বমি বিড়ম্বনা!


এক।
কথা ছিলো, বড় আপার সাথে ফুপাতো বোন বাসের সামনের দিকের সিটে পাশাপাশি বসবে, আর আমি বসবো পেছনের দিকের আলাদা সিটে।
বাসে উঠেই আমি টাস্কিত! আমার বরাদ্দকৃত সিটের পাশের সিটেই বসে আছে এক রুপসী ললনা। ফুপাতো বোনকে চোখ টিপে বললাম, আপনি গিয়ে বড় আপার পাশে বসে পড়েন। আমার সময় ভালোই কাটবে বলে মনে হচ্ছে!
চোখ মটকে ফুপাতো বোন বললো, যা ফুট! এহ, সখ কতো! বড় আপা জার্নিতে বমি করে, আমি বমি সহ্য করতে পারিনা। তুই গিয়ে আপার পাশে বস, আমি এখানেই বসবো! ভগ্ন হৃদয়ে গিয়ে আপার পাশে বসে পড়লাম, সিনিয়রের নির্দেশ শীরোধার্য। সুন্দরী বোধহয় আমাদের কথা শুনে ফেলেছিলো, দেখলাম অন্যদিক তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছে।
হাতে পলিথিন নিয়ে তটস্থ হয়ে বসে আছি, বলাতো যায়না, কখন বমি করা শুরু করে! বমি নিয়ে বড় আপার নিজের কোনো মাথা ব্যাথা নেই, জানালার পাশের সিটে বসে বসে নির্মল হাওয়া খাচ্ছে।

বাস চলছে, নির্ঝঞ্জাটেই অতিবাহিত করলাম কয়েকটি ঘন্টা। হঠাৎ পেছনের দিকে হৈচৈ শুনে ছুটে গেলাম, কি হলো, কি হলো?
গিয়ে দেখি, সেই সুন্দরী ওয়াক! ওয়াক বলতে একেবারে ওয়াক আউট! মানে আউট করে দিয়েছে, একেবারে মালির ঘাড়ে! অর্থাৎ আমার ফুপাতো বোনের গায়ের উপর।
অসহায় দৃস্টিতে ফুপাতো বোন আমার দিকে তাকিয়ে আছে! লজ্বায় বিব্রত সুন্দরী, মাথা নিচু! একবোতল পানি এগিয়ে দিলাম, আপা দেখলাম নিজের দুঃখ ভুলে ওই সুন্দরীর সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন!
ওহ! বলতে ভুলে গেছি, সে যাত্রায় বড় আপা বমি করেনাই।

দুই।
সন্দ্বীপ গিয়েছিলাম, বন্ধুর বড় ভাইয়ের বিয়েতে। সাগরের উথাল পাথাল ঢেউ অতিক্রম করে একসময় পৌছে গেলাম বিয়ে বাড়ি।
রাতে থেকে পরদিন রওয়ান হলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে, বড়যাত্রী বোঝাই জাহাজ। জাহাজ বলতে কাঠের তৈরী বড় মাপের ট্রলার। উত্তাল সাগর! প্রচন্ড ঢেউ! একবার ডানে একবার বামে আছড়ে পড়ছে জাহাজ নামের প্রকান্ড ট্রলার। কাঠ ফাটার ক্যাওচ ক্যাওচ শব্দ আতঙ্ক সৃষ্টি করছে যাত্রীদের মনে।
জাহাজের গুটি কয়েক যাত্রী বাদে সবাই বমি করে অস্থির! জাহাজের পাটাতনে পা ফেলার জায়গা পাচ্ছিলামনা, পুরো জাহাজ বমিতে মাখামাখি!
নতুন বউ, জীবনে কোনদিন সন্দ্বীপ চ্যানেল অতিক্রম করে চট্টগ্রাম আসেনাই। প্রথমবার এই পরিস্থিতে পড়ে একবারে যায়যায় অবস্থা! জামাইয়ের অবস্থাও একই!
জাহাজ থেকে আধমরা বউ নামানোর মতো কেউ অবশিষ্ট নাই! শেষ মেষ বউয়ের ছোট ভাই একদিকে এবং আমি অন্যদিকে, দুইজনের কাধে ভর করে গাড়ি পর্যন্ত কোনো রকমে তুলে আনলাম।

পরিশিষ্ট্যঃ ঈদের লম্বা ছুটি, যান্ত্রিক জীবন হতে খানিক সময়ের জন্য স্বস্তি লাভ করতে অনেকেই গ্রামের উদ্দেশ্যে ছুটবেন, আত্মীয়তার বন্ধন উপভোগ করবেন। কিন্তু সেখানেই বিপত্তি! পরিবারের কোনোনা কোনো সদস্য জার্নি সহ্য করতে পারেনা, তারা বমি করবেই। মার ধর করে, ঝাড়ি মেরে, ভয় দেখিয়ে, আর যাই হোক বমি বন্ধ করা যায়না।
সতর্কতা হিসেবে লং-জার্নিতে সাথে করে পলিথিন এবং বমি রোধক ঔষধ রাখতে পারেন

৫আগস্ট২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment