চলতে ফিরতে শেখা


আমিন ভাই দেখলাম বসুন্ধরার একপ্যাকেট টিস্যু আমার পকেটে গুজে দিলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো, আপনিতো আবার এসব দৃশ্য সহ্য করতে পারেননা, কান্না পেলে টিস্যু দিয়া চোখ মুইছেন।
মুখ বাঁকা করেই বললাম, টিস্যুতে কাজ হবেনা, চোখ মুছতে বিছানার চাদরের মতো বড় সাইজের কাপড় লাগবে!
জব্বার বিড় বিড় করেই গেয়ে উঠলো, “হা মেনেভি পেয়ার কিয়া হে......” জয়নাল ভাইতো আরেক কাঠি সরস, তিনি বললেন এভাবে হবেনা, বাপ্পারাজ স্টাইলে বলতে হবে, “প্রেমের সমাধি গড়ে, মনের শিকল ছিড়ে...”
ফারুক ভাই হাসতে হাসতেই বললো, আপনারা দুইজন গান গাইতে গাইতে স্টেজে উঠে যান, আমি সিএনজি ঠিক করে আসি!

কাহিনী হচ্ছে একটা বিয়েতে গিয়েছিলাম, বিশাল কমিউনিটি সেন্টারে হেব্বি আয়োজন। যতটুকু জানতে পেরেছি পাত্রীর অমতেই বিয়ে হচ্ছে, আমাদের জানাশোনা লেভেলের একটা ছেলের সাথে পূর্বে রিলেশন ছিলো।
আমাদের সবাই একটা বিষয়ে কনফার্ম ছিলাম, পাত্রী কোনো একটা সিন ক্রিয়েট করে বসবে। এমনও হতে পারে হাউ-মাউ করে কান্নাকাটি করে পুরো অনুষ্ঠানের বাড়োটা বাজিয়ে দিবে।

এতো হাসি ঠাট্টার মধ্যেও ছেলেটার জন্য মায়া হচ্ছিলো। বিয়ের কথা শুনে ছেলেটা পাগলামি করেনাই, কাউকে কিছু বলেও নাই, বিষন্ন মনে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। তার মা বেশ কয়েকবার ডাকা ডাকি করেও ছেলেকে বের করতে পারেনাই, শেষে বাধ্য হয়ে অফিস থেকে ফোন করে বাবাকে ডেকে এনেছে।
চোখ বন্ধ করলেই যেনো আমি ছেলেটির নির্বাক মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম, বিষন্ন, অসহায়, ভগ্ন হৃদয়ের এক তরুণ, পাথরের মূর্তির মতো নিশ্চল বসে আছে। আজ সে হারিয়ে ফেলছে জীবনের পরম আকাঙ্খিত কিছু। তার মনের ভেতরে ঘটে যাওয়া তোলপাড় করা সেই ঝড় এই এখানে বসেও আমি অনুভব করছিলাম।

ছেলে এবং মেয়েদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহিলারা কমিউনিটি সেন্টারের দোতলায়, আর পুরুষদের জন্য নিচেরতলা। দারুণ ব্যবস্থাপনা, ভালোই লাগলো।
কিছুক্ষণ পরেই বুঝলাম এই দারুণ ব্যবস্থাপনার মাঝেই আরো একটা দারুণ কাজ করা হয়েছে, দোতলায় নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হলেও সেখানকার রং ঢং দেখার জন্য নিচের তলায় বিশাল স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমিন ভাই সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো, ভালোই হলো, উপরের নাটক দেখা যাবে। তারপরে এক প্যাকেট টিস্যু আমার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো, নাটকের দৃশ্য দেখে ইমোশনাল হয়ে পরলে টিস্যু দিয়ে চোখ মুইছেন।

না, টিভি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার ব্যর্থ হয় নাই। সত্যিই সুন্দর নাটক দেখলাম, চরমভাবে উৎফুল্ল বিয়ের পাত্রী, নানান পোজে ছবি তুলছেন। হাসতে হাসতে বান্ধবীদের গাঁয়ে গড়িয়ে পড়ছেন। কিসের কি! কোথায় কান্না দেখবো বলে স্ক্রিনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি, আর এই মেয়ে কিনা হাসতে হাসতে খুন!! এতো আনন্দ পায় কই?
একবার মনে হলো সেই ছেলেটাকে একটা ফোন দেই, তাকে দৃশ্যগুলো দেখাই, “আরে বেকুব তুই কার জন্য কান্নাকাটি করিস? সেতো মহা আনন্দে বিয়ে করছে!”
পরক্ষণেই আবার ভাবলাম, থাক ছেলেটা অন্তত এই বিশ্বাসটা রাখুক, কেউ একজন তাকে চেয়েছিলো, তার সাথে প্রতারণা করা হয় নাই।

চরম পর্যায়ের খাওয়া দাওয়া হলো, কে হাসলো আর কে কাঁদলো খাওয়ার সময় এগুলো মাথায় রাখতে নেই।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে কমিউনিটি সেন্টার হতে বেড়িয়ে আসছিলাম, তখনই ভিড়মি খাওয়ার যোগাড়। পরস্পরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে আনমনেই বলে ফেললাম পাত্রী কয়জন!!
জব্বার হাসতে হাসতেই বললো, এতোগুলো বউ একজনের জন্য!!?

বিশাল এক মাইক্রোবাস, নব বধূর সাজে চারজন নারী। প্রত্যেকের গায়েই বিয়ের বিশেষ শাড়ি, কপালে টিকলী, কান থেক শুরু করে নাক পর্যন্ত চেন দিয়ে বাঁধা বিশাল আকৃতির নথ। এবং পার্লার থেকে ডিজাইন করা বিকট দর্শণ চেহারা।
তাদেরকে একসাথে দেখলে আমি শিওর পাত্র নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবে কোনটা তার আসল বউ।
পরে জানতে পেরেছিলাম, এরা চারজনই পাত্রীর নিকটাত্মীয়া।

আমি ঘর কুনো মানুষ, এসব অনুষ্ঠানে খুব একটা যাওয়া হয়না, যেতে ইচ্ছে করেনা। জীবনে এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে, শেখার বাকি আছে।

লেখাঃ চলতে ফিরতে শেখা।
© শামীম রেজা
২৩/০৫/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment