শিবিরের কর্মী!? উরে বাবা! না না, কিছুতেই না, আমি কর্মী হতে পারবোনা! একটা রগকাটা সংগঠনের সাথে আছি সেটাই বেশি, এখন সমর্থক আছি, ইচ্ছে হলো সংগঠন করবো, ইচ্ছে হলোনা সংগঠন করলামনা, ব্যাক্তিস্বাধীনতা আছে। কর্মী হলে দল থেকে আর বের হওয়া যাবেনা, বের হতে চাইলে ধরে ঘ্যাচাং করে রগ কেটে দিবে।
উপশাখা সভাপতি তুহিন ভাইয়ের বাসায় গেলাম, চক্ষু চড়কগাছ! এতো এতো বই, কোনটা ফেলে কোনটা পড়ি। জিজ্ঞাসা করলাম, বাসায় নেয়া যাবে?
হ্যা নেয়া যাবে, তবে ভাড়া দিতে হবে।
ভাড়া কত? সবার জন্য পাঁচ টাকা, তোমার জন্য ফ্রি!
আর যায় কোথায়, এক কথাতেই তুহিন ভাইয়ের ভক্ত হয়ে গেলাম, ফিরে এলাম দুই হাত ভর্তি একগাদা বই নিয়ে। আসার আগে কম্পিউটার “রোড রাশ” খেলতে ভুল করলামনা!
প্রতিদিন বিকেলের ডিউটি ছিলো তুহিন ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়া, বন্ধু ওয়াদুদের সাথে কম্পিটিশন চলতো, তুহিন ভাই কাকে বেশি ভালোবাসে আমাকে নাকি ওয়াদুদকে!
তুহিন ভাইয়ের সাথে আমাদের ছিলো অসম বন্ধুত্ব! তুহিন ভাই পড়তেন চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে, আমি আর ওয়াদূদ পড়তাম সম্ভবত ক্লাস সেভেনে। একদিন দুই বন্ধুতে যুক্তি করে প্রশ্ন করেই বসলাম, “আচ্ছা তুহিন ভাই, আপনি কাকে বেশি পছন্দ করেন, আমাকে নাকি ওয়াদূদকে?”
তুহিন ভাই কিছু বললেননা, মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললেন, দুইজনকেই!
রিমন ভাই সম্ভবত আমাকে কর্মী বানানোর প্লান করেছিলেন, রিমন ভাইকে বললাম, ভাই সব কাজ করতে পারবো, প্রগ্রাম থাকলে ডাইকেন উপস্থিত হবো, কিন্তু কর্মী আমি হবোইনা।
আমার কথা বাতাসে মিলানোর আগেই পাশ থেকে তুহিন ভাই বলে উঠলেন, কর্মী তোমাকে বানামুইনা, বলেই হেসে ফেললেন।
নির্ধারিত দিনে তুহিন ভাই বাসায় এসে হাজির, চলো!
কোথায়?
যে পড়াগুলো দিয়েছিলাম শেষ হয়েছে?
হ্যা, হয়েছে!
পরীক্ষক তৎকালীন ওয়ার্ড সভাপতি কাইয়ুম ভাই, শুরুতেই প্রশ্ন করলেন,
শিবির করো?
হ্যা করি,
শিবির কেনো করো, শিবিরতো রগ কাটে!
“না, শিবির কখনো রগ কাটেনা, এগুলো অপপ্রচার। আমি কখনো দেখিনাই বা শুনিনাই শিবির অমুকের রগ কেটেছে। এগুলো শত্রুদের অপপ্রচার, যেভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছিলো হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বিরুদ্ধে”। কথাগুলো মুখে বললেও মনে খুব একটা কনফিডেন্স পাচ্ছিলামনা, সূক্ষ একটা সন্দেহ রয়েই গেলো, যা রটে কিছুনা কিছুতো বটেই!
আবার প্রশ্ন, পত্রিকায়তো দেখেছো, শিবিরের ছেলেরা অস্ত্র হাতে মারামারি করে, তারপরেও তুমি শিবির করবে কেনো?
“অস্ত্রের মোকাবেলা অস্ত্রদিয়েই করতে হবে, লাঠি দিয়েতো আর অস্ত্রের মোকাবেলা সম্ভবনয়। আমি মনে করি শিবিরের প্রতিটি কর্মীর হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া দরকার!” কথাগুলো বলছিলাম আর ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিলো, আল্লাহ জানে, সত্যি সত্যি আবার অস্ত্র তুলে দেয় কিনা!
কাইয়ুম ভাই মৃদু হাসলেন পরে আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ছাত্রশিবির অস্ত্রের রাজনীতি করেনা, কলম আমাদের অস্ত্র!
শিবিরের লক্ষ উদ্দেশ্য এবং পাঁচদফা কর্মসূচী সংক্রান্ত প্রশ্নগুলির উত্তর সঠিকভাবে পারলামনা......
দাওয়াতী সপ্তাহ উপলক্ষে পরের দিন ছিলো বিশাল সাধারণ সভা, ওয়ার্ড কতৃক আয়োজিত উপস্থিত ক্যুইজ প্রতিযোগীতায় দ্বিতীয়স্থান লাভ করলাম। পুরস্কার হিসেবে দেয়া হলো, একটি পকেট ডিকশনারী, এবং সবচাইতে বড় যে পুরস্কার সেদিন অর্জন করলাম সেটা হচ্ছে আমাকে কর্মী ঘোশনা করা হলো। আজ হতে আমি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন গর্বিত কর্মী।
বাসায় গিয়ে আব্বাকে পুরস্কার দেখালাম, ক্যুইজ প্রতিযোগীতায় দ্বিতীয় হয়েছি জেনে অত্যাধিক খুশি হলেন। কিছুক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করলেন ক্যুইজের আয়োজক কারা?
বললাম ছাত্রশিবিরের ক্যুইজ!
কট্টর ওয়ামীলীগ সমর্থক আব্বার চেহারায় পরিবর্তন লক্ষ করলাম, রাগী রাগী কন্ঠে জানতে চাইলেন, শিবিরের প্রগ্রামে তোমাকে কে যেতে বলেছে?
লুকোচুরি টাইপের একটা হাসি দিয়ে স্থান ত্যাগ করলাম। মনে মনে বললাম, “আব্বা, আজকে আমি শিবিরের কর্মী হয়েছি”, শব্দ করে বললে হয়তো পিঠের হাড় আস্ত থাকতোনা!
আমি শিবিরের কর্মী, প্রতিমাসে নিয়ম করে শিবিরকে দুইটাকা চাঁদা দেই। নিজের মধ্যে একটা ক্যাডার ক্যাডার ভাব চলে আসলো, দুনিয়াকে অন্যচোখে দেখতে শুরু করলাম। একবিকেলে বন্ধু রাসেলের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম, রাসেল আবার শিবির বিদ্বেষী, কথায় কথায় শিবির নিয়ে অশ্লীল গালি দিয়ে বসলো। আর যায় কথায়, দিলাম ধোলাই!
মারামারির কথা তুহিন ভাইয়ের কানে যেতে বেশিক্ষণ লাগলোনা, রাসেলই নালিশ করেছে। বিকেল বেলা তুহিন ভাই বাসায় আসলেন এবং দক্ষশিবিরের মতো করে ঘাড়ের ত্যাড়া রগটা কেটে দিলেন।
বললেন ক্ষমা চাও!
বললাম ক্ষমা চাইবো কেনো, ক্ষমা ও চাইবে, ও শিবিরকে কেনো গালি দিলো।
তুহিন ভাইয়ের সোজা উত্তর, তোমাকে মাড়ামাড়ি করার অনুমতি কে দিয়েছে?
কি আর করার দায়ীত্বশীলের নির্দেশ শীরোধার্য, রাসেলের নিকট ক্ষমা চাইলাম, বুকে বুক মিলালাম, কিন্তু হৃদয়ে হৃদয় মিলাতে পারলামনা! এই রাসেল পরবর্তীতে শিবিরের কর্মী হয়েছিলো।
(সজীব, হারুন, জাহাঙ্গীর,রাসেদ, রাসেল,সৈকত,এনায়েত, রিমন, শাহজাহান, সুমন, আলমগীর এবং তুহিন ভাইদের আজ ভীষণ মিস করছি!)
৪ নভেম্বর ২০১৩
উপশাখা সভাপতি তুহিন ভাইয়ের বাসায় গেলাম, চক্ষু চড়কগাছ! এতো এতো বই, কোনটা ফেলে কোনটা পড়ি। জিজ্ঞাসা করলাম, বাসায় নেয়া যাবে?
হ্যা নেয়া যাবে, তবে ভাড়া দিতে হবে।
ভাড়া কত? সবার জন্য পাঁচ টাকা, তোমার জন্য ফ্রি!
আর যায় কোথায়, এক কথাতেই তুহিন ভাইয়ের ভক্ত হয়ে গেলাম, ফিরে এলাম দুই হাত ভর্তি একগাদা বই নিয়ে। আসার আগে কম্পিউটার “রোড রাশ” খেলতে ভুল করলামনা!
প্রতিদিন বিকেলের ডিউটি ছিলো তুহিন ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়া, বন্ধু ওয়াদুদের সাথে কম্পিটিশন চলতো, তুহিন ভাই কাকে বেশি ভালোবাসে আমাকে নাকি ওয়াদুদকে!
তুহিন ভাইয়ের সাথে আমাদের ছিলো অসম বন্ধুত্ব! তুহিন ভাই পড়তেন চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে, আমি আর ওয়াদূদ পড়তাম সম্ভবত ক্লাস সেভেনে। একদিন দুই বন্ধুতে যুক্তি করে প্রশ্ন করেই বসলাম, “আচ্ছা তুহিন ভাই, আপনি কাকে বেশি পছন্দ করেন, আমাকে নাকি ওয়াদূদকে?”
তুহিন ভাই কিছু বললেননা, মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললেন, দুইজনকেই!
রিমন ভাই সম্ভবত আমাকে কর্মী বানানোর প্লান করেছিলেন, রিমন ভাইকে বললাম, ভাই সব কাজ করতে পারবো, প্রগ্রাম থাকলে ডাইকেন উপস্থিত হবো, কিন্তু কর্মী আমি হবোইনা।
আমার কথা বাতাসে মিলানোর আগেই পাশ থেকে তুহিন ভাই বলে উঠলেন, কর্মী তোমাকে বানামুইনা, বলেই হেসে ফেললেন।
নির্ধারিত দিনে তুহিন ভাই বাসায় এসে হাজির, চলো!
কোথায়?
যে পড়াগুলো দিয়েছিলাম শেষ হয়েছে?
হ্যা, হয়েছে!
পরীক্ষক তৎকালীন ওয়ার্ড সভাপতি কাইয়ুম ভাই, শুরুতেই প্রশ্ন করলেন,
শিবির করো?
হ্যা করি,
শিবির কেনো করো, শিবিরতো রগ কাটে!
“না, শিবির কখনো রগ কাটেনা, এগুলো অপপ্রচার। আমি কখনো দেখিনাই বা শুনিনাই শিবির অমুকের রগ কেটেছে। এগুলো শত্রুদের অপপ্রচার, যেভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছিলো হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বিরুদ্ধে”। কথাগুলো মুখে বললেও মনে খুব একটা কনফিডেন্স পাচ্ছিলামনা, সূক্ষ একটা সন্দেহ রয়েই গেলো, যা রটে কিছুনা কিছুতো বটেই!
আবার প্রশ্ন, পত্রিকায়তো দেখেছো, শিবিরের ছেলেরা অস্ত্র হাতে মারামারি করে, তারপরেও তুমি শিবির করবে কেনো?
“অস্ত্রের মোকাবেলা অস্ত্রদিয়েই করতে হবে, লাঠি দিয়েতো আর অস্ত্রের মোকাবেলা সম্ভবনয়। আমি মনে করি শিবিরের প্রতিটি কর্মীর হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া দরকার!” কথাগুলো বলছিলাম আর ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিলো, আল্লাহ জানে, সত্যি সত্যি আবার অস্ত্র তুলে দেয় কিনা!
কাইয়ুম ভাই মৃদু হাসলেন পরে আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ছাত্রশিবির অস্ত্রের রাজনীতি করেনা, কলম আমাদের অস্ত্র!
শিবিরের লক্ষ উদ্দেশ্য এবং পাঁচদফা কর্মসূচী সংক্রান্ত প্রশ্নগুলির উত্তর সঠিকভাবে পারলামনা......
দাওয়াতী সপ্তাহ উপলক্ষে পরের দিন ছিলো বিশাল সাধারণ সভা, ওয়ার্ড কতৃক আয়োজিত উপস্থিত ক্যুইজ প্রতিযোগীতায় দ্বিতীয়স্থান লাভ করলাম। পুরস্কার হিসেবে দেয়া হলো, একটি পকেট ডিকশনারী, এবং সবচাইতে বড় যে পুরস্কার সেদিন অর্জন করলাম সেটা হচ্ছে আমাকে কর্মী ঘোশনা করা হলো। আজ হতে আমি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন গর্বিত কর্মী।
বাসায় গিয়ে আব্বাকে পুরস্কার দেখালাম, ক্যুইজ প্রতিযোগীতায় দ্বিতীয় হয়েছি জেনে অত্যাধিক খুশি হলেন। কিছুক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করলেন ক্যুইজের আয়োজক কারা?
বললাম ছাত্রশিবিরের ক্যুইজ!
কট্টর ওয়ামীলীগ সমর্থক আব্বার চেহারায় পরিবর্তন লক্ষ করলাম, রাগী রাগী কন্ঠে জানতে চাইলেন, শিবিরের প্রগ্রামে তোমাকে কে যেতে বলেছে?
লুকোচুরি টাইপের একটা হাসি দিয়ে স্থান ত্যাগ করলাম। মনে মনে বললাম, “আব্বা, আজকে আমি শিবিরের কর্মী হয়েছি”, শব্দ করে বললে হয়তো পিঠের হাড় আস্ত থাকতোনা!
আমি শিবিরের কর্মী, প্রতিমাসে নিয়ম করে শিবিরকে দুইটাকা চাঁদা দেই। নিজের মধ্যে একটা ক্যাডার ক্যাডার ভাব চলে আসলো, দুনিয়াকে অন্যচোখে দেখতে শুরু করলাম। একবিকেলে বন্ধু রাসেলের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম, রাসেল আবার শিবির বিদ্বেষী, কথায় কথায় শিবির নিয়ে অশ্লীল গালি দিয়ে বসলো। আর যায় কথায়, দিলাম ধোলাই!
মারামারির কথা তুহিন ভাইয়ের কানে যেতে বেশিক্ষণ লাগলোনা, রাসেলই নালিশ করেছে। বিকেল বেলা তুহিন ভাই বাসায় আসলেন এবং দক্ষশিবিরের মতো করে ঘাড়ের ত্যাড়া রগটা কেটে দিলেন।
বললেন ক্ষমা চাও!
বললাম ক্ষমা চাইবো কেনো, ক্ষমা ও চাইবে, ও শিবিরকে কেনো গালি দিলো।
তুহিন ভাইয়ের সোজা উত্তর, তোমাকে মাড়ামাড়ি করার অনুমতি কে দিয়েছে?
কি আর করার দায়ীত্বশীলের নির্দেশ শীরোধার্য, রাসেলের নিকট ক্ষমা চাইলাম, বুকে বুক মিলালাম, কিন্তু হৃদয়ে হৃদয় মিলাতে পারলামনা! এই রাসেল পরবর্তীতে শিবিরের কর্মী হয়েছিলো।
(সজীব, হারুন, জাহাঙ্গীর,রাসেদ, রাসেল,সৈকত,এনায়েত, রিমন, শাহজাহান, সুমন, আলমগীর এবং তুহিন ভাইদের আজ ভীষণ মিস করছি!)
৪ নভেম্বর ২০১৩
No comments:
Post a Comment