ছোট বেলায় ফিলিস্তিনের মুজাহিদদের সংগ্রাম দেখতাম, এখনো দেখি, তারা দখলদার
ইসরাইলের ট্যাঙ্কের মোকাবেলা করছে পাথর দিয়ে। ইসরাইলের জঙ্গী বিমানের
হামলায় আত্নরক্ষার জন্য ছুটে যাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।
দৃশ্যগুলো দেখে শিহরিত হতাম, অবাক হতাম। ভিতু মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতাম, কেমনে সম্ভব! নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কিভাবে ফিলিস্তিনের কিশোর ছেলেটি ট্যাঙ্কের মোকাবেলায় পাথর হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে!
এটাই হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। এই জিহাদের পরিণতিও মুজাহিদদের জানা আছে, মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী। এর বাইরে কোনো পরিণতি সম্ভব নয়।
এবার একটু ভিন্ন দিকে যাবো, বাংলাদেশের গল্প বলবো। এইতো কিছুদিন হলো, যুদ্ধের দামামা চারিদিকে, একদিকে সরকারী বাহিনীর অত্যাধুনিক একে ফোর্টি সেভেন, অন্যদিকে মুজাহিদদের ইটের টুকরো। একদিকে সরকারী বাহিনীর অত্যাধুনিক রায়টকার হতে অবিরত গুলি বর্ষণ, অন্যদিকে মুজাহিদদের পেট্রোল বোমার প্রতিরোধ, একদিকে সরকারী বাহিনীর টিয়ার শেলের আঘাত, অন্যদিকে মুজাহিদদের প্রজ্বলিত আগুনের আত্মরক্ষা।
একদিকে সহযোদ্ধার গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে, পাশেই মুজাহিদ ইটের টুকরো নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, ওহুদ পাহাড়ের মতোই অটল অবিচল। এটাই জিহাদ, এটাই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের প্রতিরোধ।
এরা সেই মুজাহিদ যারা শান্তিকালিন সময়ে কারো ভাই, কারো সেরা সন্তান, আবার কারো বা অভিভাবক। এরা সেই মুজাহিদ যারা শান্তিকালিন সময়ে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে।
আবার এরা সেই মুজাহিদ, যুদ্ধকালিন সময়ে যাদের নারায়ে তাকবীর স্লোগানে প্রকম্পিত হয় জালিমের সিংহাসন। এরা সেই মুজাহিদ, যাদের ইটের টুকরোর আঘাতেই বুক এফোড় ওফোড় হয়ে যায়, একে ফোর্টি সেভেন, উজি, হাতে দাঁড়িয়ে থাকা জালিমের পেটোয়া বাহিনীর। এরা সেই মুজাহিদ, যারা জালিমের গুলি বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়েই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোশণা দেয়।
এবার আরেক শ্রেণীর মুজাহিদদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো, কী-বোর্ড হাতে নিয়েই এরা বিশ্বব্যাপী জিহাদ করে যাচ্ছে।
এরা এরদোগানকে সাজেশন দেয়, এভাবে নয় ওভাবে করো। এরা সকাল বিকাল নিয়ম করে দুইবার মুরসীকে গালমন্দ করে, ‘ব্যাটা সাহস কতবড়, কুফরী গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়!’
জামায়াত শিবির যখন, বাতিলের মোকাবেলায় ইটের টুকরো হাতে রনাঙ্গণে ব্যস্ত, তখন এরা সাজেশন দেয়, ধুর মিয়া এইটা একটা জিহাদ হইলো? জিহাদ করবা একে ফোর্টি সেভেন নিয়া।
যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনারা আসেন, জিহাদ করেন, তখন এরা জবাব দেয়। আমরা সিরিয়াতে জিহাদ করছি, আমরা আফগানে জিহাদ করছি, আমরা সোমালিয়ায় জিহাদ করছি। আমরা বাংলাদেশেও জিহাদ করবো, তবে এখন প্রস্তুত হচ্ছি সময় হলেই জিহাদে ঝাপিয়ে পড়বো।
দিজেন্দ্রলাল রায়ের একটি কবিতার বিকৃত ভার্শণ রচনা করেই লেখাটি শেষ করবো,
নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -
জিহাদের তরে, যে করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?’
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া মরিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।’
হাসিনার হাতে মুসলিম মরে, প্রতিরোধ করে কে?
সকলে বলিল, ‘যা তো নন্দ, জিহাদ করে নে।
নন্দ বলিল, মুসলিমের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা জাতির হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।’
নন্দ একদা হঠাৎ একটা গ্রুপ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে জামাত, শিবির, জিহাদ করিল জাহির;
পড়িল ধন্য, জাতির জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
করে যত তার দ্বিগুণ জিহাদ, চাপা তার দশ গুণ;
চাপার জোড়ে কমিউনিষ্ট মারে, ধ্বংশ করে বাল,
তখন সকলে বলিল-‘বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।’
নন্দ একদা ফেবুতে এক পোলারে দেয় গালি;
পোলা আসিয়া বাপারে তাহার নালিশ করিল খালি;
নন্দ বলিল, ‘আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে জাতির, পিটুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি’ বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।’
তখন সকলে বলিল – ‘বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!’
নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
ধরিতো না বোমা, কি জানি কখন ফুটে যায় বোমা খানি,
পুলিশ ফি-সন মারিছে ভীষণ, রাজপথে ‘কলিসন’ হয়;
হাঁটতে লীগ, কমিউনিস্ট আর বাম-রামের ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কী-বোর্ড হাতে জিহাদী নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’
লেখাঃ নন্দলালদের নিয়ে যত কথা
© শামীম রেজা
০৩/০৪/২০১৪
দৃশ্যগুলো দেখে শিহরিত হতাম, অবাক হতাম। ভিতু মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতাম, কেমনে সম্ভব! নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কিভাবে ফিলিস্তিনের কিশোর ছেলেটি ট্যাঙ্কের মোকাবেলায় পাথর হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে!
এটাই হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। এই জিহাদের পরিণতিও মুজাহিদদের জানা আছে, মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী। এর বাইরে কোনো পরিণতি সম্ভব নয়।
এবার একটু ভিন্ন দিকে যাবো, বাংলাদেশের গল্প বলবো। এইতো কিছুদিন হলো, যুদ্ধের দামামা চারিদিকে, একদিকে সরকারী বাহিনীর অত্যাধুনিক একে ফোর্টি সেভেন, অন্যদিকে মুজাহিদদের ইটের টুকরো। একদিকে সরকারী বাহিনীর অত্যাধুনিক রায়টকার হতে অবিরত গুলি বর্ষণ, অন্যদিকে মুজাহিদদের পেট্রোল বোমার প্রতিরোধ, একদিকে সরকারী বাহিনীর টিয়ার শেলের আঘাত, অন্যদিকে মুজাহিদদের প্রজ্বলিত আগুনের আত্মরক্ষা।
একদিকে সহযোদ্ধার গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে, পাশেই মুজাহিদ ইটের টুকরো নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, ওহুদ পাহাড়ের মতোই অটল অবিচল। এটাই জিহাদ, এটাই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের প্রতিরোধ।
এরা সেই মুজাহিদ যারা শান্তিকালিন সময়ে কারো ভাই, কারো সেরা সন্তান, আবার কারো বা অভিভাবক। এরা সেই মুজাহিদ যারা শান্তিকালিন সময়ে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে।
আবার এরা সেই মুজাহিদ, যুদ্ধকালিন সময়ে যাদের নারায়ে তাকবীর স্লোগানে প্রকম্পিত হয় জালিমের সিংহাসন। এরা সেই মুজাহিদ, যাদের ইটের টুকরোর আঘাতেই বুক এফোড় ওফোড় হয়ে যায়, একে ফোর্টি সেভেন, উজি, হাতে দাঁড়িয়ে থাকা জালিমের পেটোয়া বাহিনীর। এরা সেই মুজাহিদ, যারা জালিমের গুলি বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়েই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোশণা দেয়।
এবার আরেক শ্রেণীর মুজাহিদদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো, কী-বোর্ড হাতে নিয়েই এরা বিশ্বব্যাপী জিহাদ করে যাচ্ছে।
এরা এরদোগানকে সাজেশন দেয়, এভাবে নয় ওভাবে করো। এরা সকাল বিকাল নিয়ম করে দুইবার মুরসীকে গালমন্দ করে, ‘ব্যাটা সাহস কতবড়, কুফরী গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়!’
জামায়াত শিবির যখন, বাতিলের মোকাবেলায় ইটের টুকরো হাতে রনাঙ্গণে ব্যস্ত, তখন এরা সাজেশন দেয়, ধুর মিয়া এইটা একটা জিহাদ হইলো? জিহাদ করবা একে ফোর্টি সেভেন নিয়া।
যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনারা আসেন, জিহাদ করেন, তখন এরা জবাব দেয়। আমরা সিরিয়াতে জিহাদ করছি, আমরা আফগানে জিহাদ করছি, আমরা সোমালিয়ায় জিহাদ করছি। আমরা বাংলাদেশেও জিহাদ করবো, তবে এখন প্রস্তুত হচ্ছি সময় হলেই জিহাদে ঝাপিয়ে পড়বো।
দিজেন্দ্রলাল রায়ের একটি কবিতার বিকৃত ভার্শণ রচনা করেই লেখাটি শেষ করবো,
নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -
জিহাদের তরে, যে করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?’
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া মরিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।’
হাসিনার হাতে মুসলিম মরে, প্রতিরোধ করে কে?
সকলে বলিল, ‘যা তো নন্দ, জিহাদ করে নে।
নন্দ বলিল, মুসলিমের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা জাতির হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।’
নন্দ একদা হঠাৎ একটা গ্রুপ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে জামাত, শিবির, জিহাদ করিল জাহির;
পড়িল ধন্য, জাতির জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
করে যত তার দ্বিগুণ জিহাদ, চাপা তার দশ গুণ;
চাপার জোড়ে কমিউনিষ্ট মারে, ধ্বংশ করে বাল,
তখন সকলে বলিল-‘বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।’
নন্দ একদা ফেবুতে এক পোলারে দেয় গালি;
পোলা আসিয়া বাপারে তাহার নালিশ করিল খালি;
নন্দ বলিল, ‘আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে জাতির, পিটুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি’ বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।’
তখন সকলে বলিল – ‘বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!’
নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
ধরিতো না বোমা, কি জানি কখন ফুটে যায় বোমা খানি,
পুলিশ ফি-সন মারিছে ভীষণ, রাজপথে ‘কলিসন’ হয়;
হাঁটতে লীগ, কমিউনিস্ট আর বাম-রামের ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কী-বোর্ড হাতে জিহাদী নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’
লেখাঃ নন্দলালদের নিয়ে যত কথা
© শামীম রেজা
০৩/০৪/২০১৪
No comments:
Post a Comment