সহকর্মীরা তাঁকে ধরলে তার গ্রামের বাড়ির ছবি দেখানোর জন্য।
গ্রামের কুড়েঘড়ের ছবি দেখালেতো ইজ্জত থাকেনা, তাই ওই বাঙালী হাইকোর্টের ছবি দেখিয়ে সহকর্মীদের বলে দিলো, এই হচ্ছে আমার গ্রামের বাড়ি!
বন্ধুরা দেখেতো হতবাক, বাংলাদেশের একজন শ্রমিকের বাড়ি যদি এতো সুন্দর হয়, সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি না জানি কত সুন্দর!

সে যাই হোক, ওই বাংলাদেশী না হয় তার বিদেশীবন্ধুদের হাইকোর্ট দেখিয়ে রেহাই পেয়ে গেলো। এবার আমাদের দেশের আরেক বুদ্ধিমান বাংলাদেশীর সাথে আপনাদের পরিচিত করিয়ে দিচ্ছি। তিনি বাংলাদেশে বসবাস করেই এদেশের ষোল কোটি মানুষকে প্রতিনিয়ত হাইকোর্ট দেখিয়ে যাচ্ছেন।

এই ধুরন্দর ব্যাক্তি হচ্ছেন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী। আদালত রায় দিলো, আগামী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায় সরকার পদ্ধতি রেখেই পরবর্তীতে অন্য পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে। তিনি সাথে সাথেই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাদ দিয়ে দিলেন, ষোল কোটি বাংলাদেশীকে হাইকোর্ট দেখিয়ে দিলেন। ঘোষণা দিলেন, আদালতের নির্দেশেই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছি।
ইচ্ছেমতো সংবিধানকে কাঠাছেড়া করে তৈরী করলেন বাকশালী সংবিধান! এবং বাংলাদেশীদের সংবিধানের হাইকোর্ট দেখিয়ে বলে দিলেন, তিনি সংবিধান মানেন, সংবিধান হতে একচুলও নড়বেননা। কিছু সংখ্যক আওয়ামীলীগ ব্যাতিত, সকল মানুষ তার এই সংবিধানের উপর থু থু নিক্ষেপ করলো।

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল, গ্রামীন ব্যাংক, এবং আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় আসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন। আবেগে গদ গদ হয়ে ওইদিন এবং তার পরের দিন সারাদেশের ইলেক্ট্রনিক্স এবং প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রচারিত হলো, হিলারী ক্লিনটন শেখ হাসিনার শাসনামলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরবর্তীতে ফাঁস হওয়া টেলিফোন আলাপের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, ফোন করে শেখ হাসিনাকে মারাত্মক রকমের ঝাড়ি প্রদান করেছিলেন হিলারী ক্লিনটন। এবং সেখানে হাসিনার দুঃশাসনের অনেক ব্যাপারেই কথা বলেছেন তিনি।

নিজের হাবা-গোবা ছেলেকে নিয়ে বারাক ওবামার সাথে দেখা করতে গেলেন শেখ হাসিনা। স্বাভাবিক ভাবেই কোনো মায়ের সাথে তার সন্তান থাকলে মুরব্বিরা সেই সন্তানের একটু প্রশংসা করে, গাল টিপে দেয়।
বারাক ওবামাও শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের একটু প্রশংসা করে দিলেন, যেহেতু পোলা বড় হইছে তাই গাল টিপতে পারেননাই। কিন্তু ওইযে প্রশংসা করেছে, এতেই খুশিতে গদ গদ হয়ে বাংলাদেশীদের আবারো হাইকোর্ট দেখালেন হাসিনা। বারাক ওবামার সাথে আমার পোলার হেব্বি খাতির, বারাক ওবামার মেয়ে বিয়ে দিবে আমার পোলার কাছে, এই হচ্ছে অবস্থা! সারাদেশে ব্যানার পোস্টার লাগানো হলো “ইওর সান ইজ ভেরি স্মার্ট”

সংলাপের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়াকে ফোন করলেন শেখ হাসিনা, দেশ ব্যাপী অন্ধ বাংলাদেশীদের জানানো হলো হাসিনার কথার জবাব দিতে সক্ষম হয়নাই খালেদা জিয়া, অশিক্ষিত মানুষ কথা জানে নাকি?! শেষ পর্যন্ত সরকারের অতি চালাকিতে সেই টেলিফোন কনভার্সেশন যখন মিডিয়াতে প্রকাশ পেলো, আমরা দেখলাম হাসিনার হাইকোর্ট ধুলোয় মিশে গেছে!

শেখ হাসিনার প্রেস সেক্রেটারি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, জাতিসংঘের মহাসচিব শেখ হাসিনাকে ফোন করেছেন, ফোনে তিনি আগামী নির্বাচন যেনো সুষ্ঠ হয়ে সে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে শান্তিরক্ষা মিশনে আরো এক প্লাটুন সৈন্য, হেলিকপ্টার এবং আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র পাঠাতে অনুরোধ করেছেন।
আহা! এবার তিনি বাংলাদেশিদের দেখিয়ে দিলেন হাইকোর্ট কতপ্রকার ও কি কি! যেই নির্বাচনে জাতিসংঘের সমর্থন পর্যন্ত নেই, আমেরিকা, ইউরোপ সহ গোটা বিশ্ব যে নির্বাচন প্রত্যাক্ষাণ করেছে, জাতিসঙ্ঘ সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে, মাশাআল্লাহ! শুধু তাই নয়, শান্তিরক্ষা মিশনে আরো সেনা পাঠাতে বলেছে!
আসেন আমরা সবাই শেখ হাসিনার হাইকোর্ট দেখি!

২৫ডিসেম্বর২০১৩

Post Comment

তথ্য সন্ত্রাসঃ একটি প্রামান্য দলিল

/“সশস্ত্র হামলার হুমকি দিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক”
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ব্যারিস্টারা আব্দুর রাজ্জাক বঙ্গভবনে সশস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছেন। যদিও আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে বঙ্গভবনের নিরাপত্তা জোড়দাড় করা হয়েছে, তবুও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বঙ্গভবনে হামলার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গভবনে হামলার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে একটি গোপন রিপোর্ট জমা দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, বঙ্গভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং অন্যান্য সরকারী অফিসের নিরাপত্তাও জোড়দার করা হয়েছে। এবং আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পুলিশ টহল বৃদ্ধি করেছি।/

কি খবরটা শুনে চমকে গেলেন?! মূল ঘটনায় আসার আগে বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি যদি কারও ক্ষতি করতে চান তবে মিডিয়ার এই যুগে আপনার সবচাইতে বড় কৌশল হচ্ছে তার বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস করা।
আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশ দীর্ঘদিন ধরেই চেস্টা করছে জামায়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক জঙ্গী কানেকশন প্রমান করতে, বুদ্ধিজীবি শাহরিয়ার কবিরতো ইতোমধ্যেই “আল্টিমেট জিহাদ” সহ দুইটি মুভি তৈরী করে ফেলেছেন, জামায়াতের আন্তর্জাতিক জঙ্গী কানেকশনের কল্প কাহিনী নিয়ে। যদিও তাদের সেই প্রচেস্টা আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের পরে পাকিস্থানের জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপনের ঘটনায় ক্ষমতাসীন সরকার সমর্থক মিডিয়া তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এটাই কিন্তু মোক্ষম সময় এবং সুযোগ, যেই গোষ্ঠিটি জামায়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক জঙ্গী কানেকশন খুজে বেড়াচ্ছে তারা সুন্দর একটা উপলক্ষ পেয়ে গেলো, তেহরিক ই তালিবানের নামে ছড়িয়ে দিলো মিথ্যা ভিত্তিহীন খবর।
স্বাভাবিক ভাবেই তেহরিক ই তালিবান যাদের পক্ষে কথা বলবে, তারাও তেহরিক সমর্থক হিসেবে পরিগণিত হবে। এখন যেহেতু তেহরিক ই তালিবান জামায়াতের পক্ষ নিয়ে হুমকি দিয়েছে, সেহেতু জামায়াতও টিটিপি’র সমর্থক সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করলো।

এবার মূল বিষয়ের দিকে দৃস্টিপাত করছি, লেখার শুরতে যে খবরটি দেয়া হয়েছে তার তথ্যসূত্রের দিকে লক্ষ করেছেনতো?
বিশ্বের তাবৎ হলুদ মিডিয়া ভুয়া নিউজ তৈরী করার সময় কয়েকটি তথ্যসূত্র ব্যবহার করে ১।বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে ২।নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ৩।গোয়েন্দা সূত্র জানায়। ৪।বিশ্লেষকদের ধারণা। ৫।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রে
এইসব তথ্যসূত্র উল্লেখ করতে কাউকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন হয়না, কিংবা পরিবেশিত খবরের কোনো লায়াবিলিটিও নেয়ার প্রয়োজন হয়না। মনের মাধুরী মিশিয়ে সংবাদের নামে মিথ্যাচার করা যায়।

“পাকিস্থানী তেহরিক ই তালিবান হুমকি দিয়েছে, পাকিস্থানে অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাসে হামলা করা হবে”। খবরটি প্রথম প্রকাশ পায় “দ্যা ন্যাশন” নামক পাকিস্থানের একটি ইংরেজী দৈনিকে, এরপর ওই পত্রিকার সূত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিডিয়া একই খবর প্রকাশ করে, যেমনঃ বাংলাদেশের ডেইলিস্টার, বাংলাদেশ টুডে, নিউ এইজ, ঢাকা ট্রিবিউন, ডেকান হেরাল্ড সহ দেশি বিদেশী অসংখ্য প্রিন্টিং ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ায়।

কি ছিলো “দ্যা ন্যাশন” নামক সেই পত্রিকার খবরের তথ্যসূত্র? যে খবরটি বিশ্বব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে?!
খবরটি একনজরে দেখা যাক।
ISLAMABAD - The banned Tehrik-e-Taliban Pakistan (TTP) has threatened to attack Bangladesh Embassy in Islamabad in the wake of the killing of Abdul Qadir Mulla, Jamaat-e-Islami (JI) leader in Bangladesh, it was reliably learnt on Wednesday.
Although security around Bangladesh foreign mission in Pakistan has been enhanced manifold and the fresh security directions have been issued to Ambassador of Bangladesh, yet law enforcement agencies still fear a terrorist attack at BD mission. According to well-placed sources, law enforcement agencies have submitted a report to interior ministry quoting a security agency that Taliban have expressed annoyance with the Bangladesh government over the killing of Abdul Qadir Mulla and could attack the Bangladesh embassy. The unnamed security agency officials had called for preventive measures in the wake of the threats.
The Bangladesh Embassy is located in the residential area of F-6/3, considered one of the most posh sectors of Islamabad.
A senior official of law enforcement agency while talking to The Nation said they have chalked out an elaborate security plan for security of Bangladesh embassy and security has been enhanced of major embassies in the federal capital.
“We have also deployed police commandoes at these sensitive places to avoid any untoward incident during Christmas holidays while patrolling has been enhanced around them,” the security official added.

এবার নিউজটির তথ্যসূত্র দেখি
১। it was reliably learnt on Wednesday. (নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে)
২। According to well-placed sources,
৩। The unnamed security agency officials(আবারো আন নেইমড সিকিউরিটি এজেন্সি)
৪। quoting a security agency (সিকিউরিটি এজিন্সির নাম কই?)
৫। A senior official of law enforcement agency (এই ব্যাটার নাম কই?)

এই ভুয়া/হলুদ খবরটি পড়েই শাহরিয়ার কবির কিংবা অন্যান্য মিডিয়া জামায়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক জঙ্গি কানেকশন আবিস্কার করে ফেলেছে। জামায়াতে ইসলামীকে তেহরিক ই তালিবানের বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ বানিয়ে ফেলেছে।
ইতোমধ্যেই অনেক ডানপন্থী ব্যাক্তি পাকিস্থান সরকার এবং টিটিপির বিরুদ্ধে নিন্দাও জানিয়েছেন, কিন্তু খবরের পেছনের বাস্তবতা যাচাই করার সময় এবং সুযোগ কোনোটিই তাদের হয়ে উঠেনি।

সর্বশেষ একটি বিষয়ের দিকে দৃস্টি আকর্ষণ করেই লেখাটির ইতি টানবো, জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন সাংবাদিকরা। কিন্তু সেই সাংবাদিকরা যদি জন্ডিশে আক্রান্ত হন, তাহলে হতাশা ব্যক্ত করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতে পারেনা। হলুদ মিডিয়া এবং হলুদ সাংবাদিকরাই কি আমাদের চিন্তা চেতনার নিয়ন্ত্রণ করবে? এর থেকে পরিত্রানের উপায় কি নেই?

দ্যা নেশনের সেই খবরটির লিঙ্কঃ http://www.nation.com.pk/islamabad/19-Dec-2013/security-beefed-up-as-taliban-threaten-to-attack-b-desh-embassy

২০ডিসেম্বর২০১৩

Post Comment

হলুদ মিডিয়া এবং ছাগু প্রজন্ম

১। আলী আহসান মুজাহীদ বললেন, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই।
-হলুদ মিডিয়া হই হই করে উঠলো, ঘুশি পাকিয়ে ছুটে এলো, ব্যাটা তোর সাহসতো কমনা। তুই এতোবড় সত্যকথা কইলি। আজ তোর একদিন কি আমাদের দশদিন।
ব্যাস হয়ে গেলো কাজ, ছাগু প্রজন্ম মিন মিনে কন্ঠে বলতে শুরু করলো, মুজাহিদ সাহেব কাজটা ঠিক করেননাই, এই পরিস্থিতিতে এই কথা না বললেও চলতো, মুজাহিদ সাহেব বেশি বুঝেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।

২। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন রায় প্রদান করা হলো। কর্মীরা আবেগে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো, প্রতিবাদে ফেটে পড়লো গোটা দেশ। আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেব কর্মীদের আশ্বস্ত করলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য জেল জুলুম নির্যাতন নতুন কিছু নয়, এই জেল জুলুমের পথ ধরেই আসবে বিজয়। এই রায়ে আমরা বিচলিত নই, আমরা ভেঙ্গে পড়িনাই। নেতা-কর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি তিনি প্রদর্শন করলেন বিজয় চিহ্ন
- হলুদ মিডিয়ার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলো এই বিজয় চিহ্ন। ব্যাটা তুই বিজয় চিহ্ন দেখালি ক্যান? তুই মাথা নিচু করে থাকবি, বিচারকের পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চাইবি। কানতে কানতে পাঞ্জাবির আস্তিন ভিজিয়ে ফেলবি। তুই বিজয় চিহ্ন দেখালি ক্যান, এইটা নিয়ে আমরা ৯০দিনের শোক পালন করুম।
ব্যাস হয়ে গেলো কাজ, ছাগু প্রজন্ম মিন মিনে কন্ঠে বলতে শুরু করলো, আহা! কি দরকার ছিলো এই বিজয় চিহ্ন দেখানোর। চুপ করে থাকলে কি হইতো। খালি খালি বিজয় চিহ্ন দেখাইতে গিয়ে এখন একটা গ্যাঞ্জাম বাজাইয়া দিছে। আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেব এটা ঠিক করেননাই।

৩। বিশ্বজিতকে হত্যা করা হলো, ছাত্রলীগ কুপিয়ে খুন করলো বিশ্বজিতকে।
- ভারত নিয়ন্ত্রিত হলুদ মিডিয়া চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। আহারে! আমাদের জাতের একটা পোলারে এমনভাবে কুপিয়ে হত্যা করলো, এই অন্যায় জুলুম আমরা মেনে নিবোনা। পুরো বিশ্বকে ভিডিও চিত্রের মাধ্যেমে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এই সংখ্যালঘু নির্যাতনের দৃশ্য দেখানোর প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেলো।
ব্যাস শুরু হয়ে গেলো ছাগুদের ম্যাতাকার, চারদিকে বিশ্বজিৎ বিশ্বজিৎ নামে রব উঠে গেলো। এদিকেযে গোটা দশেক মুসলিম বিশ্বজিৎকে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই, জিজ্ঞাসা করলে নামটাও ঠিক মতো বলতে পারবেনা। অথচ কেউ কেউ বিশ্বজিৎকে নিয়ে কবিতাও রচান করে ফেলেছে, বিশ্বজিৎ হায় আমাদের বিশ্বজিৎ! ছাগু গোষ্ঠির এই ম্যাতাকার শুনলে মনে হবে ১০০টা শিবির কর্মী মরলেও একটা বিশ্বজিৎ এর রক্তের সম মানের জাগরণ হবেনা।

৪। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে, শেষ বারের মতো দেখা করে তার স্ত্রী দেশবাসীর প্রতি বিজয় চিহ্ন প্রদর্শন করলেন। তিনি জনগণকে জানিয়ে দিলেন দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ইসলামী আন্দোলনের এক নিবেদিত প্রাণ কর্মী তার প্রভুর ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে শহীদের মর্যাদা পেতে যাচ্ছেন।
কারও কারও মতে তিনি এই বিজয় চিহ্নের মাধ্যমে মানুষের গড়া আদালতের এই রায়ের প্রতি তীব্র ঘৃনা প্রদর্শন করে, মূল বিচারের দায়িত্ব আল্লাহর হাতে তুলে দিলেন।
-হলুদ মিডিয়ার গায়ে আবারো আগুন ধরে গেলো। আপনি বিজয় চিহ্ন দেখাবেন কেনো? স্বামী শোকে পাগল হয়ে আপনি কেনো চিৎকারের সাথে রাস্তায় গড়া গড়ি করে কান্নাকাটি করলেননা? আপনি কেনো যন্ত্রনায় ছটফট করলেননা। আপনার পরিবারের যন্ত্রনামাখা মুখ দেখার জন্যইতো এতো এতো ভারতীয় টাকায় লালিত পালিত সাংবাদিক অপেক্ষায় ছিলো। এবার আপনার বিচার করা হবে, আপনার বিরুদ্ধে শাহবাগে মিছিল করা হবে।
শুরু হয়ে গেলো, ছাগুদের ম্যতাকার, মিন মিনে কন্ঠে মিসেস আব্দুল কাদেরকে বকা ঝকা শুরু করে দিলো, আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেবের স্ত্রী কাজটা ঠিক করেননাই, এভাবে বিজয় চিহ্ন দেখানো উচিত হয়নাই। এখন একটা গ্যাঞ্জাম বাধাইলো, শাহবাগীদের উত্থান ঘটবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

৫। আব্দুল কাদের মোল্লার বিচার বিভাগীয় হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালো পাকিস্থানের জাতীয় সংসদ। একটি মুসলিম দেশের একজন ইসলামীক নেতাকে হত্যার প্রতিবাদ জানানোর অধিকার তাদের রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এবং জাতিসঙ্ঘ এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
-হলুদ মিডিয়া রঙ মিশিয়ে এই ঘটনার বিরুদ্ধে বিষেদগার শুরু করলো, আপনারা কেনো এই রায়ের পক্ষে বললেননা, মাওলানা মওদূদীর সেই ত্যাজ্য পুত্রের মতো করে এই বিচারকে স্বাগত জানাইলেননা, অতএব আপনারা খারাপ, চ্রম খারাপ।
ছাগু প্রজন্মও মিডিয়ার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলা শুরু করলো, আপনারা খারাপ, চরম খারাপ। আপনারা বাংলাদেশের অভ্যান্তরিন ইস্যুতে কথা বলতে আসবেননা। এটা আওয়ামীলীগ, ভারত ও ছাগুদের নিজস্ব ব্যাপার, আপনারা ছাগুদের প্রতি সহানুভুতি দেখাতে আসবেননা।

হে ছাগু প্রজন্ম, আর কতকাল হীনমন্মতায় ভুগবা? আর কত আত্মরক্ষা করবা? আত্নরক্ষা করতে করতেতো ইঁদুরের গর্তে ঢুকে গেছো! আজকে তোমরা মিডিয়ার চোখে দুনিয়া দেখছো, মিডিয়ার ভাষায় কথা বলছো। আবার রিমান্ডে ডিম থেরাপী খাইলে ওই মিডিয়াকেই দোষারোপ করছো।

বরং আক্রমনাত্মক হও, নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করো দৃঢ়,কঠিন,উদ্ধত কন্ঠে। লজ্জ্বিত হইয়োনা, নিচু হইয়োনা। বরং লজ্জ্বিত করো যারা বিরোধী শক্তি, দূর্বল করে দাও যারা বিরোধীতা করে। ভুলে গেলে চলবেনা, আমরাই মিডিয়া!

১৮ডিসেম্বর২০১৩

Post Comment