আমাদের মিডিয়া নেই

পয়েলা বৈশাখ অনুষ্ঠানে হিন্দুয়ানী সাংস্কৃতি ফলো করা হচ্ছে, এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। এখন একটা কাজ করতে হবে, ছহিহ ইসলামীক সিস্টেমে পয়েলা বৈশাখ উদযাপন করতে হবে।
দলে দলে হিজাবী নারী এবং পাঞ্জাবী টুপি পড়া পুরুষেরা গিয়ে রমনায় পান্তা ইলিশ খাবে। মঞ্চে উঠে সাইমুম-পাঞ্জেরী শিল্পীগোষ্ঠি খাটি ইসলামিক পদ্ধতীতে গান গাইবে, “এসো হে বৈশাখ এসো এসো”। আর গানের তালে তালে হিজাবী বোন এবং জুব্বা পড়া ভাইয়েরা বৈশাখি নৃত্য প্রদর্শন করবে। এভাবেই হয়ে যাবে ইসলামিক পয়েলা বৈশাখ।

বিশ্বব্যাপী বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগীতা করা হয়, এটা অনৈসলামিক জিনিস। অত্যান্ত খারাপ একটা কালচার, এটাকে চেঞ্জ করতে হবে। কিভাবে চেঞ্জ করবেন? হ্যা উপায় বেরিয়ে এসেছে। এইতো সেদিন ইন্দোনেশিয়ায় হয়ে গেলো ওয়ার্ল্ড মুসলিমাহ হিজাব কম্পিটিশন। একদল হিজাবী নারী সহিহ ইসলামীক সিস্টেমে হিজাব পরিধান করে ক্যাটওয়াক প্রদর্শন করবে, আর বিচারকরা তাদের দেহের ভাজ দেখে নম্বর দিবেন, কে বেশি সুন্দরী। হয়ে গেলো একটা সমস্যার সমাধান, ইসলামিক সুন্দরী প্রতিযোগীতা।

হিন্দুদের দূর্গা পূজা, কালি পূজা, লক্ষি পূজা সহ আরো কত সুন্দর সুন্দর পূজা আছে, তাদের কত সুন্দর সুন্দর মূর্তি। সেই মূর্তির সামনে তারা ঢোল তবলা নিয়ে নাচ গান করে। মুসলমানের বাচ্চা কাচ্চারা গিয়েও সেখানে নাচ গান করে, এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না।
দারুণ একটা সমাধান বের হয়ে গেলো, মুসলমানদের কতশত ওলি আওয়ালীয়া আছে, তাদের কবরের পাশে গিয়েওতো এমন ঢোল পিটিয়ে নাচ গান করা যায়।
শুরু হয়ে গেলো ঢোল পিটিয়ে উদ্দাম নৃত্য, মুসলমানরা পিছিয়ে থাকবে কেনো? মুসলমানদের অনেক অনেক দেব দেবী, যেমনঃ খাজা বাবা, ভাণ্ডারী বাবা, বদনা বাবা, মিচকিন বাবা, পোলাউ বাবা, বিরানী বাবা, গরম বিবি ইত্যাদি।

হিন্দুদের খৃস্টানদের সানি লিওন আছে, মুসলমানদের কোনো সানি লিওন নাই। মুসলমানের বাচ্চারা সব হিন্দু সানি লিওনের পেইজে গিয়ে লাইক দেয়। কবে যে ইসলামিক সানি লিওন আসবে সেই আশায় বসে আছি। ইসলামীক সানি লিওন থাকলে এই জাতি অন্তত হিন্দুয়ানী কালচার হতে রক্ষা পাবে।

মাঝে মধ্যে হতাশ হয়ে যাই, মুসলমানদের বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্ব দেখে অসহায় বোধ করি। ইহুদি-বাম নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া আমাদের দিকে একেকটা সাংস্কৃতিক বোমা ছুড়ে দেয়, আর আমরা সেটা প্রতিরোধে সেটাকে ইসলামাইজ করে নেয়ার চেস্টায় মগ্ন থাকি।
গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢেলে কোনো লাভ নেই, আমাদের মিডিয়া নেই, আমাদের সাহিত্য নেই, আমাদের শিল্পী নেই, এবং আবারো যেটা বলবো, আমাদের মিডিয়া নেই। আমরা পয়েলা বৈশাখ নামক বোমার মোকাবেলায় হিমশিম খাবো, এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকবো, অন্যদিকে মিডিয়া নতুন একটা বোমা নিয়ে হাজির হবে।

সাংস্কৃতিক ভাবে আমরা নিঃস্ব নই, আমাদের আছে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। প্রব্লেম হচ্ছে আমরা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে গেছি। আমাদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তার অভাব সৃষ্টি হয়েছে। আমরা নিজেরাতো কিছু করবোইনা, বাম-রাম’রা যদি কিছু করে তাহলেই হইছে, গেলো গেলো করে শোরগোল তুলবো।
রাম-বামরা যেভাবে ফাকা মাঠে গোল দিচ্ছে এর জন্য আমরাই দায়ী।
আমরা সবাই ব্যবসায়ী, টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছি। ইসলামীক সাংস্কৃতির বিকাশে টাকা ঢেলেতো লাভ নেই, তার চাইতে বৈশাখী কোনো অনুষ্ঠানের স্পন্সর হলে ভালো প্রচারণা পাওয়া যাবে। সেখানে নৃত্য হবে, গান হবে, মৌলবাদ বিরোধী নাটক হবে, হাত তালি হবে, ব্যবসায়ের প্রসার হবে। অনেক অনেক টাকা হবে, সেই টাকা দিয়ে স্বপরিবারের মক্কায় গিয়ে হজ্ব করা যাবে।
সবচাইতে বেশি যে লাভ হবে সেটা হচ্ছে, নামের পূর্বে আলহাজ্ব লাগানো যাবে।

লেখাঃ আমাদের মিডিয়া নেই
© শামীম রেজা
১৬/০৪/২০১৪

Post Comment

প্রেম এবং বিয়ে

সেদিন দেখা হলো অনলাইনের জনপ্রিয় লেখক, সংগঠক, লোকমান বিন ইউসুফ ভাইয়ের সাথে। নগরীর নামী একটা রেস্টুরেন্টে বসে জমিয়ে আড্ডা দিলাম দুজন, নানান প্রসঙ্গে আলোচনা হলো। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম দেশ ও জাতি নিয়ে লোকমান ভাইয়ের স্বপ্ন,পরিকল্পনা।

লোকমান ভাইয়ের প্রস্তাবিত সামাজিক-পারিবারিক ইসলামী আন্দোলনের কথা আসতেই, চলে এলো প্রেম-বিয়ে প্রসঙ্গ। সরাসরিই প্রশ্ন করলাম, ইয়াং ছেলে-মেয়েরাতো একে অপরের প্রেমে পড়ে যাবে, এটা সামাল দিবেন কিভাবে?
লোকমান ভাই ভালো বক্তা, মুচকি হেসেই কথা শুরু করলেন, প্রেম ভাঙার কি প্রয়োজন? বিয়ে দিয়ে দিলেইতো হয়। বিয়ে করে যত খুশি প্রেম করুক, প্রব্লেম কি?
তিনি থামলেননা বলতেই থাকলেন, দেখেন শামীম ভাই, কেউ যদি আপনার মনে ঢুকে যায় তবে ব্যাপারটা হবে ভয়াবহ, দুনিয়ার সব কিছু পেলেও সেটা আপনার মন থেকে মুছতে পারবেননা।
লোকমান ভাইয়ের কথাটা মাথা হতে উড়িয়ে দিতে পারলামনা, হাসতে হাসতেই ভাবছিলাম, লোকমান ভাইয়ের এই একটি কথাতেই গোটা ইয়াং জেনারেশন তার মুরিদ হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে তিনটি ঘটনার উল্লেখ করছি, তবে ঘটনার ভিকটিমদের নাম এখানে উহ্য/ছদ্ম থাকবে।

ঘটনা একঃ সদ্য বিবাহিত রাসেল ভাই, সারাক্ষণ কেমন যেনো অস্থিরতার মধ্যে পার করেন। কোনো কাজেই ছন্দ নেই। উদাসিন ভাব দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। নিজের উদাসীনতার ব্যাপারে রাসেল ভাইও খুব সচেতন, মাঝে মধ্যেই বলেন, আমার সম্ভবত মানসিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন, আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
একদিন চেপে ধরলাম রাসেল ভাইকে, কাহিনী কি খুলে বলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাসেল ভাই যেটা বললেন সেটা হচ্ছে, মামাতো বোনকে পছন্দ করতেন, বিয়ের কথাবার্তা প্রায় ফাইনাল সেই মূহুর্তেই রাসেল ভাইয়ের বাবা বেকে বসলেন, বিয়েটা হলোনা।
মামাতো বোনের বিয়ে হলো এক যায়গায়, রাসেল ভাইয়ের অন্য যায়গায়।
এখনো নাকি প্রায়ই মাঝ রাতে উঠে রাসেল ভাই কান্নাকাটি করেন। কথাগুলো বলতে বলতে রাসেল ভাইয়ের চোখ ভিজে উঠলো, কিছুই বলার ছিলোনা চুপ-চাপ শুনে গেলাম। আর আক্ষেপ করছিলাম রাসেল ভাইর বউয়ের জন্য।

ঘটনা দুইঃ আমার এক দুরসম্পর্কের আত্মীয়, মহাধুম ধাম করে বিয়ে করেছেন। সাংসারিক জীবনে ফুটফুটে দুটি সন্তান এলো। একদিন বাচ্চা দুটিকে ঘুম পাড়িয়ে তাদের মা চলে গেলো চাচাতো ভাইয়ের সাথে।
বিয়ের পূর্বে মেয়েটির সম্পর্ক ছিলো চাচাতো ভাইয়ের সাথে, বাবা-মা মেয়ের অমতে জোর করে এখানে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটিও অন্যত্র বিয়ে করেছিলো, কিন্তু সাংসারিক জীবনে দু’জনেই ছিলো চরম পর্যায়ে অসুখী।
পরিণতিতে ভেঙে গেলো দু’টি সংসার এবং দুই সংসারের চারটি সন্তান হারালো তাদের বাবা এবং মাকে।

ঘটনা তিনঃ সপ্তাহ খানেক আগের ঘটনা বলছি। আমার এক বন্ধু, খুবই কাছের বন্ধু, গত সাত বছর ধরে মেয়েটির সাথে রিলেশন। রিলেশনটা ছিলো ওপেন সিক্রেট। দুই ফ্যামিলীতেই রিলেশনের ব্যাপারটি জানতো।
সংসার চালানোর উপযোগী চাকরী না থাকার কারণে বিয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলোনা বন্ধুটি।
গত সপ্তাহে মেয়েটিকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হলো।
সেদিন বন্ধুটি ফোন করেছিলো, আমি জানতাম ও খুব কান্নাকাটি করবে তাই ভয়ে ফোন করিনাই। কারও কান্না শুনলে আমি ইমোশনাল হয়ে যাই, আমারো খুব কান্না পায়।
শুনেছি মেয়েটি নাকি বিয়ের পরে চুরি করে ফোন করেছিলো, যথেস্ট কেঁদেছে।
সার্বিক কাহিনী শুনে যেটা মনে হলো, আমার এই বন্ধু যদি শক্ত মনের মানুষ না হয়, তবে এই বিয়ের ভবিষ্যতও যথেষ্ট দূর্বল।

আমরা যদি উপরের তিনটি ঘটনা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারতাম, তবে কমন যে প্রতিক্রিয়া দেখাতাম সেটা হচ্ছে, আমরা সবাই সমস্বরে এদেরকে গালি দিতাম। চরিত্রহীন ছেলে-মেয়ে, পরকীয়া প্রেম করে, এগুলো সবই হিন্দি সিরিয়ালের কুফল, ইত্যাদি ইত্যাদি বলে। কিন্তু ঘটনার অন্তরালের খবর কয়জনে রাখে?

মানুষ হৃদয় এবং রক্তে মাংসের মানুষ, আল্লাহ মানুষকে আবেগ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। জীবনের নানান বাকে যে কাউকে ভালো লেগে যেতেই পারে, এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। হ্যা একটা উপায় আছে সেটা হচ্ছে চোখ বন্ধ করে রাখা। তবে এটাও ঠিক, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয়না।

এখানে যে বিষয় গুলো শিক্ষণীয় রয়েছে।
১। বাবা মায়েদের প্রতি, সন্তানের সুখের জন্য তাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন? একটু ভেবে দেখেন, সন্তান সেখানে সুখি হবেতো! নাকি তার সুখ অন্য কোথাও বন্দী হয়ে গেছে।
আর যাই করেন, জেনে বুঝে নিজের সন্তানকে তিলে তিলে হত্যা করবেননা।

২। ইয়াংদের প্রতি, আমরা মুসলিম, এই ধরনের অবৈধ সম্পর্ক ইসলাম অনুমোদন দেয়না। যদি এই টাইপের সম্পর্কে কখনো জড়িয়ে পরেন এবং পরিণতিতে ভয়াবহ রকমের দুঃখ পান। তবে এটাই বুঝতে হবে, এটা আপনার করা পাপের শাস্তি। আল্লাহ দুনিয়াতেই আপনাকে শাস্তি দিয়ে আপনার পাপ মোচন করে দিচ্ছেন, এই কথা ভেবে অন্তত মানসিক তৃপ্তি পেতে পারেন।

৩। বিয়ের পরেও যারা পূর্বের সম্পর্কের কথা চিন্তা করে দুঃখ পাচ্ছেন, সাংসারিক জীবনে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেননা, তাদের জন্য করুণা ছাড়া আর করার কিছুই নেই। একটা পবিত্র ধর্মীয় সম্পর্কের চাইতে অবৈধ আবেগের মূল্য কখনো বেশি হতে পারেনা।

লেখাঃ প্রেম এবং বিয়ে
© শামীম রেজা
১৪/০৪/২০১৪

Post Comment

বাঙালী মুসলিম

বাংলার মুসলিম হয়ে গেছে বাঙালী,
মূর্তি মুখোশে, উৎসব কাঙালী।
নারী আর পুরুষে, ঢলা ঢলি জমলো,
ধর্মীয় গোড়ামি কিছুটা কমলো।
পোশাকে যাও আছে, করে দিবে নিঃশেষ,
নজরে চেনা দায়, ধর্মীয় বিশ্বেস।
মুসলিম মেয়ে গুলো হয়ে গেছে আধুনিক,
উগ্র লেবাসে, মৌ মৌ চারিদিক।
কপালে লাল টিপ, সিঁদুরের চিহ্ন,
নামে তারা মুসলিম, কাজ তবু ভিন্ন।
ছেলেরাও বসে নেই, একধাপ এগিয়ে,
রাজপথে ধুতি পরে, ঠ্যাং দুটি চেগিয়ে।
এই হলো ন্যাচারাল, বাঙালি মুসলিম,
দেখলেই জ্বর আসে, ভয়ে গা হিম হিম।

কবিতাঃ বাঙালী মুসলিম।
©শামীম রেজা
১৪/০৪/২০১৪

Post Comment

এলোরে বৈশাখ

এলোরে বৈশাখ, উৎসবে চল,
রাজপথে নারী আর পুরুষের ঢল।
লাল নীল শাড়িতে মেয়ে গুলো ঢঙ্গি,
ফুল বাবু পুরুষেরা, লুল লুল ভঙ্গি।
মুসলিম গেলো কই, সব দেখি হিন্দু,
কপালে লাল টিপ, সিঁদুরের বিন্দু।
ধুতি গুলো প্যাচ দেয়া, মাথাতে টুপি নাই,
দেখলেই বুঝা যায়, হিন্দুর জাত ভাই।
ছবি আর মূর্তি, পূজো যেনো হবে আজ,
বাঙালির হাতে হাতে মূর্তির কারুকাজ।
এই হলো বৈশাখে বাঙালীর উৎসব,
মুসলিম মরে গেছে, হয়ে গেছে ভূত সব।

কবিতাঃ এলোরে বৈশাখ।
© শামীম রেজা
১৪/০৪/২০১৪

Post Comment

প্রার্থনা


তোমার কাছেই দুহাত তুলি, মাথা নোয়াই রোজ,
দেখছো সবি, বুঝো সবি, জানো মনের খোঁজ।
চাচ্ছি শুধু তোমার কাছে, উদার তোমার হাত।
দিচ্ছো ঢেলে যাকে তাকে, দেখছোনা তার জাত।
একটুকু দাও, অল্প করে, ধুলার পরিমান,
তোমার ধুলো আমার কাছে পাহাড়ো সমান।
দাও করুণা, দয়া তোমার, অঢেল তোমার ধন,
তোমার দয়ায় দাও ভরিয়ে, ক্ষুদ্র আমার মন।
হে রহমান, রহিম তুমি, তুমি দয়াল দাতা।
তোমার দয়ায় পেলাম এমন, দয়াল পিতা মাতা।
একটুকু দাও, চাচ্ছি আবার, অল্প হলেও দাও,
তোমার তরে দু’চোখ ভরা, অশ্রু টুকু নাও।

কবিতাঃ প্রার্থনা
© শামীম রেজা
১০/০৪/২০১৪

Post Comment

জিহাদ নাকি ফিতনা


বর্তমান বিশ্বের মুসলমানরা বহুভাগে বিভক্ত, সবাই মুখে ঐক্য ঐক্য করে হৈচৈ করলেও, ঐক্য নামের বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধার মতো কাউকে পাওয়া যায় নাই।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পদ্ধতী কি হবে এটা নিয়ে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর মধ্যে বিতর্ক অনেক পুরাতন বিষয়। একটা সময় বাংলাদেশের আলেম সমাজ ঘোষণা দিয়েছিলো ইসলামের নামে রাজনীতি করা হারাম। এবং এই হারামের মাঝেই শেষ পর্যন্ত আরাম খুঁজে পেয়েছেন ফতোয়া দেয়া আলেমরা।
ইদানিং যে বিষয়টা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক চালু হয়েছে সেটা হচ্ছে কুফরী গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব কিনা। অথবা ইসলাম প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হচ্ছে জিহাদ এবং ক্বিতাল।
আরো যে কথাটি অহরহ শোনা যাচ্ছে সেটা হচ্ছে হাসিনা খালেদা দুইজনই মুরতাদ (যেহেতু তারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করেনা)।

কিছু কিছু গ্রুপের লেখা পড়লে যেটা মনে হয়, একজন নও মুসলিম যদি এই ভাইদেরকে প্রশ্ন করেন, ভাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম কায়েমের উপায় কি? তাহলে নিঃসন্দেহে তারা জবাব দিবেন, জিহাদ এবং ক্বিতাল (জনগণের সমর্থনের কোনো প্রয়োজন নেই!) এবং ওই নওমুসলীমকে তারা শেষ পর্যন্ত মুরতাদ বানিয়ে ছেড়ে দিবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ হিংস্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে কারো ঠেকায় পড়েনাই। মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য দেখেই ইসলাম গ্রহণ করবে, তরবারী হাতে যুদ্ধরত এবং চাপিয়ে দেয়া ইসলাম কেউ গ্রহণ করবেনা এটাই স্বাভাবিক।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাসূল (সঃ)এর কর্মপন্থা কি ছিলো? ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে গোত্রপতিরা সবাই ছিলেন কাফের। একদিন হঠাৎ করে তিনি নবুওয়াত প্রাপ্ত হলেন এবং তরবারী হাতে ঝাপিয়ে পড়লেন গোত্রপতিদের উপরে। হয় ইসলাম গ্রহণ করো, কুরানের আইন অনুযায়ী শাসন পদ্ধতী চালু করো, নয়তো জীবন দাও, এটাই ছিলো রাসূল (সঃ) এর কর্মপদ্ধতী! এটাইতো মূল কথা তাইনা?

জানি আপনারা আমার উপরের কথাটির সাথে দ্বিমত করবেন, কিন্তু দ্বিমত করার কারণ কি? আপনারাতো একই কথা প্রতিনিয়ত অহরহ বলেই যাচ্ছেন, বলেই যাচ্ছেন। আপনাদের কথা হচ্ছে, বাতিলের উৎখাত করতে হবে একমাত্র সশস্ত্র পন্থায়, এর বাইরে মধ্যপন্থা বলতে কোনো পন্থা থাকতে পারেনা।

হযরত সুমাইয়া (রাঃ) যখন শহীদ হলেন, তখন রাসূল (সঃ) কি করেছিলেন? জিহাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন? কিংবা ক্বিতালের নির্দেশ দিয়েছিলেন? যদি না দিয়ে থাকেন তবে কেনো দেননাই? ইসলাম বাস্তবতার ধর্ম, ইসলামে গোয়ার্তুমি নামক কোনো সিস্টেমের সফটওয়্যার নয়।
যখন যুদ্ধ করা প্রয়োজন তখন যুদ্ধ করতে হবে। আর যখন ধৈর্য ধরে মার খাওয়া প্রয়োজন, তখন মার খেতে হবে। উহ! আহ! করে অভিযোগ জানানো যাবেনা।

কেউ কেউ হাসিনা খালেদাকে মুরতাদ ঘোষণা করে ফেললেন, কথা শুনলে সত্যিই হাঁসি পায়। হাসিনা খালেদা যদি মুরতাদ হয় তাহলে বাংলাদেশে বাকি মুসলমানদের মুসলিম বলছেন কেনো? লোম বাছতে গিয়েতো কম্বল উজার। আপনার আমার আব্বা-আম্মা আওয়ামীলীগ-বিএনপির সাপোর্টার! যুদ্ধ আগে নিজের ঘর থেকে শুরু করেন, নিজের আব্বা-আম্মাকে হত্যা করে মুরতাদের শাস্তি কার্যকর করেন, পরে হাসিনা খালেদার উপর এ্যাপ্লাই করেন।

মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কিভাবে গঠিত হয়েছিলো? আল্লাহর রাসূল (সঃ) অস্ত্র নিয়ে মদিনায় হামলা করেছিলেন নাকি মদিনার জনগণই আল্লাহর আইন স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছিলো?

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ইসলামের হুকুমত চায়না, এখন আপনি কি করবেন? জোর করে অস্ত্র ঠেকিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন? সেটা কি সম্ভব হবে, অথবা সেটা কি রাসূল (সঃ)এর সুন্নতি পদ্ধতী?
মাক্কী জীবনে আল্লাহর রাসূল (সঃ) কি জোর করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? নাকি আগে মানুষ তৈরি করেছিলেন, মানুষকে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছিলেন? ইসলামের কল্যানময় পথের সন্ধান দিয়েছিলেন?

মানুষের মন জয় করার কি প্রয়োজন, মানুষকে ইসলামের শিক্ষা দেয়ার কি প্রয়োজন? সর্টকাট ওয়েতো আছেই।
অমুক মুরতাদ ওমুককে হত্যা করো, অমুক কাফের তাকে দেশ থেকে বহিস্কার করো। অমুক বিচারপতি ইসলামের বিধান মানেনা, তার গায়ের উপর বোমা মারো। সুযোগ পাইলে প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করো।
একটু ভেবে দেখবেন কি, আপনারা ইসলাম কায়েমের চেস্টা করছেন নাকি রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিতনা ছড়িয়ে দেয়ার চেস্টায় সর্বদাই ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন?

লেখাঃ জিহাদ নাকি ফিতনা
© শামীম রেজা
১৪/০৪/২০১৪

Post Comment

জন্মদিন আমার জন্মদিন

ছোট বেলায় রুপকথার গল্প পড়তাম খুব। গল্প গুলোতে রাজাদের কথা থাকতো, রানীদের কথা থাকতো, আরো থাকতো রাজপুত্র-রাজকন্যাদের গল্প। সেইসব গল্পে দেখতাম রাজপুত্রের জন্ম হয়েছে, সেই উপলক্ষে রাজ্য ব্যাপি সাতদিন সাতরাতের উৎসব ঘোশণা করা হলো। আবার রাজকন্যার বিয়ে হয়েছে, সেই উপলক্ষে সাত দিন সাত রাত উৎসব ঘোশণা করা হলো।

একদিন আমারো জন্ম হয়েছিলো। নিতান্তই সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণেই সম্ভবত আমার জন্ম উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে সাত দিন সাত রাতের উৎসব পালন করা হয়নাই, তবে আমাকে নিয়ে মা যে খুব কষ্ট করেছেন সেটা ভালো করেই জানি।

এখন যেমন কিছু একটা হলেই আমরা ধেঁই ধেঁই করে নাচতে নাচতে ডিএসএলআর নিয়ে ল্যাপটপে বসে যাই ব্লগ-ফেসবুকে পোস্ট করতে, তখনকার দিনের মানুষও একই কাজ করতো, তবে সেটা একটু ভিন্ন ভাবে।
তখনতো আর ঘড়ে ঘড়ে ক্যামেরা ছিলোনা, ছবি তুলতে হতো স্টুডিওতে গিয়ে। তখনকার শিক্ষিত মানুষেরা ডায়রী নিয়ে বসে যেতো, নিজেদের আবেগ অনুভূতি ব্যাক্ত করার একটাই উপায় ছিলো, সেটা হচ্ছে কাগজের ডায়রী।

ছোট বেলায় ইঁচড়ে পাকা ছিলাম ভীষণ, যা পেতাম তাই পড়ে ফেলতাম। একদিন চুরি করে আব্বার ডায়রী নিয়ে বসে গেলাম। পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা যায়গায় এসে থেমে গেলাম, ভীষণ হাঁসি পাচ্ছিলো লেখাটা পড়ে। আব্বা লিখেছেন, “আজ ৬ই এপ্রিল, আমার অতি আদরের ছোট ছেলে শামীম দুনিয়াতে এসেছে”।
হাসতে হাসতেই ভাবছিলাম, ডাইরিটা যদি আব্বা সেদিন না লিখে বর্তমান সময়ে লিখতেন, তবে লেখাটাতে একটু চেঞ্জ আসতো, তিনি হয়তো লিখতেন, “আজ আমার অতি আদরের বজ্জাত পুত্র শামীম দুনিয়াতে আগমন করেছে”

জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে আব্বা-আম্মার হাড় কালো করে দিয়েছিলাম ছোট বেলায়, ঘাড় ত্যাড়ামি কত প্রকার ও কি কি, ভাবলেও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমার সামনে এমন ঘাড় ত্যাড়া পোলাপাইন পাইলে নিশ্চিত পিটিয়ে ঘাড় সোজা করার ট্রাই করতাম। আমার কপাল ভালো আব্বা-আম্মা সেই চেস্টা করেননাই!

বাহির হতে আব্বা আসলেই আমাদের জন্য কিছুনা কিছু খাবার জিনিস নিয়ে আসতেন। দরজা খুলেই হাত বাড়িয়ে দিতাম, আব্বা কি আনছেন? আব্বা মাঝে মধ্যেই মজা করে বলতেন কিছুই আনিনাই, আমরা বিশ্বাস করতামনা। একদিকে আব্বার খালি হাত, অন্য দিকে গোমড়া মুখ, দ্বিধায় পড়ে যেতাম, পরে খুঁজে খুঁজে ঠিকই বের করে ফেলতাম, বাহিরে কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন!

একদিন ঘরে লৈট্টা মাছ আনা হলো, মাছের চেহারা দেখেইতো আমার অবস্থা কেরোসিন, ওয়াক থু! এই জিনিস আমি খাইনা!
আপা হাওয়া দিলো, এইটা সামুদ্রিক মাছ, মাছ খাইলে চোখের জ্যোতি বাড়ে।
জ্যোতি বাড়লে কি হয়?
জ্যোতি বাড়লে চোখে বেশি দেখে।
আমিতো সবই দেখি!
জ্যোতি বাড়লে আরো বেশি দেখবি।
জ্যোতি বাড়লে বেশি দেখবো কেমনে? আব্বা যদি বাহিরে কিছু রেখে আসে তাইলে কি দেয়ালের ভেতর দিয়ে দেখতে পাবো?
আমার সেই বোকা বোকা কথাগুলো নিয়ে বড় আপা এখনো খেপায়! চোখের জ্যোতি বাড়লে দেয়ালের ভেতর দিয়েও দেখা যায়!

আজ ছিলো আমার জন্মদিন, এবারের জন্মদিনটা কেনো যেনো একটু ভিন্নভাবে এলো, সেই ছোট বেলায় পড়া রুপকথার গল্পগুলো মনে পরে গেলো। জন্মদিন-বিয়ে উপলক্ষে সাত দিন, সাত রাতের উৎসব!
৬তারিখ জন্মদিন, অথচ ইনবক্সে শুভেচ্ছা পাচ্ছিলাম সেই ৪তারিখ হতে। প্রথমে কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলাম, জন্মদিনের শুভেচ্ছা! কবে, কখন! পরে বুঝলাম, বন্ধুদের অগ্রিম শুভেচ্ছা পাচ্ছি।

গতকাল বন্ধুরা ধরলো, জন্মদিন উপলক্ষে খাওয়াতে হবে। মুখ গোমড়া করেই বললাম, আমি জন্মদিন পালন করিনা, জন্মদিন পালন করা গুনাহ! (আসল কথা হচ্ছে পকেটের টাকার জন্য মায়া হচ্ছিলো!)
বন্ধুরা চেপে ধরলো, নো ফাঁকি-ঝুকি! হয় খাওয়াতে হবে, নয়তো খাইতে হবে।
রাজি হয়ে গেলাম দ্বিতীয়টার জন্য, জন্মদিন পালন করা গুনাহ’র কাজ হলেও খাওয়াটা নিশ্চই হালাল হবে!
যেই কথা সেই কাজ, ছয়জনে মিলে দুটো অটো রিক্সা ভাড়া করা হলো। চলে গেলাম ঐতিহ্যবাহী পিকনিক স্পট ফয়েজলেকের একটি রেস্ট্রুরেন্টে, কপাল খারাপ, সেটা বন্ধ!
রিক্সা ঘুড়িয়ে চলে গেলাম নগরীর জিইসি মোড়ে।

এমনিতে মুরগীর গ্রীল খুব একটা খাইনা, পত্রিকায় দেখেছিলাম মরা মুরগী দিয়ে নাকি গ্রিল বানানো হয়!
তবে জাতে বাঙালী, ফ্রি পেলে আলকাতরাও নাকি গায়ে মাখে! আমিও ব্যাতিক্রম নই। গ্রীলের অর্ডার দেয়া হলো।
এরপরে এলো কফির পালা, সেন্ট্রাল প্লাজার নিচে ‘ঘরোয়া’র কফিতে চুমুক। ওদিকে বন্ধু আলীর ক্রমাগত ফোন, “শালা! আমাকে ফেলেই একা একা! তুই আয়, তোর খবর আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি!”

মূল চমকটা ছিলো আমার মেসে, বাসায় এসেই অবাক হয়ে দেখলাম বিশাল আয়োজন। দুই রকম মাছ, মুরগী, তিন-চার রকমের সালাদ, এবং শুভ জন্মদিন! কৃতজ্ঞতা বন্ধুদের প্রতি।

অগণিত ভাই-বোন ইনবক্সে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কেক পেয়েছি পঞ্চাশটারও বেশি, সবগুলোই ভার্চুয়াল কেক, দেখতে সুন্দর! মজার মজার সব ম্যাসেজ। এক ভাই লিখেছেন, শুভ পাখি দিবস! এইটা আবার কি জিনিস?! আরেক ভাই লিখেছেন, শুভ পয়দা দিবস! মাশাআল্লাহ, আপনারা পারেনও বেশ! আমি হাসতেই আছি। আরেক আপু লিখেছেন, শুভ কান্না দিবস, এই দিনে আপনি প্রথম কেঁদেছিলেন! তারপরে সবার দোয়া, অনেক অনেক দোয়া। আল্লাহ এই দোয়া গুলো কবুল করুন, আমিন।

জন্মদিনটাকে শুভজন্মদিন হিসেবে স্মরণ-বরণ করে নেয়ায় এবং আমার জন্য দোয়া করায় সবার প্রতিই কৃতজ্ঞতা।

এই স্পেশাল দিনটাতে সবার প্রতিই ভালোবাসা, যারা আমায় ভালোবাসে, অথবা যারা আমায় অপছন্দ করে।

লেখাঃ জন্মদিন আমার জন্মদিন
© শামীম রেজা
০৬/০৪/২০১৪

Post Comment

ভাইগ্না-ভাগ্নীদের সফলতা ও হিংসুটে মামা

আলীর সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, ফোন বেজে উঠলো, লুমিয়া মোবাইল। চরম ভাব’স নিয়ে মোবাইল বের করলাম, ভাবটা এমন “দেখছিস আমার একটা লুমিয়া আছে!” আসল কথা হচ্ছে (ছাল নাই মোবাইলে, লুমিয়া তার নাম)
আলীও দেখলাম পকেট থেকে স্যামসাং গ্যালাক্সি বের করে নাড়াচাড়া করছে, কঠিন এক ঝাড়ি দিলাম, “ঐ ব্যাটা, ভাব দেখাস!? ফোন রাখ!”
বত্রিশ দাত বের করে আলী হাসছে, ভেটকি হাসি, গা জ্বলে যায়।

ফোন করেছে বড় আপা, অনেক কথা হলো, কথা শেষেই আমার অনুভূতি “ইস! মিস হয়ে গেলো!”
অবাক হয়েই আলী জিজ্ঞাসা করলো কি মিস হয়ে গেলো?
মামাগিরী মিস হয়ে গেলো।
মামাগিরী মিস হলো মানে?
শুনবি? আচ্ছা তাহলে গল্প শোন।

যখন খুব ছোট ছিলাম, ত্যাড়ামিতে ছিলাম সেরা। এখন অবশ্য ভালো হয়েছি সেকথা বলা যাবেনা। যাই হোক, পড়াশোনার ধারে কাছেও ছিলামনা, প্রতিনিয়ত কপালে উত্তম মাধ্যম জুটতো, আর জুটতো মামার গল্প, মামা সম্পর্কে মজার সব গল্প।
মা গল্প বলতো, “জানো, তোমার মামা ছোট বেলায় অনেক অনেক পড়াশোনা করতো, এখন দেখছো, তোমার মামা হুন্ডা চালায়! লেখা পড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে”।
আমি যেমন ত্যাড়া ছিলাম, আমার চিন্তাগুলাও সম্ভবত একটু ত্যাড়া টাইপের ছিলো। মনে মনে কবিতা পড়তাম, “হুন্ডা চালায় গুন্ডারা!”
মা আবার গল্প করতেন, তোমার মামা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সব সময় মুরব্বিদের সালাম দেয়, সবাই তোমার মামাকে সম্মান করে।
আর তুমি সবাইকে গালি দাও!
সত্যিইতো, মামা কত ভালো! সিদ্ধান্ত নিলাম, মামার মত হতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ, পথে ঘাটে মুরব্বি কাউকে দেখতেই সালাম, সালামের ফ্রিকোয়েন্সি থাকতো অনেক কম, কেউ শুনতেও পেতোনা, একটু লাজুক ছিলাম কিনা!

মামা শিবির করতেন, চারিদিকে নাম ডাক, এমন ছেলে হয়না। মামার সাথে বাজারে যেতে হলে বিরক্ত হয়ে যেতাম, একটু পর পরেই পরিচিত লোকদের সাথে দেখা, কথা আর ফুরায়না। সবার সাথে কি অমায়িক, কি আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক।
ইস! আমার মামাকে কত মানুষ সম্মান করে, আমিও বড় হয়ে মামার মতো হবো!

মামা মেধাবী ছাত্র ছিলেন, মা সারাক্ষণ মামার গল্প বলতেন, মামার মতো হতে উৎসাহ দিতেন। পড়াশোনায় একটু ফাঁকি দিলে কিংবা কাউকে গালি দিলেই, মামার উদাহরণ টানতেন, তোমার মামা এমন, তোমার মামা তেমন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার মামা ছিলেন যাকে বলে আদর্শ মামা! গ্রামে মোটর সাইকেল ঢুকলেই হইছে, হৈ হৈ করে ছুটে যেতাম, বিয়ে বাড়িতে যেমন হুড় ওঠে “বর এসেছে! বর এসেছে!”, আমরা পিচ্চিরাও দৌড়ে যেতাম, “মামা আইছে, মামা আইছে!” পুরো ইউনিয়নে একটাই মটর সাইকেল ছিলো, সেটা হচ্ছে মামার মটর সাইকেল!

এবার আলী মুখ খুললো, সেটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তোর মামাগিরী মিস হইলো কিভাবে?
উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, একটা দীর্ঘশ্বাস! আমি যোগ্য মামা হইতে পারলামনা!
কেনো কি হইছে?
কি হয়নাই সেটা বল! ভাগ্নী সায়েন্স কম্পিটিশনে কুমিল্লা জেলার মধ্যে ১৪তম হয়েছে।
এটাতো সুখবর!
আরে শুনবিতো! আপা এখন ফোন করে জানালো, দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ভাইগ্নাটা বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা জেলায় প্রথম হয়েছে। ওর এবছরের শিক্ষার যাবতীয় খরচ বৃত্তিদাতারা প্রদান করবে।
মাশাআল্লাহ, দোস্ত মিস্টি খাওয়া!
রাখ তোর মিস্টি! আমার মামাগিরীটা মিস হয়ে গেলো!
অবাক হয়ে আলী তাকিয়ে আছে, এটা আবার কেমন কথা?!
আরে গাঁধা! ভাইগ্না-ভাগ্নীগুলো যদি পড়াশোনা না করতো, ফাঁকি ঝুকি দিতো, তাইলেতো আপা তাদের কাছে আমার গল্প করতে পারতো, তোমার মামা এমন ছিলো, তেমন ছিলো, তোমার মামা হ্যান-ত্যান।
আর আমি ভাব নিতাম!
এখন আর আমার ভাব নেয়ার চান্স নাই!
ভাইগ্না-ভাগ্নিরা মামাকে অতিক্রম করে ফেলেছে!

লেখাঃ ভাইগ্না-ভাগ্নীদের সফলতা ও হিংসুটে মামা
© শামীম রেজা
০৬/০৪/২০১৪

Post Comment

জাতীয় বেঈমানদের পরিণতি

ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের সাথে বেঈমানী করে যারা এই অঞ্চলের মুসলিম জাতীকে একবার খৃস্টানদের গোলামী এবং একবার হিন্দুদের গোলামীর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে ভূমিকা পালন করেছিলো, তাদের পরিণতি সুখকর হয় নাই।

১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে বেঈমানদের পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। মীর জাফর আলী খানের মৃত্যু হয়েছিলো কুষ্ঠ রোগে, জগৎ শেঠকে হাত পা বেধে গঙ্গায় নিক্ষেপ করেছিলো মীর কাসিম, রায় দূর্লভের মৃত্যু হয় অন্ধ কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে, পাগল অবস্থায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মৃত্যু হয়েছিলো উমিচাঁদের, রায় বল্লভ মরেছিলো পদ্মায় ডুবে, নন্দকুমারের ফাঁসি হয়েছিলো, মীর মীরনের মৃত্যু হয়েছিলো মেজর ওয়াল’স এর হাতে, ঘষেটি বেগমকে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করা হয়, মুহাম্মদী বেগ মরেছিলো আত্মহত্যা করে, রবার্ট ক্লাইভ নিজের গলায় ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো।

১৯৭১সালে যাদের বেঈমানীর পরিণতিতে ভাইয়ে ভাইয়ে হয়েছিলো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, নিহত হয়েছিলো লক্ষাধিক মুসলিম, একটি শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র ভেঙে হয়েছিলো দু’টুকরো, পূর্ব বঙ্গের মুসলিমদের বানানো হয়েছিলো ভারতের গোলামে, তাদের পরিণতিও সুখকর হয় নাই।

৭১এর ঘটনার জন্য মূলত দায়ী ছিলো দু'জন ব্যাক্তির ক্ষমতা নিয়ে কামড়া কামড়ি। একজন ছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান, অন্যজন হলেন জুলফিকার আলী ভূট্টো। ভূট্টো ফাঁসিতে ঝুলে মরেছিলো, আততায়ীর গুলিতে বেনজীর ভূট্টোর মৃত্যুর মাধ্যমে ভূট্টোর বংশ নির্বংশ হয়।
আর শেখ মুজিবের পরিণতিও একই রকম হয়েছিলো, নির্বংশ হতে বাকি আছে কি? বেচে আছে শুধু হাসিনা ও রেহানা, তাদের পরিণতিও দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

একাত্তরের ঘটনায় শেখ মুজিবের দোষর এবং ভারতের এজেন্সির ভূমিকায় অন্য যারা মূল দায়িত্ব পালন করেছিলো তারা হচ্ছেন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহম্মদ, মনসুর আলী, কামরুজ্জামান। এরা সবাই কারাবন্দী অবস্থায় বিপ্লবীদের গুলিতে নিহত হয়।

ভারতের অর্থে উত্থান হলো গণজাগরণ মঞ্চের, ফাঁসি দেয়া হলো ইসলামী আন্দোলনের সিংহ পুরুষ শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে। শহীদ হলেন জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা।

গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের পরিণতিও দেখতে শুরু করেছে এ জাতি। গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম সারির এক নেতা থাবা বাবা ওরফে রাজিব নিহত হলো জঙ্গিদের দায়ের কোপে। বহু বছর পর্দার আড়ালে থাকলেও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সোচ্চার ডাক্তার আইজুর পরিচয় এবং কুকৃতি প্রকাশ হয়ে গেলো। গজা মঞ্চ নেতা অমি পিয়ালের পর্ণ ছবি বের হলো, টাকা মেরে খাওয়ার ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলো, অপদস্ত হলো পথে ঘাটে।

নমরুদের মৃত্যু হয়েছিলো ভৃত্যের জুতার বাড়ি খেয়ে, জুতার বাড়ি দেয়ার জন্যই নমরুদ তাকে নিযুক্ত করেছিলো। জুতার বাড়ি না খেলে নমরুদের মাথায় তীব্র যন্ত্রনা দিতো মশা।
গতকাল দেখলাম শাহবাগী গণজাগরণ মঞ্চের নেতা ইমরান সরকারকে নিয়ে পুলিশ টানা হেঁচড়া করছে, আর পেছন থেকে এক কর্মী এমরানের ঘাড় চেপে ধরেছে পুলিশের হাত হতে নেতাকে রক্ষার জন্য।
আরেকটা ছবিতে দেখলাম, এমরানের এক শিষ্য পেছন হতে এমরানের গলা পেচিয়ে ধরেছে পুলিশের হাত হতে এমরানকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য। গলায় প্রচন্ড চাপ খেয়ে এমরানের প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

যুগে যুগে জাতীয় বেঈমান ও শয়তানের দোসরদের পরিণতি এভাবেই প্রকাশিত হয়। এই ঘটনাগুলো হতে আমাদের শিক্ষা নেয়ার অনেক উপাদান রয়েছে।
শাহবাগী গজা মঞ্চ ও তার ইন্ধনদাতাদের এর চাইতেও ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার হত্যাকারীদের অন্তিম পরিণতি দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

লেখাঃ জাতীয় বেঈমানদের পরিণতি
© শামীম রেজা
০৫/০৪/২০১৪

Post Comment

সেই টিস্যুটি

টিস্যুটার খুব দাম, শুভ্র চেহারা,
নামী ব্রান্ড, দামী বেশ। সভ্য যাহারা,
কিনে নেয়, লুফে নেয়, লিমুজিন গাড়িতে।
শোভা পায় টিস্যুটি কোটি পতি বাড়িতে।
প্যাকেটে ঝিক মিক, রুচিশীল পরিচয়,
আদরে তুলে নেয়, যেনো হলো পরিণয়।
একদিন ঘাম ঝড়ে টিস্যুটি দরকার,
বাম হাতে তুলে নিলো, গুণধর সরকার।
হাব-ভাবে টিস্যুটি, আমি কি হনুরে,
রাজাদের রাজা বুঝি হয়ে আমি গেলুরে!
ঘাম শেষে টিস্যুটি, নোংরা হলো বেশ,
শুভ্র টিস্যুটা ডাস্টবিনে হলো শেষ।
প্রতিবাদে টিস্যুটি প্রাসাদে যেতে চায়,
মালিদের মেথরের ঝাটা পেটা খেয়ে যায়।

উৎসর্গঃ ডাক্তার ইমরান এইচ সরকার
কবিতাঃ সেই টিস্যুটি
© শামীম রেজা

০৪/০৪/২০১৪

Post Comment

নন্দলালদের নিয়ে যত কথা

ছোট বেলায় ফিলিস্তিনের মুজাহিদদের সংগ্রাম দেখতাম, এখনো দেখি, তারা দখলদার ইসরাইলের ট্যাঙ্কের মোকাবেলা করছে পাথর দিয়ে। ইসরাইলের জঙ্গী বিমানের হামলায় আত্নরক্ষার জন্য ছুটে যাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।
দৃশ্যগুলো দেখে শিহরিত হতাম, অবাক হতাম। ভিতু মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতাম, কেমনে সম্ভব! নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কিভাবে ফিলিস্তিনের কিশোর ছেলেটি ট্যাঙ্কের মোকাবেলায় পাথর হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে!

এটাই হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। এই জিহাদের পরিণতিও মুজাহিদদের জানা আছে, মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী। এর বাইরে কোনো পরিণতি সম্ভব নয়।

এবার একটু ভিন্ন দিকে যাবো, বাংলাদেশের গল্প বলবো। এইতো কিছুদিন হলো, যুদ্ধের দামামা চারিদিকে, একদিকে সরকারী বাহিনীর অত্যাধুনিক একে ফোর্টি সেভেন, অন্যদিকে মুজাহিদদের ইটের টুকরো। একদিকে সরকারী বাহিনীর অত্যাধুনিক রায়টকার হতে অবিরত গুলি বর্ষণ, অন্যদিকে মুজাহিদদের পেট্রোল বোমার প্রতিরোধ, একদিকে সরকারী বাহিনীর টিয়ার শেলের আঘাত, অন্যদিকে মুজাহিদদের প্রজ্বলিত আগুনের আত্মরক্ষা।
একদিকে সহযোদ্ধার গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে, পাশেই মুজাহিদ ইটের টুকরো নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, ওহুদ পাহাড়ের মতোই অটল অবিচল। এটাই জিহাদ, এটাই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের প্রতিরোধ।

এরা সেই মুজাহিদ যারা শান্তিকালিন সময়ে কারো ভাই, কারো সেরা সন্তান, আবার কারো বা অভিভাবক। এরা সেই মুজাহিদ যারা শান্তিকালিন সময়ে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে।
আবার এরা সেই মুজাহিদ, যুদ্ধকালিন সময়ে যাদের নারায়ে তাকবীর স্লোগানে প্রকম্পিত হয় জালিমের সিংহাসন। এরা সেই মুজাহিদ, যাদের ইটের টুকরোর আঘাতেই বুক এফোড় ওফোড় হয়ে যায়, একে ফোর্টি সেভেন, উজি, হাতে দাঁড়িয়ে থাকা জালিমের পেটোয়া বাহিনীর। এরা সেই মুজাহিদ, যারা জালিমের গুলি বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়েই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোশণা দেয়।

এবার আরেক শ্রেণীর মুজাহিদদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো, কী-বোর্ড হাতে নিয়েই এরা বিশ্বব্যাপী জিহাদ করে যাচ্ছে।
এরা এরদোগানকে সাজেশন দেয়, এভাবে নয় ওভাবে করো। এরা সকাল বিকাল নিয়ম করে দুইবার মুরসীকে গালমন্দ করে, ‘ব্যাটা সাহস কতবড়, কুফরী গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়!’
জামায়াত শিবির যখন, বাতিলের মোকাবেলায় ইটের টুকরো হাতে রনাঙ্গণে ব্যস্ত, তখন এরা সাজেশন দেয়, ধুর মিয়া এইটা একটা জিহাদ হইলো? জিহাদ করবা একে ফোর্টি সেভেন নিয়া।
যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনারা আসেন, জিহাদ করেন, তখন এরা জবাব দেয়। আমরা সিরিয়াতে জিহাদ করছি, আমরা আফগানে জিহাদ করছি, আমরা সোমালিয়ায় জিহাদ করছি। আমরা বাংলাদেশেও জিহাদ করবো, তবে এখন প্রস্তুত হচ্ছি সময় হলেই জিহাদে ঝাপিয়ে পড়বো।

দিজেন্দ্রলাল রায়ের একটি কবিতার বিকৃত ভার্শণ রচনা করেই লেখাটি শেষ করবো,

নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -
জিহাদের তরে, যে করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?’
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া মরিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।’
হাসিনার হাতে মুসলিম মরে, প্রতিরোধ করে কে?
সকলে বলিল, ‘যা তো নন্দ, জিহাদ করে নে।
নন্দ বলিল, মুসলিমের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা জাতির হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।’
নন্দ একদা হঠাৎ একটা গ্রুপ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে জামাত, শিবির, জিহাদ করিল জাহির;
পড়িল ধন্য, জাতির জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
করে যত তার দ্বিগুণ জিহাদ, চাপা তার দশ গুণ;
চাপার জোড়ে কমিউনিষ্ট মারে, ধ্বংশ করে বাল,
তখন সকলে বলিল-‘বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।’
নন্দ একদা ফেবুতে এক পোলারে দেয় গালি;
পোলা আসিয়া বাপারে তাহার নালিশ করিল খালি;
নন্দ বলিল, ‘আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে জাতির, পিটুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি’ বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।’
তখন সকলে বলিল – ‘বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!’
নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
ধরিতো না বোমা, কি জানি কখন ফুটে যায় বোমা খানি,
পুলিশ ফি-সন মারিছে ভীষণ, রাজপথে ‘কলিসন’ হয়;
হাঁটতে লীগ, কমিউনিস্ট আর বাম-রামের ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কী-বোর্ড হাতে জিহাদী নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’

লেখাঃ নন্দলালদের নিয়ে যত কথা
© শামীম রেজা
০৩/০৪/২০১৪

Post Comment

কম্বল জিহাদের রহস্য কি?

বুঝলেন ভাই, গণতন্ত্র ইসলামে হারাম! আইন হবে একমাত্র আল্লাহ’র, এখানে মানুষের কোনো মতামতের মূল্য থাকতে পারেনা।
-জ্বি বুঝলাম!
আর একটা কথা, গণতান্ত্রিক উপায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা কোনো দিনই সম্ভব নয়, ইসলাম প্রতিষ্ঠার একমাত্র পদ্ধতী হচ্ছে সশস্ত্র জিহাদ! জিহাদের কোনো বিকল্প নাই।
-হু, ঠিক বলেছেন।
এইযে বাংলাদেশে জামায়াত শিবির গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজনীতি করতেছে, এভাবে বিপ্লব সম্ভব নয়। যতদিন তারা অস্ত্র ধারণ করবেনা ততদিন তাদের দ্বারা এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবনা।
-হ্যা, আপনার সাথে একমত।
তাইলে ভাই গণতান্ত্রিক পন্থা বাদ দিয়ে আমাদের সাথে যোগ দেন। সশস্ত্র বিল্পবের শপথ গ্রহণ করেন।
-কি বলেন ভাই? সশস্ত্র বিপ্লব শুরু হয়েছে নাকি? কবে শুরু হলো?
কেনো ভাই, আপনি দেখতেছেননা, সিরিয়ার অসহায় মা-বোনদের উপর কিভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, বার্মার নির্যাতিত মানুষের আর্তচিৎকার কি আপনার কানে পৌছায়না? আপনি কি অসহায় আফগান নারীর আর্তনাদ শুনতে পাননা?
-হ্যা, সেটাতো আমি জানি, আফগান, সিরিয়া, বার্মার নির্যাতিত মুসলিমদের দুঃখ দূর্দশা আমাকে কাঁদায়।
তাহলে আসেন আমাদের দলে যোগদান করেন, সশস্ত্র বিপ্লবের শপথ গ্রহণ করেন।
-সশস্ত্র বিপ্লব শুরু হইছে নাকি? কবে শুরু হইলো?!
আপনি কি সিরিয়ার মুজাহিদ ভাইদেরকে দেখছেননা? তারা কি বিপুল বিক্রমে জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছে। ইরাকেতো একটা অঞ্চল নিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে ফেলছে।
-তাই নাকি? দারুণতো! কবে করলো? খুলিফা কে? নাম কি?
ইহুদীবাদী মিডিয়া এটা প্রচার করতে দিচ্ছেনা, খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, খলিফার নামটা এখন গোপন আছে।
-ও! আচ্ছা!
আসেন, তাহলে আমাদের দলে, সশস্ত্র বিপ্লবের শপথ গ্রহণ করেন।
-বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে নাকি? কবে শুরু হলো? কোথায় শুরু হলো?
আরে ভাই, সিরিয়াতে দেখেননা............?

ভাই কথা শুরু করলেন, ঢাকার জামায়াতে ইসলামী নিয়া, বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লবের উপায় নিয়া। আর কথার লেঞ্জা লাগাইয়া রাখছেন সিরিয়ার সাথে। আপনারা আসলে কি চান?
আপনারা কি বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লব চান, নাকি সিরিয়াতে যুদ্ধ করতে চান, ক্লিয়ার কাট কথা বলেন।
আপনারা যদি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সশস্ত্র পন্থায় বিপ্লব সম্ভব, তাহলে কাজ শুরু করেন, প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ভারতের সামরিক বাহিনীকে মোকাবেলার উপায় তৈরী করেন। অস্ত্র কারখানা তৈরী করেন।

জামায়াত বিশ্বাস করে, গণতান্ত্রিক উপায়ে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। জামায়াত সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য এদেশে, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ভার্সিটি, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছে। আপনারা এখন পর্যন্ত কি করেছেন? একটা নজীর দেখান। অনলাইনে বিশাল বিশাল রচনা লেখা ছাড়া আপনারা আর কি করেছেন?
আপনাদের তৎপরতার একটা উদাহরণ দেখান।
প্লিজ ভাই, লেঞ্জা সিরিয়াতে নিয়ে যাবেননা। বাংলাদেশের কথা বাংলাদেশেই রাখেন।

"হে মুমিনেরা! তোমরা যা কর না, তা কেন বলো? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অপছন্দনীয়।" সুরা সফ, আয়াত ২-৩।

লেখাঃ কম্বল জিহাদের রহস্য কি?
© শামীম রেজা
৩১/০৩/২০১৪

Post Comment