হালে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় বইছে যে মুভিটি নিয়ে সেটি হলো “ইনোসেন্স অব মুসলিম’স”। মূলত মুসলমানদের নবী হজরত মুহাম্মদ(সঃ) কে নিয়ে বিদ্রুপাত্মক সমালোচনাই এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কারণ।
ছবিটির রাইটার এবং ডিরেক্টর “স্যাম বাসিল”, ইসরাইলের নাগরিক, ইহুদী ব্যাসিল ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। প্রযোজনা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া প্রবাসী ইসলাম-বিদ্বেষী এক মিশরীয় কপটিক খ্রিস্টান “মরিস সাদেক”। দুই ঘন্টার ছবিটি করতে বাজেট ছিলো ৫ মিলিয়ন ডলার। একশ জনের বেশি ইহুদী এর অর্থের যোগান দিয়েছে।
সিনেমাটি নির্মানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্যাম ভাসিলি ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি এর সাথে অজ্ঞাত স্থান থেকে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এটা একটা রাজনৈতিক সিনেমা। ইরাক ও আফগান যুদ্ধে আমেরিকা বহু জীবন ও সম্পদ নষ্ট করছে; আমরা এখন আদর্শিক যুদ্ধ করছি”। তিনি আরো বলেন, “আমার দু’ঘন্টার সিনেমায় ইসলাম-বিরোধী রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করতে চেয়েছি”।
ছবিটি স্যূট করা হয় ২০১১সালের গ্রীস্মে তিন মাস সময় নিয়ে। এবং প্রথম ইউটিউবে আপলোড দেয়া হয় এবছরের ১লা জুলাই, সেটি ছিলো ১৩ মিনিটের একটি ট্রেইলার। এখন স্বাভাবীক ভাবেই প্রশ্ন জাগে টুইন টাওয়ার হামলার মাসেই কেন ছবিটি নিয়ে এত হৈ চৈ? বিশ্লেষকদের ধারণা, আমেরিকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই মূল লক্ষ। বিশ্বব্যাপী মার্কিন বিরোধী বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত ভাবে সিনেমাটি নিয়ে উত্তেজনা সৃস্টি করা হয়েছে। গুনগত মান বিবেচনা করলে এই সিনেমাটি আলোচনারই যোগ্য নয়।
এটা এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য যে ইহুদীবাদী ইসরাইলের আশির্বাদ না নিয়ে কেউ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেনা। বারাক ওবামার সাথে ইদানিং ইহুদীবাদী ইসরাইলের সম্পর্কটা ভালো কাটছেনা, ইরানে হামলা সহ বিভিন্ন ইস্যুতে ওবামা ইসরাইলের সাথে দ্বিমত পোষণ করছেন। এমনকি সম্প্রতি তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে সাক্ষাৎ দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ অবস্থায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন করা ইসরাইলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রসিডেন্ট প্রার্থী মিট রমনি ইতোমধ্যেই ইহুদীদের পক্ষে বেশ কিছু বক্তব্য দিয়ে ইসরাইলের আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছেন। বিশ্লেষকদের অভিমত, আমেরিকার জনগনের মধ্যে যদি ইসলাম ভীতি ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে তারা অবশ্যই এমন একজনকে তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিবে, যে কিনা মুসলমানদের চরম শিক্ষা দিতে পারবে। সেই হিসেবে ওবামার চেয়ে মিট রমনি অনেকটাই এগিয়ে আছেন। মুহাম্মদ (সঃ) কে অবমাননা করে সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আমেরিকাকে ঘৃণার পাত্র হিসেব উপস্থাপনের এবং আমেরিকা ও মুসলমানদের মুখোমুখি সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয়ার উদ্দ্যেশেই সিনেমাটি নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে উত্তেজনা সৃস্টি করা হয়েছে।
মুভিটি নিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখিন হয়েছে হোয়াইট হাউজ, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে গুগল’কে অনুরোধ করা হয়েছে ইউটিউব থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেয়ার জন্য। যদিও গুগল ভিডিও সরিয়ে ফেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। হিলারী ক্লিনটন মুভিটি সম্পর্কে তাঁর ক্ষোভ জানিয়েছেন। চলচিত্রের বিষয়বস্তু ও এর মাধ্যমে যে বার্তা পৌছে দেয়া হয়েছে, তাকে বেশ “বিরক্তিকর ও তিরস্কারযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন তিনি। ওয়াশিংটনে আয়োজিত যুক্তরাস্ট্র-মরক্কো দ্বিপাক্ষীয় কৌশলগত আলোচনার উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, মার্কিন সরকারের সঙ্গে ভিডিওটির কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন,আমরা এর বিষয়বস্তু ও বার্তা প্রত্যাক্ষান করছি। হিলারী চলচ্চিত্রটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলেন, বিদ্রুপাত্মক কোন উদ্দেশ্যে একটি মহান ধর্মকে অবমাননা ও এর মাধ্যমে ক্রোধকে উসকে দেয়ার বিষয়টি সেখানে প্রতিয়মান।
যাই হোক, বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ভেতরেও ব্যতিক্রম ধর্মীয় কিছু প্রতিবাদ সকলের দৃস্টি আকর্ষন করেছে, এই ধরনের প্রতিবাদ ইসলাম বিরোধীদের গালে নিঃসন্দেহে চপেটাঘাত হিসেবে কাজ করছে। যুক্তরাজ্যের মুসলিমদের সংগঠন “ডিসকভার ইসলাম ইউকে” মুহাম্মদ (সঃ) কে অবমাননা করে চলচিত্র নির্মানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১,১০,০০০ কপি কুরাআন এবং রাসূল (সঃ) এর জীবনী গ্রন্থ বিতরণ করেছে।
সর্বশেষ যে প্রত্যাশা থাকবে, সেটা হচ্ছে প্রতিবাদ হোক শিক্ষায়, প্রতিবাদ হোক জ্ঞানে।
লেখাটির ফেসবুক লিঙ্ক
লেখাটির ফেসবুক লিঙ্ক
No comments:
Post a Comment