কোন এক বিখ্যাত মনিষী বলেছিলেন, “এসেছিস যখন দাগ রেখে যা” কিশোর কবি নজরুল কিভাবে যেনো কথাটি শুনে ফেলেন, নজরুলও সিরিয়াস, হ্যা! আমাকে দাগ রাখতেই হবে। এই দুনিয়াতে যখন এসেছি কিছু একটা না করে ছাড়ছিনা।
কিন্তু কিভাবে দাগ রাখবে ভেবে পাচ্ছিলোনা নজরুল, তখন সবে মাত্র গ্রামের মক্তবে পাঠদান করতো কিশোর কাজী নজরুল ইসলাম। একদিকে পেটের দায়, অন্যদিকে দাগ রাখার চিন্তা। নজরুলের মাথায় তখন কেবল কবিতা আর কবিতা, কবিতার ছন্দগুলো মাথার ভেতরে বড্ড বেশি যন্ত্রনা করে, যতক্ষণ পর্যন্ত ছন্দগুলো কবিতার খাতায় উগড়ে না দিচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত এই যন্ত্রণা হতে রেহাই নেই।
নজরুল ভেবে পায়না, এভাবে গদ্য-পদ্য নিয়ে পরে থাকলে জীবনে দাগ রাখবে কি করে, তারচাইতে গদ্যে পদ্যে তালাক!
প্রথমেই নজরুল চিন্তা করে, অনেক টাকার মালিক হতে হবে, ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে, পেটে ক্ষুধা নিয়ে অন্তত দুনিয়াতে দাগ রাখা যাবেনা। মক্তবের স্বল্প বেতনের চাকরী ছেড়ে দিয়ে নজরুল যোগ দেয় রুটির দোকানে। কঠোর পরিশ্রম করে নজরুল, চোখে তার স্বপ্ন, একদিন সেও এমন একটি রুটির দোকানের মালিক হবে, অনেক অনেক টাকা হবে, তারপরেইনা দুনিয়াতে দাগ রাখা যাবে।
অল্প দিনের চাকরীতে বেশ কিছু টাকাও জমিয়ে ফেলে নজরুল, এরই মধ্যে পরিচয় হয় এক সরকারী অফিসারের সাথে, এতো সুন্দর একটা ছেলে রুটির দোকানে চাকরী করবে তা তিনি মেনে নিতে পারলেননা। নজরুলকে ভর্তি করে দিলেন বিদ্যালয়ে।
নজরুলের চোখে নতুন স্বপ্ন, অনেক অনেক পড়ালেখা করবে, জর্জ-ব্যারিস্টার হবে। জর্জ-ব্যারিস্টার হয়ে দুনিয়াজুড়ে দাগ রেখে যাবে, গভীর রাতে নজরুল আনমনেই চিৎকার করে ওঠে “তোমরা সবাই শোনো, এই দুনিয়াতে একজন ব্যাক্তি এসেছিলো, তার নাম কাজী নজরুল ইসলাম, সে অনেক বড় ব্যারিস্টার হয়েছিলো”।
নজরুলের মাথায় এখনো কবিতার লাইনগুলো যন্ত্রনা করে, অনেক বেশি যন্ত্রনা। নজরুল আর কবিতাকে প্রশ্রয় দেয়না।তাকে বড় হতে হবে, অনেক বড়, এইসব কবিতা লিখে টাইম নষ্ট করার মতো টাইম নজরুলের হাতে নেই।
কঠোর পরিশ্রম করে নজরুল, এসএসসি’তে গোল্ডেন এ প্লাস, এইচএসসি’তেও গোল্ডেন এ প্লাস, স্কলারশিপ নিয়ে বিবিএ-এমবিএও শেষ করে ফেলে নজরুল। জর্জ-ব্যারিস্টার হওয়ার চাইতে এমবিএ করাটাকেই নজরুল প্রাধাণ্য দিয়েছে, কারণ এখন বিজনেসের জয়-জয়কার, হাতে একটা এমবিএ থাকলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা সহজ় হবে। দুনিয়াতে দাগ রাখার প্রচেস্টাও সফল হবে।
নজরুল এখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর বড় কর্তা, ব্যাস্ত অফিসের বিশাল ডেস্কের ওপাশে রিভলভিং চেয়ারে দোল খায়, আর মনে মনে স্বপ্ন দেখে, একদিন দারুণ কিছু করে ফেলতে হবে, মরার আগে এই দুনিয়াতে দাগ রেখে যেতে হবে।
নজরুল একসময় বিয়ে করে। হ্যা, নিজের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করে, মেয়ের বাবা-মা অমত করেননি, এতো বিশাল চাকরী! মেয়ের বাবা দুই পায়ে খাড়া।
বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে ব্যাক্তিগত গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে নজরুল এখনো চিন্তা করে, একদিন দারুণ কিছু করে ফেলবে, এই দুনিয়াতে এসেছি যখন দাগ রেখে যেতে হবে।
শোনা যায় মৃত্যুর পূর্বে নজরুল সাহেব একটা চিরকুট রেখে গিয়েছিলেন, সেখানে লেখা ছিলো, “হায় আফসোস! খাইলাম-দাইলাম মরে গেলাম, দুনিয়াতে দাগ রেখে যেতে পারলামনা। অথচ আমিতো চাইলে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হতে পারতাম! দুনিয়ার মানুষ আমাকে কবি নজরুল ইসলাম নামেই চিনতো!”
চেয়েছিলাম অমর হতে, রেখে যেতে দাগ,
খেয়ে-দেয়ে বিদায় নিলাম, ব্যার্থ হলো ত্যাগ।
এইযে বাড়ি, এইযে গাড়ি, কোটি টাকার চেক,
আমার নামে রইলো নাতো, সবি মিছে ভেক!
যোগ্য ছিলাম আমি যেটার, সেটা দিয়ে বাদ,
মায়ার পিছে ছুটে গেলাম, মিছে মায়ার স্বাদ!
গল্পঃ নজরুল সাহেবের উপলব্ধি
© শামীম রেজা
১০/০২/২০১৪
কিন্তু কিভাবে দাগ রাখবে ভেবে পাচ্ছিলোনা নজরুল, তখন সবে মাত্র গ্রামের মক্তবে পাঠদান করতো কিশোর কাজী নজরুল ইসলাম। একদিকে পেটের দায়, অন্যদিকে দাগ রাখার চিন্তা। নজরুলের মাথায় তখন কেবল কবিতা আর কবিতা, কবিতার ছন্দগুলো মাথার ভেতরে বড্ড বেশি যন্ত্রনা করে, যতক্ষণ পর্যন্ত ছন্দগুলো কবিতার খাতায় উগড়ে না দিচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত এই যন্ত্রণা হতে রেহাই নেই।
নজরুল ভেবে পায়না, এভাবে গদ্য-পদ্য নিয়ে পরে থাকলে জীবনে দাগ রাখবে কি করে, তারচাইতে গদ্যে পদ্যে তালাক!
প্রথমেই নজরুল চিন্তা করে, অনেক টাকার মালিক হতে হবে, ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে, পেটে ক্ষুধা নিয়ে অন্তত দুনিয়াতে দাগ রাখা যাবেনা। মক্তবের স্বল্প বেতনের চাকরী ছেড়ে দিয়ে নজরুল যোগ দেয় রুটির দোকানে। কঠোর পরিশ্রম করে নজরুল, চোখে তার স্বপ্ন, একদিন সেও এমন একটি রুটির দোকানের মালিক হবে, অনেক অনেক টাকা হবে, তারপরেইনা দুনিয়াতে দাগ রাখা যাবে।
অল্প দিনের চাকরীতে বেশ কিছু টাকাও জমিয়ে ফেলে নজরুল, এরই মধ্যে পরিচয় হয় এক সরকারী অফিসারের সাথে, এতো সুন্দর একটা ছেলে রুটির দোকানে চাকরী করবে তা তিনি মেনে নিতে পারলেননা। নজরুলকে ভর্তি করে দিলেন বিদ্যালয়ে।
নজরুলের চোখে নতুন স্বপ্ন, অনেক অনেক পড়ালেখা করবে, জর্জ-ব্যারিস্টার হবে। জর্জ-ব্যারিস্টার হয়ে দুনিয়াজুড়ে দাগ রেখে যাবে, গভীর রাতে নজরুল আনমনেই চিৎকার করে ওঠে “তোমরা সবাই শোনো, এই দুনিয়াতে একজন ব্যাক্তি এসেছিলো, তার নাম কাজী নজরুল ইসলাম, সে অনেক বড় ব্যারিস্টার হয়েছিলো”।
নজরুলের মাথায় এখনো কবিতার লাইনগুলো যন্ত্রনা করে, অনেক বেশি যন্ত্রনা। নজরুল আর কবিতাকে প্রশ্রয় দেয়না।তাকে বড় হতে হবে, অনেক বড়, এইসব কবিতা লিখে টাইম নষ্ট করার মতো টাইম নজরুলের হাতে নেই।
কঠোর পরিশ্রম করে নজরুল, এসএসসি’তে গোল্ডেন এ প্লাস, এইচএসসি’তেও গোল্ডেন এ প্লাস, স্কলারশিপ নিয়ে বিবিএ-এমবিএও শেষ করে ফেলে নজরুল। জর্জ-ব্যারিস্টার হওয়ার চাইতে এমবিএ করাটাকেই নজরুল প্রাধাণ্য দিয়েছে, কারণ এখন বিজনেসের জয়-জয়কার, হাতে একটা এমবিএ থাকলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা সহজ় হবে। দুনিয়াতে দাগ রাখার প্রচেস্টাও সফল হবে।
নজরুল এখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর বড় কর্তা, ব্যাস্ত অফিসের বিশাল ডেস্কের ওপাশে রিভলভিং চেয়ারে দোল খায়, আর মনে মনে স্বপ্ন দেখে, একদিন দারুণ কিছু করে ফেলতে হবে, মরার আগে এই দুনিয়াতে দাগ রেখে যেতে হবে।
নজরুল একসময় বিয়ে করে। হ্যা, নিজের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করে, মেয়ের বাবা-মা অমত করেননি, এতো বিশাল চাকরী! মেয়ের বাবা দুই পায়ে খাড়া।
বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে ব্যাক্তিগত গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে নজরুল এখনো চিন্তা করে, একদিন দারুণ কিছু করে ফেলবে, এই দুনিয়াতে এসেছি যখন দাগ রেখে যেতে হবে।
শোনা যায় মৃত্যুর পূর্বে নজরুল সাহেব একটা চিরকুট রেখে গিয়েছিলেন, সেখানে লেখা ছিলো, “হায় আফসোস! খাইলাম-দাইলাম মরে গেলাম, দুনিয়াতে দাগ রেখে যেতে পারলামনা। অথচ আমিতো চাইলে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হতে পারতাম! দুনিয়ার মানুষ আমাকে কবি নজরুল ইসলাম নামেই চিনতো!”
চেয়েছিলাম অমর হতে, রেখে যেতে দাগ,
খেয়ে-দেয়ে বিদায় নিলাম, ব্যার্থ হলো ত্যাগ।
এইযে বাড়ি, এইযে গাড়ি, কোটি টাকার চেক,
আমার নামে রইলো নাতো, সবি মিছে ভেক!
যোগ্য ছিলাম আমি যেটার, সেটা দিয়ে বাদ,
মায়ার পিছে ছুটে গেলাম, মিছে মায়ার স্বাদ!
গল্পঃ নজরুল সাহেবের উপলব্ধি
© শামীম রেজা
১০/০২/২০১৪
No comments:
Post a Comment