বই পড়া


আমি নেশাগ্রস্থ মানুষ। আমার নেশার বস্তু হচ্ছে বই, একটা বই পড়তে শুরু করলে সেটা শেষ করার পূর্ব পর্যন্ত আমার খাওয়া ঘুম বরবাদ।
সেইযে প্রথম মায়ের কাছে রুপকথার গল্প শুনেছি তখন থেকেই বইয়ের প্রতি আকর্ষণ অদম্য। তবে সেটা পাঠ্যপুস্তক নয়, অবশ্যই গল্পের বই। সামনে যাই পেতাম গিলতাম গোগ্রাসে। ইসলামীক গল্পের বইয়ের সন্ধান পেয়েছিলাম সর্বপ্রথম জালালউদ্দীন রুমীর ‘মসনবী’র মাধ্যমে, তারও আগে হযরত বায়েজীদ বোস্তামীর মাতৃভক্তির গল্প শুনেছিলাম মায়ের কাছে।
আমার কাছে মাতৃভক্তির সংজ্ঞা ছিলো অন্যরকম, মায়ের কোলে উঠে মাথার চুল টানা আর উপর্যুপরি গালি, কিল, ঘুশি এবং পাগলামী।
তবে বায়েজিদ বোস্তামীর গল্প শুনে মনে মনে একটা সুপ্ত বাসনা কাজ করছিলো, “ইস! আমার মায়ের যদি এমন অসুখ হয়, তাহলে আমিও পানি নিয়ে মায়ের পাশে দাড়িয়ে থাকবো!”
মায়ের একদিন সত্যি সত্যি খুব অসুখ হয়েছিলো, তবে পানি নিয়ে দাড়িয়ে থাকার সৌভাগ্য হয়নাই।

রুপ কথার দৈত্য দানবের গল্প পড়তে পড়তে যখন সব মুখস্ত করে ফেলেছি, তখনই হাতে পেলাম ‘কিশোর তারোকালোক’ প্রতিটা পাতা পড়ি আর শিহরিত হই, “ইস! কত ছোট ছোট পিচ্চিগুলো টিভিতে মডেলিং করে, নাটক করে, আর আমি হাবা-গোবার মতো ঘরে বসে আছি!” নিজের বয়সের সাথে মডেলদের বয়সের পার্থক্য মিলিয়ে নিতাম, মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম, একদিন আমিও মডেল হবো, শাওন, ঈসিতা, মীমদের মতো পিচ্চি পিচ্চি মডেলদের সাথে নাটক করবো!

একদিন হাতে পেলাম “কিশোর কন্ঠ”! সাহিত্যের এক অন্য দিগন্তের সন্ধান পেলাম। কিশোর কন্ঠ পড়ে আর মডেল হতে ইচ্ছে হলোনা, কেবলই মনে হচ্ছিলো, পাহাড়ি এক লড়াকু গল্পের নায়কের মতো এক মুজাহীদ হবো। কিংবা ‘সাহসী মানুষের গল্পে’র মতো সাহসী মানুষ হবো। ঈমানদিপ্ত মুসলিম হবো।

হাইস্কুল লেভেলে আমাকে আর পায় কে, বই বই আর বই! মিউনিসিপ্যাল স্কুলে ভর্তি হলাম, স্কুলের পাশেই নূপুর মার্কেটে পুরাতন বইয়ের দোকান। ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া সেই পিচ্চি ছেলেটা নূপুর মার্কেটের বই কিনতে কিনতে দোকানদের পরিচিত মুখ হয়ে গেলো। প্রতিদিন একটা করে বই কিনতেই হবে, না কিনলে মানসিকভাবে অশান্তিতে ভুগতাম। কি যেনো, হয় নাই, হয় নাই, মনে হতো।

তিনগোয়েন্দা, মাসুদ রানা, কুয়াশা, ওয়েস্টার্ণ, কিশোর ক্লাসিক, হুমায়ুন, ইমদাদুল হক মিলন। বাকি আছে কিছু?! সবই কিনেছি।
সেঝ কাকা চট্টগ্রামে বেড়াতে এলেন, ঘর ভর্তি বইয়ের স্তুপ দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “এতো গুলো বই যে কিনলি, কয়দিনে পড়বি?”
কিছুটা গর্বিত ভাবেই বললাম, ‘কাকা সবগুলো পড়ে ফেলেছি’।
কাকার চোখে অবিশ্বাসের হাসি, “থাক আর মিথ্যে বলতে হবেনা!”

এরিখ মারিয়া রোমার্ক, জুল ভার্ণ, এইচ জি ওয়েলস, ব্রাম স্টোকার, মারিয়া পুজো, হ্যাগার্ড, মার্ক টোয়েন থেকে শুরু করে বিশ্ব বিখ্যাত লেখকদের দারুণ সব বই আমার পড়ার তৃষ্ণা দিন দিন বাড়িয়েই দিচ্ছিলো।

তবে সবচাইতে মজার যে ব্যাপার সেটা হচ্ছে, এতো এতো বই পড়েছি সে তুলনায় আমি যে আদর্শের পতাকা বাহক হতে চাই সে আদর্শের বই নেই বললেই চলে।
একটা ছেলেকে সারাদিন কোরান হাদিসের বানী শুনিয়ে দেয়ার পরে সে মনের খোড়াক নিবে ওয়েস্টার্ণ পুঁজিবাদী কিংবা সমাজবাদী লেখদের ক্লাসিক্যাল উপন্যাস হতে।
আমিও সেটাই করেছি, সমাজবাদী লেখকদের বই পড়েছি, ক্লাসের বন্ধুদের পাল্লায় পরে ছাত্র ইউনিয়নের অফিসে গিয়েছি, ঘন্টার পরে ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি। তবে আমার উপর আল্লাহর বিশেষ রহমত ছিলো বলেই সম্ভবত গোল্লায় যাইনি। অথচ গোল্লায় যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো।
এক মৌলিক লেখা ‘সাইমুম’ আর অনুবাদ সাহিত্য ‘ক্রুসেড’ সিরিজ ছাড়া আমাদের আর কি আছে? শুধু রাজনীতি করলেই ইসলামী বিপ্লব হবেনা, বিপ্লব হতে হবে সমাজ,সাহিত্য,শিক্ষা, মিডিয়া, সামরিক,বেসামরিক প্রতিটা সেক্টরে। আমরা শুধু রাজনীতিই করছি, অন্যদিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বাতিল মতাদর্শের অনুসারীরা।

এতো এতো সাহিত্যের ভিড়ে শিবিরের সিলেবাসের বাইরে ইসলামী সাহিত্য পড়ার অবকাশ খুব একটা হয়ে ওঠেনি। এটার পেছনে অবশ্য যুক্তিসংগত কারণও ছিলো, সেটা হচ্ছে ইসলামী সাহিত্যগুলো রচিত হয় নিরামিষ টাইপের ভাষায়। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে সীরাতে ইবনে হিশাম পড়েছিলাম সম্ভবত নবম শ্রেনীতে, ক্যারেন আমস্ট্রং এর ‘ইসলাম’ বইটি পড়েছিলাম ইন্টারে।
সাঈয়েদ কুতুবের ‘কালজয়ী আদর্শ ইসলাম’ বইটি হাইস্কুলেই পড়েছিলাম, কি বুঝেছি কি বুঝিনাই সেটা এখন আর মনে করতে পারছিনা।

ইসলামী সাহিত্য অধ্যায়নের এই ঘাটতি পূরনের স্বার্থেই তাফহীমূল কুরআনের পুরো সেট কিনে ফেললাম। ধার করা বই পড়ে তৃপ্তি পাইনা, সিরাতে ইবনে হিশাম হারিয়ে ফেলেছিলাম সেটাও পুণরায় কিনলাম। সেও বহু আগের কথা, তারপরে দিন গড়িয়েছে অনেক, দীর্ঘদিন হলো ইসলামী বই কেনা হয়না।

আজকে আন্দরকিল্লা গিয়েছিলাম, উদ্দেশ্য ছিলো কারাগারের দিনগুলো বইয়ের খোঁজ খবর নেয়া। আজাদ বুকসের স্তুপ করা লোভনীয় সব বইয়ের সমাহার দেখে বই কেনার সেই পুরানো নেশাটা মাথাচারা দিয়ে উঠলো। পকেটে ছিলো পর্যাপ্ত টাকা এবং মনে ছিলো পর্যাপ্ত আকাঙ্খা, আলহামদুলিল্লাহ।
একে একে কিনে ফেললাম, ইমাম নববী (রহঃ) এর ‘রিয়াদুস সালেহীন’ (সব খন্ড একত্রে), মাওলানা মওদূদী (রঃ) এর ‘ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা’, মাওলানা আব্দুর রহীমের ‘সুন্নাত ও বিদয়াত’, এবং ‘ইসলামে হালাল-হারামের বিধান’। রসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবনীগ্রন্থ ‘আর রাহীকুম মাখতূম’ এবং মূফতী শাফী (রঃ) এর তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীর মা’রেফুল কুরআন’।
চকচকে আর্ট পেপারে প্রিন্ট করা তাফসীরে মা’রেফুল কুরআন বইটি ছিলো আমার কারা জীবনের সঙ্গী, বইটিকে আজ আপন করে নিলাম।
আশা করছি, আগামী কিছুদিন বইগুলো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে পারবো।

লেখাঃ বই পড়া
© শামীম রেজা
২৭/০৫/২০১৪

Post Comment

উদ্বাস্তু জীবনের অবসান


কারাগারের দিনগুলোতে আমার জন্য একটা বিছানা ছিলো, নির্দিষ্ট একটি বিছানা! হোকনা তা খুবই সংকীর্ণ, হোকনা তা নোংরা, ধুলায় ধূসরিত। তারপরেও ছিলো নির্দিষ্ট একটি ঠিকানা।
কারাগার হতে বেরিয়ে যেনো উদ্বাস্তু হয়ে গেলাম, পুলিশ এবং লীগের সন্ত্রাসীদের কারণে আমার ঘরে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। চট্টগ্রামে এমন কোনো আত্মীয় নেই যার বাসায় যেতে পারি, অথবা কোনো সাংগঠনিক ভাই যিনি আশ্রয় দিবেন। সবারই একই অবস্থা, নিজ ঘর ছেড়ে সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

দিনগুলো ছিলো অদ্ভুত! সারাটা দিন কেটে যেতো দায়িত্বশীলের মটর সাইকেলের পেছনে ঘুরে ঘুরে। নীল জিন্সের সাথে গোলাপ রাঙা সার্ট, কাদের সিদ্দিকী স্টাইলে গলায় ঝোলানো গামছা আর পকেটে থাকতো টুথব্রাশ! গন্তব্যহীন অবিরাম ছুটে চলা।
সুযোগ বুঝে কারো বাসায় টুপ করে গোসল সেরেই সেই এক কাপড়ে ঘোরাঘুরি।

সন্ধ্যা হলে পাখিরা ঘরে ফিরে যেতো, আমার যাওয়ার কোনো ঠিকানা ছিলোনা। জব্বার দেখলাম ছোট একটা রুমে স্তুপ করা কাপড়ের ফাঁক দিয়ে একটু যায়গা করে নিয়েছিলো ঘুমানোর জন্য। সারাটা রাত এক কাতে বাঁকা হয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে কেমন যেনো বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো ছেলেটি। জব্বারও ঘর ছাড়া।
জব্বারের তবু নির্দিষ্ট করে একটা রাতের ঠিকানা ছিলো, আমার সেটাও ছিলোনা, জব্বারকে খুব হিংসে হতো।

ঘড় ছাড়া মামুন ভাই, আশ্রয়ের সন্ধানে প্রতিদিন ছুটে যান ছোট বোনের স্বামীর বাড়িতে। আমাকেও যেতে বলেন, বলতে দেরী হয় কিন্তু রাজি হতে দেরী হয়না, চলে যাই সাথে সাথে।
লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে কখনো কখনো নিজ থেকেই ফোন করি, ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলি, মনে একটাই ইচ্ছে, মামুন ভাই হয়তো জানতে চাইবেন, রাতে কোথায় ঘুমাবো!
মামুন ভাই কখনো নিরাশ করেন নাই, রাতের পর রাত পার করেছি আশ্রিত জীবন।

ইকবাল ভাই, মিরাজ ভাই, প্রতিদিন অন্তত দুই-তিনবার ফোন করে জানতে চান, কোথায় থাকি, কই ঘুমাই, প্রব্লেম হলে যেনো জানাই। মিরাজ ভাইতো অগ্রিম দাওয়াত দিয়ে রেখেছিলেন, প্রয়োজন হলে তার বাসায় থাকা যাবে। মিরাজ ভাইয়ের বাসায় যাওয়া হয় নাই, হঠাৎ করে কারো বাসায় গিয়ে পরিবারটিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিতে মন সায় দিচ্ছিলোনা।

ছোট বেলা হতেই কিছুটা স্বাধীনচেতা ছিলাম, এই ধরনের লুকোচুরি, ইঁদুর বিড়াল খেলা আমার সহ্য হলোনা, তাছাড়া আশ্রিত জীবন আর কতদিন? প্রয়োজনে লড়াই হবে, আবার জেলে যাবো, এভাবে আর উদ্বাস্তু হয়ে থাকবোনা। দায়িত্বশীলের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই নিজ ঘরে ফিরে গেলাম।

আওয়ামীলীগের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই নিজ ঘরে কাটিয়ে দিলাম দেড় মাস। আওয়ামীলীগের হুমকি ধামকিতো চলছিলো অবিরাম।
এরই মধ্যে অন্য এলাকায় এক রুমের একটি বাসা খুঁজে পেলাম, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে নতুন বাসায় উঠে গেলাম। আমার ব্যক্তিগত পাঠাগার এবং কিছু আসবাবপত্র রয়ে গেলো আগের বাসাতেই, মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছে, সরকার পরিবর্তন হবে, ফিরে যাবো আগের বাসায়।

অভাগা যেদিক চায়, সাগর শুকিয়ে যায়। একটা সেমিষ্টারতো চলে গেছে কারাগারের ভেতরেই, নতুন করে এনরোলমেন্ট করলাম, পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরের দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে গভীর রাতে ঘুমিয়ে পড়েছি নতুন বাসাতে। তুমুল হৈ চৈ-এর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো, রাত তখন তিনটা।
কাহিনী হচ্ছে শিবির কর্মী মাইদুলকে বাসা থেকে তুলে আনা হয়েছে আমার বাসা চিনিয়ে দেয়ার জন্য। প্রচন্ডভাবে মারধর করা হয়েছে ছেলেটাকে, এ গলি ও গলি করে বার বার ভুল বাসা দেখিয়েও নিস্তার পায়নাই।
মাইদুল শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমার বাসাটা চিনিয়ে দিলো। যুবলীগের ছেলেরা মোবাইলে কল দিয়ে মাইদুলের হাতে মোবাইল তুলে দিলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো মাইদুলের মাধ্যমে ভুং ভাং কিছু একটা বলে, আমাকে ঘর থেকে ডেকে বাইরে আনা।

মাইদুল ছেলেটা প্রচন্ড রকমের বুদ্ধিমান, কল রিসিভ করার পরে যুবলীগের শিখিয়ে দেওয়া কথা ভুলে যাওয়ার অযুহাতে মোবাইল মুখের সামনে নিয়ে জোড়ে জোড়েই জিজ্ঞাসা করলো, ‘কি কমু?’
বুঝতে আর বাকি রইলোনা, মাইদুল বিপদে পড়েছে।
ওদিকে যুবলীগের ছেলেরা মাইদুলকে প্রচন্ড গালা গালি করছে “**পুত, তোরা শিবির করস, তোগা মাতায় বেশি বুদ্ধি, মোবাইল মুখের সামনে নিয়া জিগাস ‘কি কমু!’ তোর লইগা আজকে হেতেরে ধরতে পারিনাই!” ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রচন্ড শীতের রাত, ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে আশ্রয় নিলাম প্রতিবেশির ঘরে।
মাইদুলের সাথে মিজান নামের আরেকজন কর্মীকেও বাসা থেকে তুলে নিয়েছিলো যুবলীগের সন্ত্রাসীরা, তাদের মুক্তিপন বাবদ ৫০হাজার টাকা দিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।

সাঈদী সাহেবের মামলার রায় যেদিন দেয়া হলো, তুমুল বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ। আমরাও ঘরে বসে থাকতে পারলামনা, ছুটে গেলাম রাজপথে, ফিরে এসে শুনি আমাকে না পেয়ে বাড়ি ওয়ালাকে তুলে নিয়ে গেছে স্থানীয় আওয়ামী গডফাদার হোসেন হিরণের সন্ত্রাসীরা।

এই বাসাটাও ছেড়ে দিতে হলো, আশ্রয় নিলাম মামুন ভাইয়ের বোনের বাসায়। অবশেষে পরীক্ষা শেষ হলো, চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি।

আমরা যারা উদ্বাস্তু, পলাতক জীবন যাপন করছি। সবাই মিলে একটা ফ্ল্যাট নিলাম। ঢাকায় যেমন চাইলেই ব্যচেলর ফ্ল্যাট পাওয়া যায়, চট্টগ্রামে সেটা এতো সহজ নয়, তাছাড়া শিবির আতঙ্কতো আছেই!
নিতান্তই সাধারণ ছাত্র হিসেবে খুঁজে খুঁজে একটা ফ্ল্যাট পেয়ে গেলাম, বাড়ি ওয়ালা হাসি মুখে বলছিলো, আগের ভাড়াটে ছেলে গুলো শিবির করতো তাদের নিয়েতো খুব ভয়ে ছিলাম, এখন নিশ্চিন্ত!
আমরাও হাসছিলাম, হ্যা আমরাও নিশ্চিন্ত!

নতুন বাসাতেও স্বস্তিতে নেই, সারাক্ষণ পুলিশ আতঙ্ক, গলির মুখে পুলিশের গাড়ি দেখলেই ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।
অনেক দিনতো হয়ে গেলো, নতুন যায়গায় নতুন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার সেই প্রিয় বই এবং আসবাব গুলো আগের বাসা থেকে নিয়ে এলাম, বাসা পাল্টানো যে কতটা কষ্টের-ঝামেলার আজ সেটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি। তারপরেও উদ্বাস্তু জীবনের অবসান হলো বলে শুকরিয়া জানাচ্ছি।

আজ এই বিছানাটাকে আমার বিছানা মনে হচ্ছে, এই বালিশটাও আমার অতি আপন, এই টেবিল, এই চেয়ার, এই বইয়ের র‍্যাক, এসব আমার! একান্তই আমার! এ আমার নিজস্ব ভূবন!

লেখাঃ উদ্বাস্তু জীবনের অবসান
© শামীম রেজা
২৬/০৫/২০১৪

Post Comment

মডেল কন্যার বাপ


সুন্দরীদের কম্পিটিশন, মেয়ের বাবা কয়,
আমার মেয়েই সেরা সবার, অন্য কেহ নয়।
মেয়ে আমার দেখতে দারুণ, সুন্দরীও বেশ,
ফিগার তাহার অসাধারণ নেইতো মেদের লেশ।
ঠোটদুটি তার কমলা যেনো, চিকন তাহার ভুরু,
বাবা হয়ে কেমনে বলি, কেমন তাহার উরু!
ত্বকে তাহার ঝিলিক দেখো, জ্যোৎস্না রাতের আলো,
কন্ঠ তাহার রিনি ঝিনি, নাচতে পারে ভালো।
প্লিজ লাগে, দোহাই তোমার, মেয়ের দিকে চাও,
আমার মেয়ের তরে তোমার ভোটটি দিয়ে যাও।
মেয়ে আমার বড় হবে, নর্তকীদের সেরা,
বাঈজি পাড়ায় নাম ছড়াবে, ছন্দ চোখের তারা।
নাম কি বলো! সানি লিওন! সুন্দরী সে বেশ?!
মেয়ে আমার রাজকুমারী, মানবে অবশেষ,
একটু দেখো, ভালো করে, উভয় দিকে খুব,
এসএমএস-এ ভোট দিয়ে যাও, মুখটি করে চুপ।
দোয়া করো তোমরা সবাই, আমার মেয়ের তরে,
রুপের ঝড়ে, তুফান তুলে, ফিরতে পারে ঘরে।
বেশ্যা পিতা! দিচ্ছে গালি! মৌলবাদী যারা?
ক্ষ্যাত তারা সব, মূর্খ অতি, শাস্তি পাবে তারা।
সবগুলোকে জেলে দিবো, রাজাকারের জাত,
নিজের বাড়ি ছেড়ে খাবে, লাল দালানের ভাত।
সুন্দরীদের কম্পিটিশন, আমার মেয়েই সেরা,
হিজাবী আর নিকাবীরা, কাপড় পরা ভেড়া।

কবিতাঃ মডেল কন্যার বাপ
© শামীম রেজা
২৫/০৫/২০১৪

Post Comment

চলতে ফিরতে শেখা


আমিন ভাই দেখলাম বসুন্ধরার একপ্যাকেট টিস্যু আমার পকেটে গুজে দিলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো, আপনিতো আবার এসব দৃশ্য সহ্য করতে পারেননা, কান্না পেলে টিস্যু দিয়া চোখ মুইছেন।
মুখ বাঁকা করেই বললাম, টিস্যুতে কাজ হবেনা, চোখ মুছতে বিছানার চাদরের মতো বড় সাইজের কাপড় লাগবে!
জব্বার বিড় বিড় করেই গেয়ে উঠলো, “হা মেনেভি পেয়ার কিয়া হে......” জয়নাল ভাইতো আরেক কাঠি সরস, তিনি বললেন এভাবে হবেনা, বাপ্পারাজ স্টাইলে বলতে হবে, “প্রেমের সমাধি গড়ে, মনের শিকল ছিড়ে...”
ফারুক ভাই হাসতে হাসতেই বললো, আপনারা দুইজন গান গাইতে গাইতে স্টেজে উঠে যান, আমি সিএনজি ঠিক করে আসি!

কাহিনী হচ্ছে একটা বিয়েতে গিয়েছিলাম, বিশাল কমিউনিটি সেন্টারে হেব্বি আয়োজন। যতটুকু জানতে পেরেছি পাত্রীর অমতেই বিয়ে হচ্ছে, আমাদের জানাশোনা লেভেলের একটা ছেলের সাথে পূর্বে রিলেশন ছিলো।
আমাদের সবাই একটা বিষয়ে কনফার্ম ছিলাম, পাত্রী কোনো একটা সিন ক্রিয়েট করে বসবে। এমনও হতে পারে হাউ-মাউ করে কান্নাকাটি করে পুরো অনুষ্ঠানের বাড়োটা বাজিয়ে দিবে।

এতো হাসি ঠাট্টার মধ্যেও ছেলেটার জন্য মায়া হচ্ছিলো। বিয়ের কথা শুনে ছেলেটা পাগলামি করেনাই, কাউকে কিছু বলেও নাই, বিষন্ন মনে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। তার মা বেশ কয়েকবার ডাকা ডাকি করেও ছেলেকে বের করতে পারেনাই, শেষে বাধ্য হয়ে অফিস থেকে ফোন করে বাবাকে ডেকে এনেছে।
চোখ বন্ধ করলেই যেনো আমি ছেলেটির নির্বাক মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম, বিষন্ন, অসহায়, ভগ্ন হৃদয়ের এক তরুণ, পাথরের মূর্তির মতো নিশ্চল বসে আছে। আজ সে হারিয়ে ফেলছে জীবনের পরম আকাঙ্খিত কিছু। তার মনের ভেতরে ঘটে যাওয়া তোলপাড় করা সেই ঝড় এই এখানে বসেও আমি অনুভব করছিলাম।

ছেলে এবং মেয়েদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহিলারা কমিউনিটি সেন্টারের দোতলায়, আর পুরুষদের জন্য নিচেরতলা। দারুণ ব্যবস্থাপনা, ভালোই লাগলো।
কিছুক্ষণ পরেই বুঝলাম এই দারুণ ব্যবস্থাপনার মাঝেই আরো একটা দারুণ কাজ করা হয়েছে, দোতলায় নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হলেও সেখানকার রং ঢং দেখার জন্য নিচের তলায় বিশাল স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমিন ভাই সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো, ভালোই হলো, উপরের নাটক দেখা যাবে। তারপরে এক প্যাকেট টিস্যু আমার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো, নাটকের দৃশ্য দেখে ইমোশনাল হয়ে পরলে টিস্যু দিয়ে চোখ মুইছেন।

না, টিভি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার ব্যর্থ হয় নাই। সত্যিই সুন্দর নাটক দেখলাম, চরমভাবে উৎফুল্ল বিয়ের পাত্রী, নানান পোজে ছবি তুলছেন। হাসতে হাসতে বান্ধবীদের গাঁয়ে গড়িয়ে পড়ছেন। কিসের কি! কোথায় কান্না দেখবো বলে স্ক্রিনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি, আর এই মেয়ে কিনা হাসতে হাসতে খুন!! এতো আনন্দ পায় কই?
একবার মনে হলো সেই ছেলেটাকে একটা ফোন দেই, তাকে দৃশ্যগুলো দেখাই, “আরে বেকুব তুই কার জন্য কান্নাকাটি করিস? সেতো মহা আনন্দে বিয়ে করছে!”
পরক্ষণেই আবার ভাবলাম, থাক ছেলেটা অন্তত এই বিশ্বাসটা রাখুক, কেউ একজন তাকে চেয়েছিলো, তার সাথে প্রতারণা করা হয় নাই।

চরম পর্যায়ের খাওয়া দাওয়া হলো, কে হাসলো আর কে কাঁদলো খাওয়ার সময় এগুলো মাথায় রাখতে নেই।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে কমিউনিটি সেন্টার হতে বেড়িয়ে আসছিলাম, তখনই ভিড়মি খাওয়ার যোগাড়। পরস্পরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে আনমনেই বলে ফেললাম পাত্রী কয়জন!!
জব্বার হাসতে হাসতেই বললো, এতোগুলো বউ একজনের জন্য!!?

বিশাল এক মাইক্রোবাস, নব বধূর সাজে চারজন নারী। প্রত্যেকের গায়েই বিয়ের বিশেষ শাড়ি, কপালে টিকলী, কান থেক শুরু করে নাক পর্যন্ত চেন দিয়ে বাঁধা বিশাল আকৃতির নথ। এবং পার্লার থেকে ডিজাইন করা বিকট দর্শণ চেহারা।
তাদেরকে একসাথে দেখলে আমি শিওর পাত্র নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবে কোনটা তার আসল বউ।
পরে জানতে পেরেছিলাম, এরা চারজনই পাত্রীর নিকটাত্মীয়া।

আমি ঘর কুনো মানুষ, এসব অনুষ্ঠানে খুব একটা যাওয়া হয়না, যেতে ইচ্ছে করেনা। জীবনে এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে, শেখার বাকি আছে।

লেখাঃ চলতে ফিরতে শেখা।
© শামীম রেজা
২৩/০৫/২০১৪

Post Comment

ইসলামী বিপ্লব ও ব্যক্তিক প্রচেস্টা


সারাদিন রাজপথে স্লোগান দিলাম, বিপ্লব বিপ্লব, ইসলামী বিপ্লব! কিংবা জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই! পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হলো, পুলিশের গুলি বৃষ্টি প্রতিরোধে ইটের টুকরো দিয়ে ঢাল তৈরী করলাম। আর রাত্রি বেলা ক্লান্ত দেখে বাসায় ফিরে ল্যাপ্টপে চালিয়ে দিলাম ‘তুহে মেরা সব হে’ কিংবা ‘তুহে মেরা রব হে’ টাইপের হিন্দী গান।
অথবা সিগারেটের ধোঁয়া টানতে টানতে গার্ল ফ্রেন্ডের হাত ধরে চলে গেলাম ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব শীর্ষক কোনো সেমিনারে।

না ভাই এভাবে বিপ্লব হবেনা, এভাবে কখনো বিপ্লব হয় নাই। মিছিল মিটিং কিংবা জেএমবি স্টাইলে বোমাবাজি করে সর্বোচ্চ রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করা যাবে কিন্তু সেটাকে ইসলামী বিপ্লব বলা যাবেনা।
রাজনৈতিক বিজয়কে বিপ্লব বলা যায়না, বিপ্লব হতে হবে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ব্যাক্তি, পরিবার এবং সমাজের প্রতিটি লেভেলে। ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হলে খিলাফত পরিচালনার উপযোগী মানুষ তৈরি করতে হবে।

অপরাপর ইসলামী সংগঠনগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এসব ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ। দেশের সবগুলো সাংগঠনিক শাখায় প্রতিষ্ঠা করেছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক সংগঠন। ছাত্রশিবির, ছাত্রী সংস্থা এবং শিবিরের শিশু বিভাগের সাংস্কৃতিক সংগঠনতো রয়েছেই।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও জামায়াতের সফলতা দেখার মতো, দেশব্যাপি হাজার হাজার প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। আর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকতো দেশের গন্ডি পেরিয়ে অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইবনে সিনা সহ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালগুলোর সফলতাও দেখার মতো।
কিন্তু বাতিল শক্তির মোকাবেলায় সেটা কত পার্সেন্ট? আমারতো মনে হয় ২% এর বেশি হবেনা। এই দুই পার্সেন্ট সফলতা নিয়ে আমরা ইসলামী বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলবো এমনটা আশা করা দুরাশা ছাড়া কিছুইনা।

মূল প্রব্লেমটা হচ্ছে আমরা ব্যক্তিগত প্রচেস্টা ছেড়ে দিয়ে কোনোনা কোনো ইসলামী সংগঠনকে ইসলামী বিপ্লবের ইজারা দিয়ে বসে আছি। একটা ইসলামীক রাজনৈতিক দলের নানা রকমের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেইসব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সাহিত্য সংস্কৃতি এবং মিডিয়া সৃষ্টির ব্যাপারে রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে খুব একটা সময় দেয়া সম্ভব হয়না।

আমরা প্রায়ই হায় হুতাশ করে বলি, আমাদের মিডিয়া নেই, আমাদের হুমায়ুন আহম্মদ নেই, আমাদের ভালো মানের চলচিত্র নির্মাতা নেই। আর তীর্থের কাকের মতো হা করে বসে থাকি কখন জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে এগুলো তৈরী করে আমাদের খাইয়ে দিবে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বলবেন, এসব বড় বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মতো সামর্থ আমাদের নেই। ঠিক আছে মেনে নিলাম সবার একই রকমের সামর্থ থাকবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু আপনি ব্যবসায়ী কিংবা প্রবাসী, আপনার মাসিক আয়ের হিসেব করলে বাংলাদেশী টাকায় সেটা লক্ষ টাকার গন্ডি ছাড়িয়ে যায়।
আপনি চাইলেই আরো দুই চারজন সহ উদ্যোক্তাকে সাথে নিয়ে আপনার গ্রামে ইসলামীক এডুকেশন সোসাইটির কারিকুলাম অনুযায়ী একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে পারেন।

চলচিত্র কিংবা নাটক নির্মানের ঝোঁক আছে? আপনি চাইলেই দারুণ একটা অফার দিতে পারেন। ইসলামীক ভাব ধারার তরুণ নাট্য নির্মাতাদের মধ্য হতে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে প্রতি বছর একটা করে স্বল্প বাজেটের নাটক তৈরীর স্পন্সর হতে পারেন।

সাহিত্যের প্রতি আপনার খুব ঝোঁক? গদ্য-পদ্য যা সামনে পান খেয়ে ফেলেন! এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, প্রতি বছর নবীন লেখকদের মধ্য হতে নির্বাচিত একটা বই আপনার উদ্যোগে প্রকাশিত হবে।

না, উপরে যে উদ্যোগ গুলোর কথা বলেছি এগুলোর একটাও লস প্রজেক্ট নয়। আবার অতিরিক্ত খরচেরও ব্যাপার নয়, আপনি চাইলেই এখান থেকেই অন্তত পুঁজিটাকে তুলে নিতে পারবেন, কখনো কখনো দেখবেন লাভের মুখ। আর আখিরাতের প্রতিদানতো আল্লাহই দিবেন তার নিজের ইচ্ছায়।
মূল সমস্যা আমাদের নিয়্যতে, মূল সমস্যা উদ্যোগে, মূল সমস্যা চিন্তায়।

আমাদের অঙ্গনে অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক অতীতেও জন্ম নিয়েছেন এবং বর্তমানেও জন্ম নিচ্ছে কিন্তু তাদের আল্টিমেট পরিণতি হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকের এসি’র হাওয়া। পেটের ক্ষুধা বড় ক্ষুধা। আমাদের অঙ্গনে কাজ নেই, যে কাজটা করে আমাদের শিল্পী সাহিত্যিকরা দুই-বেলা রিজিক গ্রহণ করবে। ফলাফল গদ্যে-পদ্যে লাত্থি মেরে সার্টিফিকেটের ফাইল বগলদাবা করে কোথাওনা কোথাও জুটিয়ে নিচ্ছে ছোট্ট একটা চাকরী।

ব্যাক্তি পর্যায়ের এসব ছোট ছোট উদ্যোগের সমষ্টিতেই একদিন সৃষ্টি হবে সামাজিক পর্যায়ে ইসলামী বিপ্লব।

আমি সেই দিনটার স্বপ্ন দেখি, যেদিন মানুষ দলবেধে সিনেমা হলে ভিড় করবে নসীম হিজাজী, সাইমুম কিংবা ক্রুসেড সিরিজের চলচিত্র দেখার জন্য।
ছাত্রদের ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে অশ্লীল হিন্দী গানের রিপ্লসেমেন্ট হিসেবে একের পর এক জমা হবে ইসলামী সংগীত।
স্বপ্ন দেখি তরুণ-তরুণীর হাতে হাতে হুমায়ুন কিংবা গুণের কবিতার বইয়ের পরিবর্তে শোভা পাবে সাইমুম-ক্রুসেডের মতো কোনো লেখকের ইসলামী ভাবধারার সাহিত্যকর্ম।

প্রয়োজন আপনার-আমার ব্যাক্তিগত অথবা সম্মিলিত প্রচেস্টায় কিছু উদ্যোগ। এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, সমাজ বিপ্লবের জেহাদে শরীক হোন।

লেখাঃ ইসলামী বিপ্লব ও ব্যক্তিক প্রচেস্টা
© শামীম রেজা
২০/০৫/২০১৪

Post Comment

স্বাধীনতা ফেরত চাই


ওইযে মোদি আসছে তেড়ে, তোমরা যারা ভয় দেখাও
সুযোগ বুঝে কংগ্রেসের, ধুতির নিচে মুখ লুকাও।
তোমারতো হায় সুদিন ছিলো, কংগ্রেসের শাসনে,
কি-বোর্ড জুড়ে জিহাদ ছিলো, গদি আটা আসনে।
তারো আগে বোম ফুটালে, দেশটা জুড়ে তুললে ঝড়,
‘র’ এর টাকায় জিহাদ হলো, করলে বিরান আপন ঘর।
প্রশ্ন করো আমার কথা, পাঁচটি বছর কই ছিলাম!
কংগ্রেসের আপ্যায়নে, বাড়ি ছাড়া হইছিলাম।
আমার দেশের সাতক্ষিরাতে ছেলে হারা মায়ের চোখ,
স্বামী হারার অশ্রু জলে, দালাল তোমার পতন হোক।
সাঈদি সাহেব জেলে পঁচে, কাদের মোল্লার হয় ফাঁসি,
কংগ্রেসের শাসন আহা! মধু মধু রাম হাঁসি।
প্রশাসনে হিন্দু এলো, হিন্দু শাসন চলছে দেশ,
কংগ্রেসের নগ্ন থাবায়, বিলাপ করে কাঁদছে দেশ।
তারপরেও মোদি খারাপ, আরো খারাপ বিজেপি,
কংগ্রেসের লাত্থি ভালো, মোহন তোমার বাপ নাকি?!
আমার কাছে দুটোই সমান, শুকনা-ভেজা তফাত নাই,
দালাল শাহীর পতন করে, স্বাধীনতা ফেরত চাই।

কবিতাঃ স্বাধীনতা ফেরত চাই
© শামীম রেজা
১৭/০৫/২০১৪
8

Post Comment

এস.এস.সি কৃতকার্য অকৃতকার্য সবাইকে শুভেচ্ছা।


২০০২সালের কথা, এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে, আমাদের ওয়ার্ডের ৫টি স্কুলের মধ্যে সব চাইতে ভালো রেজাল্ট করেছেন রিমণ ভাই। এলাকাতে তুমুল হৈচৈ পড়ে গেলো, সবাই দলে দলে রিমণ ভাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, মুরব্বিরা দোয়া করে দিচ্ছেন, “বাবা অনেক বড় হও”। রিমণ ভাইয়ের জিপিএ ছিলো সম্ভবত এ মাইনাস (A-)। রিমণ ভাইকে স্থানীয় ছাত্রশিবিরের পক্ষ হতে সংবর্ধনা দেয়া হইলো। সেকি বিশাল ব্যাপার স্যাপার।

গত বছরের কথা, এলাকার এক ভাবী বাসায় খবর দিলেন, গিয়ে দেখি তিনি চিন্তিত মুখে বসে আছেন। জিজ্ঞাসা করলাম, কি খবর ভাবী এতো জরুরী তলব?
‘আর বইলোনা, তোমার ভাইঝি এবার পরীক্ষা দিছে, কি লিখছে না লিখছে আল্লাহই ভালো জানে! ওর প্রশ্নগুলো একটু দেখোতো, পাশ করবো নাকি?”
যেসব প্রশ্ন মার্ক করা আছে অর্থাৎ পরীক্ষার খাতায় লেখা হয়েছে বেছে বেছে সেগুলো হতে কিছু কিছু প্রশ্ন ধরলাম।
যে প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করি কমন উত্তর, বলতে পারিনা, ভুলে গেছি, পাশের জন থেকে দেখে লেখছি ইত্যাদি ইত্যাদি।
মেয়েটাযে চরম পর্যায়ের অগা টাপের সেটা আগে থেকেই জানতাম এবং প্রশ্ন যাচাই করে বুঝলাম ইহ জনমে এই মেয়ে এস.এস.সি পাশ করতে পারবেনা। তারপরেও হাসি হাসি মুখ করে ভাবীকে শান্তনা দিয়ে আসলাম। টেনশিতো হইয়েননা, পাশ মার্ক উঠবে ইনশাআল্লাহ।

পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো, সারাদিন এতো ব্যস্ত ছিলাম, খবরই নাই। বাসায় এসে শুনলাম ওই ভাবী নাকি আমার সন্ধানে দুই-তিনবার লোক পাঠাইছেন। মোবাইলে চার্জ ছিলোনা বলে মোবাইলও বন্ধ। সোজা তাদের বাসায় চলে গেলাম, গিয়ে দেখি এলাহী ব্যাপার স্যাপার, নানা রকমে মিষ্টিতে সয়লাভ পুরো ঘর, মেয়ে ৪.৫০ পয়েছে!!
হতবিহ্বল আমার মুখ থেকে শুধু একটা কথাই বেরিয়ে এলো, ‘কেমনে পাইলি!!’
ভাইঝি আফসোস করে বলছিলো ‘ইস! কাকা একটুর জন্য এ+ মিস হয়ে গেলো’।
আমিও বলছিলাম, হু মিস হয়ে গেলো।

আজকে এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে, পাশের হার ৯১.৩৪%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১লক্ষ ৪২হাজার ২৭৬জন

এই কৃতিত্ব ছাত্রদের নয়, এ কৃতিত্ব বর্তমান সরকারের। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে সাকিব আল হাসান ছক্কা পিটায়, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে ছাত্ররা এ+ পায়। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে ৯১%ছাত্র পরীক্ষায় পাস করে।
সত্যিই শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে! জয় আওয়ামীলীগ, জয় বাংলা!

লেখাঃ এস.এস.সি কৃতকার্য অকৃতকার্য সবাইকে শুভেচ্ছা।
© শামীম রেজা
১৭/০৫/২০১৪

Post Comment

নরেন্দ্র মোদীকে জামায়াতের শুভেচ্ছা ও আজগর আলীর ডেলিভারী কেস


বাংলাদেশে সব কিছুরই দাম বেড়েছে কিন্তু ‘উপদেশ’ নামক জিনিসটার দাম বাড়েনাই। দেশের যেখানে যাবেন সেখানেই দেখবেন কেজি খানেক ‘উপদেশের’ হাড়ি নিয়ে সদাহাস্যমান কিছু মানুষ অপেক্ষা করছে ফ্রি ফ্রি বিতরনের জন্য।

সেদিন দেখলাম মোড়ের টং দোকানের শুক্কুর মিয়া ফেসবুকে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে স্ট্যাটাস দিয়েছে, “আমেরিকার সাথে এতো পিরীতি কিসের? আমেরিকার দূতাবাস বোমা মাইরা উড়াইয়া ফালান। তলে তলে আমেরিকা আওয়ামিলীগের দালালী করে”
কত বিশাল মাপের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এই শুক্কুর মিয়া, ভাবা যায়?! তাকেতো নোবেল প্রাইজ দেয়া উচিত, অন্তত পক্ষে ভারতের পদ্মভূষণটা তার প্রাপ্য।

কথা প্রসঙ্গে একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলো, শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলামনা,
হাসান সাহেব হন্ত-দন্ত হয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটছেন, পথেই দেখা আজগর আলীর সাথে। আজগর আলী আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসা করলো, হাসান ভাই এতো তাড়াহুড়ো করে কই যান?
‘হাসপাতালে যাচ্ছি, বউ অসুস্থ!’
‘ভাবীর কি হয়েছে?’
হাসান সাহেব জবাব দিলেন, ডেলিভারী কেস, অবস্থা সুবিধার না!
আজগর আলী এবার বিজ্ঞের মতো মাথা দোলাতে বললেন, ‘হুম! ডেলিভারী কেস মারাত্মক সিরিয়াস অসুখ! গত বছর এই রোগে আমার বাবা মারা গিয়েছিলো। হতভম্ব হাসান সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন, কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেননা।

ভারতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ভারতের নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে! এবার শুরু হলো উপদেশ দাতাদের বিশাল বিশাল স্ট্যাটাস।
পাড়ার শুক্কুর মিয়া থেকে শুরু করে আজগর আলী কেউই বাদ গেলোনা, সবাই একেকজন বিরাট বিরাট আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে আবির্ভুত হলো। তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল আমার বাসার নিচ তলায় গজওয়ায়ে হিন্দ শুরু হয়ে গেছে। আর সেই যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী বিজেপির পক্ষ নিয়েছে।

ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, বিজেপির নরেন্দ্রমোদি খুব খারাপ লোক, তিনি শত শত মুসলমানকে হত্যা করেছেন, এবং অবশ্যই তিনি খারাপ লোক।
এবার কংগ্রেসের শাসনাধীন ভারতের কথা বলি, তারা ক্ষমতায় থেকে মুসলমানদের জন্য কি করেছেন? হ্যা তারা অনেক ভালো ভালো কাজ করেছেন, বাংলাদেশের সাতক্ষিরায় ভারতীয় সেনা ঢুকিয়ে মুসলমানদের বাড়িঘর ধ্বংশ করেছেন, নারীদের উপর নির্যাতন করেছেন। বাংলাদেশের বিডিআর ধ্বংশ করেছেন, এবং বাংলাদেশকে একটি হিন্দু প্রশাসন শাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।
এখন যদি বিজেপি ও কংগ্রেসের তুলনা করি তবে কারো চাইতে কেউ কমনা।

রাজনীতিতে একটা নিয়ম মেনে চলা হয় সেটা হচ্ছে, ‘শত্রুর শত্রু আমাদের বন্ধু’। কংগ্রেস জামায়াতের উপর কম জুলুম নির্যাতন চালায় নাই। কংগ্রেসের শত্রু হিসেবে জামায়াত বিজেপিকে অভিনন্দন জানাতেই পারে।
জামায়াত অভিনন্দন জানিয়েছে বলে বিজেপি অনেক শক্তিশালী হয়ে গেলো এবং জামায়াত অভিনন্দন না জানালে বিজেপি দূর্বল সরকার হতো এমন চিন্তা করা আহম্মকি ছাড়া আর কিছুইনা। বিজেপিকে অভিনন্দন জানিয়ে বরং জামায়াত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে, বিজেপি এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল না হোক অন্ততপক্ষে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করতে দুইবার চিন্তা করবে।

বিজেপি মুসলমানদের উপর এতোটা হিংস্র হওয়ার কারণ হচ্ছে ভারতের মুসলমানরা একচেটিয়া ভাবে কংগ্রেসকে ভোট প্রদান করে। এদেশের হিন্দুরা যেমন আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়।

ভারতীয় মুসলমানদের আত্মউপলব্ধি করা প্রয়োজন, কংগ্রেসকে এভাবে একচেটিয়া সমর্থন দেয়ার বিনিময়ে ভারতীয় মুসলমানরা কি পেয়েছে! মুসলমানরা কি এখনো ভারতের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা পেয়েছে! ভারতীয় প্রশাসনে মুসলমানদের চাকরী দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য কমেছে, কিংবা ভারতীয় মুসলমানদের জাতীয় পরিচয় পত্রে সন্দেহ জনক চিহ্ন প্রত্যাহার করা হয়েছে? সব গুলো প্রশ্নের যদি নেতিবাচক জবাব হয় তাহলে কি বুঝে ভারতীয় মুসলমানরা একচেটিয়াভাবে কংগ্রেসকে সমর্থন করবে?
ভারতের মুসলমানদের এখন উচিত দুই দলে ভাগ হয়ে একদল কংগ্রেসের সাথে থেকে যাওয়া, এবং আরেকদল ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে সংবর্ধনা দেওয়া। নিজের ভোটারদের উপর বিজেপি অন্তত অত্যাচার চালাবেনা!

ও হ্যা একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, শুনতে পেলাম জামায়াতের অভিনন্দন বার্তায় জনাব মকবুল আহম্মদ বলেছেন "নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি জোট এনডিএ সরকার গঠন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন"। তার এই বক্তব্য শুনে আজগর সাহেব নাকি ডেলিভারী কেসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারাত্মক সিরিয়াস রোগ, গত বছর এই রোগে তার পিতা মারা গিয়েছিলেন।
এদিকে বিজেপি ক্ষমতায় আসার কারনে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ শুক্কুর মিয়া গজওয়ায়ে হিন্দের ঘোষণা দিয়েছেন।

লেখাঃ নরেন্দ্র মোদীকে জামায়াতের শুভেচ্ছা ও আজগর আলীর ডেলিভারী কেস
© শামীম রেজা
১৭/০৫/২০১৪

Post Comment

এমন বউ লইয়া আমি কি করিব!



এক বড় ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তিনি বিয়ে করবেন, পাত্রীর সন্ধানে ব্যাপক টেনশিতো।
আমি হাসতে হাসতেই বললাম এতো টেনশিতো হওয়ার কি আছে, গার্লস কলেজের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, সুন্দরী একটা দেখে পেছনে হাটতে হাটতে বাসা পর্যন্ত চলে যাবেন, তারপরে একদিন মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে হাজির।
বড় ভাইও হাসতে হাসতে বললেন, হ্যা আমি যেমন হুট করে তাকে পছন্দ করে বিয়ে করে ফেলবো, সেই মেয়েও একদিন হুট করে অন্য একজনের হাত ধরে আমার বাসা থেকে ফুটে যাবে। এখন ঘরে ঘরে পরকীয়া যেভাবে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে, এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছুনা। রুপের ঝলক দেখে মেয়ে চয়েস করলে পরে পস্তাতে হবে।

এবার কিছুটা সিরিয়াস মুডেই বললাম, অতো টেনশনের কাজ নেই, দুচোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্ত মনে অমুক সংগঠনের মেয়ে বিয়ে করে ফেলেন (একটি ইসলামী সংগঠনের ছাত্রী ব্রাঞ্চের) তারা ভীষণ পরহেজগার, আধুনিক চিন্তাধারার সাথে পরিচিত। আপনার এলাকার অমুক সংগঠনের নেতার সাথে যোগাযোগ করেন, তিনি ভালো সন্ধান দিতে পারবেন।
ওই বড় ভাইয়ের ভঙ্গিটা ছিলো দেখার মতো, তিনি চোখ বড় বড় করে বললেন, শামীম একটা সত্য কথা বলবা, আমার আব্বা-আম্মার সাথে তোমার কোনো শত্রুতা নেইতো!?
‘কেনো ভাই, একথা বলছেন কেনো?’
এবার শুরু হলো বড় ভাইয়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়, সেই ঝড় থামানোর সাধ্যে আমার ছিলোনা, “বিয়ের পরে ওই সংগঠনের মেয়েদের প্রথম ও প্রধান কাজ হয়ে জামাইকে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা। তারা হচ্ছে মধু খাওয়া সুন্নত টাইপের ইসলামিস্ট। মধু খাওয়া সুন্নত বুঝো? অর্থাৎ যেসব সুন্নত নিজের পক্ষে যাবে সেগুলো আমল করবো, আর যেগুলো আমার পক্ষে আসবেনা সেগুলোকে সুকৌশলে এড়িয়ে যাবো। তারা কথায় কথায় বলবে, শ্বশুর শ্বাশুরীর সেবা করার জন্য ছেলের বউ বাধ্য নয়।
আমি চাকরী করবো, কিংবা ব্যবসা করবো, সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বাসায় এসে যখন শুনবো ‘তোমার বাবা-মায়ের সেবা করতে আমি বাধ্য নই’ তখন আমার মনের অবস্থা কেমন হবে একবার চিন্তা করে দেখেছো?
আমি কি আমার আব্বা-আম্মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিবো, নাকি চাকরী ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বাবা-মায়ের সেবা করবো?”

বড় ভাইয়ের জ্বলাময়ী বক্তব্য আর শেষ হতে চায়না, তিনি বলেই যাচ্ছেন বলেই যাচ্ছেন। এবার তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আমি কিছু বলতে চাইলাম, তিনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “ওমুক ভাইকে দেখোছো? তিনি মস্তবড় ব্যাংকার, তার ওয়াইফ ইসলামী সংগঠনের নেত্রী, তিনি আলিশান ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, আর তার মায়ের অবস্থা দেখেছো? তার মা বস্তিতে থাকে!
এবার আর আমার কিছু বলার মতো অবশিষ্ট্য রইলোনা, কারণ ওই ব্যাপারটা আমাদের চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছিলাম।

মিন মিন করেই বললাম, আপনার চিন্তাধারা দেখেতো ভয় পাচ্ছি, তাবলীগের মেয়ে ছাড়া আপনার আর কোনো গতি নেই। তারা ফাজায়েল আমল পড়ে পড়ে চরমতম স্বামী ভক্ত, আর পরকিয়ার সম্ভাবনাও নেই। প্রচন্ড রকমের হিজাবী, নিকাবী, আরো যতরকমের ইসলামীক রুলস আছে সব মেনে চলার চেস্টা করে। আপনি উঠতে বললে উঠবে, বসতে বললে বসবে, আপনার অনুমতি ছাড়া ঘরের বাহিরে বের হবেনা।
বড় ভাই প্রতিবাদী ভঙ্গিতে বললেন, আমার ছেলে-মেয়েকে ফেলে বউ যখন জান্নাতের গাড়িতে চড়ে তিন চিল্লার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে তখন আমার সংসার কি জ্বীনে এসে চালাবে?
তাদের যুক্তি শুনবা? বড় ভাই বলতে শুরু করলেন, “আল্লাহর আদেশ পালনের ক্ষেত্রে যদি স্বামী বাধা প্রদান করে তবে স্বামীর আদেশ মানা যাবেনা। সুতরাং চিল্লায় যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামী যদি বাঁধা প্রদান করে তবে স্বামীর আদেশ মানা যাবেনা!!”

এবার সত্যিই আমি হতাশ! বড় ভাইকে প্রশ্ন করলাম, তাহলে কি করবেন বলে চিন্তা করছেন? সবগুলো দরজাইতো বন্ধ!
বড় ভাই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জবাব দিলেন, তকদিরের ফয়সালার জন্য অপেক্ষা করছি, কপালে কি আছে আল্লাহই ভালো জানেন।

লেখাঃ এমন বউ লইয়া আমি কি করিব!
© শামীম রেজা
১৬/০৫/২০১৪

Post Comment

আত্মঘাতী হামলা


ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখলাম, সেখানে বলা হয়েছে, “আফগানিস্থানে শাহদাতি হামলায়(আত্মঘাতি) কুফফারদের একটি ট্যাংক ধ্বংশ হয়েছে, কমপক্ষে দশজন কুফফার নিহত ও দশজন আহত”।

নিঃসন্দেহে সমগ্র মুসলিম জাহানের জন্য বাতিলের পরাজয় একটি সুখবর। কিন্তু একজন মুসলিম মুজাহিদের আত্মহত্যার খবর কি কখনো সুখবর হতে পারে? শাহদাতের মর্যাদা আর আত্মঘাতী বোমা হামলা (আত্মহত্যা) কি কখনো এক হতে পারে?

সমগ্র বিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলো, বাতিল-কুফফারদের ধ্বংশ হলো, কিন্তু আমি জান্নাতে যেতে পারলামনা, তাহলে আমার লাভ কি?
কেউ আত্মহত্যা করলে সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে (মুসলিম হা/১০৯)। এই হাদিসের ব্যাক্ষ্যায় বলা হয়েছে এখানে চিরস্থায়ী বলতে সুদীর্ঘকাল ও অধিকাল বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি আত্মহত্যাকে হালাল বলে বিশ্বাস করে। এরুপ বিশ্বাসের কারণে সে কাফের হয়ে যাবে, আর কাফেরের চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নাম।

ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বার্থে যুদ্ধ করতে করতে প্রতিপক্ষের আঘাতে শহীদ হয়ে গেলাম সেটা হচ্ছে জিহাদ। আর নিজের শরীরে বোমা বেধে সেটা ফুটিয়ে দিলাম, নিজে মরলাম সাথে কয়েকজন বাতিল শক্তিকেও মারলাম এটাযে আত্মহত্যা সেক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ আছে?

আমি এ পর্যন্ত কখনো দেখিনাই বা শুনিনাই যে কোনো জিহাদী সংগঠনের কেন্দ্রীয় লিডার আত্মঘাতী হামলা করে মারা গেছেন। অথচ ঈমান ও তাকওয়ার দিক হতে তিনিই দলের মধ্যে সেরা হিসেবে বিবেচিত।
ওসামা বিন লাদেন বাতিলের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেছেন, মোল্লা ওমর এখনো জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছেন, কই তারাতো আত্মঘাতী হামলা করছেননা!?
মিডিয়ায় দেখলাম বাংলাদেশের জেএমবি’র প্রধান আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের নির্দেশে কতিপয় তরুণ আত্মঘাতী বোমা হামলা করলো, ইসলামের জন্য নিজেকে কোরবানী করে দিলো। অথচ সেই আব্দুর রহমান সাহেব কিন্তু ধরা পড়েছেন আত্মসমর্পনের মাধ্যমে। তিনি কেনো নিজের শরীরে বোমা বেঁধে র‍্যাবের কমান্ডারের উপর ফাটিয়ে দিলেননা?

একটা প্রশ্ন রেখেই লেখাটি শেষ করতে চাই, আত্মঘাতী বোমা হামলা কি শুধু ওইসব সংগঠের কর্মীদের জন্য? আর নেতাদের জন্য হালুয়া রুটি?

লেখাঃ আত্মঘাতী হামলা
© শামীম রেজা
১২/০৫/২০১৪

Post Comment

সরল স্বীকারোক্তি


হাসলে দেখো,
মুখ হাসে মোর, চোখ হাসে মোর, আরো হাসে দাড়ি।
এমন দাড়ি নিয়ে আমি কেমনে যাবো বাড়ি!
বড় আপা ঝাড়ি দিবে, দুলাভাই টাকা,
সেলুনে যাও! গালটা এবার করে আসো ফাঁকা।
হেসে দিবে মা জননী, খোকা বুড়ো হলো,
আব্বা জানও কইবে হেসে, সেভ করতে বলো!
চাচা ফুফু বাকা চোখে, দেখবে বারে বার,
কাজিনেরা কইবে এবার মোল্লাগিরী ছাড়!
ছোট বোনেও বলবে আবার, শেভ করিসনা ক্যান?
সকাল দুপুর সবার গলায় বাজবে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।
বিয়ের কালে কনের স্বজন, কইবে ছেলে বুড়া,
মেয়ে বিয়ে দিলে হবে, জীবন উড়াধুরা।
অবশেষে প্রতিমাসে, ঠেকায় পড়ে শ্যাষ,
দাড়ি গুলো কেটে ফেলি, ব্লেড চালাই ঘ্যাঁচ!

কবিতাঃ সরল স্বীকারোক্তি
© শামীম রেজা
১২/০৫/২০১৪

Post Comment

নিচ্ছ মায়ের খোঁজ?


মাকে নিয়ে দিবস করি, বিবস করি মন,
বৃদ্ধ মাতা, রোগে ভোগে, বকে সারাক্ষণ।
নেইনা খবর মা জননীর, সময় আমার কই?
লক্ষী বউয়ের আচল তলে, সারাটা দিন রই।
ভাল্লাগেনা বুড়ির কথা, ছাতার মাথা সব,
এটা খাবে সেটা খাবে, বুড়ির অনেক সখ।
ঝাড়ি মারি, বুড়া বেটি চেঁচায় সারাদিন,
মরেনা ক্যান, প্যান প্যানানী বুড়ি লজ্বাহীন।
শ্বশুর বাড়ির কুটুম্বরা ভাবছে জানি কি,
বুড়ির জ্বালায় মুখ হারিয়ে মরতে বসেছি।
শাশুড়ি মা ভদ্র অনেক, আদর ভরা মন,
এই ভুবনে তাহার মতো নেইতো আপন জন।
আজকে আমি দিবস খুঁজি শাশুরি মা’র তরে,
আমার যত শ্রদ্ধাগুলি তাহার চরণ পরে।

কাব্য পড়ে দিচ্ছ গালি, বকছো আমায় খুব,
কইবোনাতো জবাব কিছু, রইবো আজি চুপ।
তোমরা যারা মা মা করো, আবেগ দেখাও রোজ,
হাত দিয়ে কও বুকে তোমার, নিচ্ছ মায়ের খোঁজ?

কবিতাঃ নিচ্ছ মায়ের খোঁজ?
© শামীম রেজা
১২/০৫/২০১৪

Post Comment

জীবনের ভাঙা গড়া


পাশের নড়বড়ে ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে, সেখানে গড়ে উঠবে মাল্টিস্টোরড প্রাসাদ। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রমাগত আঘাতে আঘাতে ভেঙে যাছে ভবনটির হৃদয়, এই এখানে, আমার ঘরে বসেও শুনতে পাচ্ছি ভবনটির তীব্র আর্তনাদ, ধ্রীম, ধ্রীম, ধ্রীম......, হাতুড়ির ক্রমাগত আঘাতে আঘাতে ভবনটি দূর্বল হয়ে যায়, অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার করে কাঁদে।
আমি ভবনের চিৎকার শুনি, বুকের গভীর হতে উঠে আসা হাহাকার শুনি, শুনতে শুনতে একসময় অসহ্য মনে হয়, কান ঝালা-পালা হয়ে যায়, বিরক্ত হই। এই যন্ত্রনাকাতর নাগরীক জীবনে অন্যের কান্না শোনার সময় আমাদের কই?

আমি জানি এই চিৎকার এক সময় থেমে যাবে, নড়বড়ে ভাঙাচোড়া ভবনটি নতুন করে গড়ে উঠবে, বিপুল বিশাল দেহ নিয়ে গর্বিত ভঙ্গিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এই নগরীর বুকে। তীব্র জৌলুষে ভাসবে এ প্রাসাদ। ভাঙার মাঝেই ভবনের স্বার্থকতা, আগুনে পুড়ে যেমন সোনা খাঁটি হয়, ঠিক তেমনি ভাবেই প্রতিবার ভাঙনের মুখে পড়ে ভবন হয় আরো মজবুত, আরো সুন্দর।

আমরা মানুষ! প্রতিনিয়ত ভাঙি, ভেঙে ভেঙেই গড়ে উঠি নতুন করে। আল্লাহ আমাদের হৃদয় ভেঙে দেন, আমরা কাঁদি, চিৎকার করে কাঁদি, কাঁদতে কাঁদতেই একসময় আবিস্কার করি আমরা নতুন করে গড়ে উঠেছি, ঠিক ওই ভাঙা দালানের মতোই।

আমরা জানিনা কিসে আমাদের কল্যান, আর কিসে অকল্যাণ!

লেখাঃ জীবনের ভাঙা গড়া
© শামীম রেজা
১০/০৫/২০১৪

Post Comment

দুই টাকায় নায়িকার সঙ্গ


একটা সময় ছিলো যখন রাস্তাঘাটে নর্তকী ও গায়িকারা নাচ-গান প্রদর্শন ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে বিনোদন যোগাতো আর (অ)মানুষরা তাদেরকে টাকা প্রদান করতো। যে নায়িকা-গায়িকা দর্শকদেরকে যত বেশি বিনোদন যোগাতে পারতো তার রেটও তত বেশি ছিলো।
এখন আমাদের দেশের (অ)ভদ্র পরিবারের মেয়েরাও নাচ-গান করে মানুষের মনোরঞ্জন করে টাকা উপার্জন করে। তাদেরকে সুন্দর একটা নাম দেয়া হয়েছে মিডিয়া স্টার। এবং এইসব মিডিয়া স্টার যখন মঞ্চে উঠে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখে তখন তাদের বাবা-মায়ের উচ্ছাসিত প্রশংসা করে বলে “আমার এই পর্যায়ে আসার পেছনে সবচাইতে বেশি অবদান ছিলো আমার বাবা-মায়ের”, (কথার অন্তর্নিহিত বক্তব্য হচ্ছে, জাহান্নামে গেলে আমি একলা যাবোনা, ওই দুইটাকে সাথে করেই যাবো)

ছোট বেলাতে বিটিভিতে আলিফ লায়লা দেখতাম, বাগদাদ নগরীতে এক সুন্দরী নারী ছিলো, অসম্ভব রুপবতী সে নারী। নানান দেশের শাহজাদারা আসতো তার সাথে সময় কাটাতে। এক রাতের জন্য ওই নারীর চাহিদা ছিলো একলক্ষ স্বর্ণমূদ্রা।
বিভিন্ন দেশের শাহজাদারা রাজকোষ উজার করে তাকে টাকা দিতে দিতে একসময় পথের ফকিরে পরিণত হতো।

দিন এখন বদলেছে, দেশ আধুনিক হয়েছে, ডিজিটালের ছোয়া লেগেছে দেশের সর্বত্র। শায়েস্তা খানের এক টাকায় আট মণের চালের বস্তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ষোল হাজার টাকায়। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, দাম বাড়েনাই আলিফ লায়লার সেই সুন্দরী নায়িকার।
দ্রব্য মূল্যের এই দুর্মূল্যের বাজারে, এই আধুনিক যুগে নায়িকাদের সাথে সময় কাটাতে মিনিট প্রতি ব্যায় করতে হয় মাত্র ২টাকা!!
দেশের এতো এতো নায়িকা-গায়িকাদের এমন আর্থিক দূরবস্থা দেখে সত্যিই আমরা লজ্জ্বিত! আমাদের জাফর স্যাররা এখন আক্ষেপ করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, “আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?!”

প্রায় প্রতিদিনই অদ্ভুত সব নম্বর থেকে মোবাইলে কল আসে, কল রিসিভ হতেই অপর প্রান্ত হতে দেশের নামী-দামী গায়িকা-নায়িকা ঢঙ্গি কন্ঠে বলে ওঠে। “হেল্লো বন্ধুরা! আমি শয়তানের খালাতো বোন বলছি! আমার সাথে সরাসরি কথা বলতে চাইলে ডায়াল করো ******* নম্বরে! প্রতি মিনিট মাত্র ২টাকা”!

খাঁটি বাংলায় লিখতে জানিনা, তবে প্রশ্ন করতেই পারি, মোবাইল কোম্পানী গুলো কিসের দালালী শুরু করেছে? প্রতি মিনিট ২টাকার বিনিময়ে এদেশের তরুণ সমাজের কাছে এসব কি বিক্রি করা শুরু করেছে?

লেখাঃ দুই টাকায় নায়িকার সঙ্গ
© শামীম রেজা
০৯/০৫/২০১৪

Post Comment

আমাদের দ্বিমুখী আচরণ


রেষ্টুরেন্টে বসে গোস্ত-পরোটা খাচ্ছি, ক্রাচে ভর করা এক মাঝ বয়সী পঙ্গু ভিক্ষুক টেবিলের সামনে এসে দাড়িয়ে আছে, চোখে করুণ চাহনী। ইশারায় বুঝিয়ে দিলো, ক্ষুধার্ত। আমিও ক্ষুধার্ত ছিলাম, সে কারণেই সম্ভবত বেচারার কষ্টটা বুঝতে পারছিলাম, তার জন্যও গোস্ত-পরোটার অর্ডার দেয়া হলো।

ওয়েটার বয়স্ক মানুষ, স্বাভাবিক ভাবেই সে ‘আপনি’ সম্বোধন প্রাপ্য। কিন্তু এই ভিক্ষুক ব্যাটা দেখলাম সম্পূর্ণ উল্টো! ডাইরেক্ট তুই-তোকারী করে কথা বলছিলো। যখন আমার সাথে কথা বলে তখন মুখে একটা করুণ ভাব করে শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে কথা বলে। ঠিক পরক্ষণেই যখন কোনো প্রয়োজনে ওয়েটারকে ডাক দিচ্ছে তখন তার ব্যবহার সম্পূর্ণ বিপরীত। মনে হচ্ছিলো সিংহের মতো গর্জনশীল কোনো মনিব তার গোলামের সাথে কথা বলছে!
অপাত্রে দান করেছি বলে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো, তবে মেজাজ খারাপ ভাবটা তাকে বুঝতে দেইনাই। বিল পরিশোধ করে রেষ্টুরেন্ট হতে বেরিয়ে এসেছিলাম, আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এই ব্যাটাকে আর কখনো কিছু দেয়া যাবেনা, চাড়াল একটা!

কিছু ব্যাপার মিলে যাচ্ছে। আমরা জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে করুণভাবে কান্নাকাটি করি, নিজেকে অসহায় হিসেবে উপস্থাপন করি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি। আবার এই আমরাই মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজে বসে বসেই কাজের খালা কিংবা বাড়ির দাড়োয়ানকে হুকুম দেয়ার সময় অকথ্য রকমের বাজে আচরণ প্রদর্শণ করি। দেখা যাচ্ছে কাজের খালা আমার চাইতে বয়সে বড়, তারপরেও তাকে আপনি করে সম্বোধন করতে আমার ইগোতে লাগে। অধিনস্তদেরকে তুই করে ডাকতে না পারলে মানসিক তৃপ্তি আসেনা। বয়স্ক রিক্সাওয়ালাদেরকে ডাক দেই, ‘এই রিক্সা যাবি?!’

আমাদের রাগ আছে, দুই টাকা ফকিরকে দান করে তার ব্যবহার দেখে রেগে যাই। যে আল্লাহ আমাদের এতো এতো নেয়ামত দিয়েছেন তার রাগ নেই?
বান্দার সাথে উল্টাপাল্টা আচরণ করে, বান্দার হক নষ্ট করে, লাল ফিতার প্যাচে ফেলে ঘুশের টাকা দিয়ে পেট পূর্ণ করে, নামের আগে আলহাজ্ব লাগিয়ে আল্লাহর সাথে বিনয়াবনত হয়ে কথা বললে আল্লাহ সেটা গ্রহণ করবেন? আমাদের চাওয়াগুলো আল্লাহর দরবারে কবুল হবে?

লেখাঃ আমাদের দ্বিমুখী আচরণ
© শামীম রেজা
০৮/০৫/২০১৪

Post Comment

সুখ তারা

‘রফিক! কাল সন্ধ্যায় আমার বাসায় আইসো, তোমার দাওয়াত’।
‘কি উপলক্ষে আঙ্কেল?’
হাসান সাহেব মৃদু হাসেন। ‘না, এখন বলবোনা, সন্ধ্যায় বাসায় আসো তারপরে বলবো’।
ওকে আঙ্কেল, কাল দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

হাসান সাহেব হেঁটে হেঁটে মহল্লার প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে এলেন, সবার মনেই কৌতুহল, কি এমন উপলক্ষ যেটা তিনি কাউকে বলছেননা!
হাসান সাহেবের মুখে মিটি মিটি হাসি, সবার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

ভূমি অফিসের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী এই হাসান সাহেব, মহল্লায় এসেছেন ৫বছর হলো। সবার কাছেই তার পরিচিতি দজ্জাল বউয়ের বেড়াল স্বামী হিসেবে। প্রতিরাতেই ধুপ ধাপ শব্দে প্লেট-গ্লাস ভাঙা, বউয়ের চিল্লা-পাল্লা এবং রান্নাঘড়ের হাঁড়ি পাতিল আছড়ানোর শব্দে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এলাকার লোকজন।
বউয়ের এতো চিৎকার চেঁচামেচিতেও হাসান সাহেব কোনো জবাব দেননা, জবাব দিলে ঝগড়াটা জমতো ভালো। কিন্তু হাসান সাহেবের এই নিরবতা অসহ্য ঠেকে বউয়ের কাছে, ঝগড়া করার জন্য উপযুক্ত প্রতিপক্ষ না পেয়ে রাগে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে হাসান সাহেবকে এক প্রকার ঠেলেই ঘর থেকে বাইরে বের করে দেয় বউ।
হাসান সাহেব চাইলে পুরুষ নির্যাতন আইনে বউয়ের বিরুদ্ধে থানায় নালিশ জানাতে পারতেন, কিন্তু তিনি তার কিছুই করেননা, যেনো কিছুই হয়নাই এমন একটা ভাব নিয়ে মহল্লার এক কোণের বন্ধ দোকানটার সামনের বেঞ্চিতে গিয়ে সটান শুয়ে পড়েন।
রাতের আকাশের তাড়া গুনতে গুনতে হাসান সাহেব ভাবনায় পড়ে যান, দেশে পুরুষ নির্যাতন বিরোধী কোনো আইন আছে? আবার নিজেকে প্রবোধ দেন, নাহ! বউয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালে মানুষে কি বলবে!

বাঁশিতে তীব্র হুইসেল এবং ভরাট গলায় চোরদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারী উচ্চারণ করতে করতে নাইট গার্ড এসে গা ঘেঁসে বসে পড়ে। রাত বিরোতে বাহিরে ঘুর ঘুর করা হাসান সাহেবের সাথে এলাকার নাইট গার্ডদের দারুন একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে।
‘ভাই শইলডা ভালা নি?’
‘হ্যা, ভালো আছি, তোমাদের খবর কি?’
‘আছি ভাই একরকম। তা ভাই আজকেও বাইরে থাকবেন?’
‘হ্যা, বাসায় প্রচন্ড গরম, আমি আবার গরম সহ্য করতে পারিনা’।
‘আজকেতো ভাই গড়ম নাই, বাতাসতো ঠান্ডা। নাইট গার্ডরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসা হাসি করে।
হাসান সাহেব সবই দেখতে পান, তবুও না দেখার ভান করেই ঝিম মেরে পড়ে থাকেন, ধীরে ধীরে মুখ খোলেন, আমি গরম একদম সহ্য করতে পারিনা, ডাক্তার বলেছে মাঝে মধ্যে খোলা হাওয়াতে ঘুমাতে।
দাড়োয়ান আর কথা বাড়ায়না, বাঁশিতে ফুক দিতে দিতে এগিয়ে যায়, হুশিয়ার...... সাবধান......
হাসান সাহেব শুয়ে থাকেন, শুয়ে শুয়েই হারিয়ে যান দূর আকাশের নক্ষত্রের রাজ্যে। অদ্ভুত অদ্ভুত নামে একটা একটা করে তারা গুনতে থাকেন, শুক তারা, হাসি তারা, দুঃখ তারা....
হাসান সাহেব জিকিরের মতো করেই ধীর লয়ে গুনতে থাকেন, দুঃখ তারা... দুঃখ তারা............, চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসে, দুঃখ তারাটাকে অনেক বেশি কাছে মনে হয়, চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে লোনা পানি, হাসান সাহেব চোখ মোছার প্রয়োজন বোধ করেননা, নিশ্চুপ পড়ে থাকেন। দুই একটা কুকুর এসে মৃদু ঘেউ ঘেউ করতে করতে দূরে চলে যায়।

জীবনের হিসেব মেলাতে পারেননা রাহেলা বেগম, সাংসারিক জীবনের ১০টি বছর পার হয়ে গেলো, কি পেয়েছেন তিনি। দুটি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে পড়ে আছেন এই সংসারে। মাস শেষ সাংসারিক খরচের টানাটানি, মানুষ কতভাবে অর্থ উপার্জন করে! হাসানের কলিগরা একেকজন ঢাকা শহরে আলিশান বাড়ি গাড়ি করে ফেলেছে, আর হাসান পড়ে আছে সততা নিয়ে। নিকুচি করি এই সততার, সততা কি সংসারে তেল-নুন এনে দিবে!? ভালো একটা কাপড় নেই, লজ্ব্বায় কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া যায়না!
হাসানের এক কথা, সে হারাম পথে উপার্জন করতে পারবেনা। রাহেলার বুঝে আসেনা, এখানে হারামের কি আছে! ভূমি অফিসেতো এমনিতেই কত রকমের লেনদেন হয়, মানুষের উপকার করে যদি বাড়তি কিছু উপার্জন করা যায় সেখানে হালাল-হারামের প্রশ্ন আসবে কেনো?
নিজের বাবার প্রতি মনটা বিষিয়ে ওঠে রাহেলা বেগমের, এমন একটা লোকের সাথে বিয়ে দিলো, সংসার জ্ঞান যার শূণ্যের কোঠায়। এমন সহজ সড়ল মানুষ নিয়ে দুনিয়াতে চলা যায়!?
স্বামীকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করেন রাহেলা বেগম, নিজের দূর্ব্যবহারের জন্য কিছুটা অনুতপ্তও হন। ছেলে-মেয়ে দু’টি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, স্কুলের বেতন বাকি পড়ে আছে, খাতাও শেষের পর্যায়ে।

চোখ বন্ধ করে পুরো পরিকল্পনাকে নতুন করে সাজিয়ে ফেলেন হাসান সাহেব। অনুষ্ঠানটা খুব জমজমাট হতে হবে। আগামী কাল ঠিক আসরের নামাজের পর পর লাশটা পড়ে থাকবে বাউন্ডারি ওয়ালের পাশে। আচ্ছা বাউন্ডারি ওয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে মাথাটা কি থেতলে যাবে? হাসান সাহেব ভাবনায় পড়ে যান।
নাহ! লাশটাকে খুব বেশি বীভৎস করা যাবেনা, বিভিৎস লাশের ছবি পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়না, টিভিতেও দেখানো হয়না।
এক কাজ করলে কেমন হয়?! ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত লাশ! এটাই ভালো হবে। হাসান সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
আচ্ছা, লাশ দেখে ছেলে-মেয়ে দু’টির অনুভূতি কেমন হবে? ওরা কি খুব বেশি কান্নাকাটি করবে? বাচ্চা মানুষ, কাঁদুক কিছুদিন, তারপর এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে। নিষ্ঠুর পৃথিবীর কঠোরতা বুঝুক!
এলাকার সব মানুষকেই দাওয়াত দেয়া হয়েছে, পরিচিত বেশ কিছু মিডিয়া কর্মীকেও খবর দেয়া হয়েছে। হাসান সাহেব কল্পনাতে দেখতে পাচ্ছেন মানুষের অনুভূতি। তার মৃত্যুটা কতটা আলোড়ন সৃষ্টি করবে সেটা ভাবতেই শিহরিত বোধ করেন।
জানাজাতে ঢল নামবে হাজারো মানুষের। আচ্ছা আত্মহত্যা করলে কি জানাজা হয়? না হোক জানাজা, সবাই বুঝুক মানুষ কতটা অস্ত্বিত্ব সংকটে ভুগলে পরে নিজের জীবনটাকেও তুচ্ছ করতে পারে।
অভিমান! দুনিয়ার প্রতি প্রচন্ড অভিমানে ঢুকরে কেঁদে ওঠেন হাসান সাহেব। এই অভিমান কার প্রতি, দুনিয়ার প্রতি নাকি দুনিয়ার স্রষ্টার প্রতি তিনি জানেননা, কখনো জানতেও চাননা।

হাসান সাহেব চোখ বন্ধ করে বেঞ্চের উপর সটান শুয়ে থাকেন, কেউ একজন পাশে এসে দাড়ায়, দূরে কোথাও করুণ স্বরে ডেকে ওঠে কুকুর, অনেক দূরে শোনা যায় পাহাড়াদারের বাঁশি, হাসান সাহেব কৌতুহল বোধ করেননা। মৃত্যুর পরিকল্পনা করতে থাকা একজন মানুষের কৌতুহল থাকতে নেই।
কেউ একজন পাশে বসে, পরম মমতায় চুলে বিলি কেটে দেয়। হাসান সাহেব শুয়ে থাকেন নির্বিকারভাবে, হবে হয়তো কেউ একজন! কোথা হতে টুপ করে একফোটা লোনা জ্বল এসে গাল ভিজিয়ে দেয়। হাসান সাহেব চোখ খুলেন, অবাক হন, মৃত্যু পথযাত্রী মানুষও কখনো কখনো অবাক হয়, তিনিও অবাক হলেন। মাথার কাছটাতে রাহেলা বসে আছে, কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, গণ্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা, অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে ছেলে-মেয়ে দুটি।
হাসান সাহেব আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন, সেখানে অনেক অনেক তারা, সুখ তারা, দুঃখ তারা, হাসি তারা, আনন্দ তারা...
হাসান সাহেব জিকিরের মতো করেই মনে মনে আওড়াতে থাকেন, সুখ তারা... সুখ তারা.... চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসে, সুখ তারাকে অনেক কাছে মনে হয়, চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ে লোনা পানি, হাসান সাহেব চোখ মোছার প্রয়োজন বোধ করেননা।

গল্পঃ সুখ তারা
© শামীম রেজা
০৬/০৫/২০১৪

Post Comment

সাংবিধানিক খুন

রমেশ!
আজ্ঞে রাণীমা!
‘যেভাবেই হোক দেশে বাহাত্তরের সংবিধান পূণস্থাপন করতে হবে, তুমি দলের সকল নেতাকর্মীকে এব্যাপারে নির্দেশনা জাড়ি করে দাও। আর একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করো, মনে রেখো বাহাত্তরের সংবিধানের একটি ধারাও বাদ দেয়া যাবেনা’।
‘জো হুকুম মহারাণী’
হাত কচলাতে কচলাতে রমেশ ছুটে যায় ভারতীয় হাই কমিশন অফিসে, বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হলে বিশেষজ্ঞদের নামের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে। এতো বড় একটা কাজ ভারতের পরামর্শ ছাড়া করা ঠিক হবেনা।

বিশাল হলরুম, আলিশান গদিতে বসে আছেন মহারাণী। দরবারে উপস্থিত ভারত সরকারের অতি আস্থাভাজন বুদ্ধিজীবিবৃন্দ।
নিরবতা ভাঙলেন মহারাণী। সম্মানিত উপস্থিতি, আমি আমার পিতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ সমাধা করতে চাই। এই দেশ আমাদের, এই দেশ মুজিব পরিবারের, যুগ-যুগান্তর ধরে এদেশ শাসন করবে মুজিব পরিবার, মাঝখানে যা হয়ে গেছে সেটা নিক্ষিপ্ত হবে আস্তাকুড়ে। আমরা বাহাত্তরের সংবিধান এদেশে আবার চালু করবো। এব্যাপারে আপনাদের পরামর্শ চাই।

প্রথমেই হাত তোলে মতিলাল, ‘মহারাণী বাহাত্তরের সংবিধান চালু করতে হলে বাকশাল স্থাপন করতে হবে, দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে হবে’।
রাণী মুচকি হাসে, হাসতে হাসতেই জবাব দেয়, মতিলাল তুমি কোন দেশে আছো? বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ছাড়া এখন আর কোন দল আছে? তুমি কি অন্ধ? সবগুলো দল অঘোশিতভাবেই নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।

একবাল তুমি কিছু বলবা?
‘জ্বি রাণী সাহেবা, মোটা গোফে তা দিতে দিতে হাই তুলে একবাল। আমি বলছিলামকি বাহাত্তরেতো এতোবড় সেনাবাহিনী ছিলোনা, তখন রক্ষিবাহিনী অনেক শক্তিশালী ছিলো। ছাত্রলীগের ছেলেরা চাইলেই সেনা অফিসারদের বউ-মেয়েদের তুলে নিতে পারতো। আমি সংবিধানের মারপ্যাচ খুব একটা বুঝিনা, তবে এ বিষয়টার প্রতি লক্ষ রাখা উচিত’।
‘তোমার মাথায় বুদ্ধি আছে, কিন্তু চোখে সমস্যা আছে সেটা তোমার চশমা দেখলেই বোঝা যায়। দেশে রক্ষিবাহিনী নেইতো কি হয়েছে, র‍্যাব বাহিনীতো আছে। আর সেনাবাহিনী শক্তিশালী একসময় ছিলো এখন আর সেটা নেই। ছাত্রলীগের ছেলেরা এখন আগের চাইতেও বেশি সাহসী, এখন আর তারা কাউকে তুলে আনেনা, কাউকে প্রয়োজন হলে তার বাসায় চলে যায়’।

আনিসুল হাত তুলে, রাণীমা আমি কিছু বলতে চাই।
‘তুমি এটা কি বললা আনিসুল, সার্টিফেকেট ধারী দালালকে যদি এভাবে হাত তুলে কথা বলতে হয় সেটা আমাদের জন্য লজ্জ্বার ব্যাপার। বলে ফেলো, বলে ফেলো’।
‘রাণীমা, আমাদের বন্ধু দেশ ভারত হচ্ছে সেক্যুলার রাষ্ট্র, অথচ আমাদের সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস রয়ে গেছে, এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, বাহাত্তরের সংবিধানেতো ইসলাম ছিলোনা’।
‘তোমার সাথে আমিও একমত, ইতোমধ্যেই সংবিধান সংশোধণ করে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস অংশটি বাদ দেয়া হয়েছে, এবং দেশব্যাপি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে, “মহারাণীর উপর আস্থা রাখুন”। অচিরেই অন্যান্য ইসলামিক বিষয়গুলো বাদ দেয়া হবে’।

রমেশ তুমি কিছু বলবা?
‘মহারাণী লাশ লাগবে লাশ! বাহাত্তরের সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে হলে হাজার হাজার লাশ লাগবে। আপনার পিতার আমলে পুকুরে, নদীতে, খালে, বিলে, সব যায়গাতেই লাশ পাওয়া যেতো। মানুষ ঘৃণায় মাছ খেতোনা, কারণ মাছগুলো পঁচাগলা মানুশের লাশ খেতো’।
রাণী কিছুক্ষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন, কথা তুমি ভুল বলোনাই, কিন্তু এতো লাশ পাবো কোথায়? জামায়াত শিবিরতো সবগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। তুমি ওসমানকে একটা ফোন লাগাও’

মূহুর্তেই ওসমানকে লাইনে পাওয়া গেলো, মহারাণী কথা শুরু করলেন, হ্যা ওসমান তুমি এই মাসে কয়টা লাশ দিতে পারবা?
মহারাণীর ফোন পেয়েই ওসমানের মুখ কাঁচুমাচু হয়ে যায়, রাণিমা বড় সমস্যায় আছি, মানুষ এখন অনেক সতর্ক হয়ে গেছে, গুম করা এখন কঠিন কাজ। তারপরেও চেস্টা করলে দিনে দুই-চারটা দিতে পারবো।
‘আমি অতশত বুঝিনা, আমার লাশ চাই লাশ! যেভাবেই হোক বাহাত্তরের সংবিধান চালু করতে হবে’।
‘কিন্তু রাণীমা এতো লাশ পাবো কোথায়?’
রাণী কিছুক্ষণ চিন্তা করে, হঠাৎ করেই বলে ওঠে, ‘তুমি এক কাজ করো, আমার বাড়িতে চলে আসো, এখানে কয়েকটা লাশ আছে’। ফোন কেটে দেয় রাণী।
হতভম্ব উপস্থিতিরা চমকে ওঠে, লাশ! এখানে লাশ আসবে কোথা থেকে রাণীমা?
সেকথা পরে বলছি, আগে বলো, আমার জন্য, বাহাত্তরের সংবিধানের জন্য, জীবন দিতে রাজি আছো কে কে?
কেউ কোনো কথা বলেনা, রাণীর সন্তুষ্টির জন্য কার আগে কে হাত তুলবে প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেলো।
একে একে সবার মুখের দিকে তাকালেন রাণীমা, হাসি মুখেই বললেন, গুড।
ওসমান বাহিনী কিছুক্ষনের মধ্যেই হাজির হয়ে যাবে, তোমাদের সবার জন্যই আমার শুভ কামনা রইলো। মৃত্যুর সময় যেনো তোমাদের কোনো কষ্ট দেয়া না হয় আমি সেটা বলে দিবো।
রাণীমা এটা আপনি কি বলছেন? ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেলো সকলের মুখ।
জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে, বাহাত্তরের সংবিধানের স্বার্থে তোমরা জীবন দিচ্ছ। ইতিহাসের পাতায় তোমাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আগামী কাল তোমাদের লাশ ভাসবে দেশের বিভিন্ন নদী-নালায়। তোমাদের হত্যার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। মিডিয়াতেও ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হবে।
রাণীমার কথা শেষ হয়না, ওসমান বাহিনী হাজির হয়ে যায়, ক্ষিপ্রগতিতে হাত-পা বেধে, মুখে কাপড় ঢুকিয় স্থব্ধ করে দেয়া হয় উপস্থিত অতিথিদের। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে দেখা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার নেই।

চ্যাংদোলা হয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে আনিসুলের কানে ভেসে আসে রাণিমাতার সুললিত কন্ঠের গান “জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!............”

গল্পঃ সাংবিধানিক খুন
© শামীম রেজা
০৩/০৫/২০১৪

Post Comment

ইসলামী বিপ্লব চাই

এক মেথরের গল্প বলছি, যে সে মেথর নয় একেবারে জাত মেথর সেই ব্যক্তি। সাত পুরুষ ধরে মেথরের কাজ করছে, এই পেশা ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানা নেই তার। তাছাড়া পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে দেয়ার মতো বিপুল বিশাল হিম্মতও নেই মেথর হীরা লালের।

একদিন কাজের সন্ধানে একটি সুপার স্টোরে আবেদন করলো হীরা লাল। যথারিতী তার সবগুলো যোগ্যতা যাচাই বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য ভাইবা অনুষ্ঠিত হবে।
ভাইবা বোর্ডে তাকে একটি প্রশ্নই করা হলো, আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস আছে?
হতভম্ব মেথরের চোখ কপালে উঠলো, “না স্যার, আমার ইমেইল নেই”
বিরক্তিতে নিয়োগকর্তার ভ্রু কুঞ্চিত হলো, তাহলেতো আপনার চাকরী হবেনা। আমাদের এই সুপারস্টোর হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান, আর এই প্রতিষ্ঠানে এমন কারো চাকরী হতে পারেনা, যে প্রযুক্তি জ্ঞানে পিছিয়ে আছে। আমরা আপনাকে নিতে পারছিনা বলে দুঃখিত!

ব্যর্থ এবং ভগ্ন হৃদয়ে সুপারস্টোর হতে বেরিয়ে এলো মেথর হীরা লাল। না, অনেক হয়েছে, চাকরীর পেছনে আর দৌড়াবোনা, এবার নিজেই কিছু একটা করতে হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ, পকেটে কিছু টাকা ছিলো সে টাকা দিয়ে কলা কিনে ফুটপাতে কলা বিক্রি শুরু করলো মেথর হীরা লাল।

হীরা লালের ব্যবসা ভাগ্য ছিলো দারুণ, অল্প দিনের মধ্যেই ব্যবসা ফুলে ফেঁপে বিশাল আকৃতি ধারণ করলো। দিন যায় দিন আসে, হীরা লালকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নাই।
দেখতে দেখতে হীরা লাল একদিন বিশাল ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। এখন সে দেশের সর্ববৃহৎ চেইনস্টোরের মালিক।

চীন থেকে প্রতিনিধীদল এসেছে, তারা হীরালালের সাথে যৌথ উদ্যোগে একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে চায়। প্রাসঙ্গিক আলোচনা হলো, চুক্তি স্বাক্ষর হলো, এবার চীনের কোম্পানীর এক কর্মকর্তা এসে বললো, স্যার আপনার ইমেইল এ্যাড্রেসটা একটু দেয়া যাবে?
মুখে একটু বিরক্তির ভাব এনে হীরা লাল জবাব দিলো, আমার ইমেইল এ্যাড্রেস নাই।
হতভম্ব কর্মকর্তা পুণরায় প্রশ্ন করলো, স্যার এটা আপনি কি বলছেন? ! প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার যুগে আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস নাই! আপনি জানেন স্যার, আজ যদি আপনার একটা ই-মেইল এ্যাড্রেস থাকতো তবে আপনার ব্যবসা কোন পর্যায়ে উন্নতি হতো?
হীরা লাল কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে থাকে, তারপরে কর্মকর্তার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জবাব দেয়, হ্যা আমি জানি আজকে যদি আমার একটা ইমেইল এ্যাড্রেস থাকতো তবে আমি কোথায় থাকতাম!!

হীরালালের ঘটনাটি মনে পড়লো সাম্প্রতিক বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে। শাহবাগের উত্থান ঘটলো, পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে উত্থান হলো হেফাজতের, সেখানে গুলি চালানো হলো, মানুষ মরলো। একের পর এক আওয়ামী সরকার বিরোধী আন্দোলন ব্যার্থ হলো, আমরা হতাশ হলাম।
কিন্তু আমার যেটা মনে হচ্ছে, আমাদের আগের সকল ব্যার্থতাই হচ্ছে আমাদের সফলতা। বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রাম যদি সফল হতো তাহলে হয়তো ১৮দলীয় জোট ক্ষমতায় যেতে পারতো, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামীলীগ থেকে যেতো তার আগের অবস্থানেই।

কিন্তু দেশের বর্তমান অবস্থা ঘোষণা দিচ্ছে, ক্ষমতায় থেকেও রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামীলীগের মৃত্যু ঘটেছে, জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে গেছে। বিকল্প শক্তি হিসেবে উত্থান ঘটেছে জামায়াতে ইসলামীর। দেশের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেই সেটা প্রমাণ হয়েছে।

শেষ কথা, সাময়িক বিজয় নয়, চাই দীর্ঘ মেয়াদী ইসলামী বিপ্লব।

লেখাঃ ইসলামী বিপ্লব চাই
© শামীম রেজা
০২/০৫/২০১৪

Post Comment

দুঃখ বিলাস

আফসার চোখ ধরে সারাদিন কাতরায়,
রোদ জ্বলা দুপুরেও, আঁধারে সাতরায়।
আবতাহি নিঃস্ব, একটাই ছোট বোন,
ক্যান্সারে মা মরা, বাবাটাও হলো খুন।
নয়া বিয়ে মনিরের, সারাদিন টেনশন,
বুড়ো যেনো হয়ে গেছে, নিয়ে নিবে পেনশন।
জব্বার ছাত্র, হাড়ভাঙা খাটুনি,
অফিসে ভুল হলে, জোটে খুব বকুনী।
ইকবাল ক্ষণে ক্ষণে, কেঁদে যায় নিরবে,
নেই তার সন্তান, মরে গেলে কি রবে!
জহিরের চিন্তা, সংসারে বড় সে,
ঘরে দুই বোন তার, হিমশিম খরচে।
ফারিয়া কালো বলে হচ্ছেনা বিয়ে তার,
পরিবারে বোঝা সে, সারাক্ষণ মুখ ভার।
পায়ের উপর ঠ্যাং তুলে আমি শুধু দুঃখে রই,
এতো এতো ভালো আছি, তবু আমি সুখী নই।
সুখ থাকে হৃদয়ে, পজেটিভ ভাবনায়,
দুঃখ বিলাসে, দিন তবু কেটে যায়।

কবিতাঃ দুঃখ বিলাস
© শামীম রেজা
২৯/০৪/২০১৪

Post Comment

ভোগ করি ফ্রিডম

এই নাও প্যাকেটে ভরা আছে কনডম,
ফান করো, গাও গান, ভোগ করো ফ্রিডম।
তোমরাই ছাত্র, তোমরাই শক্তি,
তোমাদের দেখলে করে জাতি ভক্তি।
ক্যাম্পাসে কত মেয়ে, রঙ ঢং ড্রেসে,
মডেলিং ক্যাট ওয়াক, ছবি আসে প্রেসে।
সাবধান, ভাইরাস, এইডস হলে মরবে,
হাতে রেখো কনডম, নির্ভয়ে লড়বে।
ওকে স্যার, সাবধান, আজ হতে আমিও,
কথাগুলো বলেছিলো গার্ল ফ্রেন্ড তানিও।
তানিয়া! কোন তানি, তোমাদের ক্লাসের?
জ্বি স্যার, সুন্দরী, কপিপেস্ট ভেনাসের!
শিক্ষক ঘেমে যায়, থর থর কাঁপুনি!
ঔষধ খুঁজে ফেরে, উঠে গেছে হাঁপানি।
পায়ে ধরি বাবাজি একটাই মেয়ে মোর,
শিক্ষক হয়েও করি দুই হাত জোড়।
ছিহ! স্যার ছেড়ে দিন, আপনিও সেকেলে,
লং ড্রাইভ সিডিউল, আজকেই বিকেলে।
ভয় নেই এইডস-এর হাতে আছে কনডম,
ফান করি, গান গাই, ভোগ করি ফ্রিডম।

কবিতাঃ ভোগ করি ফ্রিডম
© শামীম রেজা
২৭/০৪/২০১৪

(নর্থ সাউথ ভার্সিটিতে কনডম বিতরণের প্রেক্ষাপটে রচিত)

Post Comment

আর্লি ম্যারেজ বিষয়ক কথোপকথন।

গতকাল একটা পোস্ট দিয়েছিলাম আর্লি ম্যারেজ নিয়ে। সেখানে আমার যুক্তি ছিলো আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন নয়, ক্যাম্পেইন করতে হবে আর্লি ক্যারিয়ার নিয়ে। অনেকেই আমার সাথে একমত হয়েছিলেন, আবার অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছেন।

সত্যি বলতে কি, আমাদের জানার পরিধি অত্যান্ত স্বপ্ল। আমাদের চিন্তার পরিধিও কম, তাই আমরা অল্প জ্ঞান নিয়ে আমাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের চেস্টা করে থাকি।
কিন্তু কোনটাতে আমাদের কল্যান এবং কোথায় আমাদের অকল্যান সেটা বলতে পারেন একমাত্র মহান রব্বুল আলামীন, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিইতো অন্তর্যামী।

গতকালের টপিক নিয়ে এক ভাইয়ের সাথে ইনবক্স আলোচনা হলো। আলোচনার চুম্বক অংশ শেয়ার করলাম, আশা করছি আমরা সবাই উপকৃত হবো। ভিন্নমতকে স্বাগতম।

Shamim Reja: ইসলামতো মানুষের বৈধ প্রয়োজনের বাইরে কিছু নয়। আপনার আব্বু-আম্মু যদি আপনাকে স্বেচ্ছায় বেকার অবস্থায় বিয়ে করাতে চান সেটা ভিন্ন কথা

Safi Momin: but biyer sathe sathe to sabolombi houa jay abba ammar ceyeto Allah er deya bidhan boro r abbu ammuke to motivate korar try korte hobe setay to amra korini

Shamim Reja: বিয়ে ফরজ হওয়ার জন্যতো অর্থ উপার্জনও একটা শর্ত আপনার যদি অর্থ উপার্জনের ক্ষমতা না থাকে তবে আপনার উপর বিয়ে ফরজ হবেনা।

Safi Momin: kintu Allah to bolchen biye korley apnake sabolmbi kore diben! taile seta ki manen na!

Shamim Reja:
ফরয: যার আর্থিক, শারীরিক, মানসিক সামর্থ্য আছে একজন নারী কে শরীয়ত সম্মত ভাবে চালানোর, তার জন্য বিয়ে তখন ফরয হবে যদি তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রন না রাখতে পারেন।
সুন্নত: যদি সকল সামর্থ্য আছে এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রন রাখতে পারেন তাহলে বিয়ে সুন্নত।
হারাম: উল্লেখিত সামর্থ্যের একটির ও ঘাটতি থাকলে, ঐ ঘাটতি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির জন্য বিয়ে হারাম।
তিনি যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রন না রাখতে পারেন তবে রোযা রাখতে পারেন।
এছাড়াও ব্যক্তি বিশেষ কিছু আহকাম রয়ে গেছে।

Safi Momin: r biye faraz hobar jonno arthik bishoy kothay ache, ami janina eta somvoboto, maolana abdur rahim er paribarik jibon boi theke neya! or islamic foundation er "doinondin jibone islam" theke neya?

Shamim Reja: https://www.amarblog.com/index.php?q=ishkertara%2Fposts%2F110124 এখান থেকে নেয়া

Safi Momin: okhaneto kono refferece nai! sura noor porun

Shamim Reja : সেটাইতো দেখছি

Safi Momin: sura noor er 32 no. ayate, Allah bolchen jara ovabi tader key biye korate. Allah nij dayitte tader ovab mochon kore diben!

Shamim Reja : সুন্দর কথা, কিন্তু যে মেয়েটাকে বিয়ে করবেন তাকেও এই আয়াতের উপর ঈমান আনতে হবে, নইলে সংসার ভাঙার পরে পুনরায় বিবাহের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আপনি হয়তো আল্লাহর উপর ভরসা করে বিয়ে করে ফেলবেন, এবং আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হবেন।
কিন্তু যাকে বিয়ে করবে সে কি ধৈর্য ধারণ করতে পারবে? নাকি দিন-রাত অভাবের সংসারে আপনার সাথে ঝগড়া করে আপনার জীবন ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিবে?

Safi Momin: r tar porer ayate allah bolchen, jara tarpor o biye korte parbena tadet jonno roza apni temn kaukey biye korben atleast korar cesta korte hobe. r apni sabolombi hobar por biye korle oshanti hobena k boleche

Shamim Reja: অশান্তিতো সর্বক্ষেত্রেই হতে পারে। তবে জেনে শুনে বিষ পান করাটা ভিন্ন ব্যাপার

Safi Momin kothatato Allah bolechen, so sundor hobey!

Shamim Reja: আর উপরে যেটা বলেছেন "তেমন মেয়ে বিয়ে করতে হবে"। এটার সাথে একমত তবে এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়াটা দুস্কর

Safi Momin: jene shune bispan mane! apni eta ki bolchen!

Shamim Reja: ধরেন একটি বেকার ছেলে, বাবা-মায়ের অনুগ্রহে জীবন ধারণ করছে। এই মুহূর্তে তার জীবনের সাথে আরেকজনের জীবন জড়িয়ে ফেলাটা কেমন হয়, যেখানে তার নিজেরই আর্থিক সামর্থ নেই।

Safi Momin: Allah bolchen ovabi obosthay biye korle tini ovab dur kore diben, r apni bolchen bispan! very sad

Shamim Reja: কুরআনের আয়াতের সাথে দ্বিমত করার মতো স্পর্ধা আমার নেই। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।

Safi Momin: সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নবী করীম (ছাঃ) তার দিকে তাকালেন এবং তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখল নবী করীম (ছাঃ) তার সম্পর্কে কোন ফায়ছালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যদি আপনার বিবাহের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিবাহ দিয়ে দিন। রাসূল (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কী? সে উত্তর দিল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কি-না। তারপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার চলে গেল। ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! লোহার আংটিও পেলাম না। কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। সাহল (রাঃ) বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি লুঙ্গির অর্ধেক মহিলাকে দিতে চাইল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কি করবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহ’লে তার কোন কাজে আসবে না। আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। এরপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর সে উঠে দাঁড়াল ও নবী করীম (ছাঃ) তাকে যেতে দেখে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নবী করীম (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কী তোমার মুখস্থ আছে। সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এ মহিলাকে তোমার অধীনস্থ করে দিলাম’bb
Safi Momin: [2]. বুখারী হা/৫০৮৭, ৫১২১, ৫১২৬, মুসলিম হা/১৪২৫, বুলূগুল মারাম হা/৯৭৯। .

Shamim Reja: দ্বিমত করার মতো কিছু পাচ্ছিনা

Safi Momin: taile ei sahabir ki hobe! jar ekta lungi chara kichuy cholona! taileto apnar jukti torko onujayee tini jene shune bishpan korechen! rsoyong rasul (sm) oi sahabike bispan koriyechen! nauzubillah

Shamim Reja: আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।

Post Comment