জামায়াতের নতুন নাম এবং অশ্বডিম্ব!


অনেক ভাই দেখছি বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিয়ে হাজির হচ্ছেন! জামায়াতে ইসলামী নতুন নামে আবির্ভুত হচ্ছে, দলের নেতৃত্বে আসছে অপেক্ষাকৃত তরূনরা, ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনাদের অবগতির জন্য দুটি ঘটনার উল্লেখ করছি।

এক
২০০১সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে, যখন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ সাহেব মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছিলেন, তখন এক সাথী ভাইয়ের বাসায় ছুটে গিয়েছিলাম। কারণ হচ্ছে, আজকে প্রথমবারের মতো জামায়াত নেতাদের টিভির পর্দায় দেখানো হবে! জামায়াতের নেতাদের চেহারা যখন টিভির পর্দায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাচ্ছিলো গর্বে তখন বুকটা ফুলে উঠেছিলো, আমার নেতাদের টিভিতে দেখাচ্ছে! বাংলাদেশের কোটি জনতা আমার নেতাদের দেখছে! বিশাল ব্যাপার স্যাপার!
জামায়াত বলতে তখন জনগণ শুধুমাত্র অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেবকেই চিনতো। অন্য নেতাদের মধ্যে একমাত্র সাঈদী সাহেব ছিলেন পরিচিত মুখ, তাও যতটুকু জামায়াত হিসেবে তার চাইতে বেশি একজন ওয়ায়েজ হিসেবেই তিনি পরিচিত ছিলেন।

দুই
২০০৪সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত কমিশনার প্রার্থির জন্য ভোট চাইতে গিয়েছিলাম এক বস্তিতে।
বস্তির মুরব্বি প্রশ্ন করছিলেন, ভাই প্রার্থী কোন দলের?
আমি জবাব দিলাম, ‘জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী’
তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, জামায়াতে ইসলামী কোন দল ভাই?
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, শিবিরের নাম শুনছেন?
তিনি আমাকে হতাশ করলেন, ‘না ভাই শুনিনাই!’
বিরক্ত হয়ে জবাব দিলাম, ‘এটা হুজুরদের দল, পারলে একটা ভোট দিয়েন!’

সময় পেরিয়ে গেছে, পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে মিডিয়ার কল্যানে মায়ের কোলের শিশু আব্বা ডাক বলার আগেই জামায়াত-শিবিরের নাম মুখস্ত করে ফেলছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সকল নেতা সহ, ঢাকা মহানগরীর প্রায় সকল নেতা এখন জাতীয় নেতায় পরিণত হয়েছে।
নাম সর্বস্ব একটি রাজনৈতিক দল তার আপোষহীন ভূমিকার কারনে এখন প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। নতুন প্রজন্মের ছাত্রসমাজের নিকট ইসলামী ছাত্রশিবির এখন একটি ব্রান্ডের নাম। অনলাইনে শিবির কর্মীরা বুক উচিয়ে ঘোষণা দিচ্ছে আমি শিবির করি!

জামায়াতে ইসলামী এখন শুধুমাত্র জাতীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি রাজনৈতিক শক্তির নাম, একটি ব্রান্ডের নাম! নিজ হাতে এই ব্রান্ড ধ্বংস করা নিশ্চিত ভাবে নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিশ্চিত ভাবেই আমাদের চাইতে অনেক বেশি জ্ঞান ধারণ করেন, সর্বোপরি সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ হয়। জামায়াত কিছুতেই এই ব্রান্ড ধ্বংশ করবেনা, যার লক্ষণ ইতোমধ্যেই প্রকাশ পাচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে নিজের নামে রাজনীতি করবে কিনা, তার ফয়সালা হবে রাজপথে, আদালত প্রাঙ্গনে নয়। তাই ঘরে বসে জামায়াতের জন্য নতুন নামের সন্ধান না করে, ঈদ পরবর্তী কেন্দ্র নির্দেশিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে জানপ্রাণ দিয়ে ঝাপিয় পড়ুন।
বিজয় আমাদের, যদি আমরা মুমিন হই! ইনশাআল্লাহ্‌

৩আগস্ট২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment