এমন বউ লইয়া আমি কি করিব!



এক বড় ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তিনি বিয়ে করবেন, পাত্রীর সন্ধানে ব্যাপক টেনশিতো।
আমি হাসতে হাসতেই বললাম এতো টেনশিতো হওয়ার কি আছে, গার্লস কলেজের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, সুন্দরী একটা দেখে পেছনে হাটতে হাটতে বাসা পর্যন্ত চলে যাবেন, তারপরে একদিন মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে হাজির।
বড় ভাইও হাসতে হাসতে বললেন, হ্যা আমি যেমন হুট করে তাকে পছন্দ করে বিয়ে করে ফেলবো, সেই মেয়েও একদিন হুট করে অন্য একজনের হাত ধরে আমার বাসা থেকে ফুটে যাবে। এখন ঘরে ঘরে পরকীয়া যেভাবে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে, এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছুনা। রুপের ঝলক দেখে মেয়ে চয়েস করলে পরে পস্তাতে হবে।

এবার কিছুটা সিরিয়াস মুডেই বললাম, অতো টেনশনের কাজ নেই, দুচোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্ত মনে অমুক সংগঠনের মেয়ে বিয়ে করে ফেলেন (একটি ইসলামী সংগঠনের ছাত্রী ব্রাঞ্চের) তারা ভীষণ পরহেজগার, আধুনিক চিন্তাধারার সাথে পরিচিত। আপনার এলাকার অমুক সংগঠনের নেতার সাথে যোগাযোগ করেন, তিনি ভালো সন্ধান দিতে পারবেন।
ওই বড় ভাইয়ের ভঙ্গিটা ছিলো দেখার মতো, তিনি চোখ বড় বড় করে বললেন, শামীম একটা সত্য কথা বলবা, আমার আব্বা-আম্মার সাথে তোমার কোনো শত্রুতা নেইতো!?
‘কেনো ভাই, একথা বলছেন কেনো?’
এবার শুরু হলো বড় ভাইয়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়, সেই ঝড় থামানোর সাধ্যে আমার ছিলোনা, “বিয়ের পরে ওই সংগঠনের মেয়েদের প্রথম ও প্রধান কাজ হয়ে জামাইকে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা। তারা হচ্ছে মধু খাওয়া সুন্নত টাইপের ইসলামিস্ট। মধু খাওয়া সুন্নত বুঝো? অর্থাৎ যেসব সুন্নত নিজের পক্ষে যাবে সেগুলো আমল করবো, আর যেগুলো আমার পক্ষে আসবেনা সেগুলোকে সুকৌশলে এড়িয়ে যাবো। তারা কথায় কথায় বলবে, শ্বশুর শ্বাশুরীর সেবা করার জন্য ছেলের বউ বাধ্য নয়।
আমি চাকরী করবো, কিংবা ব্যবসা করবো, সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বাসায় এসে যখন শুনবো ‘তোমার বাবা-মায়ের সেবা করতে আমি বাধ্য নই’ তখন আমার মনের অবস্থা কেমন হবে একবার চিন্তা করে দেখেছো?
আমি কি আমার আব্বা-আম্মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিবো, নাকি চাকরী ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বাবা-মায়ের সেবা করবো?”

বড় ভাইয়ের জ্বলাময়ী বক্তব্য আর শেষ হতে চায়না, তিনি বলেই যাচ্ছেন বলেই যাচ্ছেন। এবার তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আমি কিছু বলতে চাইলাম, তিনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “ওমুক ভাইকে দেখোছো? তিনি মস্তবড় ব্যাংকার, তার ওয়াইফ ইসলামী সংগঠনের নেত্রী, তিনি আলিশান ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, আর তার মায়ের অবস্থা দেখেছো? তার মা বস্তিতে থাকে!
এবার আর আমার কিছু বলার মতো অবশিষ্ট্য রইলোনা, কারণ ওই ব্যাপারটা আমাদের চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছিলাম।

মিন মিন করেই বললাম, আপনার চিন্তাধারা দেখেতো ভয় পাচ্ছি, তাবলীগের মেয়ে ছাড়া আপনার আর কোনো গতি নেই। তারা ফাজায়েল আমল পড়ে পড়ে চরমতম স্বামী ভক্ত, আর পরকিয়ার সম্ভাবনাও নেই। প্রচন্ড রকমের হিজাবী, নিকাবী, আরো যতরকমের ইসলামীক রুলস আছে সব মেনে চলার চেস্টা করে। আপনি উঠতে বললে উঠবে, বসতে বললে বসবে, আপনার অনুমতি ছাড়া ঘরের বাহিরে বের হবেনা।
বড় ভাই প্রতিবাদী ভঙ্গিতে বললেন, আমার ছেলে-মেয়েকে ফেলে বউ যখন জান্নাতের গাড়িতে চড়ে তিন চিল্লার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে তখন আমার সংসার কি জ্বীনে এসে চালাবে?
তাদের যুক্তি শুনবা? বড় ভাই বলতে শুরু করলেন, “আল্লাহর আদেশ পালনের ক্ষেত্রে যদি স্বামী বাধা প্রদান করে তবে স্বামীর আদেশ মানা যাবেনা। সুতরাং চিল্লায় যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামী যদি বাঁধা প্রদান করে তবে স্বামীর আদেশ মানা যাবেনা!!”

এবার সত্যিই আমি হতাশ! বড় ভাইকে প্রশ্ন করলাম, তাহলে কি করবেন বলে চিন্তা করছেন? সবগুলো দরজাইতো বন্ধ!
বড় ভাই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জবাব দিলেন, তকদিরের ফয়সালার জন্য অপেক্ষা করছি, কপালে কি আছে আল্লাহই ভালো জানেন।

লেখাঃ এমন বউ লইয়া আমি কি করিব!
© শামীম রেজা
১৬/০৫/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment