সাংস্কৃতিক আগ্রাসন

 
 
দাড়িওয়ালা নায়কঃ-
নায়ক মস্তবড় ডাকাত, আউলা ঝাউলা জীবন, মুখ ভর্তি দাড়ি-গোফ। একদিন নায়কের প্রেমে পড়ে যায় নায়িকা। ঘটনার পরম্পরায় নায়ক ভালো হয়ে যায়। নায়িকার সাথে একটা গান, নায়কের মুখ ভর্তি দাড়ি উধাও।
শিক্ষাঃ ডাকাত নায়কের মুখে দাড়ি থাকতে পারে, কিন্তু ভালো নায়কের মুখে দাড়ি থাকতে পারেনা।

মুক্তিযুদ্ধের চলচিত্রঃ-
তুমুল যুদ্ধ চলছে, মুক্তিযুদ্ধ। বিশাল দাড়িওয়ালা রাজাকার মাথায় লম্বা টুপি এবং কাধে হাজি রুমাল নিয়ে পাকিস্থানী বাহিনীর সাথে উর্দুতে কথা বলছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাকিস্থানী বাহিনীর খেদমতের জন্য জোর করে মেয়েদের তুলে আনছে।
শিক্ষাঃ রাজাকাররা সবাই দাড়িওয়ালা ছিলো, তারা নারী ধর্ষকও।

লম্পট চেয়ারম্যানঃ-
এলাকার চেয়ারম্যান মস্তবড় গমচোর। এমন কোনো কূকৃতি নেই যা তিনি করেননা, এলাকার নারীদের উপর একবার বদ নজর পড়লে সেই নারীর আর রেহাই নেই। চেয়ারম্যানের মুখভর্তি লম্বা দাড়ি মাথায় সাদা টুপি।
শিক্ষাঃ খারাপ মানুষরাই দাড়ি রাখে,

হিল্লা বিয়েঃ-
এলাকায় শালিস বসেছে, মসজিদের ঈমাম সাহেবকে ডাকা হল সলিমুদ্দিনের বউয়ের বিচার করার জন্য। ঈমাম সাহেব দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে গ্রাম্য মাতব্বরের ইশারায় ফতোয়া দিয়ে দিলেন, সলিমুদ্দিনের বউকে মাতবরের সাথে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে।
শিক্ষাঃ হুজুরগুলা সব শয়তান আর লুইচ্চা টাইপের হয়।

গ্রাম্য নায়িকাঃ-
গ্রাম থেকে অশিক্ষিত নায়িকা ঢাকা শহরে এসেছে, ঢাকার রাস্তাঘাট কিছুই চিনেনা। বোরখা আবৃত নায়িকা মুখের উপরের ঢাকনা তুলে এরকাছে ওরকাছে ঠিকানা জানতে চাচ্ছে।
ঘটনার পরম্পরায় একদিন নায়িকা আধুনিক হয়ে যায়, বোরকা ছুড়ে ফেলে হাফপ্যান্ট পড়ে শহর বন্দর দাপিয়ে বেড়ায়, ক্লাবে গিয়ে নেচে-গেয়ে আধুনিকতার প্রমাণ দেয়।
শিক্ষাঃ অশিক্ষিত গাইয়া এবং সেকেলে নারীরাই বোরখা পরে।

বোরখা পরা নায়িকাঃ-
নায়িকা বোরখা পরে চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, প্রেমিকের সাথে দেখা করবে।
শিক্ষাঃ বোরখা হচ্ছে প্রতারণার মাধ্যম, বোরখা পড়া মেয়েরা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে বেড়ায়।

উপরের চিত্রগুলো হচ্ছে মুসলমানদের উপর মিডিয়া আগ্রাসনের বেশ কিছু উদাহরণ। এখন আমাদের নাটক সিনেমায় যত্রতত্র ইসলাম এবং ইসলামী পোশাককে অবমাননাকরভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর প্রতিকার কি?
দুইভাবে এর প্রতিকার করা যায়।

প্রথমতঃ- জেএমবি স্টাইলে বাংলাদেশের সকল সিনেমা হল বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া। নাটক সিনেমার নির্মাতাদের ধরে ধরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা। টিভি দেখা হারাম ঘোশণা করা।
এক্ষেত্রে সিনেমা হলে বোমা মারার কারণে মানুষ আর সিনেমা হলে যাবেনা, ঘরে ঘরে ভিসিডিতে হিন্দি এবং ইংলিশ সিনেমা দেখবে। টিভি দেখা হারাম ঘোশণা করলেই কি আর না করলেই কি, মানুষ বিনোদনের জন্য ঠিকই হিন্দুদের দেব দেবীদের নিয়ে নির্মিত ভারতীয় কার্টুন এবং নাটক-সিনেমা উপভোগ করবে।

দ্বিতীয়তঃ- উন্নত মানের ইসলামী ভাবধারার দাওয়াতী বক্তব্য সমৃদ্ধ নাটক সিনেমা নির্মান করা। সিডি ক্যাসেট করে এবং পেনড্রাইভ, মেমোরী কার্ডের মধ্যমে সেগুলোকে গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়া।

সাংস্কৃতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে, বিজাতীয় সংস্কৃতির শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা চরমতম আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুই নয়। অস্ত্রের ক্ষমতাবলে মানুষের বাহ্যিক পরিবর্তন করা সম্ভব, অন্তর পরিবর্তন সম্ভব নয়। অস্ত্র দিয়ে আপনি সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে পারবেন, কিন্তু মানুষের ঘরে ঘরে যে সিনেমা হল তৈরী হয়ে যাবে সেগুলো কিভাবে বন্ধ করবেন?

আপনার দৌড় যদি বোমা ফুটানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ হয়, তবে বেশি বেশি বোমা ফুটান। আর আপনার যদি নাটক-সিনেমা বানানোর ক্ষমতা থাকে তবে বেশি বেশি ইসলামী ভাবধারার নাটক-সিনেমা তৈরী করে জাতিকে উদ্ধার করুন। বিজাতীয় সংস্কৃতির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান দিন।

নির্বোধরাই অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে, বুদ্ধিমানরা কথা বলে কলম দিয়ে, মেধা দিয়ে।

লেখাঃ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন
© শামীম রেজা
১৮/০৬/২০১৪

Post Comment

1 comment: