কলঙ্কিত পিতার সম্মান রক্ষা


এক
গ্রামের এক নামকড়া চোর ছিলো, নাম বলতে বদনাম ছিলো হেব্বি। তার কাজ ছিলো কবরস্থানের লাশের কাফনের কাপড় চুরি করা।
একদিন মৃত্যু শয্যায় চোরটি তার সকল ছেলেকে ডাক দিয়ে বললেন, বাবারা তোমরা জানো আমি জীবনে অনেক গুনাহ করেছি, মানুষ আমাকে অনেক খারাপ জানে, তোমরা এমন কিছু করবে যাতে মানুষ আমাকে ভালো বলে, আমাকে গালি না দেয়। ছেলেরা কথা দিলো তারা পিতার সম্মান রাখবে। অবশেষে চোরটি মারা গেলো।
কিছুদিন পরে দেখা গেলো, ছেলেরা কবর থেকে কাফনের কাপড় চুরি করে, লাশের পেছনের দিকে বাঁশ ঢুকিয়ে ঝুলিয়ে রাখছে।
লোকে বলাবলি শুরু করলো, বাপেতো এর চাইতে অনেক ভালো ছিলো, শুধু চুরি করতো অন্য কিছু করতোনা, ছেলেরা এত খারাপ কেমনে হইলো!?

দুই
এক দেশে মস্তবড় এক রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, চোরের খনিতেই যিনি বসবাস করতেন। কথায় কথায় মানুষ হত্যা করতে যিনি আনন্দিত হতেন। শত্রুকে হত্যা করে, সংসদে দাড়িয়ে হুংকার ছেড়ে বলতেন কোথায় অমুক!? বিরোধী রাজনৈতিক দলের চল্লিশ হাজার রাজনৈতিক নেতা হত্যা করেছিলেন সেই নেতা। দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। বাকস্বাধীনতার কন্ঠরোধ করে সবগুলো পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। মানুষ চরমভাবে ঘৃনা করতে শুরু করলো এই নেতাকে, ক্ষুব্ধ দেশপ্রেমিকরা তাকে হত্যা করলো। মানুষ পেলো স্বাধীনতা, মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস গ্রহণের অনুভূতি।
মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে সেই নেতা তার পরিণতি বুঝতে পেরে তার মেয়েকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, মা দেশের মানুষ যেভাবে ক্ষিপ্ত হয়েছে আমি হয়তো আর বেশিদিন বাচতে পারবোনা, দেশের মানুষ আমাকে 'বাকশাল' বলে গালি দেয়। তুই আমার সম্মান রাখিস, এমন কিছু করবি যাতে মানুষ আমাকে গালি দিতে না পারে।

মেয়ে তার কথা রেখেছিলো, পিতার সম্মান রক্ষার স্বার্থে ক্ষমতায় বসে প্রথমেই সেনা অফিসারদের হত্যা করলো পিলখানাতে, তারপরে গণহত্যা চালালো সাঈদী মুক্তি আন্দোলনের কর্মীদের উপর। শ্রমিকরাইবা বাদ থাকবে কেনো, নিজের দলের নেতাকে উস্কানী দিয়ে সাভারে হত্যা করা হলো হাজার হাজার পোষাক শ্রমিককে। না, পিতার বদনাম এতেও ঘুচে নাই! এবার তিনি নজর দিলেন দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেও আলেমদের উপর, মতিঝিলে হত্যা করা হলো হাজার হাজার আলেম ওলামাকে। পিতার চাইতেও ভয়াবহ ভাবে দেশের বিরোধী মতের সকল টিভি এবং পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হলো, গ্রেপ্তার করে রিমান্ড নির্যাতন করা হলো সম্পাদককে। তালা মারা হলো বিরোধী দলের অফিসে, অঘোষিত ভাবে দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একমাত্র সরকারীদল করার অনুমতি দান করা হলো।
পিতার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, এখন মানুষ বলাবলি করছে, এর চাইতেতো তার পিতা অনেক ভালো ছিলো, পিতা মানুষ হত্যা করলেও দেশের উপকার করেছে, কিন্তু মেয়েতো দেশকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে! মেয়ে এতো খারাপ হইলো কেমনে!?
এখন আর মানুষ 'বাকশালী' বলে গালি দেয়না, সবাই এখন 'আওয়ামীলীগ' বলে গালি দেয়!!

লেখা তৈরীঃ ১৩/০৫/২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment