সেদিন দেখা হলো অনলাইনের জনপ্রিয় লেখক, সংগঠক, লোকমান বিন ইউসুফ ভাইয়ের
সাথে। নগরীর নামী একটা রেস্টুরেন্টে বসে জমিয়ে আড্ডা দিলাম দুজন, নানান
প্রসঙ্গে আলোচনা হলো। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম দেশ ও জাতি নিয়ে লোকমান ভাইয়ের
স্বপ্ন,পরিকল্পনা।
লোকমান ভাইয়ের প্রস্তাবিত সামাজিক-পারিবারিক ইসলামী আন্দোলনের কথা আসতেই, চলে এলো প্রেম-বিয়ে প্রসঙ্গ। সরাসরিই প্রশ্ন করলাম, ইয়াং ছেলে-মেয়েরাতো একে অপরের প্রেমে পড়ে যাবে, এটা সামাল দিবেন কিভাবে?
লোকমান ভাই ভালো বক্তা, মুচকি হেসেই কথা শুরু করলেন, প্রেম ভাঙার কি প্রয়োজন? বিয়ে দিয়ে দিলেইতো হয়। বিয়ে করে যত খুশি প্রেম করুক, প্রব্লেম কি?
তিনি থামলেননা বলতেই থাকলেন, দেখেন শামীম ভাই, কেউ যদি আপনার মনে ঢুকে যায় তবে ব্যাপারটা হবে ভয়াবহ, দুনিয়ার সব কিছু পেলেও সেটা আপনার মন থেকে মুছতে পারবেননা।
লোকমান ভাইয়ের কথাটা মাথা হতে উড়িয়ে দিতে পারলামনা, হাসতে হাসতেই ভাবছিলাম, লোকমান ভাইয়ের এই একটি কথাতেই গোটা ইয়াং জেনারেশন তার মুরিদ হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে তিনটি ঘটনার উল্লেখ করছি, তবে ঘটনার ভিকটিমদের নাম এখানে উহ্য/ছদ্ম থাকবে।
ঘটনা একঃ সদ্য বিবাহিত রাসেল ভাই, সারাক্ষণ কেমন যেনো অস্থিরতার মধ্যে পার করেন। কোনো কাজেই ছন্দ নেই। উদাসিন ভাব দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। নিজের উদাসীনতার ব্যাপারে রাসেল ভাইও খুব সচেতন, মাঝে মধ্যেই বলেন, আমার সম্ভবত মানসিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন, আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
একদিন চেপে ধরলাম রাসেল ভাইকে, কাহিনী কি খুলে বলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাসেল ভাই যেটা বললেন সেটা হচ্ছে, মামাতো বোনকে পছন্দ করতেন, বিয়ের কথাবার্তা প্রায় ফাইনাল সেই মূহুর্তেই রাসেল ভাইয়ের বাবা বেকে বসলেন, বিয়েটা হলোনা।
মামাতো বোনের বিয়ে হলো এক যায়গায়, রাসেল ভাইয়ের অন্য যায়গায়।
এখনো নাকি প্রায়ই মাঝ রাতে উঠে রাসেল ভাই কান্নাকাটি করেন। কথাগুলো বলতে বলতে রাসেল ভাইয়ের চোখ ভিজে উঠলো, কিছুই বলার ছিলোনা চুপ-চাপ শুনে গেলাম। আর আক্ষেপ করছিলাম রাসেল ভাইর বউয়ের জন্য।
ঘটনা দুইঃ আমার এক দুরসম্পর্কের আত্মীয়, মহাধুম ধাম করে বিয়ে করেছেন। সাংসারিক জীবনে ফুটফুটে দুটি সন্তান এলো। একদিন বাচ্চা দুটিকে ঘুম পাড়িয়ে তাদের মা চলে গেলো চাচাতো ভাইয়ের সাথে।
বিয়ের পূর্বে মেয়েটির সম্পর্ক ছিলো চাচাতো ভাইয়ের সাথে, বাবা-মা মেয়ের অমতে জোর করে এখানে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটিও অন্যত্র বিয়ে করেছিলো, কিন্তু সাংসারিক জীবনে দু’জনেই ছিলো চরম পর্যায়ে অসুখী।
পরিণতিতে ভেঙে গেলো দু’টি সংসার এবং দুই সংসারের চারটি সন্তান হারালো তাদের বাবা এবং মাকে।
ঘটনা তিনঃ সপ্তাহ খানেক আগের ঘটনা বলছি। আমার এক বন্ধু, খুবই কাছের বন্ধু, গত সাত বছর ধরে মেয়েটির সাথে রিলেশন। রিলেশনটা ছিলো ওপেন সিক্রেট। দুই ফ্যামিলীতেই রিলেশনের ব্যাপারটি জানতো।
সংসার চালানোর উপযোগী চাকরী না থাকার কারণে বিয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলোনা বন্ধুটি।
গত সপ্তাহে মেয়েটিকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হলো।
সেদিন বন্ধুটি ফোন করেছিলো, আমি জানতাম ও খুব কান্নাকাটি করবে তাই ভয়ে ফোন করিনাই। কারও কান্না শুনলে আমি ইমোশনাল হয়ে যাই, আমারো খুব কান্না পায়।
শুনেছি মেয়েটি নাকি বিয়ের পরে চুরি করে ফোন করেছিলো, যথেস্ট কেঁদেছে।
সার্বিক কাহিনী শুনে যেটা মনে হলো, আমার এই বন্ধু যদি শক্ত মনের মানুষ না হয়, তবে এই বিয়ের ভবিষ্যতও যথেষ্ট দূর্বল।
আমরা যদি উপরের তিনটি ঘটনা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারতাম, তবে কমন যে প্রতিক্রিয়া দেখাতাম সেটা হচ্ছে, আমরা সবাই সমস্বরে এদেরকে গালি দিতাম। চরিত্রহীন ছেলে-মেয়ে, পরকীয়া প্রেম করে, এগুলো সবই হিন্দি সিরিয়ালের কুফল, ইত্যাদি ইত্যাদি বলে। কিন্তু ঘটনার অন্তরালের খবর কয়জনে রাখে?
মানুষ হৃদয় এবং রক্তে মাংসের মানুষ, আল্লাহ মানুষকে আবেগ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। জীবনের নানান বাকে যে কাউকে ভালো লেগে যেতেই পারে, এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। হ্যা একটা উপায় আছে সেটা হচ্ছে চোখ বন্ধ করে রাখা। তবে এটাও ঠিক, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয়না।
এখানে যে বিষয় গুলো শিক্ষণীয় রয়েছে।
১। বাবা মায়েদের প্রতি, সন্তানের সুখের জন্য তাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন? একটু ভেবে দেখেন, সন্তান সেখানে সুখি হবেতো! নাকি তার সুখ অন্য কোথাও বন্দী হয়ে গেছে।
আর যাই করেন, জেনে বুঝে নিজের সন্তানকে তিলে তিলে হত্যা করবেননা।
২। ইয়াংদের প্রতি, আমরা মুসলিম, এই ধরনের অবৈধ সম্পর্ক ইসলাম অনুমোদন দেয়না। যদি এই টাইপের সম্পর্কে কখনো জড়িয়ে পরেন এবং পরিণতিতে ভয়াবহ রকমের দুঃখ পান। তবে এটাই বুঝতে হবে, এটা আপনার করা পাপের শাস্তি। আল্লাহ দুনিয়াতেই আপনাকে শাস্তি দিয়ে আপনার পাপ মোচন করে দিচ্ছেন, এই কথা ভেবে অন্তত মানসিক তৃপ্তি পেতে পারেন।
৩। বিয়ের পরেও যারা পূর্বের সম্পর্কের কথা চিন্তা করে দুঃখ পাচ্ছেন, সাংসারিক জীবনে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেননা, তাদের জন্য করুণা ছাড়া আর করার কিছুই নেই। একটা পবিত্র ধর্মীয় সম্পর্কের চাইতে অবৈধ আবেগের মূল্য কখনো বেশি হতে পারেনা।
লেখাঃ প্রেম এবং বিয়ে
© শামীম রেজা
১৪/০৪/২০১৪
লোকমান ভাইয়ের প্রস্তাবিত সামাজিক-পারিবারিক ইসলামী আন্দোলনের কথা আসতেই, চলে এলো প্রেম-বিয়ে প্রসঙ্গ। সরাসরিই প্রশ্ন করলাম, ইয়াং ছেলে-মেয়েরাতো একে অপরের প্রেমে পড়ে যাবে, এটা সামাল দিবেন কিভাবে?
লোকমান ভাই ভালো বক্তা, মুচকি হেসেই কথা শুরু করলেন, প্রেম ভাঙার কি প্রয়োজন? বিয়ে দিয়ে দিলেইতো হয়। বিয়ে করে যত খুশি প্রেম করুক, প্রব্লেম কি?
তিনি থামলেননা বলতেই থাকলেন, দেখেন শামীম ভাই, কেউ যদি আপনার মনে ঢুকে যায় তবে ব্যাপারটা হবে ভয়াবহ, দুনিয়ার সব কিছু পেলেও সেটা আপনার মন থেকে মুছতে পারবেননা।
লোকমান ভাইয়ের কথাটা মাথা হতে উড়িয়ে দিতে পারলামনা, হাসতে হাসতেই ভাবছিলাম, লোকমান ভাইয়ের এই একটি কথাতেই গোটা ইয়াং জেনারেশন তার মুরিদ হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে তিনটি ঘটনার উল্লেখ করছি, তবে ঘটনার ভিকটিমদের নাম এখানে উহ্য/ছদ্ম থাকবে।
ঘটনা একঃ সদ্য বিবাহিত রাসেল ভাই, সারাক্ষণ কেমন যেনো অস্থিরতার মধ্যে পার করেন। কোনো কাজেই ছন্দ নেই। উদাসিন ভাব দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। নিজের উদাসীনতার ব্যাপারে রাসেল ভাইও খুব সচেতন, মাঝে মধ্যেই বলেন, আমার সম্ভবত মানসিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন, আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
একদিন চেপে ধরলাম রাসেল ভাইকে, কাহিনী কি খুলে বলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাসেল ভাই যেটা বললেন সেটা হচ্ছে, মামাতো বোনকে পছন্দ করতেন, বিয়ের কথাবার্তা প্রায় ফাইনাল সেই মূহুর্তেই রাসেল ভাইয়ের বাবা বেকে বসলেন, বিয়েটা হলোনা।
মামাতো বোনের বিয়ে হলো এক যায়গায়, রাসেল ভাইয়ের অন্য যায়গায়।
এখনো নাকি প্রায়ই মাঝ রাতে উঠে রাসেল ভাই কান্নাকাটি করেন। কথাগুলো বলতে বলতে রাসেল ভাইয়ের চোখ ভিজে উঠলো, কিছুই বলার ছিলোনা চুপ-চাপ শুনে গেলাম। আর আক্ষেপ করছিলাম রাসেল ভাইর বউয়ের জন্য।
ঘটনা দুইঃ আমার এক দুরসম্পর্কের আত্মীয়, মহাধুম ধাম করে বিয়ে করেছেন। সাংসারিক জীবনে ফুটফুটে দুটি সন্তান এলো। একদিন বাচ্চা দুটিকে ঘুম পাড়িয়ে তাদের মা চলে গেলো চাচাতো ভাইয়ের সাথে।
বিয়ের পূর্বে মেয়েটির সম্পর্ক ছিলো চাচাতো ভাইয়ের সাথে, বাবা-মা মেয়ের অমতে জোর করে এখানে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটিও অন্যত্র বিয়ে করেছিলো, কিন্তু সাংসারিক জীবনে দু’জনেই ছিলো চরম পর্যায়ে অসুখী।
পরিণতিতে ভেঙে গেলো দু’টি সংসার এবং দুই সংসারের চারটি সন্তান হারালো তাদের বাবা এবং মাকে।
ঘটনা তিনঃ সপ্তাহ খানেক আগের ঘটনা বলছি। আমার এক বন্ধু, খুবই কাছের বন্ধু, গত সাত বছর ধরে মেয়েটির সাথে রিলেশন। রিলেশনটা ছিলো ওপেন সিক্রেট। দুই ফ্যামিলীতেই রিলেশনের ব্যাপারটি জানতো।
সংসার চালানোর উপযোগী চাকরী না থাকার কারণে বিয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলোনা বন্ধুটি।
গত সপ্তাহে মেয়েটিকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হলো।
সেদিন বন্ধুটি ফোন করেছিলো, আমি জানতাম ও খুব কান্নাকাটি করবে তাই ভয়ে ফোন করিনাই। কারও কান্না শুনলে আমি ইমোশনাল হয়ে যাই, আমারো খুব কান্না পায়।
শুনেছি মেয়েটি নাকি বিয়ের পরে চুরি করে ফোন করেছিলো, যথেস্ট কেঁদেছে।
সার্বিক কাহিনী শুনে যেটা মনে হলো, আমার এই বন্ধু যদি শক্ত মনের মানুষ না হয়, তবে এই বিয়ের ভবিষ্যতও যথেষ্ট দূর্বল।
আমরা যদি উপরের তিনটি ঘটনা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারতাম, তবে কমন যে প্রতিক্রিয়া দেখাতাম সেটা হচ্ছে, আমরা সবাই সমস্বরে এদেরকে গালি দিতাম। চরিত্রহীন ছেলে-মেয়ে, পরকীয়া প্রেম করে, এগুলো সবই হিন্দি সিরিয়ালের কুফল, ইত্যাদি ইত্যাদি বলে। কিন্তু ঘটনার অন্তরালের খবর কয়জনে রাখে?
মানুষ হৃদয় এবং রক্তে মাংসের মানুষ, আল্লাহ মানুষকে আবেগ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। জীবনের নানান বাকে যে কাউকে ভালো লেগে যেতেই পারে, এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। হ্যা একটা উপায় আছে সেটা হচ্ছে চোখ বন্ধ করে রাখা। তবে এটাও ঠিক, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয়না।
এখানে যে বিষয় গুলো শিক্ষণীয় রয়েছে।
১। বাবা মায়েদের প্রতি, সন্তানের সুখের জন্য তাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন? একটু ভেবে দেখেন, সন্তান সেখানে সুখি হবেতো! নাকি তার সুখ অন্য কোথাও বন্দী হয়ে গেছে।
আর যাই করেন, জেনে বুঝে নিজের সন্তানকে তিলে তিলে হত্যা করবেননা।
২। ইয়াংদের প্রতি, আমরা মুসলিম, এই ধরনের অবৈধ সম্পর্ক ইসলাম অনুমোদন দেয়না। যদি এই টাইপের সম্পর্কে কখনো জড়িয়ে পরেন এবং পরিণতিতে ভয়াবহ রকমের দুঃখ পান। তবে এটাই বুঝতে হবে, এটা আপনার করা পাপের শাস্তি। আল্লাহ দুনিয়াতেই আপনাকে শাস্তি দিয়ে আপনার পাপ মোচন করে দিচ্ছেন, এই কথা ভেবে অন্তত মানসিক তৃপ্তি পেতে পারেন।
৩। বিয়ের পরেও যারা পূর্বের সম্পর্কের কথা চিন্তা করে দুঃখ পাচ্ছেন, সাংসারিক জীবনে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেননা, তাদের জন্য করুণা ছাড়া আর করার কিছুই নেই। একটা পবিত্র ধর্মীয় সম্পর্কের চাইতে অবৈধ আবেগের মূল্য কখনো বেশি হতে পারেনা।
লেখাঃ প্রেম এবং বিয়ে
© শামীম রেজা
১৪/০৪/২০১৪
No comments:
Post a Comment