কারাস্মৃতি নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে বই।

  • facebook link 

    কারাজীবনের প্রথম দিনই পরিকল্পনা করেছিলাম লিখবো, কারাগারের অভ্যান্তরীন অভিজ্ঞতাকে ছড়িয়ে দিবো আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে।
    কিন্তু আর দশটা ইচ্ছের মতোই অপূর্ণ থেকে গিয়েছিলো এই ইচ্ছেটি। একদিন ঠাট্টাচ্ছলেই Lily Farooque আপাকে বলেছিলাম কারাগারের অভিজ্ঞতা লিখবো, তিনিও উৎসাহ দিলেন, লিখে ফেলো।
    লিখে ফেললাম কারাস্মৃতির প্রথম পর্ব, ব্যাপক পাঠক সাড়া পেলাম। আভিভূত হয়ে গেলাম। একটা বিষয় উপলব্ধি করলাম, মানুষ জানতে চায়! কারাগারের ওই সুউচ্চ পাঁচিলের অভ্যান্তরের জগতে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে মানুষ অসম্ভব রকমের কৌতুহলী।
    কখনো স্বল্প, কখনো দীর্ঘ বিরতী দিয়ে লিখে চললাম একের পর এক পর্ব। যখনি একটি পর্বের মাঝ হতে আরেকটি পর্বের মাঝে বিরতির ব্যবধান বেশি হয়ে যেতো, অসংখ্য পাঠক ইনবক্সে মধুর জ্বালাতন শুরু করতো, পরবর্তী পর্ব কখন আসবে সেই নিয়ে তাদের সেকি আকুলতা!
    ব্যাক্তিজীবনে কিছুটা অলস হলেও, পাঠকদের সেই উৎসাহ উদ্দীপনাকে কখনোই অবহেলা করতে পারতামনা।
    লেখালেখির সূত্র ধরেই সখ্যতা গড়ে উঠলো বেশ কিছু অসাধারণ গুণী মানুষের সাথে, তাদের মধ্যে Hadiuzzaman Khan RajuBeer Bangali, মারদিয়া মমতাজ, Md Nesar Uddin এবং ফেরদৌস বারী ভাই অন্যতম।
    প্রতিটি পর্বের কমেন্ট বক্সেই এই মানুষগুলোর ধারাবাহিক উৎসাহ আমাকে মারাত্মকভাবে অনুপ্রাণিত করতো পরবর্তী পর্ব লিখতে।

    কারাস্মৃতি নিয়ে বই প্রকাশ হবে স্বপ্নেও কখনো ভাবিনাই। পাঠক শুভাকাঙ্খীদের মধ্য হতে ফেরদৌস বারী ভাই, বীর বাঙালী ভাই এবং লিলি আপার আগ্রহই এ ব্যাপারে সবচাইতে বেশি ছিলো। লিলি আপা যখন আমাকে পান্ডুলিপি রেডি করতে বললেন, আমিতো আকাশ হতে পড়লাম! বললাম আমার লেখার মান নিয়ে আপনাদের ধারণা কেমন আমি জানিনা, তবে পান্ডুলিপি হাতে প্রকাশকের সামনে যাওয়ার মতো কনফিডেন্স আমার নেই। এরই মধ্যে ফেরদৌস বারী ভাই এবং বীর বাঙালী ভাইতো বই প্রকাশের উৎসাহের আতিশয্যে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার প্রস্তাবই দিয়ে দিলেন।
    বাম সাহিত্যাঙ্গনটা সবসময়ই আমার কাছে মারাত্মক রকমের ঈর্ষার স্থান ছিলো। তাদের কত শত প্রকাশনী! নিতান্তই অখাদ্য রকমের কবিতার বই প্রকাশেও তাদের আপত্তি নেই। লেখক সৃষ্টি এবং প্রতিভাকে তুলে আনার ক্ষেত্রে তাদের তুলনা নেই। শধুমাত্র আদর্শের প্রশ্নে তারা এই সাহিত্যাঙ্গনের পেছনে বিনিয়োগ করেছেন কোটি কোটি টাকা।
    ঠিক বিপরীত দিকে ইসলামিস্টদের মধ্য হতে সাহিত্যকর্ম,সাহিত্যিক সৃষ্টির পেছনে সংগঠিতভাবে আমাদের কোনো উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা নেই বললেই চলে। ভালো মানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অভাব সহ রয়েছে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা। আমাদের জন্য সাহিত্যের এই ক্ষেত্রটা ধুধু মরুভূমি, এই মরুভূমিতে ঘাস জন্মানোও এক প্রকার অসম্ভব বলা চলে। সেই যে কবি গোলাম মোহাম্মদ চলে গেলেন এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সেনাপতি মতিউর রহমান মল্লিক ভাই চলে গেলেন, তাদের বিকল্প আমরা খুজে পাইনা।

    ইসলামপন্থীদের জন্য সাহিত্যাঙ্গনের এতোসব অনিশ্চয়তা এবং হতাশার মাঝেও অনলাইন জগতের এমনসব মানুষের সান্নিধ্য আমি অর্জন করেছি যেটা আমার জন্য সৌভাগ্যেরই বলা যায়। যখনই বাঁশেরকেল্লা কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে আমার লেখা পাব্লিশ হতো, দেখা যেতো আমি যতটা আনন্দিত হয়েছি, তারচাইতেও হাজার গুণ বেশি আনন্দের সহিত সেই খবরটা পৌছে দিতেন Mardia Mumtaz আপা, আহমদ হাসান কিংবা অন্য কোনো ভাই।
    দ্বীনি ভাইদের একজনের আনন্দে অন্যজনকে আনন্দিত করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আমার পাশের মানুষগুলোকে অনুভব করেছি একটু অন্যভাবে আরো বেশি সক্রিয়ভাবে।

    প্রাথমিক ভাবে ভেবেছিলাম ভালো মানের কোনো প্রকাশনী সংস্থার মাধ্যমে বইটি প্রকাশ করবো, কিন্তু পরিস্থিতির জটিলতার কারনে ভাবতে বাধ্য হয়েছি, ঠিক এই মূহুর্তে প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রকাশনী সংস্থা এই ধরনের রাজনৈতিক লেখা পাবলিশ করতে সাহস করবে কিনা! অথবা নতুন (অখ্যাত) লেখকের বই প্রকাশ করে লোকসান গোনার মতো ঝুকি নিবে কিনা! অথচ আন্দোলন সংগ্রামের এই উত্তাল ময়দানে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে প্রেরণা সৃস্টিতে বইটি প্রকাশের জন্য বর্তমান সময়ই হচ্ছে সর্বোত্তম সময়।
    দ্বীনি আন্দোলনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত কোনো পরিকল্পনাই বিফলে যায়না, আল্লাহর রহমত সেখানে বর্ষিত হয় অবিরত ধারায়। অবিশ্বাস্যভাবেই এগিয়ে এলেন Ferduse Bari ভাই। যে মানুষটির সাথে আমার পরিচয় ফেসবুক কমেন্টবক্সে, এমনকি ইনবক্সেও যার সাথে কোনোদিন কথা হয়নি, সেই ফেরদৌস বারী ভাইয়ের পক্ষ হতে এমন সাড়া পাবো এটা ছিলো সত্যিই বিস্ময়কর।

    একটি বই প্রকাশের মানে হচ্ছে একজন লেখকের স্বপ্ন পূরণ, উঠতি লেখকের জন্য চূড়ান্ত স্বার্থকতা। কিন্তু এই ব্যাপারটিতেও আমাকে ঘিরে রাখা ভাই-বোনেরা আমাকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন, বই প্রকাশের সংবাদ শুনার পরে তাদের মাঝে যে আনন্দের বিচ্ছুরণ দেখেছি, তাতে করে অবনত কন্ঠে একটা কথাই বলতে হয়, আপনাদের কাছ হতে যতটা সমর্থন এবং ভালোবাসা পেয়েছি, আমি এর যোগ্য হয়ে উঠিনি!

    ৮ ডিসেম্বর ২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment