কারাগারের দিনগুলোতে আমার জন্য একটা বিছানা ছিলো, নির্দিষ্ট একটি বিছানা! হোকনা তা খুবই সংকীর্ণ, হোকনা তা নোংরা, ধুলায় ধূসরিত। তারপরেও ছিলো নির্দিষ্ট একটি ঠিকানা।
কারাগার হতে বেরিয়ে যেনো উদ্বাস্তু হয়ে গেলাম, পুলিশ এবং লীগের সন্ত্রাসীদের কারণে আমার ঘরে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। চট্টগ্রামে এমন কোনো আত্মীয় নেই যার বাসায় যেতে পারি, অথবা কোনো সাংগঠনিক ভাই যিনি আশ্রয় দিবেন। সবারই একই অবস্থা, নিজ ঘর ছেড়ে সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
দিনগুলো ছিলো অদ্ভুত! সারাটা দিন কেটে যেতো দায়িত্বশীলের মটর সাইকেলের পেছনে ঘুরে ঘুরে। নীল জিন্সের সাথে গোলাপ রাঙা সার্ট, কাদের সিদ্দিকী স্টাইলে গলায় ঝোলানো গামছা আর পকেটে থাকতো টুথব্রাশ! গন্তব্যহীন অবিরাম ছুটে চলা।
সুযোগ বুঝে কারো বাসায় টুপ করে গোসল সেরেই সেই এক কাপড়ে ঘোরাঘুরি।
সন্ধ্যা হলে পাখিরা ঘরে ফিরে যেতো, আমার যাওয়ার কোনো ঠিকানা ছিলোনা। জব্বার দেখলাম ছোট একটা রুমে স্তুপ করা কাপড়ের ফাঁক দিয়ে একটু যায়গা করে নিয়েছিলো ঘুমানোর জন্য। সারাটা রাত এক কাতে বাঁকা হয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে কেমন যেনো বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো ছেলেটি। জব্বারও ঘর ছাড়া।
জব্বারের তবু নির্দিষ্ট করে একটা রাতের ঠিকানা ছিলো, আমার সেটাও ছিলোনা, জব্বারকে খুব হিংসে হতো।
ঘড় ছাড়া মামুন ভাই, আশ্রয়ের সন্ধানে প্রতিদিন ছুটে যান ছোট বোনের স্বামীর বাড়িতে। আমাকেও যেতে বলেন, বলতে দেরী হয় কিন্তু রাজি হতে দেরী হয়না, চলে যাই সাথে সাথে।
লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে কখনো কখনো নিজ থেকেই ফোন করি, ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলি, মনে একটাই ইচ্ছে, মামুন ভাই হয়তো জানতে চাইবেন, রাতে কোথায় ঘুমাবো!
মামুন ভাই কখনো নিরাশ করেন নাই, রাতের পর রাত পার করেছি আশ্রিত জীবন।
ইকবাল ভাই, মিরাজ ভাই, প্রতিদিন অন্তত দুই-তিনবার ফোন করে জানতে চান, কোথায় থাকি, কই ঘুমাই, প্রব্লেম হলে যেনো জানাই। মিরাজ ভাইতো অগ্রিম দাওয়াত দিয়ে রেখেছিলেন, প্রয়োজন হলে তার বাসায় থাকা যাবে। মিরাজ ভাইয়ের বাসায় যাওয়া হয় নাই, হঠাৎ করে কারো বাসায় গিয়ে পরিবারটিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিতে মন সায় দিচ্ছিলোনা।
ছোট বেলা হতেই কিছুটা স্বাধীনচেতা ছিলাম, এই ধরনের লুকোচুরি, ইঁদুর বিড়াল খেলা আমার সহ্য হলোনা, তাছাড়া আশ্রিত জীবন আর কতদিন? প্রয়োজনে লড়াই হবে, আবার জেলে যাবো, এভাবে আর উদ্বাস্তু হয়ে থাকবোনা। দায়িত্বশীলের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই নিজ ঘরে ফিরে গেলাম।
আওয়ামীলীগের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই নিজ ঘরে কাটিয়ে দিলাম দেড় মাস। আওয়ামীলীগের হুমকি ধামকিতো চলছিলো অবিরাম।
এরই মধ্যে অন্য এলাকায় এক রুমের একটি বাসা খুঁজে পেলাম, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে নতুন বাসায় উঠে গেলাম। আমার ব্যক্তিগত পাঠাগার এবং কিছু আসবাবপত্র রয়ে গেলো আগের বাসাতেই, মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছে, সরকার পরিবর্তন হবে, ফিরে যাবো আগের বাসায়।
অভাগা যেদিক চায়, সাগর শুকিয়ে যায়। একটা সেমিষ্টারতো চলে গেছে কারাগারের ভেতরেই, নতুন করে এনরোলমেন্ট করলাম, পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরের দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে গভীর রাতে ঘুমিয়ে পড়েছি নতুন বাসাতে। তুমুল হৈ চৈ-এর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো, রাত তখন তিনটা।
কাহিনী হচ্ছে শিবির কর্মী মাইদুলকে বাসা থেকে তুলে আনা হয়েছে আমার বাসা চিনিয়ে দেয়ার জন্য। প্রচন্ডভাবে মারধর করা হয়েছে ছেলেটাকে, এ গলি ও গলি করে বার বার ভুল বাসা দেখিয়েও নিস্তার পায়নাই।
মাইদুল শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমার বাসাটা চিনিয়ে দিলো। যুবলীগের ছেলেরা মোবাইলে কল দিয়ে মাইদুলের হাতে মোবাইল তুলে দিলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো মাইদুলের মাধ্যমে ভুং ভাং কিছু একটা বলে, আমাকে ঘর থেকে ডেকে বাইরে আনা।
মাইদুল ছেলেটা প্রচন্ড রকমের বুদ্ধিমান, কল রিসিভ করার পরে যুবলীগের শিখিয়ে দেওয়া কথা ভুলে যাওয়ার অযুহাতে মোবাইল মুখের সামনে নিয়ে জোড়ে জোড়েই জিজ্ঞাসা করলো, ‘কি কমু?’
বুঝতে আর বাকি রইলোনা, মাইদুল বিপদে পড়েছে।
ওদিকে যুবলীগের ছেলেরা মাইদুলকে প্রচন্ড গালা গালি করছে “**পুত, তোরা শিবির করস, তোগা মাতায় বেশি বুদ্ধি, মোবাইল মুখের সামনে নিয়া জিগাস ‘কি কমু!’ তোর লইগা আজকে হেতেরে ধরতে পারিনাই!” ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রচন্ড শীতের রাত, ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে আশ্রয় নিলাম প্রতিবেশির ঘরে।
মাইদুলের সাথে মিজান নামের আরেকজন কর্মীকেও বাসা থেকে তুলে নিয়েছিলো যুবলীগের সন্ত্রাসীরা, তাদের মুক্তিপন বাবদ ৫০হাজার টাকা দিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।
সাঈদী সাহেবের মামলার রায় যেদিন দেয়া হলো, তুমুল বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ। আমরাও ঘরে বসে থাকতে পারলামনা, ছুটে গেলাম রাজপথে, ফিরে এসে শুনি আমাকে না পেয়ে বাড়ি ওয়ালাকে তুলে নিয়ে গেছে স্থানীয় আওয়ামী গডফাদার হোসেন হিরণের সন্ত্রাসীরা।
এই বাসাটাও ছেড়ে দিতে হলো, আশ্রয় নিলাম মামুন ভাইয়ের বোনের বাসায়। অবশেষে পরীক্ষা শেষ হলো, চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি।
আমরা যারা উদ্বাস্তু, পলাতক জীবন যাপন করছি। সবাই মিলে একটা ফ্ল্যাট নিলাম। ঢাকায় যেমন চাইলেই ব্যচেলর ফ্ল্যাট পাওয়া যায়, চট্টগ্রামে সেটা এতো সহজ নয়, তাছাড়া শিবির আতঙ্কতো আছেই!
নিতান্তই সাধারণ ছাত্র হিসেবে খুঁজে খুঁজে একটা ফ্ল্যাট পেয়ে গেলাম, বাড়ি ওয়ালা হাসি মুখে বলছিলো, আগের ভাড়াটে ছেলে গুলো শিবির করতো তাদের নিয়েতো খুব ভয়ে ছিলাম, এখন নিশ্চিন্ত!
আমরাও হাসছিলাম, হ্যা আমরাও নিশ্চিন্ত!
নতুন বাসাতেও স্বস্তিতে নেই, সারাক্ষণ পুলিশ আতঙ্ক, গলির মুখে পুলিশের গাড়ি দেখলেই ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।
অনেক দিনতো হয়ে গেলো, নতুন যায়গায় নতুন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার সেই প্রিয় বই এবং আসবাব গুলো আগের বাসা থেকে নিয়ে এলাম, বাসা পাল্টানো যে কতটা কষ্টের-ঝামেলার আজ সেটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি। তারপরেও উদ্বাস্তু জীবনের অবসান হলো বলে শুকরিয়া জানাচ্ছি।
আজ এই বিছানাটাকে আমার বিছানা মনে হচ্ছে, এই বালিশটাও আমার অতি আপন, এই টেবিল, এই চেয়ার, এই বইয়ের র্যাক, এসব আমার! একান্তই আমার! এ আমার নিজস্ব ভূবন!
লেখাঃ উদ্বাস্তু জীবনের অবসান
© শামীম রেজা
২৬/০৫/২০১৪
কারাগার হতে বেরিয়ে যেনো উদ্বাস্তু হয়ে গেলাম, পুলিশ এবং লীগের সন্ত্রাসীদের কারণে আমার ঘরে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। চট্টগ্রামে এমন কোনো আত্মীয় নেই যার বাসায় যেতে পারি, অথবা কোনো সাংগঠনিক ভাই যিনি আশ্রয় দিবেন। সবারই একই অবস্থা, নিজ ঘর ছেড়ে সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
দিনগুলো ছিলো অদ্ভুত! সারাটা দিন কেটে যেতো দায়িত্বশীলের মটর সাইকেলের পেছনে ঘুরে ঘুরে। নীল জিন্সের সাথে গোলাপ রাঙা সার্ট, কাদের সিদ্দিকী স্টাইলে গলায় ঝোলানো গামছা আর পকেটে থাকতো টুথব্রাশ! গন্তব্যহীন অবিরাম ছুটে চলা।
সুযোগ বুঝে কারো বাসায় টুপ করে গোসল সেরেই সেই এক কাপড়ে ঘোরাঘুরি।
সন্ধ্যা হলে পাখিরা ঘরে ফিরে যেতো, আমার যাওয়ার কোনো ঠিকানা ছিলোনা। জব্বার দেখলাম ছোট একটা রুমে স্তুপ করা কাপড়ের ফাঁক দিয়ে একটু যায়গা করে নিয়েছিলো ঘুমানোর জন্য। সারাটা রাত এক কাতে বাঁকা হয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে কেমন যেনো বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো ছেলেটি। জব্বারও ঘর ছাড়া।
জব্বারের তবু নির্দিষ্ট করে একটা রাতের ঠিকানা ছিলো, আমার সেটাও ছিলোনা, জব্বারকে খুব হিংসে হতো।
ঘড় ছাড়া মামুন ভাই, আশ্রয়ের সন্ধানে প্রতিদিন ছুটে যান ছোট বোনের স্বামীর বাড়িতে। আমাকেও যেতে বলেন, বলতে দেরী হয় কিন্তু রাজি হতে দেরী হয়না, চলে যাই সাথে সাথে।
লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে কখনো কখনো নিজ থেকেই ফোন করি, ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলি, মনে একটাই ইচ্ছে, মামুন ভাই হয়তো জানতে চাইবেন, রাতে কোথায় ঘুমাবো!
মামুন ভাই কখনো নিরাশ করেন নাই, রাতের পর রাত পার করেছি আশ্রিত জীবন।
ইকবাল ভাই, মিরাজ ভাই, প্রতিদিন অন্তত দুই-তিনবার ফোন করে জানতে চান, কোথায় থাকি, কই ঘুমাই, প্রব্লেম হলে যেনো জানাই। মিরাজ ভাইতো অগ্রিম দাওয়াত দিয়ে রেখেছিলেন, প্রয়োজন হলে তার বাসায় থাকা যাবে। মিরাজ ভাইয়ের বাসায় যাওয়া হয় নাই, হঠাৎ করে কারো বাসায় গিয়ে পরিবারটিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিতে মন সায় দিচ্ছিলোনা।
ছোট বেলা হতেই কিছুটা স্বাধীনচেতা ছিলাম, এই ধরনের লুকোচুরি, ইঁদুর বিড়াল খেলা আমার সহ্য হলোনা, তাছাড়া আশ্রিত জীবন আর কতদিন? প্রয়োজনে লড়াই হবে, আবার জেলে যাবো, এভাবে আর উদ্বাস্তু হয়ে থাকবোনা। দায়িত্বশীলের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই নিজ ঘরে ফিরে গেলাম।
আওয়ামীলীগের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই নিজ ঘরে কাটিয়ে দিলাম দেড় মাস। আওয়ামীলীগের হুমকি ধামকিতো চলছিলো অবিরাম।
এরই মধ্যে অন্য এলাকায় এক রুমের একটি বাসা খুঁজে পেলাম, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে নতুন বাসায় উঠে গেলাম। আমার ব্যক্তিগত পাঠাগার এবং কিছু আসবাবপত্র রয়ে গেলো আগের বাসাতেই, মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছে, সরকার পরিবর্তন হবে, ফিরে যাবো আগের বাসায়।
অভাগা যেদিক চায়, সাগর শুকিয়ে যায়। একটা সেমিষ্টারতো চলে গেছে কারাগারের ভেতরেই, নতুন করে এনরোলমেন্ট করলাম, পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরের দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে গভীর রাতে ঘুমিয়ে পড়েছি নতুন বাসাতে। তুমুল হৈ চৈ-এর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো, রাত তখন তিনটা।
কাহিনী হচ্ছে শিবির কর্মী মাইদুলকে বাসা থেকে তুলে আনা হয়েছে আমার বাসা চিনিয়ে দেয়ার জন্য। প্রচন্ডভাবে মারধর করা হয়েছে ছেলেটাকে, এ গলি ও গলি করে বার বার ভুল বাসা দেখিয়েও নিস্তার পায়নাই।
মাইদুল শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমার বাসাটা চিনিয়ে দিলো। যুবলীগের ছেলেরা মোবাইলে কল দিয়ে মাইদুলের হাতে মোবাইল তুলে দিলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো মাইদুলের মাধ্যমে ভুং ভাং কিছু একটা বলে, আমাকে ঘর থেকে ডেকে বাইরে আনা।
মাইদুল ছেলেটা প্রচন্ড রকমের বুদ্ধিমান, কল রিসিভ করার পরে যুবলীগের শিখিয়ে দেওয়া কথা ভুলে যাওয়ার অযুহাতে মোবাইল মুখের সামনে নিয়ে জোড়ে জোড়েই জিজ্ঞাসা করলো, ‘কি কমু?’
বুঝতে আর বাকি রইলোনা, মাইদুল বিপদে পড়েছে।
ওদিকে যুবলীগের ছেলেরা মাইদুলকে প্রচন্ড গালা গালি করছে “**পুত, তোরা শিবির করস, তোগা মাতায় বেশি বুদ্ধি, মোবাইল মুখের সামনে নিয়া জিগাস ‘কি কমু!’ তোর লইগা আজকে হেতেরে ধরতে পারিনাই!” ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রচন্ড শীতের রাত, ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে আশ্রয় নিলাম প্রতিবেশির ঘরে।
মাইদুলের সাথে মিজান নামের আরেকজন কর্মীকেও বাসা থেকে তুলে নিয়েছিলো যুবলীগের সন্ত্রাসীরা, তাদের মুক্তিপন বাবদ ৫০হাজার টাকা দিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।
সাঈদী সাহেবের মামলার রায় যেদিন দেয়া হলো, তুমুল বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ। আমরাও ঘরে বসে থাকতে পারলামনা, ছুটে গেলাম রাজপথে, ফিরে এসে শুনি আমাকে না পেয়ে বাড়ি ওয়ালাকে তুলে নিয়ে গেছে স্থানীয় আওয়ামী গডফাদার হোসেন হিরণের সন্ত্রাসীরা।
এই বাসাটাও ছেড়ে দিতে হলো, আশ্রয় নিলাম মামুন ভাইয়ের বোনের বাসায়। অবশেষে পরীক্ষা শেষ হলো, চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি।
আমরা যারা উদ্বাস্তু, পলাতক জীবন যাপন করছি। সবাই মিলে একটা ফ্ল্যাট নিলাম। ঢাকায় যেমন চাইলেই ব্যচেলর ফ্ল্যাট পাওয়া যায়, চট্টগ্রামে সেটা এতো সহজ নয়, তাছাড়া শিবির আতঙ্কতো আছেই!
নিতান্তই সাধারণ ছাত্র হিসেবে খুঁজে খুঁজে একটা ফ্ল্যাট পেয়ে গেলাম, বাড়ি ওয়ালা হাসি মুখে বলছিলো, আগের ভাড়াটে ছেলে গুলো শিবির করতো তাদের নিয়েতো খুব ভয়ে ছিলাম, এখন নিশ্চিন্ত!
আমরাও হাসছিলাম, হ্যা আমরাও নিশ্চিন্ত!
নতুন বাসাতেও স্বস্তিতে নেই, সারাক্ষণ পুলিশ আতঙ্ক, গলির মুখে পুলিশের গাড়ি দেখলেই ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।
অনেক দিনতো হয়ে গেলো, নতুন যায়গায় নতুন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার সেই প্রিয় বই এবং আসবাব গুলো আগের বাসা থেকে নিয়ে এলাম, বাসা পাল্টানো যে কতটা কষ্টের-ঝামেলার আজ সেটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি। তারপরেও উদ্বাস্তু জীবনের অবসান হলো বলে শুকরিয়া জানাচ্ছি।
আজ এই বিছানাটাকে আমার বিছানা মনে হচ্ছে, এই বালিশটাও আমার অতি আপন, এই টেবিল, এই চেয়ার, এই বইয়ের র্যাক, এসব আমার! একান্তই আমার! এ আমার নিজস্ব ভূবন!
লেখাঃ উদ্বাস্তু জীবনের অবসান
© শামীম রেজা
২৬/০৫/২০১৪
হাইরে জীবন.............
ReplyDelete