এক।
স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন সন্তু লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে এক জনসভায় দীপ্ত কন্ঠে উচ্চারণ করলেন স্বাধীন সার্বভৌম জুম্মুল্যান্ডের নাম। বিপুল সংখ্যক উপজাতি জনতা মূহুর্মূহ কড়তালি এবং গগন বিদারী স্লোগানের মাধ্যমে তার এই বক্তব্যে সমর্থন যোগালো। উৎফুল্ল জনতার হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে স্বাধীন জুম্মুল্যান্ডের জাতীয় পতাকা।
জনাব সন্তু লারমা তার এই সংক্ষিপ্ত অথচ দৃড় কন্ঠের উত্তজক বক্তব্যে বলেন, সময় এসেছে প্রতিরোধের, বাঙালীদের যুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর, আপনাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করুন। অনেক সহ্য করেছি, বাঙালীর গোলামী আর নয়।
দুই।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় জরুরী অবস্থা জাড়ি করেছে বাংলাদেশ সরকার, থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। মেজর জহিরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর অফিসারদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হতে বিশেষ অভিযানের ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো “অপারেশন গ্রীণ হিল”।
চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট হতে অস্ত্রসস্ত্রে প্রস্তুত সামরিক বাহিনীর সাজোয়া যান রওয়ানা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে।
তিন।
অরুপ মারমার চোখে ঘুম নেই, বারবার বিছানায় এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করছে। তার চোখে স্বপ্ন, স্বাধীন সার্বভৌম জুম্মুল্যান্ডের স্বপ্ন। অরুপ স্বপ্ন দেখে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, বাঙালীমুক্ত পাহাড়ি উপত্যাকা, যে উপত্যাকায় আর কারো অধিকার থাকবেনা, যে উপত্যাকায় তার অনাগত সন্তান বুক ভরে নিশ্বাস নিবে। অরুপের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুপ্রিয়ার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য, মায়াবী দুটি চোখে যেনো জমা হয়েছে দুনিয়ার সমস্ত মায়া, ঢেউয়ের মতো আকাবাকা চুলে যেনো দিশা হারিয়ে যায়।
নিজের অজান্তেই মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে যায় অরুপের দুটি হাত, কঠিন প্রত্যয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, মুক্তিযুদ্ধে যাবে! ছিনিয়ে আনবে একটি মানচিত্র, বিয়ের আসরে সুপ্রিয়াকে উপহার দিবে একটি স্বাধীন পতাকা!
চার।
সেনা মোতায়েন করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহে। সামরিক অপারেশনে ধ্বংশ করা হয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বেশ কিছু ঘাটি, ব্যাপক হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে শন্তু বাহিণীর নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়েছে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিষদ। শন্তু বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”। অস্থায়ী জুম্মুল্যান্ড সরকারের সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছে ভারতের সীমান্ত প্রদেশে।
সেনাবাহিনীর নিকট খবর এসেছে, সীমান্তের ওপাড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্তে নিরাপত্তা জোড়দার করার জন্য বিজিবির হেড কোয়ার্টার হতে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শপথ নিয়েছে, জীবনের বিনিময়ে হলেও বাংলাদেশের একইঞ্চি ভূমি কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।
পাঁচ।
গভীর রাত, জ্যোৎস্নালোকিত আকাশে হাজার তারার দিকে তাকিয়ে আছেন মেজর জহির, তিনি হারিয়ে গেলেন ইতিহাসে, দৃষ্টি সীমায় একে একে ভেসে এলো, ৪৭, ৫২, ৭১, ৭৫। ঠিক এই মূহুর্তে ডিজিএফআই এর সাবেক পরিচালক মেজর রেজাকুল হায়দারকে খুব বেশি মিস করছেন মেজর জহির। দূরদর্শী এই সামরিক অফিসার ভারতের স্বাধীনতাকামী সংগঠন উলফার জন্য দশট্রাক অস্ত্র এনেছিলেন চীনের সহায়তায়। ওই অস্ত্র যদি তখন ঠিকঠাক মতো উলফার কাছে পাঠানো যেতো তবে আজ ভারত বাংলাদেশের দিকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলার সুযোগ পেতোনা, নিজেদের অভ্যান্তরিণ গোলযোগ সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হতো। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কি যন্ত্রনাটাইনা ভোগ করতে হয়েছে দেশপ্রেমিক এই সেনা অফিসারকে। তাবেদার দালাল সরকারে নির্মম অত্যাচার স্বীকার হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক ভারত বিরোধী প্রতিটি সেনা কর্মকর্তাকে, যার ফলাফল আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণ।
ছয়।
জুম্মুল্যান্ডের মুক্তিযোদ্ধাদের মোকাবেলায় সেনাবাহিনীকে সহায়তার লক্ষে দেশপ্রেমিক স্থানীয় উপজাতীয়দের নিয়ে সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে “রাজাকার” এবং উপজাতীয় ছাত্রদের নিয়ে “আলবদর” নামে দুটি আধাসামরিক বাহিনী গঠন করা হলো। রাজাকার এবং আলবদর বাহিনী একের পর এক অভিযানে সহায়তা করায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করলো সামরিক বাহিনী।
সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্থ করার লক্ষে বিভিন্ন সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুল কালভার্ট ধ্বসিয়ে দিতে শুরু করলো মুক্তিবাহিনী। পুল-কালভার্টের নিরাপত্তায় রাজাকার বাহিনীকে নিযুক্ত করা হলো।
সাত।
অরুপ মারমা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে, বন্ধু সুদিপ চাকমা যোগ দিয়েছে আলবদর বাহিনীতে।
অরুপ অনেক বুঝিয়েছে সুদিপকে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে, দেশের স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়ার বিকল্প নেই।
সুদিপ কিছুতেই রাজী হয়নাই, দীপ্ত কন্ঠে বলেছে “আমাদের দেশ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের অখন্ডততা রক্ষার জন্য আমি বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে যাবো। তুমি দেশদ্রোহী! ভারতের হাতের পুতুল! ভারতের ইচ্ছেতেই তুমি যুদ্ধ করছো, এবং স্বাধীন যুম্মুল্যান্ড ভারতের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করার সামর্থ রাখবেনা”।
অরুপ যুক্তি দিয়েছে, আমরা শোষিত, নির্যাতীত! শিক্ষা,চাকরী-ব্যবসা সর্বত্রই আমাদের সাথে বৈষম্য করা হয়। স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
সুদীপও পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরীকের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে, তোমার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করো, অবরোধ দাও, হরতাল দাও, সরকার বাধ্য হবে দাবী মেনে নিতে। কিন্তু নিজের মাতৃভূমিকে কেনো দ্বিখন্ডিত করবে? কেনো তুমি শত্রু দেশের সহায়তায় নিজের ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ করবে?
যুক্তিতে কেউ কারো চেয় কম নয়, অবশেষে দুই বন্ধু বেছে নেয় দুটি ভিন্ন পথ! একজন চলে যায় মুক্তিযুদ্ধে অন্যজন দেশরক্ষার শপথ নিয়ে যুক্ত হয় আলবদর বাহিনীতে।
আট।
চোরাগুপ্তা গেরিলা হামলা চালিয়ে সেনাবাহিনীকে বিপর্যস্ত করে দিলো মুক্তিবাহিনী। ক্ষুব্ধ সেনারা একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে শুরু করলো, হাজার হাজার নিরীহ উপজাতী নির্যাতনের স্বীকার হলো সামরিক বাহিনীর হাতে, চরিত্রহীন বেশ কিছু সামরিক অফিসারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেলো, মারা পরলো বেশ কিছু নিরীহ মানুষ!
যেসব উপজাতীয় নেতা এতো রক্তক্ষয়ের পরেও বাংলাদেশের অখন্ডতা রক্ষার জন্য জনমত সংগ্রহের লক্ষে একের পর এক বক্তব্য বিবৃতি প্রদান করছিলেন, তারাও দ্বিধায় পড়ে গেলেন। সেনাবাহিনী প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে সাধারণ মানুষের উপর এই নির্যাতন বন্ধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানালেন।
দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের নিয়ে গঠন করা হলো “শান্তি কমিটি”। অসহায় সাধারণ মানুষকে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন হতে রক্ষার জন্য কর্মক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়লেন শান্তি কমিটির নেতারা। ফলশ্রুতিতে অত্যাচার নির্যাতনের হাত হতে রক্ষা পেলো বহুসংখ্যক নিরীহ উপজাতী।
নয়।
মুক্তিবাহিনীর একেরপর এক ব্যার্থতায় সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে হাজির হলো ভারত! এক্ষেত্রে তারা যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করলো অস্থায়ী জুম্মুল্যান্ড সরকারের আমন্ত্রণকে। ক্রমাগত বিমান হামলা চালিয়ে দূর্বল করে দিলো বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে।
বাংলাদেশকে সহায়তার লক্ষে চীনের পক্ষ হতে যুদ্ধ জাহাজ পাঠানো হয়েছিলো কিন্তু পথিমধ্যে সেটাকে আটকে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
একেরপর এক এলাকা হাতছাড়া হয়ে যায় সেনাবাহিনীর হাত হতে, মুক্তিবাহিনী এবং ভারতের যৌথ হামলা মোকাবেলায় জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে যাচ্ছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের স্থানীয় ইউনিটগুলো। স্থানীয় উপজাতীয় জনতা “নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর” এবং “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ” স্লোগান দিয়ে প্রকম্পিত করছে পাহাড়ী জনপদ।
একসময় সব শেষ হয়ে আসে! পরাজতি হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনাঅফিসার মেজর মুকেশ সিং-এর কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়ে জেনারেল জহিরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
মুক্ত বাতাসে পতপত করে উড্ডীন হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম জুম্মুল্যান্ডের পতাকা।
বিষাদের ছায়া নেমে আসে দেশজুড়ে, বাংলাদেশের ঘড়ে ঘড়ে রোল ওঠে কান্নার! বাংলাদেশের একদশমাংশ ভূমি হাতছাড়া হয়ে যায় ভারতীয় শকুনের নখের আচড়ে।
দশ।
স্বাধীন জুম্মুল্যান্ড! একটুকরো মানচিত্র অরুপের হাতে, আজ তার বিয়ে, সুপ্রিয়াকে উপহার দিবে শ্রেষ্ঠ উপহার, স্বাধীন জুম্মুল্যান্ডের মানচিত্র।
শন্তু লারমার অনুরোধে জুম্মুল্যান্ড হতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কিন্তু যাওয়ার আগে সুকৌশলে নির্মূল করা হয় জুম্মুল্যান্ডের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবিদের।
মাথাতুলে দাড়াতে দেয়া হবেনা জুম্মুল্যান্ডকে, আজীবন ভারতের গোলামী করতে হবে এটাই তাদের ইচ্ছে।
অস্থায়ী জুম্মুল্যান্ড সরকারের প্রেসিডেন্টের সাথে ভারতের একটি চুক্তি হয়েছিলো, চুক্তির ধারাগুলো ছিলো নিম্নরুপ
১। জুম্মুল্যান্ডের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী থাকবেনা ২। দেশের সীমান্ত যৌথভাবে পাহাড়া দিবে ভারত এবং জুম্মুল্যান্ডের সীমান্তরক্ষীরা ৩। জুম্মুল্যান্ডের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করা হবে ভারতের সাথে পরামর্শক্রমে ৪। যে সকল সরকারী অফিসার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনাই, তাদের বরখাস্ত করে ভারতীয় অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে। ৫। ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের মাধ্যমে জুম্মুল্যান্ডে সরকারী অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে।
শন্তু লারমার অনুরোধে ভারত এই চুক্তিটিকে সাময়ীকভাবে স্থগিত করে।
যেসকল বাংলাদেশী সেনাঅফিসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে তাদের ক্ষমা করে দেয়া হলো, পাঠিয়ে দেয়া হলো বাংলাদেশে। শন্তু লারমা দীপ্ত কন্ঠে উচ্চারণ করলেন, “পাহাড়িরা দেখিয়ে দিলো তারা ক্ষমা করতে জানে”। সাধারণ ক্ষমা ঘোশণা করা হলো অন্যান্য স্বাধীনতা বিরোধীদের জন্য।
এগারো।
জুম্মুল্যান্ডের স্বাধীনতার চল্লিশবছর পূর্তি হয়েছে, কাপ্তাই হ্রদ হতে গড়িয়েছে কোটি কিউসেক জল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী উঠলো। গঠন করা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, কিন্তু বাংলাদেশ হতে যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যগ গ্রহণ করা হলোনা।
শান্তী কমিটির লোকদের ধরে আনা হলো, বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে উপজাতীয় সাধারণ জনতাকে রক্ষার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হলো।
বারো।
পত্রিকায় খবর বেড়িয়েছে, অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে খাগড়াছড়ির জনগণ। জুম্মুল্যান্ড সরকারের ক্রমাগত জুলুম এবং শোষণের প্রতিবাদে স্বাধীনতা ঘোশণা করেছেন খাগড়াছড়ি লিবারেশন ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট জনাব চিম্বুক ত্রিপুরা............
১৯ নভেম্বর ২০১৩
স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন সন্তু লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে এক জনসভায় দীপ্ত কন্ঠে উচ্চারণ করলেন স্বাধীন সার্বভৌম জুম্মুল্যান্ডের নাম। বিপুল সংখ্যক উপজাতি জনতা মূহুর্মূহ কড়তালি এবং গগন বিদারী স্লোগানের মাধ্যমে তার এই বক্তব্যে সমর্থন যোগালো। উৎফুল্ল জনতার হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে স্বাধীন জুম্মুল্যান্ডের জাতীয় পতাকা।
জনাব সন্তু লারমা তার এই সংক্ষিপ্ত অথচ দৃড় কন্ঠের উত্তজক বক্তব্যে বলেন, সময় এসেছে প্রতিরোধের, বাঙালীদের যুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর, আপনাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করুন। অনেক সহ্য করেছি, বাঙালীর গোলামী আর নয়।
দুই।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় জরুরী অবস্থা জাড়ি করেছে বাংলাদেশ সরকার, থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। মেজর জহিরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর অফিসারদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হতে বিশেষ অভিযানের ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো “অপারেশন গ্রীণ হিল”।
চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট হতে অস্ত্রসস্ত্রে প্রস্তুত সামরিক বাহিনীর সাজোয়া যান রওয়ানা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে।
তিন।
অরুপ মারমার চোখে ঘুম নেই, বারবার বিছানায় এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করছে। তার চোখে স্বপ্ন, স্বাধীন সার্বভৌম জুম্মুল্যান্ডের স্বপ্ন। অরুপ স্বপ্ন দেখে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, বাঙালীমুক্ত পাহাড়ি উপত্যাকা, যে উপত্যাকায় আর কারো অধিকার থাকবেনা, যে উপত্যাকায় তার অনাগত সন্তান বুক ভরে নিশ্বাস নিবে। অরুপের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুপ্রিয়ার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য, মায়াবী দুটি চোখে যেনো জমা হয়েছে দুনিয়ার সমস্ত মায়া, ঢেউয়ের মতো আকাবাকা চুলে যেনো দিশা হারিয়ে যায়।
নিজের অজান্তেই মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে যায় অরুপের দুটি হাত, কঠিন প্রত্যয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, মুক্তিযুদ্ধে যাবে! ছিনিয়ে আনবে একটি মানচিত্র, বিয়ের আসরে সুপ্রিয়াকে উপহার দিবে একটি স্বাধীন পতাকা!
চার।
সেনা মোতায়েন করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহে। সামরিক অপারেশনে ধ্বংশ করা হয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বেশ কিছু ঘাটি, ব্যাপক হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে শন্তু বাহিণীর নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়েছে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিষদ। শন্তু বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”। অস্থায়ী জুম্মুল্যান্ড সরকারের সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছে ভারতের সীমান্ত প্রদেশে।
সেনাবাহিনীর নিকট খবর এসেছে, সীমান্তের ওপাড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্তে নিরাপত্তা জোড়দার করার জন্য বিজিবির হেড কোয়ার্টার হতে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শপথ নিয়েছে, জীবনের বিনিময়ে হলেও বাংলাদেশের একইঞ্চি ভূমি কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।
পাঁচ।
গভীর রাত, জ্যোৎস্নালোকিত আকাশে হাজার তারার দিকে তাকিয়ে আছেন মেজর জহির, তিনি হারিয়ে গেলেন ইতিহাসে, দৃষ্টি সীমায় একে একে ভেসে এলো, ৪৭, ৫২, ৭১, ৭৫। ঠিক এই মূহুর্তে ডিজিএফআই এর সাবেক পরিচালক মেজর রেজাকুল হায়দারকে খুব বেশি মিস করছেন মেজর জহির। দূরদর্শী এই সামরিক অফিসার ভারতের স্বাধীনতাকামী সংগঠন উলফার জন্য দশট্রাক অস্ত্র এনেছিলেন চীনের সহায়তায়। ওই অস্ত্র যদি তখন ঠিকঠাক মতো উলফার কাছে পাঠানো যেতো তবে আজ ভারত বাংলাদেশের দিকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলার সুযোগ পেতোনা, নিজেদের অভ্যান্তরিণ গোলযোগ সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হতো। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কি যন্ত্রনাটাইনা ভোগ করতে হয়েছে দেশপ্রেমিক এই সেনা অফিসারকে। তাবেদার দালাল সরকারে নির্মম অত্যাচার স্বীকার হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক ভারত বিরোধী প্রতিটি সেনা কর্মকর্তাকে, যার ফলাফল আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণ।
ছয়।
জুম্মুল্যান্ডের মুক্তিযোদ্ধাদের মোকাবেলায় সেনাবাহিনীকে সহায়তার লক্ষে দেশপ্রেমিক স্থানীয় উপজাতীয়দের নিয়ে সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে “রাজাকার” এবং উপজাতীয় ছাত্রদের নিয়ে “আলবদর” নামে দুটি আধাসামরিক বাহিনী গঠন করা হলো। রাজাকার এবং আলবদর বাহিনী একের পর এক অভিযানে সহায়তা করায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করলো সামরিক বাহিনী।
সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্থ করার লক্ষে বিভিন্ন সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুল কালভার্ট ধ্বসিয়ে দিতে শুরু করলো মুক্তিবাহিনী। পুল-কালভার্টের নিরাপত্তায় রাজাকার বাহিনীকে নিযুক্ত করা হলো।
সাত।
অরুপ মারমা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে, বন্ধু সুদিপ চাকমা যোগ দিয়েছে আলবদর বাহিনীতে।
অরুপ অনেক বুঝিয়েছে সুদিপকে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে, দেশের স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়ার বিকল্প নেই।
সুদিপ কিছুতেই রাজী হয়নাই, দীপ্ত কন্ঠে বলেছে “আমাদের দেশ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের অখন্ডততা রক্ষার জন্য আমি বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে যাবো। তুমি দেশদ্রোহী! ভারতের হাতের পুতুল! ভারতের ইচ্ছেতেই তুমি যুদ্ধ করছো, এবং স্বাধীন যুম্মুল্যান্ড ভারতের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করার সামর্থ রাখবেনা”।
অরুপ যুক্তি দিয়েছে, আমরা শোষিত, নির্যাতীত! শিক্ষা,চাকরী-ব্যবসা সর্বত্রই আমাদের সাথে বৈষম্য করা হয়। স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
সুদীপও পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরীকের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে, তোমার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করো, অবরোধ দাও, হরতাল দাও, সরকার বাধ্য হবে দাবী মেনে নিতে। কিন্তু নিজের মাতৃভূমিকে কেনো দ্বিখন্ডিত করবে? কেনো তুমি শত্রু দেশের সহায়তায় নিজের ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ করবে?
যুক্তিতে কেউ কারো চেয় কম নয়, অবশেষে দুই বন্ধু বেছে নেয় দুটি ভিন্ন পথ! একজন চলে যায় মুক্তিযুদ্ধে অন্যজন দেশরক্ষার শপথ নিয়ে যুক্ত হয় আলবদর বাহিনীতে।
আট।
চোরাগুপ্তা গেরিলা হামলা চালিয়ে সেনাবাহিনীকে বিপর্যস্ত করে দিলো মুক্তিবাহিনী। ক্ষুব্ধ সেনারা একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে শুরু করলো, হাজার হাজার নিরীহ উপজাতী নির্যাতনের স্বীকার হলো সামরিক বাহিনীর হাতে, চরিত্রহীন বেশ কিছু সামরিক অফিসারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেলো, মারা পরলো বেশ কিছু নিরীহ মানুষ!
যেসব উপজাতীয় নেতা এতো রক্তক্ষয়ের পরেও বাংলাদেশের অখন্ডতা রক্ষার জন্য জনমত সংগ্রহের লক্ষে একের পর এক বক্তব্য বিবৃতি প্রদান করছিলেন, তারাও দ্বিধায় পড়ে গেলেন। সেনাবাহিনী প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে সাধারণ মানুষের উপর এই নির্যাতন বন্ধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানালেন।
দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের নিয়ে গঠন করা হলো “শান্তি কমিটি”। অসহায় সাধারণ মানুষকে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন হতে রক্ষার জন্য কর্মক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়লেন শান্তি কমিটির নেতারা। ফলশ্রুতিতে অত্যাচার নির্যাতনের হাত হতে রক্ষা পেলো বহুসংখ্যক নিরীহ উপজাতী।
নয়।
মুক্তিবাহিনীর একেরপর এক ব্যার্থতায় সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে হাজির হলো ভারত! এক্ষেত্রে তারা যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করলো অস্থায়ী জুম্মুল্যান্ড সরকারের আমন্ত্রণকে। ক্রমাগত বিমান হামলা চালিয়ে দূর্বল করে দিলো বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে।
বাংলাদেশকে সহায়তার লক্ষে চীনের পক্ষ হতে যুদ্ধ জাহাজ পাঠানো হয়েছিলো কিন্তু পথিমধ্যে সেটাকে আটকে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
একেরপর এক এলাকা হাতছাড়া হয়ে যায় সেনাবাহিনীর হাত হতে, মুক্তিবাহিনী এবং ভারতের যৌথ হামলা মোকাবেলায় জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে যাচ্ছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের স্থানীয় ইউনিটগুলো। স্থানীয় উপজাতীয় জনতা “নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর” এবং “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ” স্লোগান দিয়ে প্রকম্পিত করছে পাহাড়ী জনপদ।
একসময় সব শেষ হয়ে আসে! পরাজতি হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনাঅফিসার মেজর মুকেশ সিং-এর কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়ে জেনারেল জহিরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
মুক্ত বাতাসে পতপত করে উড্ডীন হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম জুম্মুল্যান্ডের পতাকা।
বিষাদের ছায়া নেমে আসে দেশজুড়ে, বাংলাদেশের ঘড়ে ঘড়ে রোল ওঠে কান্নার! বাংলাদেশের একদশমাংশ ভূমি হাতছাড়া হয়ে যায় ভারতীয় শকুনের নখের আচড়ে।
দশ।
স্বাধীন জুম্মুল্যান্ড! একটুকরো মানচিত্র অরুপের হাতে, আজ তার বিয়ে, সুপ্রিয়াকে উপহার দিবে শ্রেষ্ঠ উপহার, স্বাধীন জুম্মুল্যান্ডের মানচিত্র।
শন্তু লারমার অনুরোধে জুম্মুল্যান্ড হতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কিন্তু যাওয়ার আগে সুকৌশলে নির্মূল করা হয় জুম্মুল্যান্ডের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবিদের।
মাথাতুলে দাড়াতে দেয়া হবেনা জুম্মুল্যান্ডকে, আজীবন ভারতের গোলামী করতে হবে এটাই তাদের ইচ্ছে।
অস্থায়ী জুম্মুল্যান্ড সরকারের প্রেসিডেন্টের সাথে ভারতের একটি চুক্তি হয়েছিলো, চুক্তির ধারাগুলো ছিলো নিম্নরুপ
১। জুম্মুল্যান্ডের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী থাকবেনা ২। দেশের সীমান্ত যৌথভাবে পাহাড়া দিবে ভারত এবং জুম্মুল্যান্ডের সীমান্তরক্ষীরা ৩। জুম্মুল্যান্ডের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করা হবে ভারতের সাথে পরামর্শক্রমে ৪। যে সকল সরকারী অফিসার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনাই, তাদের বরখাস্ত করে ভারতীয় অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে। ৫। ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের মাধ্যমে জুম্মুল্যান্ডে সরকারী অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে।
শন্তু লারমার অনুরোধে ভারত এই চুক্তিটিকে সাময়ীকভাবে স্থগিত করে।
যেসকল বাংলাদেশী সেনাঅফিসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে তাদের ক্ষমা করে দেয়া হলো, পাঠিয়ে দেয়া হলো বাংলাদেশে। শন্তু লারমা দীপ্ত কন্ঠে উচ্চারণ করলেন, “পাহাড়িরা দেখিয়ে দিলো তারা ক্ষমা করতে জানে”। সাধারণ ক্ষমা ঘোশণা করা হলো অন্যান্য স্বাধীনতা বিরোধীদের জন্য।
এগারো।
জুম্মুল্যান্ডের স্বাধীনতার চল্লিশবছর পূর্তি হয়েছে, কাপ্তাই হ্রদ হতে গড়িয়েছে কোটি কিউসেক জল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী উঠলো। গঠন করা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, কিন্তু বাংলাদেশ হতে যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যগ গ্রহণ করা হলোনা।
শান্তী কমিটির লোকদের ধরে আনা হলো, বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে উপজাতীয় সাধারণ জনতাকে রক্ষার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হলো।
বারো।
পত্রিকায় খবর বেড়িয়েছে, অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে খাগড়াছড়ির জনগণ। জুম্মুল্যান্ড সরকারের ক্রমাগত জুলুম এবং শোষণের প্রতিবাদে স্বাধীনতা ঘোশণা করেছেন খাগড়াছড়ি লিবারেশন ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট জনাব চিম্বুক ত্রিপুরা............
১৯ নভেম্বর ২০১৩
No comments:
Post a Comment