বাংলাদেশে সব কিছুরই দাম বেড়েছে কিন্তু ‘উপদেশ’ নামক জিনিসটার দাম বাড়েনাই। দেশের যেখানে যাবেন সেখানেই দেখবেন কেজি খানেক ‘উপদেশের’ হাড়ি নিয়ে সদাহাস্যমান কিছু মানুষ অপেক্ষা করছে ফ্রি ফ্রি বিতরনের জন্য।
সেদিন দেখলাম মোড়ের টং দোকানের শুক্কুর মিয়া ফেসবুকে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে স্ট্যাটাস দিয়েছে, “আমেরিকার সাথে এতো পিরীতি কিসের? আমেরিকার দূতাবাস বোমা মাইরা উড়াইয়া ফালান। তলে তলে আমেরিকা আওয়ামিলীগের দালালী করে”
কত বিশাল মাপের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এই শুক্কুর মিয়া, ভাবা যায়?! তাকেতো নোবেল প্রাইজ দেয়া উচিত, অন্তত পক্ষে ভারতের পদ্মভূষণটা তার প্রাপ্য।
কথা প্রসঙ্গে একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলো, শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলামনা,
হাসান সাহেব হন্ত-দন্ত হয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটছেন, পথেই দেখা আজগর আলীর সাথে। আজগর আলী আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসা করলো, হাসান ভাই এতো তাড়াহুড়ো করে কই যান?
‘হাসপাতালে যাচ্ছি, বউ অসুস্থ!’
‘ভাবীর কি হয়েছে?’
হাসান সাহেব জবাব দিলেন, ডেলিভারী কেস, অবস্থা সুবিধার না!
আজগর আলী এবার বিজ্ঞের মতো মাথা দোলাতে বললেন, ‘হুম! ডেলিভারী কেস মারাত্মক সিরিয়াস অসুখ! গত বছর এই রোগে আমার বাবা মারা গিয়েছিলো। হতভম্ব হাসান সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন, কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেননা।
ভারতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ভারতের নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে! এবার শুরু হলো উপদেশ দাতাদের বিশাল বিশাল স্ট্যাটাস।
পাড়ার শুক্কুর মিয়া থেকে শুরু করে আজগর আলী কেউই বাদ গেলোনা, সবাই একেকজন বিরাট বিরাট আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে আবির্ভুত হলো। তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল আমার বাসার নিচ তলায় গজওয়ায়ে হিন্দ শুরু হয়ে গেছে। আর সেই যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী বিজেপির পক্ষ নিয়েছে।
ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, বিজেপির নরেন্দ্রমোদি খুব খারাপ লোক, তিনি শত শত মুসলমানকে হত্যা করেছেন, এবং অবশ্যই তিনি খারাপ লোক।
এবার কংগ্রেসের শাসনাধীন ভারতের কথা বলি, তারা ক্ষমতায় থেকে মুসলমানদের জন্য কি করেছেন? হ্যা তারা অনেক ভালো ভালো কাজ করেছেন, বাংলাদেশের সাতক্ষিরায় ভারতীয় সেনা ঢুকিয়ে মুসলমানদের বাড়িঘর ধ্বংশ করেছেন, নারীদের উপর নির্যাতন করেছেন। বাংলাদেশের বিডিআর ধ্বংশ করেছেন, এবং বাংলাদেশকে একটি হিন্দু প্রশাসন শাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।
এখন যদি বিজেপি ও কংগ্রেসের তুলনা করি তবে কারো চাইতে কেউ কমনা।
রাজনীতিতে একটা নিয়ম মেনে চলা হয় সেটা হচ্ছে, ‘শত্রুর শত্রু আমাদের বন্ধু’। কংগ্রেস জামায়াতের উপর কম জুলুম নির্যাতন চালায় নাই। কংগ্রেসের শত্রু হিসেবে জামায়াত বিজেপিকে অভিনন্দন জানাতেই পারে।
জামায়াত অভিনন্দন জানিয়েছে বলে বিজেপি অনেক শক্তিশালী হয়ে গেলো এবং জামায়াত অভিনন্দন না জানালে বিজেপি দূর্বল সরকার হতো এমন চিন্তা করা আহম্মকি ছাড়া আর কিছুইনা। বিজেপিকে অভিনন্দন জানিয়ে বরং জামায়াত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে, বিজেপি এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল না হোক অন্ততপক্ষে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করতে দুইবার চিন্তা করবে।
বিজেপি মুসলমানদের উপর এতোটা হিংস্র হওয়ার কারণ হচ্ছে ভারতের মুসলমানরা একচেটিয়া ভাবে কংগ্রেসকে ভোট প্রদান করে। এদেশের হিন্দুরা যেমন আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়।
ভারতীয় মুসলমানদের আত্মউপলব্ধি করা প্রয়োজন, কংগ্রেসকে এভাবে একচেটিয়া সমর্থন দেয়ার বিনিময়ে ভারতীয় মুসলমানরা কি পেয়েছে! মুসলমানরা কি এখনো ভারতের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা পেয়েছে! ভারতীয় প্রশাসনে মুসলমানদের চাকরী দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য কমেছে, কিংবা ভারতীয় মুসলমানদের জাতীয় পরিচয় পত্রে সন্দেহ জনক চিহ্ন প্রত্যাহার করা হয়েছে? সব গুলো প্রশ্নের যদি নেতিবাচক জবাব হয় তাহলে কি বুঝে ভারতীয় মুসলমানরা একচেটিয়াভাবে কংগ্রেসকে সমর্থন করবে?
ভারতের মুসলমানদের এখন উচিত দুই দলে ভাগ হয়ে একদল কংগ্রেসের সাথে থেকে যাওয়া, এবং আরেকদল ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে সংবর্ধনা দেওয়া। নিজের ভোটারদের উপর বিজেপি অন্তত অত্যাচার চালাবেনা!
ও হ্যা একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, শুনতে পেলাম জামায়াতের অভিনন্দন বার্তায় জনাব মকবুল আহম্মদ বলেছেন "নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি জোট এনডিএ সরকার গঠন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন"। তার এই বক্তব্য শুনে আজগর সাহেব নাকি ডেলিভারী কেসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারাত্মক সিরিয়াস রোগ, গত বছর এই রোগে তার পিতা মারা গিয়েছিলেন।
এদিকে বিজেপি ক্ষমতায় আসার কারনে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ শুক্কুর মিয়া গজওয়ায়ে হিন্দের ঘোষণা দিয়েছেন।
লেখাঃ নরেন্দ্র মোদীকে জামায়াতের শুভেচ্ছা ও আজগর আলীর ডেলিভারী কেস
© শামীম রেজা
১৭/০৫/২০১৪
সেদিন দেখলাম মোড়ের টং দোকানের শুক্কুর মিয়া ফেসবুকে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে স্ট্যাটাস দিয়েছে, “আমেরিকার সাথে এতো পিরীতি কিসের? আমেরিকার দূতাবাস বোমা মাইরা উড়াইয়া ফালান। তলে তলে আমেরিকা আওয়ামিলীগের দালালী করে”
কত বিশাল মাপের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এই শুক্কুর মিয়া, ভাবা যায়?! তাকেতো নোবেল প্রাইজ দেয়া উচিত, অন্তত পক্ষে ভারতের পদ্মভূষণটা তার প্রাপ্য।
কথা প্রসঙ্গে একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলো, শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলামনা,
হাসান সাহেব হন্ত-দন্ত হয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটছেন, পথেই দেখা আজগর আলীর সাথে। আজগর আলী আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসা করলো, হাসান ভাই এতো তাড়াহুড়ো করে কই যান?
‘হাসপাতালে যাচ্ছি, বউ অসুস্থ!’
‘ভাবীর কি হয়েছে?’
হাসান সাহেব জবাব দিলেন, ডেলিভারী কেস, অবস্থা সুবিধার না!
আজগর আলী এবার বিজ্ঞের মতো মাথা দোলাতে বললেন, ‘হুম! ডেলিভারী কেস মারাত্মক সিরিয়াস অসুখ! গত বছর এই রোগে আমার বাবা মারা গিয়েছিলো। হতভম্ব হাসান সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন, কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেননা।
ভারতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ভারতের নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে! এবার শুরু হলো উপদেশ দাতাদের বিশাল বিশাল স্ট্যাটাস।
পাড়ার শুক্কুর মিয়া থেকে শুরু করে আজগর আলী কেউই বাদ গেলোনা, সবাই একেকজন বিরাট বিরাট আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে আবির্ভুত হলো। তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল আমার বাসার নিচ তলায় গজওয়ায়ে হিন্দ শুরু হয়ে গেছে। আর সেই যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী বিজেপির পক্ষ নিয়েছে।
ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, বিজেপির নরেন্দ্রমোদি খুব খারাপ লোক, তিনি শত শত মুসলমানকে হত্যা করেছেন, এবং অবশ্যই তিনি খারাপ লোক।
এবার কংগ্রেসের শাসনাধীন ভারতের কথা বলি, তারা ক্ষমতায় থেকে মুসলমানদের জন্য কি করেছেন? হ্যা তারা অনেক ভালো ভালো কাজ করেছেন, বাংলাদেশের সাতক্ষিরায় ভারতীয় সেনা ঢুকিয়ে মুসলমানদের বাড়িঘর ধ্বংশ করেছেন, নারীদের উপর নির্যাতন করেছেন। বাংলাদেশের বিডিআর ধ্বংশ করেছেন, এবং বাংলাদেশকে একটি হিন্দু প্রশাসন শাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।
এখন যদি বিজেপি ও কংগ্রেসের তুলনা করি তবে কারো চাইতে কেউ কমনা।
রাজনীতিতে একটা নিয়ম মেনে চলা হয় সেটা হচ্ছে, ‘শত্রুর শত্রু আমাদের বন্ধু’। কংগ্রেস জামায়াতের উপর কম জুলুম নির্যাতন চালায় নাই। কংগ্রেসের শত্রু হিসেবে জামায়াত বিজেপিকে অভিনন্দন জানাতেই পারে।
জামায়াত অভিনন্দন জানিয়েছে বলে বিজেপি অনেক শক্তিশালী হয়ে গেলো এবং জামায়াত অভিনন্দন না জানালে বিজেপি দূর্বল সরকার হতো এমন চিন্তা করা আহম্মকি ছাড়া আর কিছুইনা। বিজেপিকে অভিনন্দন জানিয়ে বরং জামায়াত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে, বিজেপি এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল না হোক অন্ততপক্ষে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করতে দুইবার চিন্তা করবে।
বিজেপি মুসলমানদের উপর এতোটা হিংস্র হওয়ার কারণ হচ্ছে ভারতের মুসলমানরা একচেটিয়া ভাবে কংগ্রেসকে ভোট প্রদান করে। এদেশের হিন্দুরা যেমন আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়।
ভারতীয় মুসলমানদের আত্মউপলব্ধি করা প্রয়োজন, কংগ্রেসকে এভাবে একচেটিয়া সমর্থন দেয়ার বিনিময়ে ভারতীয় মুসলমানরা কি পেয়েছে! মুসলমানরা কি এখনো ভারতের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা পেয়েছে! ভারতীয় প্রশাসনে মুসলমানদের চাকরী দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য কমেছে, কিংবা ভারতীয় মুসলমানদের জাতীয় পরিচয় পত্রে সন্দেহ জনক চিহ্ন প্রত্যাহার করা হয়েছে? সব গুলো প্রশ্নের যদি নেতিবাচক জবাব হয় তাহলে কি বুঝে ভারতীয় মুসলমানরা একচেটিয়াভাবে কংগ্রেসকে সমর্থন করবে?
ভারতের মুসলমানদের এখন উচিত দুই দলে ভাগ হয়ে একদল কংগ্রেসের সাথে থেকে যাওয়া, এবং আরেকদল ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে সংবর্ধনা দেওয়া। নিজের ভোটারদের উপর বিজেপি অন্তত অত্যাচার চালাবেনা!
ও হ্যা একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, শুনতে পেলাম জামায়াতের অভিনন্দন বার্তায় জনাব মকবুল আহম্মদ বলেছেন "নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি জোট এনডিএ সরকার গঠন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন"। তার এই বক্তব্য শুনে আজগর সাহেব নাকি ডেলিভারী কেসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারাত্মক সিরিয়াস রোগ, গত বছর এই রোগে তার পিতা মারা গিয়েছিলেন।
এদিকে বিজেপি ক্ষমতায় আসার কারনে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ শুক্কুর মিয়া গজওয়ায়ে হিন্দের ঘোষণা দিয়েছেন।
লেখাঃ নরেন্দ্র মোদীকে জামায়াতের শুভেচ্ছা ও আজগর আলীর ডেলিভারী কেস
© শামীম রেজা
১৭/০৫/২০১৪
No comments:
Post a Comment