আঙ্কেল! আঙ্কেল! আমার বাবাকে বের করে দিতে পারবা?
আঙ্কেল! আমার বাবার হাত বান্ধি রাখছে। আঙ্কেল! আমার বাবা ভাত খেতে পারবে?
কোলে উঠেই একনাগারে প্রশ্নগুলো করছিলো জিনুন, জিনুনকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছি, কোনো জবাব দিতে পারিনাই। এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। এ প্রশ্নের জবাব নিরব অশ্রু, এ প্রশ্নের জবাব মাবুদের কাছে প্রশ্ন, আর কত? আর কত শিশুকে তাদের বাবার ভালোবাসা হতে বঞ্চিত করা হবে, আর কত মাকে সহ্য করতে হবে সন্তান হারানোর যন্ত্রনা, আর কত স্ত্রীকে পারি দিতে হবে অপেক্ষার দরিয়া, এ জুলুমের শেষ কোথায়?
না, জিনুনের পিতা কাউকে শীতলক্ষায় গুম করেনাই, কিংবা পুরিয়ে কাবাব বানায়নাই কোনো জ্যান্ত মানুষকে। তারপরেও জিনুনের পিতা অপরাধী, ভয়ঙ্কর অপরাধী, জামিন অযোগ্য মামলার আসামী। জিনুনের পিতা এদেশে কোরানের আইন চায়, জিনুনের পিতা এদেশে ইসলামী খিলাফত চায়। জিনুনের পিতা চায় সাম্য ও ন্যায় ভিত্তিক ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র, জিনুনের পিতা জামায়াতে ইসলামী করে, এটাই তার মূল অপরাধ, এর চাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধ আর কি হতে পারে?!
আজ ৬টি মাস শিশুটি অপেক্ষা করছে তার বাবার জন্য। কোর্ট প্রাঙ্গনে বাবাকে দেখলেই ছুটে যেতে চায়, বাবার কোলে উঠবে কিন্তু বাবার হাত বাঁধা। অসহায় দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে, পিতা-কন্যা।
ইতোপূর্বেও জাহিদ ভাইয়ের ব্যাপারে লিখেছিলাম। গভীর রাতে একদল যুবলীগ সন্ত্রাসী জাহিদ ভাইয়ের বাসায় হানা দেয়। খাওয়া দাওয়া করে সবে মাত্র ঘুমিয়েছেন তখনি ঝাপিয়ে পরে লীগের সন্ত্রাসীরা। ঘরে ঢুকেই অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় জাহিদ ভাইয়ের উপর। আলমারি খুলে নগদ টাকা, স্বর্নালঙ্কার, কম্পিউটার সহ যাবতীয় মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়, নতুন কেনা মটরসাইকেলটিও রেহাই পায় নাই। হতবিহ্বল স্ত্রী চিৎকার করে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা। ঠিক তখনি একজন গিয়ে জিনুনের গলায় ছুড়ি ঠেকিয়ে বলে চিৎকার চেঁচামেচি করলে বাচ্চাটাকে জবাই করে ফেলবো।
বিনা প্রতিরোধে লুটপাট কর্ম সম্পাদন করে জাহিদ ভাইকে মারতে মারতে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা, অতিউৎসাহি কেউ কেউতো বউটাকেও সাথে করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলো, পরবর্তীতে সিনিয়র এক নেতার কথায় সেটা সম্ভব হয় নাই। প্রতিবেশিদের অনেকেই বেরিয়ে এসেছিলো, কিন্তু সন্ত্রাসীদের গুলির হুমকির মুখে সবাই ঘরে ঢুকে যেতে বাধ্য হয়।
সারারাত একটি বস্তিতে আটকে রেখে জাহিদ ভাইয়ের উপর চালানো হয় নির্মম অত্যাচার, এরমধ্যেই বার বার বাসায় খবর পাঠানো হয়, টাকা দিতে হবে নইলে জাহিদ ভাইয়ের লাশও পাওয়া যাবেনা।
পরেরদিন সকাল বেলা জাহিদ ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়, সাথে একটি ভাঙাচোরা পাইপগান। পুলিশের মামলায় লেখা হয়, “স্থানীয় জনতার হাতে অস্ত্র সহ আটক জামায়াত ক্যাডার জাহিদ”।
জাহিদ ভাই এখনো জামিন পান নাই, দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারনে চাকরী চলে গেছে। ছোট খাটো কিছু ব্যবসা ছিলো, ব্যবসাও শেষ।
না, জিনুনের পিতার সব হারানোর বিচার আমরা দুনিয়ার কোনো আদালতে দিবোনা। এই বিচারের দায়িত্ব সকল বিচারকের যিনি প্রধান বিচারক সেই মহান রব্বুল আলামীনের হাতে সঁপে দিলাম।
জিনুনের নিষ্পাপ চোখের অসহায় দৃষ্টি অভিশাপের তীর হয়ে বিদ্ধ হোক জালিমের অন্তরে।
(ছবিঃ বাবার কোলে জিনুন)
লেখাঃ জিনুনের বাবা
শামীম রেজা
০৪/০৬/২০১৪
আঙ্কেল! আমার বাবার হাত বান্ধি রাখছে। আঙ্কেল! আমার বাবা ভাত খেতে পারবে?
কোলে উঠেই একনাগারে প্রশ্নগুলো করছিলো জিনুন, জিনুনকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছি, কোনো জবাব দিতে পারিনাই। এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। এ প্রশ্নের জবাব নিরব অশ্রু, এ প্রশ্নের জবাব মাবুদের কাছে প্রশ্ন, আর কত? আর কত শিশুকে তাদের বাবার ভালোবাসা হতে বঞ্চিত করা হবে, আর কত মাকে সহ্য করতে হবে সন্তান হারানোর যন্ত্রনা, আর কত স্ত্রীকে পারি দিতে হবে অপেক্ষার দরিয়া, এ জুলুমের শেষ কোথায়?
না, জিনুনের পিতা কাউকে শীতলক্ষায় গুম করেনাই, কিংবা পুরিয়ে কাবাব বানায়নাই কোনো জ্যান্ত মানুষকে। তারপরেও জিনুনের পিতা অপরাধী, ভয়ঙ্কর অপরাধী, জামিন অযোগ্য মামলার আসামী। জিনুনের পিতা এদেশে কোরানের আইন চায়, জিনুনের পিতা এদেশে ইসলামী খিলাফত চায়। জিনুনের পিতা চায় সাম্য ও ন্যায় ভিত্তিক ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র, জিনুনের পিতা জামায়াতে ইসলামী করে, এটাই তার মূল অপরাধ, এর চাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধ আর কি হতে পারে?!
আজ ৬টি মাস শিশুটি অপেক্ষা করছে তার বাবার জন্য। কোর্ট প্রাঙ্গনে বাবাকে দেখলেই ছুটে যেতে চায়, বাবার কোলে উঠবে কিন্তু বাবার হাত বাঁধা। অসহায় দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে, পিতা-কন্যা।
ইতোপূর্বেও জাহিদ ভাইয়ের ব্যাপারে লিখেছিলাম। গভীর রাতে একদল যুবলীগ সন্ত্রাসী জাহিদ ভাইয়ের বাসায় হানা দেয়। খাওয়া দাওয়া করে সবে মাত্র ঘুমিয়েছেন তখনি ঝাপিয়ে পরে লীগের সন্ত্রাসীরা। ঘরে ঢুকেই অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় জাহিদ ভাইয়ের উপর। আলমারি খুলে নগদ টাকা, স্বর্নালঙ্কার, কম্পিউটার সহ যাবতীয় মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়, নতুন কেনা মটরসাইকেলটিও রেহাই পায় নাই। হতবিহ্বল স্ত্রী চিৎকার করে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা। ঠিক তখনি একজন গিয়ে জিনুনের গলায় ছুড়ি ঠেকিয়ে বলে চিৎকার চেঁচামেচি করলে বাচ্চাটাকে জবাই করে ফেলবো।
বিনা প্রতিরোধে লুটপাট কর্ম সম্পাদন করে জাহিদ ভাইকে মারতে মারতে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা, অতিউৎসাহি কেউ কেউতো বউটাকেও সাথে করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলো, পরবর্তীতে সিনিয়র এক নেতার কথায় সেটা সম্ভব হয় নাই। প্রতিবেশিদের অনেকেই বেরিয়ে এসেছিলো, কিন্তু সন্ত্রাসীদের গুলির হুমকির মুখে সবাই ঘরে ঢুকে যেতে বাধ্য হয়।
সারারাত একটি বস্তিতে আটকে রেখে জাহিদ ভাইয়ের উপর চালানো হয় নির্মম অত্যাচার, এরমধ্যেই বার বার বাসায় খবর পাঠানো হয়, টাকা দিতে হবে নইলে জাহিদ ভাইয়ের লাশও পাওয়া যাবেনা।
পরেরদিন সকাল বেলা জাহিদ ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়, সাথে একটি ভাঙাচোরা পাইপগান। পুলিশের মামলায় লেখা হয়, “স্থানীয় জনতার হাতে অস্ত্র সহ আটক জামায়াত ক্যাডার জাহিদ”।
জাহিদ ভাই এখনো জামিন পান নাই, দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারনে চাকরী চলে গেছে। ছোট খাটো কিছু ব্যবসা ছিলো, ব্যবসাও শেষ।
না, জিনুনের পিতার সব হারানোর বিচার আমরা দুনিয়ার কোনো আদালতে দিবোনা। এই বিচারের দায়িত্ব সকল বিচারকের যিনি প্রধান বিচারক সেই মহান রব্বুল আলামীনের হাতে সঁপে দিলাম।
জিনুনের নিষ্পাপ চোখের অসহায় দৃষ্টি অভিশাপের তীর হয়ে বিদ্ধ হোক জালিমের অন্তরে।
(ছবিঃ বাবার কোলে জিনুন)
লেখাঃ জিনুনের বাবা
শামীম রেজা
০৪/০৬/২০১৪
No comments:
Post a Comment