আমরা যারা পিকেটিং করি

মাঝেমধ্যেই মিডিয়ায় নিউজ হয়, 'গাড়িতে আগুন ড্রাইভার নিহত'। সেই গাড়িটি যদি প্রাইভেটকার হয় তবে আমার আপত্তি নেই, ওইগাড়িটাকেতো পোড়াতে হবেই সাথে গাড়ির মালিক যদি গাড়িতে থাকে তবে তার কাপড় খুলে রেখে দিতে হবে। দেশের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে আর আপনি হরতালের দিন ফুটানি করতেছেন।
কিন্তু মনকাঁদে তখুনি যখন শুনি, সেটি সিএনজি চালিত টেক্সি ছিলো, এবং এর চালক অগ্নিদগ্ধ। এই মানুষটি আজ হরতাল অবরোধের দিন নিজের পেটের দায়ে, পরিবারের শিশুদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেয়ার তাগিদে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছে। আপনি-আমিতো সেই ড্রাইভারকে গাড়ির ভেতরে রেখে আগুন লাগাতে পারিনা।

জানি বাংলাদেশের মানুষের গন্ডারের চামড়া, সিরাজউদ্দৌলারা ইংরেজের গোলামীর বিরুদ্ধে জীবন দেয়, আর এদেশের সাধারণ মানুষ তামাসা দেখে।
রাজপথে আতঙ্ক সৃষ্টি না করলে মানুষ হরতাল মানবেনা, দুই চারটা গাড়ি পোড়াতেই হবে, দশ টাকা দামের পটকা ফুটাতেই হবে, এছাড়া উপায় নেই।
আমি এটাও জানি, জালিম সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনীর বুলেটের সম্মুখে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে, জীবনের ঝুকি নিয়ে পিকেটাররা রাজপথে অবস্থান নেয়।
আপনি হয়তো বলবেন, পুলিশের বুলেটের সামনে এতো কিছু দেখার টাইম থাকেনা। তারপরেও ভাই, নিজের বিবেকের কাছে আমাদের জবাবদিহী করতে হয়। ওরাতো অমানুষ! দিনে দুপুরে ঠান্ডা মাথায় আমাদের ভাইদের হৃদপিন্ড লক্ষ করে গুলি করতে ওদের বিবেকে বাধেনা। কিন্তু আমরাতো আওয়ামীলীগ নই, আমরা মুসলিম। ওই সিএনজি ড্রাইভার কিংবা ট্রাক ড্রাইভারের পরিবারের কান্না দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা। আমরা তখন বিবেকের কাছে অসহায়ত্ববোধ করি।

আজকে খবরে দেখলাম ঠাকুরগাঁতে গণপিটুনিতে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিহত, আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুক। এই লোকটাকে হত্যা করতে যতটুকু সময় ব্যায় হয়েছে ততটুকু সময় ব্যালটবাক্স এবং ব্যালটপেপারগুলো পুড়িয়ে ফেলা যেতোনা! তবে কেনো এই প্রাণহানী?
আমাদের উদ্দেশ্য কি, নির্বাচন বাঞ্চাল করা নাকি আওয়ামীলীগের উপর নিজের প্রতিশোধ বাস্তবায়ন করা। এই নিহত ব্যাক্তিটির কি দোষ ছিলো?
ভেবে দেখেছেন, আপনি আমি যেমন এই সরকারের জুলুম নির্যাতনের স্বীকার। এই ব্যাক্তিটিও সেই একই রকম জুলুমের স্বীকার হয়েই নিজের চাকরী বাচানোর স্বার্থে সেখানে গিয়েছিলো।
এই নিহত ব্যাক্তির পরিবারের কথাটা একবার চিন্তা করেন, তার ঘরেওতো ছোট ছোট শিশুরা রয়েছে, তাদের মানসিক অবস্থা একবার চিন্তা করেন। দুনিয়ার সকল সম্পদ ঢেলে দিলেও এই শিশুরা আর কোনদিন তাদের বাবার আদর ফিরে পাবেনা।

আমরাতো চাইনা ছোট ছোট শিশুদেরকে পিতৃস্নেহ হতে বঞ্চিত করতে। আমরাতো চাইনা একটি পরিবারের মুখের খাবার কেড়ে নিতে। পিকেটিংয়ের সময় আমাদের একটু সতর্কতাই পারে একটা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তির জীবন রক্ষা করতে।

৫জানুয়ারী২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment