রক্তের সম্পর্ক-২

রক্ত দিতে গিয়েছিলাম, ওয়েটিং রুমে অপেক্ষমান রক্তদাতারা। একের পর এক নাম ঘোশনা হচ্ছে আর ধুক-পুক, ধুক-পুক হৃদয়ে রক্ত দেয়ার রুমে প্রবেশ করছে রক্ত দাতারা। আমার নাম ঘোশনা করতেই উঠে দাড়ালাম, পূর্বের অভিজ্ঞতার কারণে তেমন একটা ভয় কাজ করছিলোনা।
রক্ত দেয়ার জন্য শুয়ে পড়েছি ঠিক এসময়ে বাহিরে তুমুল হৈ চৈ পড়ে গেলো। নার্সকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, নিজের নাম ঘোশনা শুনে অপেক্ষমান এক ডোনার ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন!
মনে পড়ে গেলো ইকবাল ভাইয়ের কথা, এক প্রসূতিকে রক্ত দিতে গিয়ে এভাবেই ওয়েটিং রুমে বসে ছিলেন। হঠাৎ করেই ইকবাল ভাই নিখোঁজ, এখানে সেখানে ব্যাপক খোঁজ করা হলো, নেই নেই এবং নেই, জলজ্যান্ত মানুষটা এভাবে লাপাত্তা হয়ে গেলো, সবাইতো ভয়ে অস্থির, গুম হলোনাতো?!
পরে জানা গেছে, রক্ত দেয়ার ভয় ইকবাল ভাই পালিয়ে এসেছিলেন!

হাসপাতালের চতুর্থ তলাতেই রোগীর অবস্থান, রক্ত দিয়ে সোজা চলে গেলাম রোগীর সাথে দেখা করতে। পঞ্চাশোর্ধ রোগী আমাকে দেখামাত্রই চোখের পানি ছেড়ে দিলেন, হাতটাকে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলেন, মুখে শুধু একটাই কথা, “ও পুত ও পুত, ইবা আর পুত, ইবা আরে রক্ত দিয়ে, ইবা আর পুত”। তারপরে মাথায় হাত বুলিয়ে সেকি দোয়া! যেনো দোয়ার বন্যা প্রবাহিত হচ্ছে। আমিতো এটাই চেয়েছিলাম, এভাবেই হয়তো মানুষের হৃদয় হতে উৎসারিত ভালোবাসা এবং দোয়া আমাকে পৌছে দিবে জান্নাতের সিড়িতে।
পাশেই দন্ডায়মান রোগীর স্ত্রী, তাকে ডেকে বললেন “ইবা আরার পুত” মেয়েকে ডেকে বললেন “ইবা তোর বাই”
রোগীর মেয়েটা দেখলাম ভীষণ চঞ্চল, সারাক্ষণ কথা চলছেই। ফিরে আসার সময় জিজ্ঞাসা করলাম, আপু তোমার নাম কি? এইবার মুখ বন্ধ!
কাহিনী কি! এতোক্ষন যে মেয়ে অনর্গল কথা বলছিলো সে হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো কেনো?!
একটু পরে আমতা আমতা করেই জবাব দিলো, আপনি আমাকে ‘হাসি’ করেই ডাকতে পারেন, আমার নাম ‘হাসিনা’!
বুঝলাম, ‘হাসিনা’ নামটা নিয়ে বেচারী ব্যাপক বিব্রত।
রসিকতা করার লোভ সামলাতে পারলামনা, মুচকি হেসে বললাম, তুমি কি আওয়ামীলীগ?!
এবার খালাম্মা কথা বলে উঠলেন, আওয়ামীলীগরে দুইচোখে দেখতে পারিনা, তারপরেও মাইয়ার নাম রাখছি ‘হাসিনা’

অবশেষে ফিরে এলাম, একটি পরিবারের সাথে গড়ে এলাম রক্তের সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক, ভালোবাসার সম্পর্ক।

লেখাঃ রক্তের সম্পর্ক-২
শামীম রেজা
৩১/০৫/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment