রেষ্টুরেন্টে বসে গোস্ত-পরোটা খাচ্ছি, ক্রাচে ভর করা এক মাঝ বয়সী পঙ্গু ভিক্ষুক টেবিলের সামনে এসে দাড়িয়ে আছে, চোখে করুণ চাহনী। ইশারায় বুঝিয়ে দিলো, ক্ষুধার্ত। আমিও ক্ষুধার্ত ছিলাম, সে কারণেই সম্ভবত বেচারার কষ্টটা বুঝতে পারছিলাম, তার জন্যও গোস্ত-পরোটার অর্ডার দেয়া হলো।
ওয়েটার বয়স্ক মানুষ, স্বাভাবিক ভাবেই সে ‘আপনি’ সম্বোধন প্রাপ্য। কিন্তু এই ভিক্ষুক ব্যাটা দেখলাম সম্পূর্ণ উল্টো! ডাইরেক্ট তুই-তোকারী করে কথা বলছিলো। যখন আমার সাথে কথা বলে তখন মুখে একটা করুণ ভাব করে শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে কথা বলে। ঠিক পরক্ষণেই যখন কোনো প্রয়োজনে ওয়েটারকে ডাক দিচ্ছে তখন তার ব্যবহার সম্পূর্ণ বিপরীত। মনে হচ্ছিলো সিংহের মতো গর্জনশীল কোনো মনিব তার গোলামের সাথে কথা বলছে!
অপাত্রে দান করেছি বলে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো, তবে মেজাজ খারাপ ভাবটা তাকে বুঝতে দেইনাই। বিল পরিশোধ করে রেষ্টুরেন্ট হতে বেরিয়ে এসেছিলাম, আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এই ব্যাটাকে আর কখনো কিছু দেয়া যাবেনা, চাড়াল একটা!
কিছু ব্যাপার মিলে যাচ্ছে। আমরা জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে করুণভাবে কান্নাকাটি করি, নিজেকে অসহায় হিসেবে উপস্থাপন করি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি। আবার এই আমরাই মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজে বসে বসেই কাজের খালা কিংবা বাড়ির দাড়োয়ানকে হুকুম দেয়ার সময় অকথ্য রকমের বাজে আচরণ প্রদর্শণ করি। দেখা যাচ্ছে কাজের খালা আমার চাইতে বয়সে বড়, তারপরেও তাকে আপনি করে সম্বোধন করতে আমার ইগোতে লাগে। অধিনস্তদেরকে তুই করে ডাকতে না পারলে মানসিক তৃপ্তি আসেনা। বয়স্ক রিক্সাওয়ালাদেরকে ডাক দেই, ‘এই রিক্সা যাবি?!’
আমাদের রাগ আছে, দুই টাকা ফকিরকে দান করে তার ব্যবহার দেখে রেগে যাই। যে আল্লাহ আমাদের এতো এতো নেয়ামত দিয়েছেন তার রাগ নেই?
বান্দার সাথে উল্টাপাল্টা আচরণ করে, বান্দার হক নষ্ট করে, লাল ফিতার প্যাচে ফেলে ঘুশের টাকা দিয়ে পেট পূর্ণ করে, নামের আগে আলহাজ্ব লাগিয়ে আল্লাহর সাথে বিনয়াবনত হয়ে কথা বললে আল্লাহ সেটা গ্রহণ করবেন? আমাদের চাওয়াগুলো আল্লাহর দরবারে কবুল হবে?
লেখাঃ আমাদের দ্বিমুখী আচরণ
© শামীম রেজা
০৮/০৫/২০১৪
ওয়েটার বয়স্ক মানুষ, স্বাভাবিক ভাবেই সে ‘আপনি’ সম্বোধন প্রাপ্য। কিন্তু এই ভিক্ষুক ব্যাটা দেখলাম সম্পূর্ণ উল্টো! ডাইরেক্ট তুই-তোকারী করে কথা বলছিলো। যখন আমার সাথে কথা বলে তখন মুখে একটা করুণ ভাব করে শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে কথা বলে। ঠিক পরক্ষণেই যখন কোনো প্রয়োজনে ওয়েটারকে ডাক দিচ্ছে তখন তার ব্যবহার সম্পূর্ণ বিপরীত। মনে হচ্ছিলো সিংহের মতো গর্জনশীল কোনো মনিব তার গোলামের সাথে কথা বলছে!
অপাত্রে দান করেছি বলে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো, তবে মেজাজ খারাপ ভাবটা তাকে বুঝতে দেইনাই। বিল পরিশোধ করে রেষ্টুরেন্ট হতে বেরিয়ে এসেছিলাম, আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এই ব্যাটাকে আর কখনো কিছু দেয়া যাবেনা, চাড়াল একটা!
কিছু ব্যাপার মিলে যাচ্ছে। আমরা জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে করুণভাবে কান্নাকাটি করি, নিজেকে অসহায় হিসেবে উপস্থাপন করি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি। আবার এই আমরাই মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজে বসে বসেই কাজের খালা কিংবা বাড়ির দাড়োয়ানকে হুকুম দেয়ার সময় অকথ্য রকমের বাজে আচরণ প্রদর্শণ করি। দেখা যাচ্ছে কাজের খালা আমার চাইতে বয়সে বড়, তারপরেও তাকে আপনি করে সম্বোধন করতে আমার ইগোতে লাগে। অধিনস্তদেরকে তুই করে ডাকতে না পারলে মানসিক তৃপ্তি আসেনা। বয়স্ক রিক্সাওয়ালাদেরকে ডাক দেই, ‘এই রিক্সা যাবি?!’
আমাদের রাগ আছে, দুই টাকা ফকিরকে দান করে তার ব্যবহার দেখে রেগে যাই। যে আল্লাহ আমাদের এতো এতো নেয়ামত দিয়েছেন তার রাগ নেই?
বান্দার সাথে উল্টাপাল্টা আচরণ করে, বান্দার হক নষ্ট করে, লাল ফিতার প্যাচে ফেলে ঘুশের টাকা দিয়ে পেট পূর্ণ করে, নামের আগে আলহাজ্ব লাগিয়ে আল্লাহর সাথে বিনয়াবনত হয়ে কথা বললে আল্লাহ সেটা গ্রহণ করবেন? আমাদের চাওয়াগুলো আল্লাহর দরবারে কবুল হবে?
লেখাঃ আমাদের দ্বিমুখী আচরণ
© শামীম রেজা
০৮/০৫/২০১৪
No comments:
Post a Comment