দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব অত্যাধিক। একদিকে ভবিষ্যত পরাশক্তি হিসেবে চীনকে ঠেকাতে আমেরিকা চাচ্ছে ভারতকে শক্তিশালী করতে, অন্যদিকে ভারতকে ঠেকাতে চীন চাচ্ছে ভারত বিরোধী শক্তিশালী বাংলাদেশ। লড়াইয়ের ময়দানে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ নামক এই ভূখন্ড।
বাংলাদেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমেরিকা বরাবরই ভারতের মতামতকে গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়েছে, সে অনুযায়ীই বিগত মঈন-ফখরুদ্দীনের শাসনামলে ভারতপন্থী আওয়ামীলীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য পাতানো নির্বাচনে আমেরিকার মৌন সম্মতি ছিলো, যার প্রমান পাই ফাঁস হয়ে যাওয়া হিলারী-হাসিনা টেলিফোন কথোপকথন হতে।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে ডঃ ইউনুস সহ বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতপন্থী আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতি আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে বলেই দেখা যাচ্ছে। ভারতের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে এই দলটি বিশ্বের কাউকেই তোয়াক্কা করে কথা বলেনাই। বিশ্বব্যাংক, জাতিসঙ্ঘ সম্পর্কে তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য এসেছে দলের শীর্ষপর্যায়ের মন্ত্রীদের কন্ঠ হতে, এমনকি ডঃ ইউনুস ইস্যুতে হিলারী ক্লিনটনের টেলিফোনকেও আমলে নেননাই শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান ক্লিয়ার করে চমক সৃষ্টি করেছে চীন। চীনের ঐতিহ্য অনুযায়ী অন্য কোনো দেশের অভ্যান্তরীন ইস্যুতে তারা প্রকাশ্য মন্তব্য করেনা, কিন্তু বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থায় মুখ বন্ধ করে রাখতে পারেনাই দেশটি। বাংলাদেশের বিয়াল্লিশ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম অভ্যান্তরিন রাজনৈতিক ব্যাপারে সংবাদসম্মেলন করে, সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে দুই দলের প্রতি আহ্বান জানান চীনের রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের এই উদ্যোগ জামায়াত-বিএনপির অনুকূলে যাবে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন পরিবারের পারিবারিক বন্ধু এবং নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুসের বক্তব্যও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন “নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই"। ডঃ ইউনুসের খুটির জোড় কোথায় সেটাও আমাদের কাছে ক্লিয়ার, কারো কাছ হতে গ্রীণ সিগন্যাল না পেয়ে তিনি এধরণের মন্তব্য করবেন এটা আশা করা বোকামী।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা সবদলের অংশগ্রহনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত এবং আমেরিকার অবস্থান অভিন্ন। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের পক্ষ হতে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোয় এটা ক্লিয়ার যে, ভারত এবং আমেরিকা বাংলাদেশ ইস্যুতে ভিন্নমত পোষণ করে। আর স্বাভাবিকভাবেই ভারত আওয়ামিলীগের পক্ষে কাজ করবে এবং ঐক্যমত না হলে আমেরিকা জামায়াত-বিএনপি জোটের পক্ষ নেয়াটাই স্বাভাবিক।
ইতোমধ্যেই অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপায় বের করতে আওয়ামিলীগ এবং বিএনপির প্রতি চিঠি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনকেরী।
সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামিলীগ বহির্বিশ্বে মিত্রশূণ্য হয়ে পড়েছে, আওয়ামিলীগের পাশে আছে একমাত্র ভারত। এবং কূটনৈতিকক্ষেত্রে মারাত্মক সফলতার পরিচয় দিয়েছে ১৮দলীয় জোট।
ইতোমধ্যেই আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের স্লোগান হচ্ছে, “কান্ট্রি মুভ উইদ আস” বিগত ৬দিনের হরতালে দেখা গেছে পুরো চট্টগ্রাম শহরে ইঞ্জিন চালিত পরিবহন বন্ধ ছিলো, বন্ধছিলো চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানী রপ্তানী কার্যক্রম। আর চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাওয়া। সামনে বিরোধীদলের পক্ষ হতে আরো কর্মসূচী আসবে, স্বাভাবিকভাবেই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচীতে গাড়ির চাকা ঘুরানো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
