আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন ও কিছু কথা

আর্লি ম্যারেজ! আর্লি ম্যারেজ! করে গলা ফাটাচ্ছেন, মুসলিম তরুণদের নৈতিক সুরক্ষার দাবী করছেন, অথচ সমস্যার মূল খুঁজছেননা। একটা সমস্যা সমাধানে যদি সমস্যার মূলে আঘাত করা না হয় তবে সে সমস্যা সমাধান অলীক কল্পনা ছাড়া কিছুইনা।

ভার্সিটি লাইফের অনেক অনেক মজার স্মৃতি রোমন্থন করে আনমনে প্রায়ই হাসি। আমাদের ডিপার্টমেন্টে আসিফ স্যারের কথা ভুলতে পারবোনা। অসম্ভব রকমের সুদর্শন এবং প্রচন্ড মেধাবী হলেও, আল্লাহ এই শিক্ষকের জীবনের সব দিকে পূর্ণতা দেননাই। আল্লাহ কোনো মানুষকেই পরিপূর্ণ করে সৃষ্টি করেননা, যদি কেউ সব দিক থেকেই পারফেক্ট হয়, তবে সে আল্লাহকে ভুলে যাবে, অহংকারী হয়ে যাবে।
এতো সুন্দর এবং জ্ঞানী একজন মানুষ যখন তার পলিও আক্রান্ত পা’কে টেনে হেঁচড়ে চলাফেরা করতেন, সত্যিই খুব কষ্ট হতো।
মার্কেটিং-এর এক ক্লাসে আসিফ স্যারের মুখে একটি গল্প শুনেছিলাম, এই একটি মাত্র গল্পই একজন মানুষের চিন্তা চেতনার জগৎকে পাল্টে দিতে পারে।

আসিফ স্যার বলছিলেন, একদিন আমরা তিনবন্ধু রিক্সাতে করে যাচ্ছিলাম, রিক্সা জ্যামে আটকে গেলো, পাশেই পাজেরো গাড়িতে অসম্ভব সুন্দরী এক মেয়ে। বন্ধুরা হৈ হৈ করে উঠলো, দেখ দেখ মেয়েটা কি সুন্দর!! আসিফ স্যার নাকি তখন মুচকি হেসে বলেছিলেন, হ্যা গাড়িটা অনেক সুন্দর!
বন্ধুরা তখন স্যারকে চেপে ধরলেন, ব্যাটা আমরা বলছি মেয়েটা সুন্দর, আর তুই বলছিস গাড়িটা সুন্দর, কাহিনী কি! ভাব লস? এমন একটা মেয়েকে বউ হিসেবে পেলে জীবনে আর কি লাগে!
আসিফ স্যার নাকি তখন হাসতে হাসতেই বলছিলেন, দোস্ত তোমার কাছে যদি এমন সুন্দর একটা গাড়ি থাকে, তবে তুমি এর চাইতেও সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে পারবা। অতএব মেয়ের দিকে না তাকিয়ে গাড়ির দিকে তাকাও।
আসিফ স্যার ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করতেন, তার কাছে এই ধরনের পুঁজিবাদি কথাবার্তা শুনে আনমনেই হেসেছিলাম। যাক আমরা ইসলামপন্থীরাই বরং ভালো আছি, আমাদের অতশত লোভ নেই, আমাদের বাড়ি গাড়ির আকাঙ্ক্ষা নেই, আমাদের চিন্তা চেতনা পরকাল কেন্দ্রীক। আমরাই ভালো আছি আলহামদুলিল্লা, (আমার অপরিপক্ষ মস্তিস্কের অপরিপক্ক চিন্তা-ধারা)।

বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন যুবকের ছাত্রজীবন শেষ করতে করতেই জীবনের অর্ধেক সময় চলে যায়। তারপর ক্যারিয়ার গঠন। তেত্রিশ-পয়ত্রিশ বছর বয়সে গিয়ে বিয়ের চিন্তা, এরপর বুড়ো বয়সে ইয়াং বউ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মোকাবেলা।
কি ভাবছেন? হাবশী কালো সাহাবী যদি চরম দরিদ্র অবস্থাতেও রাসূল(সঃ) এর পছন্দ অনুযায়ী সম্ভ্রান্ত বংশীয় সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন, এবং মেয়েও যদি ধেই ধেই করে রাজী হয়ে যেতে পারেন, তবে আপনার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কেনো?
আপনিতো ইসলামী সংগঠনের বিশাল নেতা ছিলেন, সুন্দর চরিত্রের অধিকারী ব্যাক্তি, আপনার ক্ষেত্রে এমনটি হবেনা কেনো?
সমস্যা এখানেই ভাই, আপনিতো সাহাবীর পর্যায়ের পাত্র নন এবং যে মেয়েকে পছন্দ করবেন সেই মেয়েও তেমন শক্তিশালী পর্যায়ের ঈমানদার নন।
নিজের মেয়ের জন্য যদি উচ্চ বংশীয় ভালো চাকরীজীবি-ব্যবসায়ী পাত্র পাওয়া যায়, তবে আপনার মতো বেকার পাত্রের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে কোন বাবা ঠেকায় পড়েছে? আপনি কি পারতেন নিজের মেয়েকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ-এর দিকে ঠেলে দিতে?! আপনি পারলেও আমি কিন্তু পারতামনা!
মেয়ের বাবার কথা বাদই দিলাম, আজ আবেগের বশে বেকার অবস্থায় বিয়ে করে ফেললেন, কিন্তু আগামী কাল যখন অভাবের সংসারে বউ বলবে, “সংসার চালানোর মুরোদ নাইতো বিয়ে করলা কেনো?” তখন মুখ কোথায় লুকোবেন?

সেদিন জামায়াতে ইসলামীর এক শীর্ষস্থানীয় নেতার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত পেলাম। দারুণ খুশি হয়েছিলাম! এমন বিশাল মাপের মানুষের পারিবারিক অনুষ্ঠানের দাওয়াত পাওয়াটা সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার। হাসি হাসি মুখেই জিজ্ঞাসা করলাম, পাত্র শিবিরের কোন দায়িত্বে ছিলো? (আমার ধারণা ছিলো কেন্দ্রীয় না হোক অন্তত সাবেক কোনো জেলা-মহানগরী নেতার কাছেই সম্ভবত মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন।)
নেতার মুখটা চুপসে গিয়েছিলো, আমতা আমতা করে বলছিলেন, ছেলে শিবির করেনা, তবে সংগঠনকে পছন্দ করে।
আমারও ম্রিয়মান গলায় জবাব ছিলো, ও……!

আমার যেটা মনে হচ্ছে আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন বাদ দিয়ে আর্লি ক্যারিয়ার ক্যাম্পেইন করাটাই যুক্তিযুক্ত হবে। আপনার ক্যারিয়ার সুন্দর হলে বিয়ে করতে দেরী হওয়ার কথা নয়। কান টানলে যেমন মাথা আসে, ভালো ক্যারিয়ার থাকলে তেমন ঘরে বউ আসে। আজকে যদি আপনার ভালো একটা চাকরী-ব্যবসা থাকতো তবে এভাবে আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন করার প্রয়োজন হতোনা, হুট করে বিয়ে করে সবাইকে চমকে দিতে পারতেন।
আপনার স্বপ্ন যদি হয় ভালো চাকরী করা, তবে এখন হতেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ওই চাকরীর উপযুক্ত জ্ঞান-অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
আপনার স্বপ্ন যদি হয় আপনি ব্যবসা করবেন, তবে এখনই শুরু করে দেন। পরিবারের সাথে কথা বলে, ছাত্রাবস্থাতেই টুকি টাকি বিনিয়োগ করেন।
আপনার যদি মনে হয় লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে নিবেন, তবে এখনই ঝাপিয়ে পড়েন, ছাত্রাবস্থাতেই প্রচুর পরিমানে পড়াশোনা করেন, পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদকদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন।

আর সেটা যদি না পারেন, তবে ৬০বছর বয়সে নিজের ১৫বছর বয়সী পুত্রকে আর্লি বিয়ে দিয়ে পুত্রবধুর মুখ দেখে মরার জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তোলা থাক।

লেখাঃ আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন ও কিছু কথা
© শামীম রেজা
২৫/০৪/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment