সাবধান পুলিশ! সাবধান শিবির!


এক
কোনো মতে নিজের রুমে ঢুকে দেহটা বিছানায় এলিয়ে দিলাম, হতবিহবল ভাবটা তখনো কাটেনি। এটা কিভাবে সম্ভব! তিন-তিনটা পুলিশের লাশ!
আমরাতো সাথে করে অস্ত্র নিয়ে যাইনি? সর্বমোট ২০জনের মিছিল ছিলো এটি, প্রত্যেকের পকেটে ছিলো গুটিকয়েক ইটের টুকরো, ঠিক যেনো আবাবীল পাখির দল আল্লাহর দুশমনদের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো ছোট ছোট কংকর নিয়ে।
নারায়ে তাকবির স্লোগানের সাথেই সাথেই পুলিশ গুলি বর্ষণ শুরু করে, শিবিরের মুজাহিদরা পিছু হটেনাই। সামান্য ইটের টুকরো দিয়েই চালিয়ে যায় অসম লড়াই, তীব্র প্রতিরোধ!
তারপর কোথা হতে কি ঘটে যায়, বিপুল সংখ্যক পুলিশ পিছু হটে, রাস্তায় পড়ে থাকে তিনটি রক্তাক্ত লাশ, পুলিশের লাশ!
এটা কি করে সম্ভব! আবাবীল পাখির কংকরের আঘাতে পুলিশের বুক ঝাঝড়া হয়ে গেছে? নাহ! কিছুতেই হিসেব মিলছেনা! মাথাটা প্রচন্ড ঘুরছে, নিশ্চই কোথায় প্রব্লেম হয়েছে! কি সেটা!

দুই
ঠিক ৫টায় ঘুম ভাঙলো, কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। তাড়াহুড়ো করে ওজু করে আসর নামাজ আদায় করে নিলাম।
‘স্যার একটা কথা ছিলো।‘
স্যার, ও স্যা...র!
‘হ্যা! কিছু বলছিলে? ছাত্রের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম’।
স্যার আপনাকে কেমন উদাস দেখাচ্ছে, কি হয়েছে স্যার? ক্সাস সিক্স পড়ুয়া ছাত্রটি উৎসুক দৃস্টিতে জানতে চাইলো।
না, কিছু হয়নি। কি যেনো বলছিলে?
‘স্যার, আমি শিবির করবো!’
‘কি বললা? শিবির করবা?’
‘হ্যা স্যার, শিবিরের অনেক শক্তি, শিবিরের সাথে কেউ পারেনা, আমি শিবির করবো’
‘কে বললো তোমাকে, শিবিরের অনেক শক্তি?’
‘হ্যা স্যার, আজকে টিভিতে দেখিয়েছে, শিবিরের সাথে সংঘর্ষে সারাদেশে অনেক পুলিশ মারা গেছে। শিবিরের কাছে অনেক অস্ত্র আছে স্যার। আমি শিবির করবো, আমার সাথে কেউ পারবেনা’।
‘কি বলছো তুমি! টিভিতে দেখিয়েছে?’
‘হ্যা স্যার, সারাদিনইতো দেখাচ্ছে। আপনি কোথায় ছিলেন?’
কান দিয়ে আর কথা ঢুকছেনা, দ্রুত হাতে মোবাইল তুলে নিলাম ৫৫টা মিসড কল। কখনযে মোবাইল সাইলেন্ট করেছি, জানিনা। কল বেজে উঠলো, সজল ফোন করেছে।
‘হ্যা সজল কি খবর বলো!’
‘শামীম ভাই, এগুলো কি হচ্ছে’
‘সজল আমিতো টিভি দেখিনাই, ঠিক করে বলোতো কি হয়েছে?’
‘সারাদেশে শিবিরের পূর্ব নির্ধারিত মিছিলে পুলিশ হামলা করেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে শ’খানেক পুলিশ নিহত। এবং সবচাইতে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে সবাই লাইভ বুলেটে মারা গেছে!’
‘কি বলছো, তুমি! এটা কিভাবে সম্ভব? শিবিরতো এখন পর্যন্ত অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নাই। তাছাড়া আজকে আমাদের সাথে সংঘর্ষের সময়েও ৩জন পুলিশ নিহত হয়েছে। কিছুই মাথায় ঢুকছেনা, আচ্ছা ঠিক আছে, পরে কথা হবে। আল্লাহ হাফেজ’।
‘ওকে আল্লাহ হাফেজ’

সজলের সাথে কথা শেষ হতেই রাজিব ফোন করলো,
‘শামীম ভাই, কোথায় ছিলেন? সেই কখন হতে আপনাকে ফোন করছি!’
‘মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো, কি খবর বলো’।
‘দেখছেন ভাই, আগেই বলছিলাম। এভাবে ঠান্ডা আন্দোলন দিয়ে কিছু হবেনা। এখন পুলিশ বুঝবে শিবির কি জিনিস! এতোদিন শিবিরের পোলাপাইনরে গুলি করে মারছো, শিবির কিছু কয়নাই। এখন শিবিরও একশনে গেছে পুলিশ গুলি করলে আমরাও গুলি করবো, দেখি পুলিশের শক্তি বেশি নাকি শিবিরের শক্তি বেশি!’
‘রাজীব, শিবির এখনো অস্ত্র ইউজ করেনাই। তুমিতো আজকে মিছিলে ছিলা, আমরা কি অস্ত্র নিয়ে গিয়েছিলাম?’
‘আমরা নেই নাই, কিন্তু আপনারা দায়িত্বশীলরা নিশ্চই গোপন একটা টিম নিয়ে গিয়েছিলেন, তারাই গুলি করেছে, আমার কাছে লুকাইয়েননা ভাই। এই জিনিসটা ভালো লাগেনা, আপনারা খালি কথা লুকান! আচ্ছা ভাই আবার মিছিল হইলে ডাইকেন, পুলিশ পিটাইতে ভালোই লাগে, আর জিনিস পাতি আমাদের হাতেও দিয়েন, খালি হাতে আর ভাল্লাগেনা!’
‘রাজীব তুমি বুঝতে পারছোনা, নিশ্চই কোথাও প্রব্লেম হচ্ছে। আমরা গুলি করিনাই’।
‘হা হা, ভাই হাসাইলেন! ওকে ভাই আবার কথা হবে, আল্লাহ হাফেজ’।
‘আল্লাহ হাফেজ’
কি হচ্ছে এসব! রিলায়েবল নিউজের একমাত্র সোর্চ বাশেরকেল্লা দেখতে হবে। টিভি চ্যানেল সবগুলো সরকারের পাচাটা গোলামে পরিণত হয়েছে, ওদের কথা বিশ্বাস করা যায়না। দ্রুত পা চালিয়ে বাশার দিকে হাটতে লাগলাম। ল্যাপটপ ওপেন করতে হবে। বাঁশেরকেল্লার নিউজ নাদেখা পর্যন্ত মূল ঘটনা বুঝা যাবেনা।

পাড়ার দোকানের সামনেই দেখলাম স্থানীয় বিএনপি পন্থী মুরব্বিদের ভীড়, তুমুল আলোচনা চলছে পুলিশ হত্যা নিয়ে।
আরে ভাতিজা! তোমার কথাই ভাবছিলাম, ভালোই হলো তোমাকে পেয়ে গেলাম। পান চিবোতে চিবোতে
কথা বলছিলেন হাসান কাকা। তিনি থানা বিএনপি’র সভাপতি।
‘কেনো চাচা, কি ব্যাপারে?’
‘আরে ব্যাপার আর কি? আমরা যা করতে পারিনাই, তোমরা তা করে দেখাইয়া দিলা। আমাদের দলেরতো এখন একটা মিছিল করারও ক্ষমতা নাই, আর তোমরা যা দেখাইলা, মাশাল্লাহ! আনন্দে হাসান চাচার চোখ চকচক করে উঠলো! পুলিশ তোমাদের উপর বহু নির্যাতন করেছে, তোমাদের অনেক ছেলেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে, পঙ্গু করে দিয়েছে। আজকে সেটার প্রতিশোধ নিয়ে দেখিয়ে দিলা, শিবির চাইলেই যেকোনো হত্যার বদলা নিতে পারে’।
হাসান চাচা বিএনপি করলেও শিবিরের ছেলেদের অত্যান্ত স্নেহ করেন, এমনও হয়েছে মিছিলে যাওয়ার সময় তিনি জোড় করে ভাড়ার টাকা দিয়ে দিয়েছেন। বাবারা আমরা পারছিনা, তোমরা পুলিশের বুলেটের সামনে যেভাবে খালি হাতে প্রতিরোধ করো! টাকাটা না নিলে আমি কস্ট পাবো, তার চোখ ছল ছল করে ওঠে, তখন না নিয়ে উপায় থাকেনা।
‘চাচা আমরাতো পুলিশ মারিনাই! দূর্বল কন্ঠে জবাব দিলাম।‘
হা হা, ভাতিজা হাসাইলা হাসান চাচা অট্টহাসিতে ফেটে পরলেন।
‘আচ্ছা একটা কথার জবাব দাও, আজকে তোমাদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হইছে কিনা?’
‘হ্যা চাচা হইছে’
‘পুলিশ মারা গেছে শুনছো?’
‘হ্যা চাচা শুনেছি’
‘তুমি কি মনে করো, পুলিশগুলারে আসমানের ফেরেশতা আইসা হত্যা করেছে?’
‘কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে হাসান কাকার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সত্যিইতো, এই প্রশ্নের জবাব শিবির কিভাবে দিবে?’
‘থাক বাবা আমি কিছু মনে করিনাই, তোমরা সব কথা পাবলিকের কাছে প্রকাশ করবা এটা আশা করাও ভুল, কিছু জিনিস গোপন রাখতে হয় এটা আমি বুঝি। ঠিক আছে, ভালো থাকবা, একটু সাবধানে চলাফেরা কইরো, হাম্বালীগের বিশ্বাস নাই’।
ওকে চাচ্চা আসসালামুয়ালাইকুম!

তিন
বাঁশেরকেল্লা এবং শিবিরের প্রচার বিভাগ হতে শিবির বিবৃতি দিয়েছে, এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ডের সাথে শিবিরের দূরতম সম্পর্ক নেই, তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে শিবিরের উপর দায় চাপাচ্ছে। শিবির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করে, ইসলামী ছাত্রশিবির অস্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়।

ফেসবুকের হোমপেজ ভর্তি হয়ে গেছে, পুলিশের সাথে শিবিরের সংঘর্ষের নিউজ এবং ছবিতে। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে শিবিরের রুটলেভেলের কর্মীরা স্টাটাসের পর স্টাটাস দিয়েই যাচ্ছে। ‘শাবাশ শিবির!’ ‘এই শতকের শ্রেষ্ঠ বীর ইসলামী ছাত্রশিবির!’
বিপুল জনপ্রিয় ফেসবুক ইউজাররা স্টাটাস দিচ্ছে, ‘আগেই বলেছিলাম অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে, অস্ত্রের বিকল্প নাই। এখন শিবির দেখিয়ে দিয়েছে! কুলাঙ্গার পুলিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে রুখে দাড়ানোর বিকল্প নাই, আমরা কি শুধু পরে পরে মার খাবো! প্রতিরোধ করবোনা?’ লাইকের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে তাদের প্রতিটা স্টাটাস!
রাম-বাম গোষ্ঠীও থেমে নাই, তারাও লিখে যাচ্ছে, “স্বাধীনতাবিরধী, ধর্মব্যবসায়ী, জঙ্গীবাদী জামায়াত শিবিরের মুখোশ খুলে গেছে। এই দেশদ্রোহী, পুলিশ হত্যাকারীদের স্থান এদেশে হতে পারেনা!”
ইসলামপন্থীরা তাদের বক্তব্যকে ডিফেন্ড করছে, শিবিরের অবস্থানের যৌক্তিকতা প্রচার করছে! “কোথায় ছিলো আপনাদের এই মানবাধিকার, যখন আবিদ ভাইকে চোখ উপড়ে বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো? যখন ইমরান ভাইকে হত্যা করা হয়েছিলো? কোথায় ছিলো আপনাদের মানবাধিকার যখন পুলিশ মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছিলো শিবিরের ছেলেদের, কিংবা কক্সবাজারের সাঈদী মুক্তি আন্দোলনের সেই কর্মী যাকে বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছিলো? আজ শিবিরের ছেলেরা প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে আর আপনাদের মানবাধিকার উথলে উঠছে? থুথু মারি আপনাদের এই মানবাধিকারের গায়ে”
প্রবাসী শিবিরের সাবেক কর্মীরা শুভেচ্ছা জানিয়ে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে, কেউ কেউ প্রস্তাব দিচ্ছে আরো অস্ত্রের প্রয়োজন হলে যেনো তাকে জানানো হয়, যত টাকা লাগে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

টিভি টকশোতে ডঃ পিয়াস করিম, আসিফ নজরুল এবং অন্যান্য ডানপন্থী বুদ্ধিজিবীরা শিবিরে অবস্থানকে জাস্টিফাই করছেন। “আদালতের প্রতি অনাস্থা, বিচার ব্যবস্থার প্রতি ঘৃণা হতে শিবির এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। সরকার আদালতকে দলীয় স্বার্থ ব্যবহার করেছে, বিচার বিভাগের দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে। পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, বিরোধী দলের সভাসমাবেশের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে”।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি’র পক্ষ হতে জানানো হয় “এটা জামায়াতের অভ্যান্তরিণ ব্যাপার, জামায়াত-শিবিরের কর্মকান্ডের দায় বিএনপি নিবেনা। এবং এব্যাপারে আমরা কোনো বক্তব্য রাখবোনা”।
নিন্দার ঝড় উঠলো বহিঃবিশ্ব হতে। জাতিসংঘ হতেও সহানুভূতি জানানো হলো নিহতের পরিবারের প্রতি!

হৈ হৈ রৈ রৈ একটা ব্যাপার, মূল ব্যাপারে কারো নজর নেই, সত্যিইকি শিবির গুলি করেছে? সত্যিই কি শিবির লাইভ অস্ত্র ইউজ করেছে?

চার
দেশি-বিদেশী পত্রিকার নিউজ হেডলাইন, “শিবির পুলিশ বন্ধুক যুদ্ধ, ১২০পুলিশ নিহত!
অফিস, চায়ের দোকান সব জায়গাতেই একই আলোচনা। কেউ পক্ষে-কেউ বিপক্ষে, আলোচনা থেমে নেই। তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত, শিবিরই গুলি করে পুলিশগুলোকে হত্যা করেছে!
টিভি চ্যানেলে পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হচ্ছে, অশ্রুসজল চোখে তারা কথা বলছেন, কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। স্বামী হারা নারী, কোথায় যাবেন তিনি? কোলের ফুটফুটে শিশু অবুঝ দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে ক্যামেরার দিকে! নির্বাক জাতি! নির্বাক সন্তান হারা মা-বাবা, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তির মৃতুতে নির্বাক স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ভাইবোন।
বিবৃতির পরে বিবৃতি আসছে শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ হতে, এই ঘটনার সাথে জামায়াত শিবিরের দূরতম সম্পর্ক নাই, জাতীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে!

পাঁচ
ঘটনার রেশ কাটেনাই, দেশের সর্বত্র গুমট একটা অবস্থা, অনিশ্চিত রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে চায়ের দোকানে আলচনার ঝড় উঠছে।
হঠাৎ করেই, টিভিতে খবর প্রচারিত হলো। রাজশাহীতে শিবিরের ম্যাচে পুলিশের অভিযান, শিবির পুলিশ বন্দুক যুদ্ধ ২০শিবির কর্মী নিহত। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে রক্তমাখা মেঝেতে সারিবদ্ধ শিবির কর্মীদের লাশ, আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কিছু অস্ত্র!
শিবিরের পক্ষ হতে বিবৃতি দেয়া হলো, শিবির অস্ত্রের রাজনীতি করেনা, এটা সরকারের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র!
রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল হলো, সেখানেও পুলিশ গুলি চালালো। টিভিতে খবর প্রচারিত হচ্ছে, শিবিরের মিছিল হতে পুলিশের প্রতি গুলিবর্ষণ, বন্দুক যুদ্ধে ৯শিবির কর্মী নিহত!
দিনের পর দিন একই নিউজ, কখনো রাজশাহী, কখনো বগুড়া, কখনো চট্টগ্রাম কখনো মাদারীপুর। ঘটনাস্থান ভিন্ন হলেও কাহিনী একই, “শিবির কর্মীর বাসায় পুলিশের অভিযান, শিবির-পুলিশ বন্দুক যুদ্ধ! নিহত ৪/৫” মাঝে মধ্যে দুই/চারজন পুলিশ নিহত হওয়ার সংবাদও পাওয়া যাচ্ছে!
সেনাবাহিনী, র্যা ব, পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ টিম গঠন করা হলো, অপারেশনের নাম যাই হোকনা কেনো, মূল উদ্দেশ্য শিবির নিধন!
প্রতিটা ঘটনাই, অনলাইন মিডিয়া এবং টিভি মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা, সবচাইতে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, জনগনের বিরাট একটা অংশ এই কাহিনী বিশ্বাস করছে! পরিকল্পিত গণহত্যাকে বৈধতা দিচ্ছে!

ছয়
ঘুমিয়ে ছিলাম, রাত তিনটার দিকে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হতেই লাফিয়ে উঠলাম। ম্যাচের অন্যান্য সদস্যরাও দেখলাম জেগে উঠেছে, আতঙ্কের ছাপ সবার মুখেই!
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলাম, কে?
‘আমরা পুলিশের লোক, দরজা খুলুন!’
এতো রাতে এসেছেন কেনো, সকালে আসেন! তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানালাম।
‘দরুজা না খুললে, আমরা ভেঙে ঘরে ঢুকবো!’
সবার মুখের দিকেই তাকালাম, কেউ কোনো কথা বলছেনা! চোখে চোখে কথা হয়ে গেলো!
দরজা খুলে দিলাম, হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে গেলো একদল পুলিশ! একে একে সবারই হাত বেধে ফেলা হলো!
অস্ত্র কোথায় রেখেছিস বল! গর্জন করে উঠলো অফিসার গোছের মানুষটা!
‘কিসের অস্ত্র? অস্ত্র আসবে কোথা হতে?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম!
‘শিবির করিস, আবার বলছিস অস্ত্র আসবে কোথা হতে? কেনো সেদিন মিছল হতে পুলিশের উপর যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছিলি , সে অস্ত্র গুলো কোথায় রেখেছিস?’
‘আমরা কখনো গুলি করিনাই, এগুলো মিথ্যাচার। শিবির অস্ত্রের রাজনীতি করেনা!’
‘মিথ্যাচার নাকি সত্যাচার সেটা কালকের টিভিতেই প্রচারিত হবে, সেন্ট্রি গাড়ি হতে কালো ব্যাগটা নিয়ে এসো!’
কিছুক্ষণ পরেই সেন্ট্রি ফিরে এলো, তার হাতে একটি কালো ব্যাগ! ব্যাগ থেকে একে একে বেরিয়ে এলো বেশকিছু পুরাতন মরিচা ধরা অস্ত্র!
‘এগুলো তোদের অস্ত্র, এগুলো দিয়ে তোদের সাথে আমাদের যুদ্ধ হয়েছে এবং যুদ্ধ শেষে তোরা সবাই নিহত হয়েছিস!' অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো অফিসার, 
তোদের শিকড় সহ উপড়ে ফেলার আগ পর্যন্ত আমরা থামবোনা!

অফিসার বেরিয়ে গেলো, যাওয়ার আগে নির্দেশ দিলো এদের সবাইকে গুলি করে মারো!
ততক্ষণে ভোর হয়ে গেছে, জানালা দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে ঢুকছে সূর্যের সোনালী আলো!

১৭আগস্ট২০১৩

(কিছু ভাই ইদানিং অনলাইনে সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বলছেন, লেখাটি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে লেখা)

Post Comment

2 comments:

  1. মারদিয়া মমতাজSeptember 5, 2013 at 1:34 AM

    একমত। রাজপথে আন্দোলনের আসল রূপ জানিনা। হয়ত এজন্য আমাদের মনে এইরকম চিন্তা এক দুইবার আসে, এসেছে। শেষের কথাগুলোয় চিন্তার উপকরণ পেলাম। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কিছু উগ্রপন্থী ভাই আছেন, যারা পজেটিভ-নেগেটিভ চিন্তা না করে জেদের বশে, হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সংগঠনের প্রতি আহ্বান/অনুরোধ করছেন। গল্পটি মূলত তাদের উদ্দেশ্য করেই লেখা।

      কস্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

      Delete