তাবলীগ, কম্বললীগ, চর্মোনাই লীগ এবং একটি পর্যালোচনা।

গণতন্ত্র হত্যা করে নব্যবাকশাল প্রতিষ্ঠার যে ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা করেছেন, তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বধীন ১৮দলীয় জোট। ঘোষণা করা হয়েছে মার্চ ফর ডেমোক্রেসির। এই ঢাকা অভিমুখী মার্চ ফর ডেমোক্রেসির কর্মসূচীতে নির্যাতিত নিপীড়িত দেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করবে। তবে যারা মানুষ নয় নিজেকে আওয়ামীলীগ মনে করে তারা এই কর্মসূচীকে বর্জন করবে।

এপর্যন্ত আমরা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন ব্রাঞ্চের সাথে পরিচিত হয়েছি, আজ আপনাদেরকে আওয়ামীলীগের নতুন কিছু ব্রাঞ্চের সাথে পরিচিত করিয়ে দিবো, যারা প্রত্যাক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে আওয়মীলীগকে ক্ষমতায় রাখার পেছনে ভূমিকা রাখছে।

তাবলীগঃ
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ, যুবকবয়সে যুবলীগ, মধ্যবয়সে আওয়ামীলীগ এবং বৃদ্ধবয়সে তাবলীগ নামেই যারা খ্যাতিমান।
এই সংগঠনটি মসজিদে বসে সারাদিন ঢিলা কুলুখ, মেসওয়াক, দাড়ি, পাগড়ী, জুব্বা নিয়ে আলোচনা করে। সুবহানআল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহ পড়লে কত সওয়াব হবে সে নিয়ে লিপ্ত হয় বিস্তর গবেষণায়।
দেশের শাসন ক্ষমতায় ফেরাউন, নমরুদ নাকি দজ্জাল অধিষ্ঠিত এই নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। তবে হ্যা একটা বিষয়ে তারা রাজনীতি সচেতন, সে বিষয়টা হচ্ছে মসজিদে বসে বসে দিনরাত তারা জামায়াত-শিবিরের চৌদ্ধগুষ্ঠি উদ্ধার করে বয়ান করে। তবে ভুলেও কখনো আওয়ামীলীগের ইসলাম বিরোধী ভূমিকার সমালোচনা করেছে বলে কেউ বলতে পারবেনা।

কম্বল জিহাদি লীগঃ
“জিহাদ, জিহাদ, জিহাদ চাই, জিহাদের টাইমে আমি নাই”, এটাই হচ্ছে কম্বল মুজাহীদদের স্লোগান।
এই কম্বল মুজাহীদদের বক্তব্য হচ্ছে, ইট পাথর এবং গুলতি দিয়ে জিহাদ হয়না। জিহাদ করতে হলে একে ফোর্টিসেভেন ইউজ বাধ্যতামূলক, নইলে জিহাদের হক আদায় হবেনা। স্বয়ং রাসূল (সঃ) যেখানে বলেছেন যুদ্ধ একটি কৌশল, সেখানে এই কম্বল মুজাহিদদের বক্তব্য হচ্ছে, কৌশলের টাইম নাই! ধর তক্তা, মার পেরেক।
এই কম্বল মুজাহীদরা শেখ হাসিনার নব্য বাকশালের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত জিহাদের ঘোষণা দিয়েছে বলে কেউ বলতে পারবেনা। তবে হ্যা, শেখ হাসিনাকে আরো কিছুদিন ক্ষমতায় রাখার ব্যাপারে তাদের কারো কারো বক্তব্য শোনা গেছে। তাদের ভাষায় হাসিনাকে আরো কিছুদিন ক্ষমতায় রাখা উচিত, তাহলে জনগণ বাধ্য হয়ে, হাসিনার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অস্ত্র ধারণ করবে।

হিজবুত লীগঃ
“গণতন্ত্র হারাম, আওয়ামীলীগে আরাম” এটাই হচ্ছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে হিজবুত লীগের মূলমন্ত্র।
এরা চাতক পাখির মতো খিলাফতের আশায় হা করে বসে আছে, কবে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে টুপ করে তাদের মুখে নিক্ষেপ করবে, আর তারা সেখান থেকে খিলাফতের স্বাদ আস্বাদন করবে। আওয়ামীলীগ চিরজীবন ক্ষমতায় বসে থেকে দেশ হতে ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিলেও এদের চামড়ার নিচের অনুভূতিরা জাগ্রত হয়না।
গত সিটি নির্বাচনে হিজবুত লীগের এক সদস্য ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছিলো, আওয়ামীলীগ জিতলেই আমাদের কি আর বিএনপি জিতলেই আমাদের কি? দুইটাই কুফফার!
ওইতো সেনাবাহিনী আসছে, খিলাফত প্লেটে ঢেলে দিয়েছে, এবার খিলাফত মাখাচ্ছে, আর কিছুক্ষণ পরে খিলাফত মুখে তুলে খাইয়ে দিবে।
আওয়ামীলীগের ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ড এবং জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে এদের কোনো কর্মসূচি নেই।

চর্মোনাই লীগঃ
নারী নেতৃত্ব হারাম! তবে সেটা শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, হাসিনার ক্ষেত্রে নয়। আপাতত এটাই হচ্ছে চর্মোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মূলনীতি।
এখন পর্যন্ত আওয়ামীলীগ বিরোধী কোনো কর্মসূচীতেই এই দলটির খুব একটা সক্রিয়তা চোখে পড়েনাই, এমনকি হেফাজতের সমাবেশের আগে পড়েও এই দলের পক্ষ হতে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।
আওয়ামীলীগ সরকারের ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ড এবং জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে যে “মার্চ ফর ডেমোক্রেসি” কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেখানে ১৮দলীয় জোটের বাইরের বহু দল অংশগ্রহণের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত চর্মোনাই পীরের দলের পক্ষ হতে কোনো ঘোষণা আসেনাই।
তবে কি আমরা ধরে নিবো, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের কর্মকান্ডে এই দলটি সন্তুষ্ট?

সর্বশেষ যে কথাটি বলতে চাই, উপরে যে দলগুলোর কথা বলা হলো, তাদের একটিও আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠন নয়। তবে আমরা জানি “নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ”। অতএব যে বা যারাই চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন প্রদান করবেনা, তারা নিশ্চিত ভাবেই মানুষ নয় আওয়ামীলীগ।
এই দলগুলো প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামীলীগকে সমর্থন না করলেও পরোক্ষভাবে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় রাখতে সহায়তা করছে। আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ না করে তাদের জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রাখতে ভূমিকা পালন করছে।

২৭ডিসেম্বর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment