২০৩০সালের ১৫ই আগস্ট
পল্টন যাচ্ছিলাম, এলাকার প্রবেশ মুখেই দেখলাম একদল ছেলে, দানবের ছবিতে থুথু নিক্ষেপ কর্মসূচী পালন করছে, পাশাপাশি চলছে মিস্টি বিতরণ।
ব্যাপার কি, ব্যাপারি কি?
একজন মনে করিয়ে দিলো আজ ‘জাতীয় মুক্তি দিবস’
ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম!
পল্টন ময়দানে আজতো গল্প-দাদুর আসর বসবে, গল্প দাদু গল্প শুনাবেন, ঢাকার সবগুলো স্কুলের শিশুরা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে গল্প শুনবে। গল্পের ছলে তাদের শেখানো হবে দেশের ইতিহাস, জাতীয় উত্থান পতনের ইতিহাস।
প্রচন্ড ভীড় পল্টন ময়দানেরর আশে পাশে, তিল ধারণ করার জায়গা নেই। রঙ বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, গ্যাস বেলুন নিয়ে মিছিলে মিছিলে বিভিন্ন স্কুল এবং কালচারাল সংগঠনের শিশুরা পল্টন ময়দানে হাজির হচ্ছে। উৎসব মুখর একটি পরিবেশ।
শিশুর অভিভাবকদের জন্য একপাশে সামিয়ানা টানিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, আমিও বসে পড়লাম। প্রতিবছরই বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে ‘গল্প দাদুর’ আসর হয়। দেশের প্রথিত যশা সাহিত্যিকরা হন সেই আসরের মধ্যমনি, তারা শিশুদের গল্প শোনান, গল্পের ছলে ইতিহাস শেখান।
লাউডস্পীকার অন করতেই চারিদিকের শোরগোল থেমে গেলো, সবাই উদগ্রীব হয়ে বসে আছে, গল্প দাদু আসন গ্রহণ করলেন, পিনপতন নিরবতা পালন করছে স্কুল পড়ুয়া শিশুরা।
একদেশে এক দানবের জন্ম হয়েছিলো, গল্প দাদু তার গল্প শুরু করলেন। দানবের জন্ম হয়েছিলো বলতে বলা যায় দেশের জনগণই নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দুধ কলা খাইয়ে লালন পালন করে গড়ে তুলেছিলো, সেই বিশাল দানব!
দানবটাকে সবাই আদর করে ভালোবেসে পিতা বলে সম্বোধন করতো, করবেইনা বা কেনো! জনগণের বিশ্বাস ছিলো, দেশের উপর সকল বিপদ আপদ হতে এই দানব তাদের সুরক্ষা দিবে।
জনগণের বিরাট একটা অংশ এই দানবের পূজা করা আরম্ভ করলো, তারা ভুলে গেলো আল্লাহকে, ভুলে গেলো ইসলামকে, নিজেদের ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাকেই তারা নিজেদের জন্য গ্রহণ করে নিলো।
গল্প দাদু থেমে গেলেন, বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের রেসপন্স বুঝার চেস্টা করছেন।
কৌতুহলী বাচ্চারা চোখ বড় বড় করে সমস্বরে জিজ্ঞাসা করলো, তারপর......?
গল্প দাদু আবার শুরু করলেন, দেশের ইসলামপন্থীরা এই দানবের জন্মের বিরোধীতা করা শুরু করলো, তারা জনগণকে বুঝাতে চেস্টা করলো, এই দানব একদিন তোমাদের ধ্বংস ডেকে আনবে, প্রতিবেশী দেশের সহায়তায় তোমাদের হত্যা করবে, তোমাদের অধিকার কেড়ে নিবে, তোমাদের পড়ানো হবে গোলামীর শৃঙ্খল। এখনো সময় আছে, সঙ্কট সমস্যার সমাধানে ইসলামকে বেছে নাও, ইসলামই দিতে পারে মানবতার প্রকৃত মুক্তি।
কিন্তু ইসলামপন্থিদের কন্ঠ জোড়ালো ছিলোনা, জনগনের মনমানসিকতা তাদের বক্তব্য গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা। তাছাড়া সেই দানবের কন্ঠে ছিলো জাদু, ছিলো মোহনীয় ক্ষমতা, সেই দানব জনগণের ভাষায় কথা বলতে জানতো, জানতো জনগনের আবেগকে জাগ্রত করার কৌশল। ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো, দানবের বিজয় হলো, ইসলামপন্থীরা হলো লাঞ্ছিত-অপমানিত।
গল্প দাদু থেমে গেলেন, তিনি চোখ মুছছেন। দেশের শিশুরাও ইসলামের ব্যাপারে বেশ সংবেদনশীল, ইসমাপন্থীদের পরাজয়ের কথা শুনে তাদের চোখেও পানি টলমল করছে ।
বিজয়ের দ্বরাপ্রান্তে উপনীত হয়েই দানবের অনুসারী ও প্রতিবেশী রাস্ট্রের সৈন্যরা কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। ক্ষমতা নিস্কন্টক করার লক্ষে দেশের সকল বুদ্ধিজীবি, যারা দানবের পক্ষ হয়ে লড়াইতে অংশগ্রহণ করে নাই, রাতের অন্ধকারে তাদের ধরে ধরে হত্যা করা হলো।
দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করলো দানব, জনগণ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে দানবকে বরণ করে নিলো। তাদের চোখে স্বপ্ন, দেশে ক্ষুধা থাকবেনা, দারিদ্র থাকবেনা, ছিনতাই, হত্যা’র মতো অপরাধ হতে জাতি রক্ষা পাবে।
ক্ষমতার মসনদে বসেই দানব তার স্বরুপে আভির্ভুত হলো। প্রতিবেশি রাস্ট্রের সহায়তায় দেশের সম্পদ খাওয়া শুরু করলো। দেশে সংঘঠিত হলো স্মরণকালের ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষ, ১০লক্ষেরও অধিক মানুষ প্রাণ হারালো এই দূর্ভিক্ষে। দানবের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে প্রাণ হারালো দেশের জনগণ।
দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিলো দানবের ক্ষুধা! চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে সংসদের স্পীকারকে হত্যা করেছিলো এই দানব, দেশের সেনাবাহিনীকেও খাওয়া শুরু করলো, নিজেকে রক্ষার জন্য গঠন করলো রক্ষি বাহিনী। রক্ষিবাহিনী ঝাপিয়ে পড়লো নিরস্ত্র প্রতিবাদী জনতার উপর। হাজার হাজার জনতা প্রাণ হারালো এই রক্ষিবাহিনীর হাতে। শুধুমাত্র বিরোধী দলেরই ৬০হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হলো।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গল্পদাদু ক্লান্ত হয়ে গেলেন, টেবিলে রাখা গ্লাস হতে ঢক ঢক করে একগ্লাস পানি পান করলেন। উৎসুক শিশুরা নির্বাক হয়ে গল্প শুনছে, দেশের গল্প, ইতিহাসের গল্প, এক মহা দানবের গল্প।
গল্পদাদু আবার শুরু করলেন, যে দেশের জনগণ দানবটাকে আদর করে ভালোবেসে পিতা বলে সম্বোধন করতো, সেই দেশের জনগণই এখন আড়ালে আবডালে তাকে ফেরাউন বলে আখ্যায়িত করা শুরু করলো। করবেইনা কেনো, ক্ষমতায় আরোহন করেই চট্টগ্রাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম হতে কোরানের আয়াত মুছে ফেললো, কবি নজরুল ইসলাম কলেজের নাম হতে ইসলাম শব্দটা বাদ দিয়ে শুধু কবি নজরুল কলেজ নামকরণ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল হতে মুসলিম শব্দটা বাদ দিয়ে শুধু সলিমুল্লাহ হল নামকরণ করা হয়। আল্লামা ইকবাল হলকে করা হয় সূর্যসেন হল। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সড়কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইন্দিরাগান্ধী সড়ক। রেডিওতে কোরান তেলাওয়াত বন্ধ করে দেয়া হলো, রবীন্দ্রসঙ্গীত’কে সকাল সন্ধ্যা ইবাদতের মতো করে প্রচার করা হলো।
শিশুরা একসাথে ধিক্কার জানালো ছিঃ ছিঃ, ছিঃ ছিঃ। সামনে রাখা ময়লার ফেলার ঝুড়িতে থু থু নিক্ষেপ করলো, থুঃ থুঃ, থুঃ থুঃ।
দানবটি’র সন্তান ছিলো আরো বেপরোয়া, পিতার ক্ষমতাবলে ব্যাংক লুট করলো, সেনা অফিসারের স্ত্রীকে অপহরণ করলো, পিতা ছিলো নির্বিকার। অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা, ইন্ধনদাতা।
দিন দিন দানবের ক্ষুধা বেড়ে যাচ্ছিলো, একদিন দেশের মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিলো। নিজের কথা প্রচার করার জন্য তিনটি পত্রিকা রেখে, দেশের সকল পত্রিকা খেয়ে ফললো ক্ষুধার্থ দানব। দেশের সকল রাজনৈতিক দল খেয়ে ফেললো। স্লোগান চালু হলো ‘একনেতার একদেশ, দানব নেতার সোনার দেশ’।
শিশুরা আবার ধিক্কার জানালো ছিঃ ছিঃ, ছিঃ ছিঃ। দানব গণতন্ত্র হত্যাকারী!
