ছোট
বেলায় রুপকথার গল্প পড়তাম খুব। গল্প গুলোতে রাজাদের কথা থাকতো, রানীদের
কথা থাকতো, আরো থাকতো রাজপুত্র-রাজকন্যাদের গল্প। সেইসব গল্পে দেখতাম
রাজপুত্রের জন্ম হয়েছে, সেই উপলক্ষে রাজ্য ব্যাপি সাতদিন সাতরাতের উৎসব
ঘোশণা করা হলো। আবার রাজকন্যার বিয়ে হয়েছে, সেই উপলক্ষে সাত দিন সাত রাত
উৎসব ঘোশণা করা হলো।
একদিন আমারো জন্ম হয়েছিলো। নিতান্তই সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণেই সম্ভবত আমার জন্ম উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে সাত দিন সাত রাতের উৎসব পালন করা হয়নাই, তবে আমাকে নিয়ে মা যে খুব কষ্ট করেছেন সেটা ভালো করেই জানি।
এখন যেমন কিছু একটা হলেই আমরা ধেঁই ধেঁই করে নাচতে নাচতে ডিএসএলআর নিয়ে ল্যাপটপে বসে যাই ব্লগ-ফেসবুকে পোস্ট করতে, তখনকার দিনের মানুষও একই কাজ করতো, তবে সেটা একটু ভিন্ন ভাবে।
তখনতো আর ঘড়ে ঘড়ে ক্যামেরা ছিলোনা, ছবি তুলতে হতো স্টুডিওতে গিয়ে। তখনকার শিক্ষিত মানুষেরা ডায়রী নিয়ে বসে যেতো, নিজেদের আবেগ অনুভূতি ব্যাক্ত করার একটাই উপায় ছিলো, সেটা হচ্ছে কাগজের ডায়রী।
ছোট বেলায় ইঁচড়ে পাকা ছিলাম ভীষণ, যা পেতাম তাই পড়ে ফেলতাম। একদিন চুরি করে আব্বার ডায়রী নিয়ে বসে গেলাম। পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা যায়গায় এসে থেমে গেলাম, ভীষণ হাঁসি পাচ্ছিলো লেখাটা পড়ে। আব্বা লিখেছেন, “আজ ৬ই এপ্রিল, আমার অতি আদরের ছোট ছেলে শামীম দুনিয়াতে এসেছে”।
হাসতে হাসতেই ভাবছিলাম, ডাইরিটা যদি আব্বা সেদিন না লিখে বর্তমান সময়ে লিখতেন, তবে লেখাটাতে একটু চেঞ্জ আসতো, তিনি হয়তো লিখতেন, “আজ আমার অতি আদরের বজ্জাত পুত্র শামীম দুনিয়াতে আগমন করেছে”
জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে আব্বা-আম্মার হাড় কালো করে দিয়েছিলাম ছোট বেলায়, ঘাড় ত্যাড়ামি কত প্রকার ও কি কি, ভাবলেও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমার সামনে এমন ঘাড় ত্যাড়া পোলাপাইন পাইলে নিশ্চিত পিটিয়ে ঘাড় সোজা করার ট্রাই করতাম। আমার কপাল ভালো আব্বা-আম্মা সেই চেস্টা করেননাই!
বাহির হতে আব্বা আসলেই আমাদের জন্য কিছুনা কিছু খাবার জিনিস নিয়ে আসতেন। দরজা খুলেই হাত বাড়িয়ে দিতাম, আব্বা কি আনছেন? আব্বা মাঝে মধ্যেই মজা করে বলতেন কিছুই আনিনাই, আমরা বিশ্বাস করতামনা। একদিকে আব্বার খালি হাত, অন্য দিকে গোমড়া মুখ, দ্বিধায় পড়ে যেতাম, পরে খুঁজে খুঁজে ঠিকই বের করে ফেলতাম, বাহিরে কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন!
একদিন ঘরে লৈট্টা মাছ আনা হলো, মাছের চেহারা দেখেইতো আমার অবস্থা কেরোসিন, ওয়াক থু! এই জিনিস আমি খাইনা!
আপা হাওয়া দিলো, এইটা সামুদ্রিক মাছ, মাছ খাইলে চোখের জ্যোতি বাড়ে।
জ্যোতি বাড়লে কি হয়?
জ্যোতি বাড়লে চোখে বেশি দেখে।
আমিতো সবই দেখি!
জ্যোতি বাড়লে আরো বেশি দেখবি।
জ্যোতি বাড়লে বেশি দেখবো কেমনে? আব্বা যদি বাহিরে কিছু রেখে আসে তাইলে কি দেয়ালের ভেতর দিয়ে দেখতে পাবো?
আমার সেই বোকা বোকা কথাগুলো নিয়ে বড় আপা এখনো খেপায়! চোখের জ্যোতি বাড়লে দেয়ালের ভেতর দিয়েও দেখা যায়!
আজ ছিলো আমার জন্মদিন, এবারের জন্মদিনটা কেনো যেনো একটু ভিন্নভাবে এলো, সেই ছোট বেলায় পড়া রুপকথার গল্পগুলো মনে পরে গেলো। জন্মদিন-বিয়ে উপলক্ষে সাত দিন, সাত রাতের উৎসব!
৬তারিখ জন্মদিন, অথচ ইনবক্সে শুভেচ্ছা পাচ্ছিলাম সেই ৪তারিখ হতে। প্রথমে কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলাম, জন্মদিনের শুভেচ্ছা! কবে, কখন! পরে বুঝলাম, বন্ধুদের অগ্রিম শুভেচ্ছা পাচ্ছি।
গতকাল বন্ধুরা ধরলো, জন্মদিন উপলক্ষে খাওয়াতে হবে। মুখ গোমড়া করেই বললাম, আমি জন্মদিন পালন করিনা, জন্মদিন পালন করা গুনাহ! (আসল কথা হচ্ছে পকেটের টাকার জন্য মায়া হচ্ছিলো!)
বন্ধুরা চেপে ধরলো, নো ফাঁকি-ঝুকি! হয় খাওয়াতে হবে, নয়তো খাইতে হবে।
রাজি হয়ে গেলাম দ্বিতীয়টার জন্য, জন্মদিন পালন করা গুনাহ’র কাজ হলেও খাওয়াটা নিশ্চই হালাল হবে!
যেই কথা সেই কাজ, ছয়জনে মিলে দুটো অটো রিক্সা ভাড়া করা হলো। চলে গেলাম ঐতিহ্যবাহী পিকনিক স্পট ফয়েজলেকের একটি রেস্ট্রুরেন্টে, কপাল খারাপ, সেটা বন্ধ!
রিক্সা ঘুড়িয়ে চলে গেলাম নগরীর জিইসি মোড়ে।
এমনিতে মুরগীর গ্রীল খুব একটা খাইনা, পত্রিকায় দেখেছিলাম মরা মুরগী দিয়ে নাকি গ্রিল বানানো হয়!
তবে জাতে বাঙালী, ফ্রি পেলে আলকাতরাও নাকি গায়ে মাখে! আমিও ব্যাতিক্রম নই। গ্রীলের অর্ডার দেয়া হলো।
এরপরে এলো কফির পালা, সেন্ট্রাল প্লাজার নিচে ‘ঘরোয়া’র কফিতে চুমুক। ওদিকে বন্ধু আলীর ক্রমাগত ফোন, “শালা! আমাকে ফেলেই একা একা! তুই আয়, তোর খবর আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি!”
মূল চমকটা ছিলো আমার মেসে, বাসায় এসেই অবাক হয়ে দেখলাম বিশাল আয়োজন। দুই রকম মাছ, মুরগী, তিন-চার রকমের সালাদ, এবং শুভ জন্মদিন! কৃতজ্ঞতা বন্ধুদের প্রতি।
অগণিত ভাই-বোন ইনবক্সে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কেক পেয়েছি পঞ্চাশটারও বেশি, সবগুলোই ভার্চুয়াল কেক, দেখতে সুন্দর! মজার মজার সব ম্যাসেজ। এক ভাই লিখেছেন, শুভ পাখি দিবস! এইটা আবার কি জিনিস?! আরেক ভাই লিখেছেন, শুভ পয়দা দিবস! মাশাআল্লাহ, আপনারা পারেনও বেশ! আমি হাসতেই আছি। আরেক আপু লিখেছেন, শুভ কান্না দিবস, এই দিনে আপনি প্রথম কেঁদেছিলেন! তারপরে সবার দোয়া, অনেক অনেক দোয়া। আল্লাহ এই দোয়া গুলো কবুল করুন, আমিন।
জন্মদিনটাকে শুভজন্মদিন হিসেবে স্মরণ-বরণ করে নেয়ায় এবং আমার জন্য দোয়া করায় সবার প্রতিই কৃতজ্ঞতা।
এই স্পেশাল দিনটাতে সবার প্রতিই ভালোবাসা, যারা আমায় ভালোবাসে, অথবা যারা আমায় অপছন্দ করে।
লেখাঃ জন্মদিন আমার জন্মদিন
© শামীম রেজা
০৬/০৪/২০১৪
একদিন আমারো জন্ম হয়েছিলো। নিতান্তই সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণেই সম্ভবত আমার জন্ম উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে সাত দিন সাত রাতের উৎসব পালন করা হয়নাই, তবে আমাকে নিয়ে মা যে খুব কষ্ট করেছেন সেটা ভালো করেই জানি।
এখন যেমন কিছু একটা হলেই আমরা ধেঁই ধেঁই করে নাচতে নাচতে ডিএসএলআর নিয়ে ল্যাপটপে বসে যাই ব্লগ-ফেসবুকে পোস্ট করতে, তখনকার দিনের মানুষও একই কাজ করতো, তবে সেটা একটু ভিন্ন ভাবে।
তখনতো আর ঘড়ে ঘড়ে ক্যামেরা ছিলোনা, ছবি তুলতে হতো স্টুডিওতে গিয়ে। তখনকার শিক্ষিত মানুষেরা ডায়রী নিয়ে বসে যেতো, নিজেদের আবেগ অনুভূতি ব্যাক্ত করার একটাই উপায় ছিলো, সেটা হচ্ছে কাগজের ডায়রী।
ছোট বেলায় ইঁচড়ে পাকা ছিলাম ভীষণ, যা পেতাম তাই পড়ে ফেলতাম। একদিন চুরি করে আব্বার ডায়রী নিয়ে বসে গেলাম। পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা যায়গায় এসে থেমে গেলাম, ভীষণ হাঁসি পাচ্ছিলো লেখাটা পড়ে। আব্বা লিখেছেন, “আজ ৬ই এপ্রিল, আমার অতি আদরের ছোট ছেলে শামীম দুনিয়াতে এসেছে”।
হাসতে হাসতেই ভাবছিলাম, ডাইরিটা যদি আব্বা সেদিন না লিখে বর্তমান সময়ে লিখতেন, তবে লেখাটাতে একটু চেঞ্জ আসতো, তিনি হয়তো লিখতেন, “আজ আমার অতি আদরের বজ্জাত পুত্র শামীম দুনিয়াতে আগমন করেছে”
জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে আব্বা-আম্মার হাড় কালো করে দিয়েছিলাম ছোট বেলায়, ঘাড় ত্যাড়ামি কত প্রকার ও কি কি, ভাবলেও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমার সামনে এমন ঘাড় ত্যাড়া পোলাপাইন পাইলে নিশ্চিত পিটিয়ে ঘাড় সোজা করার ট্রাই করতাম। আমার কপাল ভালো আব্বা-আম্মা সেই চেস্টা করেননাই!
বাহির হতে আব্বা আসলেই আমাদের জন্য কিছুনা কিছু খাবার জিনিস নিয়ে আসতেন। দরজা খুলেই হাত বাড়িয়ে দিতাম, আব্বা কি আনছেন? আব্বা মাঝে মধ্যেই মজা করে বলতেন কিছুই আনিনাই, আমরা বিশ্বাস করতামনা। একদিকে আব্বার খালি হাত, অন্য দিকে গোমড়া মুখ, দ্বিধায় পড়ে যেতাম, পরে খুঁজে খুঁজে ঠিকই বের করে ফেলতাম, বাহিরে কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন!
একদিন ঘরে লৈট্টা মাছ আনা হলো, মাছের চেহারা দেখেইতো আমার অবস্থা কেরোসিন, ওয়াক থু! এই জিনিস আমি খাইনা!
আপা হাওয়া দিলো, এইটা সামুদ্রিক মাছ, মাছ খাইলে চোখের জ্যোতি বাড়ে।
জ্যোতি বাড়লে কি হয়?
জ্যোতি বাড়লে চোখে বেশি দেখে।
আমিতো সবই দেখি!
জ্যোতি বাড়লে আরো বেশি দেখবি।
জ্যোতি বাড়লে বেশি দেখবো কেমনে? আব্বা যদি বাহিরে কিছু রেখে আসে তাইলে কি দেয়ালের ভেতর দিয়ে দেখতে পাবো?
আমার সেই বোকা বোকা কথাগুলো নিয়ে বড় আপা এখনো খেপায়! চোখের জ্যোতি বাড়লে দেয়ালের ভেতর দিয়েও দেখা যায়!
আজ ছিলো আমার জন্মদিন, এবারের জন্মদিনটা কেনো যেনো একটু ভিন্নভাবে এলো, সেই ছোট বেলায় পড়া রুপকথার গল্পগুলো মনে পরে গেলো। জন্মদিন-বিয়ে উপলক্ষে সাত দিন, সাত রাতের উৎসব!
৬তারিখ জন্মদিন, অথচ ইনবক্সে শুভেচ্ছা পাচ্ছিলাম সেই ৪তারিখ হতে। প্রথমে কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলাম, জন্মদিনের শুভেচ্ছা! কবে, কখন! পরে বুঝলাম, বন্ধুদের অগ্রিম শুভেচ্ছা পাচ্ছি।
গতকাল বন্ধুরা ধরলো, জন্মদিন উপলক্ষে খাওয়াতে হবে। মুখ গোমড়া করেই বললাম, আমি জন্মদিন পালন করিনা, জন্মদিন পালন করা গুনাহ! (আসল কথা হচ্ছে পকেটের টাকার জন্য মায়া হচ্ছিলো!)
বন্ধুরা চেপে ধরলো, নো ফাঁকি-ঝুকি! হয় খাওয়াতে হবে, নয়তো খাইতে হবে।
রাজি হয়ে গেলাম দ্বিতীয়টার জন্য, জন্মদিন পালন করা গুনাহ’র কাজ হলেও খাওয়াটা নিশ্চই হালাল হবে!
যেই কথা সেই কাজ, ছয়জনে মিলে দুটো অটো রিক্সা ভাড়া করা হলো। চলে গেলাম ঐতিহ্যবাহী পিকনিক স্পট ফয়েজলেকের একটি রেস্ট্রুরেন্টে, কপাল খারাপ, সেটা বন্ধ!
রিক্সা ঘুড়িয়ে চলে গেলাম নগরীর জিইসি মোড়ে।
এমনিতে মুরগীর গ্রীল খুব একটা খাইনা, পত্রিকায় দেখেছিলাম মরা মুরগী দিয়ে নাকি গ্রিল বানানো হয়!
তবে জাতে বাঙালী, ফ্রি পেলে আলকাতরাও নাকি গায়ে মাখে! আমিও ব্যাতিক্রম নই। গ্রীলের অর্ডার দেয়া হলো।
এরপরে এলো কফির পালা, সেন্ট্রাল প্লাজার নিচে ‘ঘরোয়া’র কফিতে চুমুক। ওদিকে বন্ধু আলীর ক্রমাগত ফোন, “শালা! আমাকে ফেলেই একা একা! তুই আয়, তোর খবর আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি!”
মূল চমকটা ছিলো আমার মেসে, বাসায় এসেই অবাক হয়ে দেখলাম বিশাল আয়োজন। দুই রকম মাছ, মুরগী, তিন-চার রকমের সালাদ, এবং শুভ জন্মদিন! কৃতজ্ঞতা বন্ধুদের প্রতি।
অগণিত ভাই-বোন ইনবক্সে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কেক পেয়েছি পঞ্চাশটারও বেশি, সবগুলোই ভার্চুয়াল কেক, দেখতে সুন্দর! মজার মজার সব ম্যাসেজ। এক ভাই লিখেছেন, শুভ পাখি দিবস! এইটা আবার কি জিনিস?! আরেক ভাই লিখেছেন, শুভ পয়দা দিবস! মাশাআল্লাহ, আপনারা পারেনও বেশ! আমি হাসতেই আছি। আরেক আপু লিখেছেন, শুভ কান্না দিবস, এই দিনে আপনি প্রথম কেঁদেছিলেন! তারপরে সবার দোয়া, অনেক অনেক দোয়া। আল্লাহ এই দোয়া গুলো কবুল করুন, আমিন।
জন্মদিনটাকে শুভজন্মদিন হিসেবে স্মরণ-বরণ করে নেয়ায় এবং আমার জন্য দোয়া করায় সবার প্রতিই কৃতজ্ঞতা।
এই স্পেশাল দিনটাতে সবার প্রতিই ভালোবাসা, যারা আমায় ভালোবাসে, অথবা যারা আমায় অপছন্দ করে।
লেখাঃ জন্মদিন আমার জন্মদিন
© শামীম রেজা
০৬/০৪/২০১৪
No comments:
Post a Comment