স্বজাতির ইতিহাস ভুলে যাওয়া ঘুমন্ত মুসলমান

হিটলার কতৃক ইহুদী নিধনের কল্পকাহিনী হলোকাস্টকে কেন্দ্র করে তৈরী হয়েছে শাতাধিক চলচিত্র, রচিত হয়েছে হাজার হাজার প্রবন্ধ,নিবন্ধ,গল্প,উপন্যাস,কবিতা। হলোকাস্টের ইতিহাস ধরে রাখার জন্য তৈরী করা হয়েছে হলোকাস্ট ফাউন্ডেশন, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হলোকাস্ট মেমোরিয়াল এবং হলোকাস্ট মিউজিয়াম। বিশ্বব্যাপী হলোকাস্টের কল্পাকাহিনী প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ইহুদী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার মাধ্যমে। এভাবেই আজ বিশ্বব্যাপী গণমানুষের চোখে হিটলার পরিণত হয়েছে ভিলেনে এবং সন্ত্রাসবাদী মিথ্যাচারী ইহুদীরা পরিণত হয়েছে মজলুম নির্যাতিত অসহায় জাতি হিসেবে।
মানুষ হলোকাস্টের সিনেমা দেখে আর চোখের পানিতে বুক ভাসায়, ফিলিস্তিনের মুসলিমদের মারার জন্য প্রয়োজনে নিজের বাড়ি বিক্রি করে ইসরাইলকে অস্ত্র কেনার টাকা দেয়। মানুষ এ্যানাফ্রাঙ্কের বানোয়াট ডায়রী পড়ে আর চোখের পানিতে ইহুদী সৈন্য কতৃক নিহত ফিলিস্তিনী কিশোরীর রক্তের দাগ ধুয়ে দেয়।

ইতিহাস রচনা করে বিজয়ীরা, পরাজিতরা গুমড়ে কাঁদে অন্ধকারে। ভারতবর্ষের ইতিহাসের শেষ দিকে এসে পরাজিত হয় মুসলমান। তারা রাজ্য হারায়, শিক্ষা হারায়, সম্পদ হারায়। অন্যদিকে মুসলিমদের হাত হতে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রদান করা হয় হিন্দুদেরকে। ভারবর্ষে বৃটিশদের দালালীর ইজারা গ্রহণ করে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। পক্ষান্তরে সিপাহী বিদ্রোহ হতে শুরু করে বালাকোটের আন্দোলন, বক্সারের যুদ্ধ, এবং বাঁশেরকেল্লার মতো বিদ্রোহে বৃটিশদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে মুসলিমরা।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে তৈরী হয়েছে চলচিত্র, রচিত হয়েছে হাজার হাজার বই। আজ আমরা হিন্দী চলচিত্র ‘লাগানের’ মাধ্যমে শিখছি, ক্রিকেট খেলে কিভাবে বৃটিশদের কাছ হতে স্বাধীনতার সূর্য কেড়ে নিয়েছিলো ভারতীয় হিন্দুরা। আরো দেখছি ভগৎ সিং নামক কোন এক অখ্যাত লোকে কিভাবে বিখ্যাত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের আইকনে পরিণত হয়। অন্যদিকে তিতুমীরেরা পড়ে থাকে বৃটিশের ছোড়া কামানের গোলায় ধ্বসে পড়া বাশেরকেল্লার কবরখানায়। বালাকোটের শহীদ পড়ে রয় ধুলায় মাখা ধুধু প্রান্তরে।
আজ আমরা ভারতবর্ষের ইতিহাস অধ্যায়ন করতে কলকাতার জাদুঘরে গেলে নবাব সিরাজের তরবারী দেখিনা, তবে মীর জাফরের তরবারী সেখানে বহাল তবিয়তে উপস্থাপন করা হয়। হবেইনা কেনো, মুসলমানতো বেঈমানের জাতী, তারা বৃটিশদের কাছে স্বাধীনতা বিক্রি করে দিয়েছিলো! আর উমি চাঁদ, রায় দূর্লভ, ইয়ার লতিফ, জগৎ শেঠেরা হচ্ছে চুনোপুটি, অথবা গোপন দেশপ্রেমিক(!) রাঘব বোয়াল হচ্ছে ঐ মুসলিম মীর জাফর!

একাত্তরের বিজয়ীপক্ষ ছিলো ভারত, পরাজিত পক্ষ ছিলো মুসলমান। জেনারেল নিয়াজী যখন ভারতীয় জেনারেল জগৎ সিং আরোরার কাছে আত্মসমপর্ণ করলেন, ঠিক তার কিছুদিন পরে দিল্লির এক জনসভায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী বলেছিলেন, “হাজার সাল কি বদলা লিয়া”!
তিনি কিসের বদলা নিয়েছিলেন? ভারতীয় হিন্দুদের সাথে মুসলিমদের হাজার সালের দ্বন্ধ কি নিয়ে?
তারা বদলা নিয়েছিলো হাজার সাল ধরে ভারতবর্ষের মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে। যে মুসলিমরা হাজার বছর ধরে ভারতবর্ষের হিন্দুদেরকে শাসন করতো সেই মুসলিমরা আজ ভারতীয় সেনাদের কাছে আত্মসমর্পন করেছে, পরাজিত হয়েছে মুসলিম! হাজার সালের বদলা নিয়েছে হিন্দু!
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে তৈরী হয়েছে শত শত চলচিত্র, রচিত হয়েছে হাজার হাজার গল্প-উপন্যাস। আজ টিভি মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি দাড়ি টুপি পড়া হুজুররা হচ্ছে ক্যারেকটার লুস পাব্লিক! তারা ভন্ড! ভন্ডামী করেই হুজুরদের পেট চলে। হুজুররা হচ্ছে লুইচ্চা, হুজুররা নারী ধর্ষক!
শাহবাগে দাড়ি টুপি পড়া হুজুরদের মুখে শিশুদের হাতে জুতাপেটা করা হয়।

এ সবি সম্ভব হয়েছে ঘুমন্ত মুসলমানদের চোখের সামনে। মুসলমানরা ইতিহাস রচনা করেনা, ইতিহাস লিখতে ভয় পায়, ইতিহাস লিখতে লজ্জ্বা পায়, প্রদর্শনেচ্ছার ভয়ে মুখ ফুটে কথা বলেনা।
জয়নব আল গাজালী কেনো “কারাগারের রাতদিন” বই লিখবেন? এটাতো তার দুঃসাহস! তিনি আর কতটা নির্যাতন সহ্য করেছেন? ইসলামের প্রথম শহীদ হজরত সুমাইয়ার (রাঃ) তুলনায় এটা কিছুইনা। কারাগারের স্মৃতি নিয়ে কলম ধরে জয়নব আল গাযালী হযরত সুমাইয়ার(রাঃ) সাথে বেয়াদ্দবী করেছেন, তিনি নিজেকে প্রদর্শন করেছেন।
শামীম রেজা! হু ইজ শামীম রেজা? শামীম রেজা কেনো কারাগারের স্মৃতি নিয়ে বই প্রকাশ করবে? এই মূহুর্তে কারাগারের স্মৃতি নিয়ে বই প্রকাশ করা, আর কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার ভাইয়ের সাথে বেয়াদ্দবি করা একই কথা। কেন্দ্রীয় সভাপতি যে পরিমান অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন সেই তুলনায় শামীম রেজা কিছুইনা। শামীম রেজা যদি এই মুহুর্তে বই প্রকাশ করতে চায় তবে বুঝতে হবে তিনি নিজেকে প্রদর্শন করতে চাইছেন!
অতএব হে শামীম রেজা এইবার থামো, বই প্রকাশ করার ভূত মাথা হতে নামিয়ে ফেলো! এই ঘুমন্ত মুসলিম জাতির ঘুম ভাঙানো তোমার সাধ্য নয়। শেখ হাসিনার শাসনামলের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব ছেড়ে দাও ঐ মুনতাসীর মামুন আর শাহরিয়ার কবিরদের হাতে।


৮ডিসেম্বর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment