ইসলামী বিপ্লব ও ব্যক্তিক প্রচেস্টা


সারাদিন রাজপথে স্লোগান দিলাম, বিপ্লব বিপ্লব, ইসলামী বিপ্লব! কিংবা জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই! পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হলো, পুলিশের গুলি বৃষ্টি প্রতিরোধে ইটের টুকরো দিয়ে ঢাল তৈরী করলাম। আর রাত্রি বেলা ক্লান্ত দেখে বাসায় ফিরে ল্যাপ্টপে চালিয়ে দিলাম ‘তুহে মেরা সব হে’ কিংবা ‘তুহে মেরা রব হে’ টাইপের হিন্দী গান।
অথবা সিগারেটের ধোঁয়া টানতে টানতে গার্ল ফ্রেন্ডের হাত ধরে চলে গেলাম ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব শীর্ষক কোনো সেমিনারে।

না ভাই এভাবে বিপ্লব হবেনা, এভাবে কখনো বিপ্লব হয় নাই। মিছিল মিটিং কিংবা জেএমবি স্টাইলে বোমাবাজি করে সর্বোচ্চ রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করা যাবে কিন্তু সেটাকে ইসলামী বিপ্লব বলা যাবেনা।
রাজনৈতিক বিজয়কে বিপ্লব বলা যায়না, বিপ্লব হতে হবে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ব্যাক্তি, পরিবার এবং সমাজের প্রতিটি লেভেলে। ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হলে খিলাফত পরিচালনার উপযোগী মানুষ তৈরি করতে হবে।

অপরাপর ইসলামী সংগঠনগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এসব ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ। দেশের সবগুলো সাংগঠনিক শাখায় প্রতিষ্ঠা করেছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক সংগঠন। ছাত্রশিবির, ছাত্রী সংস্থা এবং শিবিরের শিশু বিভাগের সাংস্কৃতিক সংগঠনতো রয়েছেই।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও জামায়াতের সফলতা দেখার মতো, দেশব্যাপি হাজার হাজার প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। আর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকতো দেশের গন্ডি পেরিয়ে অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইবনে সিনা সহ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালগুলোর সফলতাও দেখার মতো।
কিন্তু বাতিল শক্তির মোকাবেলায় সেটা কত পার্সেন্ট? আমারতো মনে হয় ২% এর বেশি হবেনা। এই দুই পার্সেন্ট সফলতা নিয়ে আমরা ইসলামী বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলবো এমনটা আশা করা দুরাশা ছাড়া কিছুইনা।

মূল প্রব্লেমটা হচ্ছে আমরা ব্যক্তিগত প্রচেস্টা ছেড়ে দিয়ে কোনোনা কোনো ইসলামী সংগঠনকে ইসলামী বিপ্লবের ইজারা দিয়ে বসে আছি। একটা ইসলামীক রাজনৈতিক দলের নানা রকমের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেইসব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সাহিত্য সংস্কৃতি এবং মিডিয়া সৃষ্টির ব্যাপারে রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে খুব একটা সময় দেয়া সম্ভব হয়না।

আমরা প্রায়ই হায় হুতাশ করে বলি, আমাদের মিডিয়া নেই, আমাদের হুমায়ুন আহম্মদ নেই, আমাদের ভালো মানের চলচিত্র নির্মাতা নেই। আর তীর্থের কাকের মতো হা করে বসে থাকি কখন জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে এগুলো তৈরী করে আমাদের খাইয়ে দিবে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বলবেন, এসব বড় বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মতো সামর্থ আমাদের নেই। ঠিক আছে মেনে নিলাম সবার একই রকমের সামর্থ থাকবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু আপনি ব্যবসায়ী কিংবা প্রবাসী, আপনার মাসিক আয়ের হিসেব করলে বাংলাদেশী টাকায় সেটা লক্ষ টাকার গন্ডি ছাড়িয়ে যায়।
আপনি চাইলেই আরো দুই চারজন সহ উদ্যোক্তাকে সাথে নিয়ে আপনার গ্রামে ইসলামীক এডুকেশন সোসাইটির কারিকুলাম অনুযায়ী একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে পারেন।

চলচিত্র কিংবা নাটক নির্মানের ঝোঁক আছে? আপনি চাইলেই দারুণ একটা অফার দিতে পারেন। ইসলামীক ভাব ধারার তরুণ নাট্য নির্মাতাদের মধ্য হতে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে প্রতি বছর একটা করে স্বল্প বাজেটের নাটক তৈরীর স্পন্সর হতে পারেন।

সাহিত্যের প্রতি আপনার খুব ঝোঁক? গদ্য-পদ্য যা সামনে পান খেয়ে ফেলেন! এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, প্রতি বছর নবীন লেখকদের মধ্য হতে নির্বাচিত একটা বই আপনার উদ্যোগে প্রকাশিত হবে।

না, উপরে যে উদ্যোগ গুলোর কথা বলেছি এগুলোর একটাও লস প্রজেক্ট নয়। আবার অতিরিক্ত খরচেরও ব্যাপার নয়, আপনি চাইলেই এখান থেকেই অন্তত পুঁজিটাকে তুলে নিতে পারবেন, কখনো কখনো দেখবেন লাভের মুখ। আর আখিরাতের প্রতিদানতো আল্লাহই দিবেন তার নিজের ইচ্ছায়।
মূল সমস্যা আমাদের নিয়্যতে, মূল সমস্যা উদ্যোগে, মূল সমস্যা চিন্তায়।

আমাদের অঙ্গনে অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক অতীতেও জন্ম নিয়েছেন এবং বর্তমানেও জন্ম নিচ্ছে কিন্তু তাদের আল্টিমেট পরিণতি হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকের এসি’র হাওয়া। পেটের ক্ষুধা বড় ক্ষুধা। আমাদের অঙ্গনে কাজ নেই, যে কাজটা করে আমাদের শিল্পী সাহিত্যিকরা দুই-বেলা রিজিক গ্রহণ করবে। ফলাফল গদ্যে-পদ্যে লাত্থি মেরে সার্টিফিকেটের ফাইল বগলদাবা করে কোথাওনা কোথাও জুটিয়ে নিচ্ছে ছোট্ট একটা চাকরী।

ব্যাক্তি পর্যায়ের এসব ছোট ছোট উদ্যোগের সমষ্টিতেই একদিন সৃষ্টি হবে সামাজিক পর্যায়ে ইসলামী বিপ্লব।

আমি সেই দিনটার স্বপ্ন দেখি, যেদিন মানুষ দলবেধে সিনেমা হলে ভিড় করবে নসীম হিজাজী, সাইমুম কিংবা ক্রুসেড সিরিজের চলচিত্র দেখার জন্য।
ছাত্রদের ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে অশ্লীল হিন্দী গানের রিপ্লসেমেন্ট হিসেবে একের পর এক জমা হবে ইসলামী সংগীত।
স্বপ্ন দেখি তরুণ-তরুণীর হাতে হাতে হুমায়ুন কিংবা গুণের কবিতার বইয়ের পরিবর্তে শোভা পাবে সাইমুম-ক্রুসেডের মতো কোনো লেখকের ইসলামী ভাবধারার সাহিত্যকর্ম।

প্রয়োজন আপনার-আমার ব্যাক্তিগত অথবা সম্মিলিত প্রচেস্টায় কিছু উদ্যোগ। এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, সমাজ বিপ্লবের জেহাদে শরীক হোন।

লেখাঃ ইসলামী বিপ্লব ও ব্যক্তিক প্রচেস্টা
© শামীম রেজা
২০/০৫/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment