জিহাদ নাকি ফিতনা


বর্তমান বিশ্বের মুসলমানরা বহুভাগে বিভক্ত, সবাই মুখে ঐক্য ঐক্য করে হৈচৈ করলেও, ঐক্য নামের বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধার মতো কাউকে পাওয়া যায় নাই।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পদ্ধতী কি হবে এটা নিয়ে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর মধ্যে বিতর্ক অনেক পুরাতন বিষয়। একটা সময় বাংলাদেশের আলেম সমাজ ঘোষণা দিয়েছিলো ইসলামের নামে রাজনীতি করা হারাম। এবং এই হারামের মাঝেই শেষ পর্যন্ত আরাম খুঁজে পেয়েছেন ফতোয়া দেয়া আলেমরা।
ইদানিং যে বিষয়টা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক চালু হয়েছে সেটা হচ্ছে কুফরী গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব কিনা। অথবা ইসলাম প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হচ্ছে জিহাদ এবং ক্বিতাল।
আরো যে কথাটি অহরহ শোনা যাচ্ছে সেটা হচ্ছে হাসিনা খালেদা দুইজনই মুরতাদ (যেহেতু তারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করেনা)।

কিছু কিছু গ্রুপের লেখা পড়লে যেটা মনে হয়, একজন নও মুসলিম যদি এই ভাইদেরকে প্রশ্ন করেন, ভাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম কায়েমের উপায় কি? তাহলে নিঃসন্দেহে তারা জবাব দিবেন, জিহাদ এবং ক্বিতাল (জনগণের সমর্থনের কোনো প্রয়োজন নেই!) এবং ওই নওমুসলীমকে তারা শেষ পর্যন্ত মুরতাদ বানিয়ে ছেড়ে দিবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ হিংস্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে কারো ঠেকায় পড়েনাই। মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য দেখেই ইসলাম গ্রহণ করবে, তরবারী হাতে যুদ্ধরত এবং চাপিয়ে দেয়া ইসলাম কেউ গ্রহণ করবেনা এটাই স্বাভাবিক।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাসূল (সঃ)এর কর্মপন্থা কি ছিলো? ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে গোত্রপতিরা সবাই ছিলেন কাফের। একদিন হঠাৎ করে তিনি নবুওয়াত প্রাপ্ত হলেন এবং তরবারী হাতে ঝাপিয়ে পড়লেন গোত্রপতিদের উপরে। হয় ইসলাম গ্রহণ করো, কুরানের আইন অনুযায়ী শাসন পদ্ধতী চালু করো, নয়তো জীবন দাও, এটাই ছিলো রাসূল (সঃ) এর কর্মপদ্ধতী! এটাইতো মূল কথা তাইনা?

জানি আপনারা আমার উপরের কথাটির সাথে দ্বিমত করবেন, কিন্তু দ্বিমত করার কারণ কি? আপনারাতো একই কথা প্রতিনিয়ত অহরহ বলেই যাচ্ছেন, বলেই যাচ্ছেন। আপনাদের কথা হচ্ছে, বাতিলের উৎখাত করতে হবে একমাত্র সশস্ত্র পন্থায়, এর বাইরে মধ্যপন্থা বলতে কোনো পন্থা থাকতে পারেনা।

হযরত সুমাইয়া (রাঃ) যখন শহীদ হলেন, তখন রাসূল (সঃ) কি করেছিলেন? জিহাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন? কিংবা ক্বিতালের নির্দেশ দিয়েছিলেন? যদি না দিয়ে থাকেন তবে কেনো দেননাই? ইসলাম বাস্তবতার ধর্ম, ইসলামে গোয়ার্তুমি নামক কোনো সিস্টেমের সফটওয়্যার নয়।
যখন যুদ্ধ করা প্রয়োজন তখন যুদ্ধ করতে হবে। আর যখন ধৈর্য ধরে মার খাওয়া প্রয়োজন, তখন মার খেতে হবে। উহ! আহ! করে অভিযোগ জানানো যাবেনা।

কেউ কেউ হাসিনা খালেদাকে মুরতাদ ঘোষণা করে ফেললেন, কথা শুনলে সত্যিই হাঁসি পায়। হাসিনা খালেদা যদি মুরতাদ হয় তাহলে বাংলাদেশে বাকি মুসলমানদের মুসলিম বলছেন কেনো? লোম বাছতে গিয়েতো কম্বল উজার। আপনার আমার আব্বা-আম্মা আওয়ামীলীগ-বিএনপির সাপোর্টার! যুদ্ধ আগে নিজের ঘর থেকে শুরু করেন, নিজের আব্বা-আম্মাকে হত্যা করে মুরতাদের শাস্তি কার্যকর করেন, পরে হাসিনা খালেদার উপর এ্যাপ্লাই করেন।

মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কিভাবে গঠিত হয়েছিলো? আল্লাহর রাসূল (সঃ) অস্ত্র নিয়ে মদিনায় হামলা করেছিলেন নাকি মদিনার জনগণই আল্লাহর আইন স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছিলো?

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ইসলামের হুকুমত চায়না, এখন আপনি কি করবেন? জোর করে অস্ত্র ঠেকিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন? সেটা কি সম্ভব হবে, অথবা সেটা কি রাসূল (সঃ)এর সুন্নতি পদ্ধতী?
মাক্কী জীবনে আল্লাহর রাসূল (সঃ) কি জোর করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? নাকি আগে মানুষ তৈরি করেছিলেন, মানুষকে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছিলেন? ইসলামের কল্যানময় পথের সন্ধান দিয়েছিলেন?

মানুষের মন জয় করার কি প্রয়োজন, মানুষকে ইসলামের শিক্ষা দেয়ার কি প্রয়োজন? সর্টকাট ওয়েতো আছেই।
অমুক মুরতাদ ওমুককে হত্যা করো, অমুক কাফের তাকে দেশ থেকে বহিস্কার করো। অমুক বিচারপতি ইসলামের বিধান মানেনা, তার গায়ের উপর বোমা মারো। সুযোগ পাইলে প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করো।
একটু ভেবে দেখবেন কি, আপনারা ইসলাম কায়েমের চেস্টা করছেন নাকি রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিতনা ছড়িয়ে দেয়ার চেস্টায় সর্বদাই ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন?

লেখাঃ জিহাদ নাকি ফিতনা
© শামীম রেজা
১৪/০৪/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment