এই সুযোগ হেলায় হারানো যাবেনা!

একাত্তরে আওয়ামীলীগের অবস্থান সঠিক ছিলো নাকি ভুল ছিলো সে বিতর্কে যাবোনা। তবে আওয়ামীলীগ তার আন্দোলনে সফল হয়েছিলো। নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে জনগনের আবেগকে কাজে লাগাতে পেরেছিলো, ফলশ্রুতিতে পঙ্গপালের মতো মানুষ আওয়ামীলীগের দিকে ধাবিত হয়েছে, মাওলানা ভাসানীর জনপ্রিয় দলের রুট লেভেলের সমর্থকরা মুজিবের আওয়ামীলীগ সমর্থকে পরিণত হয়েছে।

রাজনীতিতে সফলতার অন্যমত একটা কৌশল হচ্ছে জনগণের ভাষায় কথা বলা। একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী জনগণের ভাষায় কথা বলতে পারেনাই, কারণ জামায়াত জনগণের সন্তুষ্টির জন্য আন্দোলন করেনা। জামায়াতের রাজনীতি এবং আন্দোলনের পুরোটাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিবেদিত। সেক্ষেত্রে জনগণের একটি অংশ জাতীয়তাবাদের জন্য অস্ত্র ধরলেও ইসলাম যেহেতু জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করেনা, সেহেতু জামায়াত ভারত সমর্থিত জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে দাড়িয়ে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের পক্ষে দাড়িয়েছিলো।

একাত্তরে একদিকে ছিলো পশ্চিম পাকিস্থানের সামরিক বাহিনীর গোয়ার্তুমি অন্যদিকে শেখমুজিবের আবেগঘণ বক্তৃতা এবং জনগণকে জাগিয়ে তোলার জাদুকরী ক্ষমতা। বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগণ মুজিবের চরমতম ভক্তে পরিণত হলো।
মানুষ সর্বদাই মজলুমের পক্ষাবলম্বন করে এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি, একাত্তরেও তাই হয়েছিলো। দেশের অধিকাংশ জনগণ, মজলুমের কর্মপরিকল্পনা, উদ্দেশ্য কিংবা তার পরিণতি চিন্তা না করেই অন্ধভাবে মজলুমের পক্ষ অবলম্বন করে। এরই ফলশ্রুতিতে ভারতের ইন্ধনে সৃস্টি হয় মুক্তিযুদ্ধ এবং একটি মুসলিম দেশ ভেঙ্গে হয় দ্বিখন্ডিত!

স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের মোহভঙ্গ হয়, মানুষ বুঝতে পারে, তারা ফুটন্ত কড়াই হতে জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিবের পক্ষ নিয়ে যেই মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলো, সেই মুক্তিযোদ্ধারাই গণবিপ্লবের মাধ্যমে শেখ মুজিবকে হত্যা করে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের জনগণকে স্বৈরাচারী শাসকের হাত হতে রক্ষা করে।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট একাত্তরের পূর্বের সময়কেই নির্দেশ করে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মজলুম। মানুষ মজলুমের পক্ষে এসে দাড়িয়েছে, বিএনপি’র নির্লিপ্ততার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিচ্ছে। মিছিল সংঘর্ষে সাধারণ মানুষ জামায়াত-শিবিরের কর্মীদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে, প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছে, সুচনা হয়েছে গণবিপ্লবের।
জামায়াত জনগণের ভাষায় কথা না বললেও জনগণই এখন জামায়াতের ভাষায় কথা বলছে, এটাই ইসলামী আন্দোলনের সফলতা এবং এই সফলতাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে স্বৈরাচারী জালিম আওয়ামী সরকারের ক্রমাগত জুলুম নির্যাতন।
লক্ষ লক্ষ মানুষ পরিণত হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকে, যে দেশের মানুষ জামায়াতে ইসলামী নামের কোনো দলের সাথে পরিচিত ছিলোনা সেদেশেরই গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষ এখন টিভিতে জামায়াত শিবিরের আন্দোলন দেখে আর হাত তালি দেয়, “শাবাশ! বাঘের বাচ্চা!”
শহুরে শিক্ষিত সমাজের বাইরে এসে জামায়াত এখন পরিণত হয়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দলে। এই সব সফলতার জন্য জামায়াতের উচিত আওয়ামীলীগকে ধন্যবাদ জানানো। আওয়ামীলীগ এতোসব দেশবিরোধী জাতিবিধ্বংশী কর্মকান্ড না করলে মানুষ এভাবে জামায়াত-শিবিরের প্রতি ধাবিত হতোনা।

৭১সালের মুক্তিযুদ্ধ বাস্তবসম্মত এবং যৌক্তিক ছিলো কিনা সে বিতর্কেও আজ যাবোনা, তবে মুক্তিযুদ্ধর পরবর্তীতে শেখ মুজিবের পরিণতি হতে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। এতো বিশাল সংখ্যক জনসমর্থন শেখ মুজিব ধরে রাখতে পারেনাই। শেখ মুজিব পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট গণধিকৃত নেতাতে। আজ আমরা শেখ মুজিব প্রবর্তিত বাকশাল ব্যাবস্থাকে গালি হিসেবে ইউজ করি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও হাসিনার বিরুদ্ধে আজ যে যুদ্ধে শুরু হয়েছে সে যুদ্ধে নিশ্চিতভাবেই আমরা বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ্‌। বিশ্বের ইতিহাসে কোনো কালেই কোনো স্বৈরশাসক দীর্ঘস্থায়ী হয়নাই হবেওনা। কিন্তু প্রশ্ন হলো বিজয় পরবর্তী আমাদের করণীয় কি? বিগত দিনের আন্দোলনের ফলে আজ যে বিপুল বিশাল জনসমর্থন আমরা অর্জন করেছি সেটা ধরে রাখার উপায় কি? আমাদের কি বাস্তব সম্মত কোনো কর্মপরিকল্পনা রয়েছে?
জামায়াতে ইসলামের অভ্যন্তরে যে প্রচলিত ক্যাডার সিস্টেম চালু রয়েছে সাধারণ অশিক্ষিত মানুষের জন্য সে ক্যাডার সিস্টেম উপযোগী নয়, আর সে কারণেই জামায়াত পরিণত হয়েছে শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের সংগঠনে। এখন এই বিপুল সংখ্যক নিরক্ষর মানুশকে সংগঠনের মধ্যে ধারণ করার উপায় কি? তাছাড়া এতোকাল ধরে কওমী আলেমদের মধ্যে জামায়াত সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা ছিলো, ইদানিংকালে তাদের বেশ কিছু আলোচনার মাধ্যেমে এটাই ফুটে উঠেছে যে, তাদের সে ধারণাগুলো ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছে। এইসব কওমী আলেমদেরকে সংগঠনে একীভূত করার জন্য জামায়াতে কি কোনো দরজা খোলা আছে?

অনেকেই আমাকে জবাব দিবেন সাধারণ নিরক্ষর মানুষের জন্য জামায়াতের গণশিক্ষা বিভাগ এবং শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন রয়েছে। তাদের প্রতি প্রশ্ন, শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনতো মরে গেছে শুনেছি উনিশত কুয়াত্তর সালে, সেটাকে দাফন না করে তার পঁচনশীল লাশ এভাবে ঝুলিয়ে রাখার মানে কি?
আজ গার্মেন্টস অঙ্গনে বামপন্থী আন্দোলনের নেত্রীরা মহাদাপটের সাথে বিচরণ করছে, আর শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন পাঞ্জাবির ভাজ ঠিক করতে করতেই সকাল সন্ধ্যা ব্যস্ত।
আজ সারাদেশে যেখানে আওয়ামীলীগ বিএনপির শ্রমিক সংগঠন আন্দোলন সংগ্রামের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। ঠিক সেই যায়গাতেই বই-খাতা ফেলে শিবিরের জিন্স-টিশার্ট গায়ে দেয়া ছেলেরা আন্দোলনের ময়দান কাপাতে বাধ্য হচ্ছে। আওয়ামীলীগের হাজারটা সন্ত্রাসীকে মারলেও একটা শিবির কর্মীর নখের প্রতিশোধ নেয়া হবে?!
মোশরেকা মিশু কিংবা আমিনুল ইসলামের মতো নেতাকি শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন তৈরী করতে পেরেছে? যদি না পারে তবে তার কারণ কি? এই কারণ উদ্ঘাটন করে সংগঠনটির সংস্কার জরুরী।

কওমী আলেমদের কথা বলতে গেলে অনেকেই বলবেন, তাদের মূল সংগঠনে একীভুত করা যায়, কারণ তারাতো শিক্ষিত! এখানেও কিছু প্রব্লেম রয়েছে, আপনি মুফতি শফি সাহেবকেতো প্রথমে জামায়াতের প্রাথমিক সদস্যপদ এরপরে কর্মী এবং ক্রমান্বয়ে রুকন বানাতে পারবেননা।
এইধরনের বিদগ্ধ আলেমদেরকে মূল সংগঠনে প্রবেশের জন্য একটি দরজা তৈরী করতে হবে। যে দরজা দিয়ে চাইলেই একজন আলেম, সংগঠনের প্রচলিত ক্যাডার সিস্টেমকে এ্যাভোয়েড করেও সম্মানের সাথে জামায়াতে প্রবেশ করতে পারবে।

বর্তমান আওয়ামী সরকারের সবচাইতে বড় যে সফলতা আমার চোখে ধরা পড়েছে তা হচ্ছে তারা জামায়াতের অভ্যান্তর বেশ কিছু তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটিয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় যা সম্ভব ছিলোনা।
চিন্তা চেতনায় আধুনিক এই তরুণ নেতৃত্ব আলোচিত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হবেন বলেই বিশ্বাস করি।

১৫ডিসেম্বর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment