আলীর
সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, ফোন বেজে উঠলো, লুমিয়া মোবাইল। চরম ভাব’স নিয়ে
মোবাইল বের করলাম, ভাবটা এমন “দেখছিস আমার একটা লুমিয়া আছে!” আসল কথা হচ্ছে
(ছাল নাই মোবাইলে, লুমিয়া তার নাম)
আলীও দেখলাম পকেট থেকে স্যামসাং গ্যালাক্সি বের করে নাড়াচাড়া করছে, কঠিন এক ঝাড়ি দিলাম, “ঐ ব্যাটা, ভাব দেখাস!? ফোন রাখ!”
বত্রিশ দাত বের করে আলী হাসছে, ভেটকি হাসি, গা জ্বলে যায়।
ফোন করেছে বড় আপা, অনেক কথা হলো, কথা শেষেই আমার অনুভূতি “ইস! মিস হয়ে গেলো!”
অবাক হয়েই আলী জিজ্ঞাসা করলো কি মিস হয়ে গেলো?
মামাগিরী মিস হয়ে গেলো।
মামাগিরী মিস হলো মানে?
শুনবি? আচ্ছা তাহলে গল্প শোন।
যখন খুব ছোট ছিলাম, ত্যাড়ামিতে ছিলাম সেরা। এখন অবশ্য ভালো হয়েছি সেকথা বলা যাবেনা। যাই হোক, পড়াশোনার ধারে কাছেও ছিলামনা, প্রতিনিয়ত কপালে উত্তম মাধ্যম জুটতো, আর জুটতো মামার গল্প, মামা সম্পর্কে মজার সব গল্প।
মা গল্প বলতো, “জানো, তোমার মামা ছোট বেলায় অনেক অনেক পড়াশোনা করতো, এখন দেখছো, তোমার মামা হুন্ডা চালায়! লেখা পড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে”।
আমি যেমন ত্যাড়া ছিলাম, আমার চিন্তাগুলাও সম্ভবত একটু ত্যাড়া টাইপের ছিলো। মনে মনে কবিতা পড়তাম, “হুন্ডা চালায় গুন্ডারা!”
মা আবার গল্প করতেন, তোমার মামা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সব সময় মুরব্বিদের সালাম দেয়, সবাই তোমার মামাকে সম্মান করে।
আর তুমি সবাইকে গালি দাও!
সত্যিইতো, মামা কত ভালো! সিদ্ধান্ত নিলাম, মামার মত হতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ, পথে ঘাটে মুরব্বি কাউকে দেখতেই সালাম, সালামের ফ্রিকোয়েন্সি থাকতো অনেক কম, কেউ শুনতেও পেতোনা, একটু লাজুক ছিলাম কিনা!
মামা শিবির করতেন, চারিদিকে নাম ডাক, এমন ছেলে হয়না। মামার সাথে বাজারে যেতে হলে বিরক্ত হয়ে যেতাম, একটু পর পরেই পরিচিত লোকদের সাথে দেখা, কথা আর ফুরায়না। সবার সাথে কি অমায়িক, কি আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক।
ইস! আমার মামাকে কত মানুষ সম্মান করে, আমিও বড় হয়ে মামার মতো হবো!
মামা মেধাবী ছাত্র ছিলেন, মা সারাক্ষণ মামার গল্প বলতেন, মামার মতো হতে উৎসাহ দিতেন। পড়াশোনায় একটু ফাঁকি দিলে কিংবা কাউকে গালি দিলেই, মামার উদাহরণ টানতেন, তোমার মামা এমন, তোমার মামা তেমন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার মামা ছিলেন যাকে বলে আদর্শ মামা! গ্রামে মোটর সাইকেল ঢুকলেই হইছে, হৈ হৈ করে ছুটে যেতাম, বিয়ে বাড়িতে যেমন হুড় ওঠে “বর এসেছে! বর এসেছে!”, আমরা পিচ্চিরাও দৌড়ে যেতাম, “মামা আইছে, মামা আইছে!” পুরো ইউনিয়নে একটাই মটর সাইকেল ছিলো, সেটা হচ্ছে মামার মটর সাইকেল!
এবার আলী মুখ খুললো, সেটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তোর মামাগিরী মিস হইলো কিভাবে?
উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, একটা দীর্ঘশ্বাস! আমি যোগ্য মামা হইতে পারলামনা!
কেনো কি হইছে?
কি হয়নাই সেটা বল! ভাগ্নী সায়েন্স কম্পিটিশনে কুমিল্লা জেলার মধ্যে ১৪তম হয়েছে।
এটাতো সুখবর!
আরে শুনবিতো! আপা এখন ফোন করে জানালো, দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ভাইগ্নাটা বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা জেলায় প্রথম হয়েছে। ওর এবছরের শিক্ষার যাবতীয় খরচ বৃত্তিদাতারা প্রদান করবে।
মাশাআল্লাহ, দোস্ত মিস্টি খাওয়া!
রাখ তোর মিস্টি! আমার মামাগিরীটা মিস হয়ে গেলো!
অবাক হয়ে আলী তাকিয়ে আছে, এটা আবার কেমন কথা?!
আরে গাঁধা! ভাইগ্না-ভাগ্নীগুলো যদি পড়াশোনা না করতো, ফাঁকি ঝুকি দিতো, তাইলেতো আপা তাদের কাছে আমার গল্প করতে পারতো, তোমার মামা এমন ছিলো, তেমন ছিলো, তোমার মামা হ্যান-ত্যান।
আর আমি ভাব নিতাম!
এখন আর আমার ভাব নেয়ার চান্স নাই!
ভাইগ্না-ভাগ্নিরা মামাকে অতিক্রম করে ফেলেছে!
লেখাঃ ভাইগ্না-ভাগ্নীদের সফলতা ও হিংসুটে মামা
© শামীম রেজা
০৬/০৪/২০১৪
আলীও দেখলাম পকেট থেকে স্যামসাং গ্যালাক্সি বের করে নাড়াচাড়া করছে, কঠিন এক ঝাড়ি দিলাম, “ঐ ব্যাটা, ভাব দেখাস!? ফোন রাখ!”
বত্রিশ দাত বের করে আলী হাসছে, ভেটকি হাসি, গা জ্বলে যায়।
ফোন করেছে বড় আপা, অনেক কথা হলো, কথা শেষেই আমার অনুভূতি “ইস! মিস হয়ে গেলো!”
অবাক হয়েই আলী জিজ্ঞাসা করলো কি মিস হয়ে গেলো?
মামাগিরী মিস হয়ে গেলো।
মামাগিরী মিস হলো মানে?
শুনবি? আচ্ছা তাহলে গল্প শোন।
যখন খুব ছোট ছিলাম, ত্যাড়ামিতে ছিলাম সেরা। এখন অবশ্য ভালো হয়েছি সেকথা বলা যাবেনা। যাই হোক, পড়াশোনার ধারে কাছেও ছিলামনা, প্রতিনিয়ত কপালে উত্তম মাধ্যম জুটতো, আর জুটতো মামার গল্প, মামা সম্পর্কে মজার সব গল্প।
মা গল্প বলতো, “জানো, তোমার মামা ছোট বেলায় অনেক অনেক পড়াশোনা করতো, এখন দেখছো, তোমার মামা হুন্ডা চালায়! লেখা পড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে”।
আমি যেমন ত্যাড়া ছিলাম, আমার চিন্তাগুলাও সম্ভবত একটু ত্যাড়া টাইপের ছিলো। মনে মনে কবিতা পড়তাম, “হুন্ডা চালায় গুন্ডারা!”
মা আবার গল্প করতেন, তোমার মামা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সব সময় মুরব্বিদের সালাম দেয়, সবাই তোমার মামাকে সম্মান করে।
আর তুমি সবাইকে গালি দাও!
সত্যিইতো, মামা কত ভালো! সিদ্ধান্ত নিলাম, মামার মত হতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ, পথে ঘাটে মুরব্বি কাউকে দেখতেই সালাম, সালামের ফ্রিকোয়েন্সি থাকতো অনেক কম, কেউ শুনতেও পেতোনা, একটু লাজুক ছিলাম কিনা!
মামা শিবির করতেন, চারিদিকে নাম ডাক, এমন ছেলে হয়না। মামার সাথে বাজারে যেতে হলে বিরক্ত হয়ে যেতাম, একটু পর পরেই পরিচিত লোকদের সাথে দেখা, কথা আর ফুরায়না। সবার সাথে কি অমায়িক, কি আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক।
ইস! আমার মামাকে কত মানুষ সম্মান করে, আমিও বড় হয়ে মামার মতো হবো!
মামা মেধাবী ছাত্র ছিলেন, মা সারাক্ষণ মামার গল্প বলতেন, মামার মতো হতে উৎসাহ দিতেন। পড়াশোনায় একটু ফাঁকি দিলে কিংবা কাউকে গালি দিলেই, মামার উদাহরণ টানতেন, তোমার মামা এমন, তোমার মামা তেমন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার মামা ছিলেন যাকে বলে আদর্শ মামা! গ্রামে মোটর সাইকেল ঢুকলেই হইছে, হৈ হৈ করে ছুটে যেতাম, বিয়ে বাড়িতে যেমন হুড় ওঠে “বর এসেছে! বর এসেছে!”, আমরা পিচ্চিরাও দৌড়ে যেতাম, “মামা আইছে, মামা আইছে!” পুরো ইউনিয়নে একটাই মটর সাইকেল ছিলো, সেটা হচ্ছে মামার মটর সাইকেল!
এবার আলী মুখ খুললো, সেটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তোর মামাগিরী মিস হইলো কিভাবে?
উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, একটা দীর্ঘশ্বাস! আমি যোগ্য মামা হইতে পারলামনা!
কেনো কি হইছে?
কি হয়নাই সেটা বল! ভাগ্নী সায়েন্স কম্পিটিশনে কুমিল্লা জেলার মধ্যে ১৪তম হয়েছে।
এটাতো সুখবর!
আরে শুনবিতো! আপা এখন ফোন করে জানালো, দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ভাইগ্নাটা বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা জেলায় প্রথম হয়েছে। ওর এবছরের শিক্ষার যাবতীয় খরচ বৃত্তিদাতারা প্রদান করবে।
মাশাআল্লাহ, দোস্ত মিস্টি খাওয়া!
রাখ তোর মিস্টি! আমার মামাগিরীটা মিস হয়ে গেলো!
অবাক হয়ে আলী তাকিয়ে আছে, এটা আবার কেমন কথা?!
আরে গাঁধা! ভাইগ্না-ভাগ্নীগুলো যদি পড়াশোনা না করতো, ফাঁকি ঝুকি দিতো, তাইলেতো আপা তাদের কাছে আমার গল্প করতে পারতো, তোমার মামা এমন ছিলো, তেমন ছিলো, তোমার মামা হ্যান-ত্যান।
আর আমি ভাব নিতাম!
এখন আর আমার ভাব নেয়ার চান্স নাই!
ভাইগ্না-ভাগ্নিরা মামাকে অতিক্রম করে ফেলেছে!
লেখাঃ ভাইগ্না-ভাগ্নীদের সফলতা ও হিংসুটে মামা
© শামীম রেজা
০৬/০৪/২০১৪
No comments:
Post a Comment