জুলুম-নির্যাতনে অতিষ্ঠ জনগণ বুঝতে শুরু করলো কি ভুল তারা করেছে, ততদিনে দানব তাদের বেধে ফেলেছে। জনগণ মুক্তি চায়, বুক ভরে নিতে চায় স্বাধীনতার মুক্ত বাতাস। স্বাধীনতা কি এতই সহজ! জনগণ ফিরে যায় তাদের রবের কাছে, আল্লাহর কাছে দোয়া করে, হে মাবুদ! হে পরওয়ার দিগার আমাদের মুক্তি দাও, এই লাঞ্ছনার জীবন হতে আমাদের উদ্ধার করো, তোমার পক্ষ হতে আমাদের কাছে সাহাজ্যকারী পাঠাও!
শিশুরা সমস্বরে চেচিয়ে ওঠে, তারপর? আল্লাহ কি তাদের দোয়া কবুল করেছিলেন?
পকেটের রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছছেন গল্প দাদু। হ্যা, মহান রব্বুল আলামীন জনগনের এই আকুতি ভরা প্রার্থনা ফিরিয়ে দেননি, তিনি তাদের দোয়া কবুল করেছিলেন।
একদিন সেনাবাহিনীর একদল বীর মুজাহীদ শপথ গ্রহণ করলেন, এই জালিমের শোষণ নির্যাতনের হাত হতে নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানবতার মুক্তির জন্য তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিবেন।
তারা তাদের শপথ বাস্তবায়ন করেছিলেন, সংঘঠিত করেছিলেন গণবিপ্লবের। অত্যাচারী জালিম শাসকের হাত হতে ছিনিয়ে এনেছিলেন মানবতার মুক্তি, আনন্দে উদ্বেলীত জনতা বিলিয়েছিলো মিস্টি, আনন্দের মিস্টি, মুক্তির মিস্টি।
আজকের এই দিনে আমরা ১৫ই আগস্টের সেইসব বীর মুজাহীদদের সম্মান জানাই, শিশুরা দলবেধে দাড়িয়ে গেলো, তাদের হাতে হাতে পত পত করে উড়ছে অসংখ্যা কালেমা খচিত পতাকা, আজ এই পতাকা উড়ানো হচ্ছে সেই সব বীর মুজাহীদদের স্মরণে যাদের অপরিসীম সাহস এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতি পেয়েছিলো একটি স্বাধীন স্বৈরাচার মুক্ত স্বদেশ, বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার জন্য মুক্ত বাতাস।
একটু ব্যস্ততা ছিলো, আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গল্প দাদুর আসর হতে বিদায় নিলাম। গল্প দাদু তার পরবর্তী গল্প শুনাচ্ছেন, সে গল্পে আছে কিভাবে আমাদের এই দেশ ইসলামীক রিপাব্লিক অব বাংলাদেশে রুপান্তরিত হয়েছে।
১৪আগস্ট২০১৩
পল্টন যাচ্ছিলাম, এলাকার প্রবেশ মুখেই দেখলাম একদল ছেলে, দানবের ছবিতে থুথু নিক্ষেপ কর্মসূচী পালন করছে, পাশাপাশি চলছে মিস্টি বিতরণ।
ব্যাপার কি, ব্যাপারি কি?
একজন মনে করিয়ে দিলো আজ ‘জাতীয় মুক্তি দিবস’
ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম!
পল্টন ময়দানে আজতো গল্প-দাদুর আসর বসবে, গল্প দাদু গল্প শুনাবেন, ঢাকার সবগুলো স্কুলের শিশুরা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে গল্প শুনবে। গল্পের ছলে তাদের শেখানো হবে দেশের ইতিহাস, জাতীয় উত্থান পতনের ইতিহাস।
প্রচন্ড ভীড় পল্টন ময়দানেরর আশে পাশে, তিল ধারণ করার জায়গা নেই। রঙ বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, গ্যাস বেলুন নিয়ে মিছিলে মিছিলে বিভিন্ন স্কুল এবং কালচারাল সংগঠনের শিশুরা পল্টন ময়দানে হাজির হচ্ছে। উৎসব মুখর একটি পরিবেশ।
শিশুর অভিভাবকদের জন্য একপাশে সামিয়ানা টানিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, আমিও বসে পড়লাম। প্রতিবছরই বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে ‘গল্প দাদুর’ আসর হয়। দেশের প্রথিত যশা সাহিত্যিকরা হন সেই আসরের মধ্যমনি, তারা শিশুদের গল্প শোনান, গল্পের ছলে ইতিহাস শেখান।
লাউডস্পীকার অন করতেই চারিদিকের শোরগোল থেমে গেলো, সবাই উদগ্রীব হয়ে বসে আছে, গল্প দাদু আসন গ্রহণ করলেন, পিনপতন নিরবতা পালন করছে স্কুল পড়ুয়া শিশুরা।
একদেশে এক দানবের জন্ম হয়েছিলো, গল্প দাদু তার গল্প শুরু করলেন। দানবের জন্ম হয়েছিলো বলতে বলা যায় দেশের জনগণই নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দুধ কলা খাইয়ে লালন পালন করে গড়ে তুলেছিলো, সেই বিশাল দানব!
দানবটাকে সবাই আদর করে ভালোবেসে পিতা বলে সম্বোধন করতো, করবেইনা বা কেনো! জনগণের বিশ্বাস ছিলো, দেশের উপর সকল বিপদ আপদ হতে এই দানব তাদের সুরক্ষা দিবে।
জনগণের বিরাট একটা অংশ এই দানবের পূজা করা আরম্ভ করলো, তারা ভুলে গেলো আল্লাহকে, ভুলে গেলো ইসলামকে, নিজেদের ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাকেই তারা নিজেদের জন্য গ্রহণ করে নিলো।
গল্প দাদু থেমে গেলেন, বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের রেসপন্স বুঝার চেস্টা করছেন।
কৌতুহলী বাচ্চারা চোখ বড় বড় করে সমস্বরে জিজ্ঞাসা করলো, তারপর......?
গল্প দাদু আবার শুরু করলেন, দেশের ইসলামপন্থীরা এই দানবের জন্মের বিরোধীতা করা শুরু করলো, তারা জনগণকে বুঝাতে চেস্টা করলো, এই দানব একদিন তোমাদের ধ্বংস ডেকে আনবে, প্রতিবেশী দেশের সহায়তায় তোমাদের হত্যা করবে, তোমাদের অধিকার কেড়ে নিবে, তোমাদের পড়ানো হবে গোলামীর শৃঙ্খল। এখনো সময় আছে, সঙ্কট সমস্যার সমাধানে ইসলামকে বেছে নাও, ইসলামই দিতে পারে মানবতার প্রকৃত মুক্তি।
কিন্তু ইসলামপন্থিদের কন্ঠ জোড়ালো ছিলোনা, জনগনের মনমানসিকতা তাদের বক্তব্য গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা। তাছাড়া সেই দানবের কন্ঠে ছিলো জাদু, ছিলো মোহনীয় ক্ষমতা, সেই দানব জনগণের ভাষায় কথা বলতে জানতো, জানতো জনগনের আবেগকে জাগ্রত করার কৌশল। ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো, দানবের বিজয় হলো, ইসলামপন্থীরা হলো লাঞ্ছিত-অপমানিত।
গল্প দাদু থেমে গেলেন, তিনি চোখ মুছছেন। দেশের শিশুরাও ইসলামের ব্যাপারে বেশ সংবেদনশীল, ইসমাপন্থীদের পরাজয়ের কথা শুনে তাদের চোখেও পানি টলমল করছে ।
বিজয়ের দ্বরাপ্রান্তে উপনীত হয়েই দানবের অনুসারী ও প্রতিবেশী রাস্ট্রের সৈন্যরা কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। ক্ষমতা নিস্কন্টক করার লক্ষে দেশের সকল বুদ্ধিজীবি, যারা দানবের পক্ষ হয়ে লড়াইতে অংশগ্রহণ করে নাই, রাতের অন্ধকারে তাদের ধরে ধরে হত্যা করা হলো।
দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করলো দানব, জনগণ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে দানবকে বরণ করে নিলো। তাদের চোখে স্বপ্ন, দেশে ক্ষুধা থাকবেনা, দারিদ্র থাকবেনা, ছিনতাই, হত্যা’র মতো অপরাধ হতে জাতি রক্ষা পাবে।
ক্ষমতার মসনদে বসেই দানব তার স্বরুপে আভির্ভুত হলো। প্রতিবেশি রাস্ট্রের সহায়তায় দেশের সম্পদ খাওয়া শুরু করলো। দেশে সংঘঠিত হলো স্মরণকালের ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষ, ১০লক্ষেরও অধিক মানুষ প্রাণ হারালো এই দূর্ভিক্ষে। দানবের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে প্রাণ হারালো দেশের জনগণ।
দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিলো দানবের ক্ষুধা! চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে সংসদের স্পীকারকে হত্যা করেছিলো এই দানব, দেশের সেনাবাহিনীকেও খাওয়া শুরু করলো, নিজেকে রক্ষার জন্য গঠন করলো রক্ষি বাহিনী। রক্ষিবাহিনী ঝাপিয়ে পড়লো নিরস্ত্র প্রতিবাদী জনতার উপর। হাজার হাজার জনতা প্রাণ হারালো এই রক্ষিবাহিনীর হাতে। শুধুমাত্র বিরোধী দলেরই ৬০হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হলো।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গল্পদাদু ক্লান্ত হয়ে গেলেন, টেবিলে রাখা গ্লাস হতে ঢক ঢক করে একগ্লাস পানি পান করলেন। উৎসুক শিশুরা নির্বাক হয়ে গল্প শুনছে, দেশের গল্প, ইতিহাসের গল্প, এক মহা দানবের গল্প।
গল্পদাদু আবার শুরু করলেন, যে দেশের জনগণ দানবটাকে আদর করে ভালোবেসে পিতা বলে সম্বোধন করতো, সেই দেশের জনগণই এখন আড়ালে আবডালে তাকে ফেরাউন বলে আখ্যায়িত করা শুরু করলো। করবেইনা কেনো, ক্ষমতায় আরোহন করেই চট্টগ্রাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম হতে কোরানের আয়াত মুছে ফেললো, কবি নজরুল ইসলাম কলেজের নাম হতে ইসলাম শব্দটা বাদ দিয়ে শুধু কবি নজরুল কলেজ নামকরণ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল হতে মুসলিম শব্দটা বাদ দিয়ে শুধু সলিমুল্লাহ হল নামকরণ করা হয়। আল্লামা ইকবাল হলকে করা হয় সূর্যসেন হল। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সড়কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইন্দিরাগান্ধী সড়ক। রেডিওতে কোরান তেলাওয়াত বন্ধ করে দেয়া হলো, রবীন্দ্রসঙ্গীত’কে সকাল সন্ধ্যা ইবাদতের মতো করে প্রচার করা হলো।
শিশুরা একসাথে ধিক্কার জানালো ছিঃ ছিঃ, ছিঃ ছিঃ। সামনে রাখা ময়লার ফেলার ঝুড়িতে থু থু নিক্ষেপ করলো, থুঃ থুঃ, থুঃ থুঃ।
দানবটি’র সন্তান ছিলো আরো বেপরোয়া, পিতার ক্ষমতাবলে ব্যাংক লুট করলো, সেনা অফিসারের স্ত্রীকে অপহরণ করলো, পিতা ছিলো নির্বিকার। অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা, ইন্ধনদাতা।
দিন দিন দানবের ক্ষুধা বেড়ে যাচ্ছিলো, একদিন দেশের মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিলো। নিজের কথা প্রচার করার জন্য তিনটি পত্রিকা রেখে, দেশের সকল পত্রিকা খেয়ে ফললো ক্ষুধার্থ দানব। দেশের সকল রাজনৈতিক দল খেয়ে ফেললো। স্লোগান চালু হলো ‘একনেতার একদেশ, দানব নেতার সোনার দেশ’।
শিশুরা আবার ধিক্কার জানালো ছিঃ ছিঃ, ছিঃ ছিঃ। দানব গণতন্ত্র হত্যাকারী!
জুলুম-নির্যাতনে অতিষ্ঠ জনগণ বুঝতে শুরু করলো কি ভুল তারা করেছে, ততদিনে দানব তাদের বেধে ফেলেছে। জনগণ মুক্তি চায়, বুক ভরে নিতে চায় স্বাধীনতার মুক্ত বাতাস। স্বাধীনতা কি এতই সহজ! জনগণ ফিরে যায় তাদের রবের কাছে, আল্লাহর কাছে দোয়া করে, হে মাবুদ! হে পরওয়ার দিগার আমাদের মুক্তি দাও, এই লাঞ্ছনার জীবন হতে আমাদের উদ্ধার করো, তোমার পক্ষ হতে আমাদের কাছে সাহাজ্যকারী পাঠাও!
শিশুরা সমস্বরে চেচিয়ে ওঠে, তারপর? আল্লাহ কি তাদের দোয়া কবুল করেছিলেন?
পকেটের রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছছেন গল্প দাদু। হ্যা, মহান রব্বুল আলামীন জনগনের এই আকুতি ভরা প্রার্থনা ফিরিয়ে দেননি, তিনি তাদের দোয়া কবুল করেছিলেন।
একদিন সেনাবাহিনীর একদল বীর মুজাহীদ শপথ গ্রহণ করলেন, এই জালিমের শোষণ নির্যাতনের হাত হতে নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানবতার মুক্তির জন্য তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিবেন।
তারা তাদের শপথ বাস্তবায়ন করেছিলেন, সংঘঠিত করেছিলেন গণবিপ্লবের। অত্যাচারী জালিম শাসকের হাত হতে ছিনিয়ে এনেছিলেন মানবতার মুক্তি, আনন্দে উদ্বেলীত জনতা বিলিয়েছিলো মিস্টি, আনন্দের মিস্টি, মুক্তির মিস্টি।
আজকের এই দিনে আমরা ১৫ই আগস্টের সেইসব বীর মুজাহীদদের সম্মান জানাই, শিশুরা দলবেধে দাড়িয়ে গেলো, তাদের হাতে হাতে পত পত করে উড়ছে অসংখ্যা কালেমা খচিত পতাকা, আজ এই পতাকা উড়ানো হচ্ছে সেই সব বীর মুজাহীদদের স্মরণে যাদের অপরিসীম সাহস এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতি পেয়েছিলো একটি স্বাধীন স্বৈরাচার মুক্ত স্বদেশ, বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার জন্য মুক্ত বাতাস।
একটু ব্যস্ততা ছিলো, আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গল্প দাদুর আসর হতে বিদায় নিলাম। গল্প দাদু তার পরবর্তী গল্প শুনাচ্ছেন, সে গল্পে আছে কিভাবে আমাদের এই দেশ ইসলামীক রিপাব্লিক অব বাংলাদেশে রুপান্তরিত হয়েছে।
১৪আগস্ট২০১৩
No comments:
Post a Comment