সব মিলিয়ে একটা কথাই বলা যায়, ভেতর-বাহিরের চাপ সহ্য করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে নেয়া ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো উপায় অবশিষ্ট নেই।
৬ নভেম্বর ২০১৩
বাংলাদেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমেরিকা বরাবরই ভারতের মতামতকে গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়েছে, সে অনুযায়ীই বিগত মঈন-ফখরুদ্দীনের শাসনামলে ভারতপন্থী আওয়ামীলীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য পাতানো নির্বাচনে আমেরিকার মৌন সম্মতি ছিলো, যার প্রমান পাই ফাঁস হয়ে যাওয়া হিলারী-হাসিনা টেলিফোন কথোপকথন হতে।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে ডঃ ইউনুস সহ বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতপন্থী আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতি আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে বলেই দেখা যাচ্ছে। ভারতের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে এই দলটি বিশ্বের কাউকেই তোয়াক্কা করে কথা বলেনাই। বিশ্বব্যাংক, জাতিসঙ্ঘ সম্পর্কে তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য এসেছে দলের শীর্ষপর্যায়ের মন্ত্রীদের কন্ঠ হতে, এমনকি ডঃ ইউনুস ইস্যুতে হিলারী ক্লিনটনের টেলিফোনকেও আমলে নেননাই শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান ক্লিয়ার করে চমক সৃষ্টি করেছে চীন। চীনের ঐতিহ্য অনুযায়ী অন্য কোনো দেশের অভ্যান্তরীন ইস্যুতে তারা প্রকাশ্য মন্তব্য করেনা, কিন্তু বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থায় মুখ বন্ধ করে রাখতে পারেনাই দেশটি। বাংলাদেশের বিয়াল্লিশ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম অভ্যান্তরিন রাজনৈতিক ব্যাপারে সংবাদসম্মেলন করে, সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে দুই দলের প্রতি আহ্বান জানান চীনের রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের এই উদ্যোগ জামায়াত-বিএনপির অনুকূলে যাবে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন পরিবারের পারিবারিক বন্ধু এবং নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুসের বক্তব্যও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন “নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই"। ডঃ ইউনুসের খুটির জোড় কোথায় সেটাও আমাদের কাছে ক্লিয়ার, কারো কাছ হতে গ্রীণ সিগন্যাল না পেয়ে তিনি এধরণের মন্তব্য করবেন এটা আশা করা বোকামী।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা সবদলের অংশগ্রহনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত এবং আমেরিকার অবস্থান অভিন্ন। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের পক্ষ হতে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোয় এটা ক্লিয়ার যে, ভারত এবং আমেরিকা বাংলাদেশ ইস্যুতে ভিন্নমত পোষণ করে। আর স্বাভাবিকভাবেই ভারত আওয়ামিলীগের পক্ষে কাজ করবে এবং ঐক্যমত না হলে আমেরিকা জামায়াত-বিএনপি জোটের পক্ষ নেয়াটাই স্বাভাবিক।
ইতোমধ্যেই অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপায় বের করতে আওয়ামিলীগ এবং বিএনপির প্রতি চিঠি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনকেরী।
সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামিলীগ বহির্বিশ্বে মিত্রশূণ্য হয়ে পড়েছে, আওয়ামিলীগের পাশে আছে একমাত্র ভারত। এবং কূটনৈতিকক্ষেত্রে মারাত্মক সফলতার পরিচয় দিয়েছে ১৮দলীয় জোট।
ইতোমধ্যেই আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের স্লোগান হচ্ছে, “কান্ট্রি মুভ উইদ আস” বিগত ৬দিনের হরতালে দেখা গেছে পুরো চট্টগ্রাম শহরে ইঞ্জিন চালিত পরিবহন বন্ধ ছিলো, বন্ধছিলো চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানী রপ্তানী কার্যক্রম। আর চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাওয়া। সামনে বিরোধীদলের পক্ষ হতে আরো কর্মসূচী আসবে, স্বাভাবিকভাবেই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচীতে গাড়ির চাকা ঘুরানো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
সব মিলিয়ে একটা কথাই বলা যায়, ভেতর-বাহিরের চাপ সহ্য করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে নেয়া ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো উপায় অবশিষ্ট নেই।
৬ নভেম্বর ২০১৩
No comments:
Post a Comment