এসি রুমের ইসলাম, টিকেট বন্দী ইসলাম।

facebook link 

“হুজুর আপনার ওয়াজ শুনতে চাই!”
“টিকেট কেটেছিস?”
“টিকেট কাটতে হবে! কত টাকা?”
“বেশিনা মাত্র একহাজার টাকা”।
“বলেন কি হুজুর! এতো টাকা কোথায় পাবো? আমি বেকার মানুষ!”
“মুখেতো বহুত বেকার বেকার ফুটাও, কিন্তু গার্ল ফ্রেন্ডরে নিয়ে চাইনিজ খাইতেতো টাকার অভাব হয়না”।
“কি বলেন হুজুর, আমার চৌদ্দগুষ্ঠি চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের দরজা পেরোয়নি। তাছাড়া গত মাসের মেস ভাড়া বকেয়া পরে আছে, বন্ধুর থেকে ধার নিয়ে এমাসের মিলটা কোনো রকমে চালু রেখেছি”।
“হুম বুঝলাম, তুই খুবই অভাবে আছিস। এক কাজ কর, তুই বরং টিকেটের অর্ধেক দাম দে, পাঁচশো দিলেই চলবে”।
“হুজুর আমার কাছেতো টাকা নাই, মাত্র ১০টাকা আছে”।
“টাকা নাই বললেই হলো! এসির হাওয়া কি তোরে মাগনা খাওয়াবো?!”
“দেননা হুজুর, একটা টিকেটইতো! একদম পেছনের দিকে দিলেও হবে”।
“এহে! জ্বালাতন করিসনাতো। ওই দেখ, গাড়ি হাকিয়ে ছেলে মেয়েরা আসছে। ওদের কাছে টিকেট বিক্রি করে আজকে লাল হয়ে যাবো। তুই বরং এক কাজ কর, আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো ফ্রিতে পড়ে নিস, পয়সা দিতে হবেনা!”
“তাইলে টিকেট দিবেননা?!”
“বিরক্ত করিসনাতো!”
“ঠিক আছে! আপনি ওয়াজ করতে থাকেন, আমি সিনেমা হলে গেলাম! ১০টাকা দিয়া বাংলা সিনেমা দেখি, অনেক সস্তা”।
“কি বললি! কি বললি তুই! তুই সিনেমা দেখবি?! তুইতো একটা কাফের, তোর সাথে কথা বলাতেইতো আমার গুনাহ হইছে। তুই আর কোনোদিন আমার সামনে আসবিনা। দূর হ!”

লেখাঃ এসি রুমের ইসলাম, টিকেট বন্দী ইসলাম।
© শামীম রেজা
১৯/০৬/২০১৪

Post Comment

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি

 June 10


বাজারের পাশ দিয়ে আসছিলাম, কোন একটা ক্যাসেটের দোকানে ফুল ভলিউমে বাজছিলো হারানো দিনের কোনো একটা হিন্দি গান। নারী পুরুষের যুগল কন্ঠের সেই মর্মস্পর্ষী বিচ্ছেদের গান শুনে কেমন যেনো আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম, কেমন একটা কৃত্রিম দুঃখ এসে ভর করেছিলো হৃদয়ে। মনে হচ্ছিলো দুনিয়াতে এতো দুঃখ, এতো কষ্ট! নিজেকেও দুঃখী দুঃখী মনে হচ্ছিলো, কেমন যেনো একটা অনুভূতি।

একটা গবেষণা রিপোর্ট পড়েছিলাম, ধূমপায়ীর পাশে অবস্থানকারী পরোক্ষ ধূমপায়ীরা প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীর চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর কারণ সম্ভবত এটাই যে ধুমপান করতে করতে ধূমপায়ী ব্যাক্তির দেহ সেই নিকোটিন গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু অধূমপায়ী ব্যক্তির দেহে যখন সেই ধোঁয়া প্রবেশ করে তখন সেটা দেহের বারোটা বাজিয়ে ফেলে।

বিগত ৪-৫বছর ধরে কোনো গান শুনিনা। মাঝে মধ্যে ইসলামী সংগীত শুনি তবে সেটাও কম। এখানেও সম্ভবত ধূমপানের সেই গবেষণা রিপোর্টের মতো পরোক্ষ শ্রোতা আর প্রত্যক্ষ শ্রোতার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। গানের যারা নিয়মিত শ্রোতা গান তাদের মনে সম্ভবত তেমন একটা অনুভূতি জাগ্রত করেনা, কিন্তু আমার মতো যারা পরোক্ষ শ্রোতা তাদের হৃদয়ে কিন্তু গানের প্রতিটি লাইন শুচ হয়ে বিদ্ধ হয়।

ওই হিন্দী গানটা সব ভজগট করে দিয়েছিলো, আমার ফ্রেন্ডলিস্টে একজন কবিতা প্রেমী আছেন, নাম উল্লেখ করে মানুষটাকে বিব্রত করতে চাইনা। প্রতি একদিন গ্যাপ দিয়েই ইনবক্সে তার এক লাইনের একটা ম্যাসেজ “ভাই একটা কবিতা হবে?” ম্যাসেজ পেয়ে আমি বিরক্ত হইনা, বলতে গেলে কিছুটা খুশিই হই, যাক অন্তত আমার কবিতার একজন পাঠক আছেন!
সেই পাঠকের রিকোয়েস্টেই একটা কবিতা লিখবো ভেবে মনে মনে ছন্দ গোছাচ্ছিলাম, কিন্তু এই গানটা আমার ছন্দগুলো সব এলোমেলো করে দিলো।

এমনিতে আমি দারুণ শ্রোতা, তবে সেটা গানের শ্রোতা নয় মানুষের কথার শ্রোতা, কেউ যদি কানের কাছে এসে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে থাকে তবে আমি ভেতরে ভেতরে যতই বিরক্ত হইনা কেনো, মুখে সুন্দর একটা হাসি নিয়ে সেই বিরক্তি হজম করতে পারি। তবে প্রব্লেম হচ্ছে আমি যখন ফেসবুকে বসি তখন যদি কেউ এভাবে কানের কাছে এসে ঘ্যান ঘ্যান করে তখন বিরক্তির সীমা থাকেনা, আমার রুমমেটদের অধিকাংশই এই কাজটি করে থাকে, চরম বিরক্তি নিয়ে কথা না শুনেই এমন একটা ভাব করি যেনো আমি সব শুনছি।

বাসায় ঢুকেই ল্যাপটপ ওপেন করে বসে গেলাম, কয়েকটা ছন্দ মাথায় এসেছে এগুলো না লিখলেই নয়। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই রুমমেট তার মোবাইলে চালু করে দিলো নজরুলের কবিতা,
“আমি মহা বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত,
সেইদিন হবো শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনীবেনা,
অত্যাচারীর খরগ কৃপান ভীম রণভূমে রণীবেনা.........”

এই লাইনগুলো শুনে আমি চুপসে গেলাম, আমার ছন্দগুলো নিতান্তই নিরামিষ মনে হলো। মনযোগ দিয়ে কিছুক্ষণ কবিতা শুনলাম, তারপর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেই বললাম “অশিক্ষত নজরুল চাচায় এগুলো কি লিখলো?!”
রুমমেট হাসতে হাসতেই বলছিলো, “অশিক্ষিত কবির কবিতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনা হয়, আর যদি নজরুল চাচায় শিক্ষিত হতো তবে না জানি কি হতো!”
আমিও হাসতে হাসতেই জবাব দিলাম, “নজরুল আঙ্কেলে যদি শিক্ষিত হতেন তবে আপনি আমি তাকে চিনতামওনা, তিনি সম্ভবত কোনো একটা ব্যাঙ্কের ক্যাশ বাক্সের চিপায় বসে বসে টাকা গুনতে গুনতে জীবনটা পার করে দিতেন”।

যাই হোক রুমমেটের মুখটা কোনো ভাবে বন্ধ করে ফেসবুকে ব্যস্ত হয়ে গেলাম, নজরুলের যে লাইনগুলো মাথায় ঢুকেছে এগুলো বের না করা পর্যন্ত আমার মাথা থেকে আর কোনো ছন্দ আসবেনা। কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য, হোম পেজ ওপেন করতেই একজনের ওয়ালে ভেস উঠলো বিশিষ্ট্য অত্যাচারী জমিদার রবীন্দ্র সাহেবের গানের কয়েকটা লাইন।
“যেদিন পরবেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে......
আমি রইবোনা, বাইবোনা মোর খেয়া তরী এই ঘাটে......”

হিংসায় পুরে যাচ্ছিলাম, কি লিখলো এই ব্যাটায়?! হুক্কায় টান দিতে দিতে এতো সুন্দর গান লেখা যায়, ভাবনার বাইরে! মনে মনে গালি দিলাম, এই ব্যাটায় মুসলমানদের চাষার বাচ্চা বলে গালি দিয়েছিলো, এই ব্যাটায় কেনো এতো ভালো লিখবে?

একটা গল্প, একটা গান, একটা কবিতা, একটা মানুষের অন্তরকে মূহুর্তের মধ্যেই পরিবর্তন করে দিতে পারে। নজরুলকে আমরা যতই আমাদের কবি বলি, নজরুল কিন্তু আমাদের ছিলেননা, তিনি পেটের ধান্দায় সবাইকেই সার্ভিস দিয়েছিলেন। তবে হ্যা, মুসলমানদের জন্য তার হৃদয়ে ছিলো গভীর ভালোবাসা। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে এই ভালোবাসা দিয়ে ক্ষুধার্ত নজরুলের পেটে ভাত জুটতোনা, তাই তাকে শ্যামা সঙ্গীত হতে শুরু করে বাম সঙ্গীত সবই রচনা করতে হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ একনিষ্ঠ হিন্দু ছিলেন, তার কবিতা, গানের প্রেমে পরে অনেক মুসলিম নারী কপালে বিশাল বিশাল লাল টিপ এবং সিঁদুর পরিধান করে।
তার কবিতা গানের প্রেমে পরে অনেক মুসলিম হয়ে যায় অসাম্প্রদায়ীক আধা হিন্দু।

ফররুখ একনিষ্ঠভাবে আমাদের ছিলেন, তিনি আমাদের জাগরণের কবি ছিলেন, তার কবিতায় উদীপ্ত হয়েছিলো, পথ খুঁজে পেয়েছিলো, পথহারা মুসলমান।

আল মাহমুদ তার শেষ বয়সে এসে আমাদের হয়েছেন। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখন আর তার দেয়ার মতো অবশিষ্ট্য কিছু নেই, তিনি শুধু আমাদের পক্ষে যেটা দিতে পারছেন সেটা হচ্ছে পাবলিসিটি। আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারছি, বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় কবি আমাদের! তার কাছ থেকে এর বেশি কিছু আমাদের পাওয়ার নেই।

মল্লিক আমাদের সম্পদ, জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি শুধু দিয়েই গেছেন। আল্লাহ এই কবিকে কবুল করুন।

স্বপ্ন দেখি একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের, এই বিপ্লবের কান্ডারী হবেন একজন নজরুল এবং একজন মুসলিম রবীন্দ্রনাথ!
বাংলাদেশের হাটে,মাঠে,ঘরে, সবখানেই বাজবে তাওহীদের গান, সে গান শুনে আমরা ঈমানের বলে বলীয়ান হবো। আমরা মুসলিম হবো।

লেখাঃ সাংস্কৃতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি
শামীম রেজা
১০/০৬/২০১৪

Post Comment

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন

 
 
দাড়িওয়ালা নায়কঃ-
নায়ক মস্তবড় ডাকাত, আউলা ঝাউলা জীবন, মুখ ভর্তি দাড়ি-গোফ। একদিন নায়কের প্রেমে পড়ে যায় নায়িকা। ঘটনার পরম্পরায় নায়ক ভালো হয়ে যায়। নায়িকার সাথে একটা গান, নায়কের মুখ ভর্তি দাড়ি উধাও।
শিক্ষাঃ ডাকাত নায়কের মুখে দাড়ি থাকতে পারে, কিন্তু ভালো নায়কের মুখে দাড়ি থাকতে পারেনা।

মুক্তিযুদ্ধের চলচিত্রঃ-
তুমুল যুদ্ধ চলছে, মুক্তিযুদ্ধ। বিশাল দাড়িওয়ালা রাজাকার মাথায় লম্বা টুপি এবং কাধে হাজি রুমাল নিয়ে পাকিস্থানী বাহিনীর সাথে উর্দুতে কথা বলছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাকিস্থানী বাহিনীর খেদমতের জন্য জোর করে মেয়েদের তুলে আনছে।
শিক্ষাঃ রাজাকাররা সবাই দাড়িওয়ালা ছিলো, তারা নারী ধর্ষকও।

লম্পট চেয়ারম্যানঃ-
এলাকার চেয়ারম্যান মস্তবড় গমচোর। এমন কোনো কূকৃতি নেই যা তিনি করেননা, এলাকার নারীদের উপর একবার বদ নজর পড়লে সেই নারীর আর রেহাই নেই। চেয়ারম্যানের মুখভর্তি লম্বা দাড়ি মাথায় সাদা টুপি।
শিক্ষাঃ খারাপ মানুষরাই দাড়ি রাখে,

হিল্লা বিয়েঃ-
এলাকায় শালিস বসেছে, মসজিদের ঈমাম সাহেবকে ডাকা হল সলিমুদ্দিনের বউয়ের বিচার করার জন্য। ঈমাম সাহেব দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে গ্রাম্য মাতব্বরের ইশারায় ফতোয়া দিয়ে দিলেন, সলিমুদ্দিনের বউকে মাতবরের সাথে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে।
শিক্ষাঃ হুজুরগুলা সব শয়তান আর লুইচ্চা টাইপের হয়।

গ্রাম্য নায়িকাঃ-
গ্রাম থেকে অশিক্ষিত নায়িকা ঢাকা শহরে এসেছে, ঢাকার রাস্তাঘাট কিছুই চিনেনা। বোরখা আবৃত নায়িকা মুখের উপরের ঢাকনা তুলে এরকাছে ওরকাছে ঠিকানা জানতে চাচ্ছে।
ঘটনার পরম্পরায় একদিন নায়িকা আধুনিক হয়ে যায়, বোরকা ছুড়ে ফেলে হাফপ্যান্ট পড়ে শহর বন্দর দাপিয়ে বেড়ায়, ক্লাবে গিয়ে নেচে-গেয়ে আধুনিকতার প্রমাণ দেয়।
শিক্ষাঃ অশিক্ষিত গাইয়া এবং সেকেলে নারীরাই বোরখা পরে।

বোরখা পরা নায়িকাঃ-
নায়িকা বোরখা পরে চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, প্রেমিকের সাথে দেখা করবে।
শিক্ষাঃ বোরখা হচ্ছে প্রতারণার মাধ্যম, বোরখা পড়া মেয়েরা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে বেড়ায়।

উপরের চিত্রগুলো হচ্ছে মুসলমানদের উপর মিডিয়া আগ্রাসনের বেশ কিছু উদাহরণ। এখন আমাদের নাটক সিনেমায় যত্রতত্র ইসলাম এবং ইসলামী পোশাককে অবমাননাকরভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর প্রতিকার কি?
দুইভাবে এর প্রতিকার করা যায়।

প্রথমতঃ- জেএমবি স্টাইলে বাংলাদেশের সকল সিনেমা হল বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া। নাটক সিনেমার নির্মাতাদের ধরে ধরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা। টিভি দেখা হারাম ঘোশণা করা।
এক্ষেত্রে সিনেমা হলে বোমা মারার কারণে মানুষ আর সিনেমা হলে যাবেনা, ঘরে ঘরে ভিসিডিতে হিন্দি এবং ইংলিশ সিনেমা দেখবে। টিভি দেখা হারাম ঘোশণা করলেই কি আর না করলেই কি, মানুষ বিনোদনের জন্য ঠিকই হিন্দুদের দেব দেবীদের নিয়ে নির্মিত ভারতীয় কার্টুন এবং নাটক-সিনেমা উপভোগ করবে।

দ্বিতীয়তঃ- উন্নত মানের ইসলামী ভাবধারার দাওয়াতী বক্তব্য সমৃদ্ধ নাটক সিনেমা নির্মান করা। সিডি ক্যাসেট করে এবং পেনড্রাইভ, মেমোরী কার্ডের মধ্যমে সেগুলোকে গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়া।

সাংস্কৃতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে, বিজাতীয় সংস্কৃতির শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা চরমতম আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুই নয়। অস্ত্রের ক্ষমতাবলে মানুষের বাহ্যিক পরিবর্তন করা সম্ভব, অন্তর পরিবর্তন সম্ভব নয়। অস্ত্র দিয়ে আপনি সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে পারবেন, কিন্তু মানুষের ঘরে ঘরে যে সিনেমা হল তৈরী হয়ে যাবে সেগুলো কিভাবে বন্ধ করবেন?

আপনার দৌড় যদি বোমা ফুটানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ হয়, তবে বেশি বেশি বোমা ফুটান। আর আপনার যদি নাটক-সিনেমা বানানোর ক্ষমতা থাকে তবে বেশি বেশি ইসলামী ভাবধারার নাটক-সিনেমা তৈরী করে জাতিকে উদ্ধার করুন। বিজাতীয় সংস্কৃতির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান দিন।

নির্বোধরাই অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে, বুদ্ধিমানরা কথা বলে কলম দিয়ে, মেধা দিয়ে।

লেখাঃ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন
© শামীম রেজা
১৮/০৬/২০১৪

Post Comment

জিহাদ দেশে দেশ

facebook link 


জিহাদ দেশে দেশে

ফিলিস্তিন:-
হামাসের আছে নিজস্ব সামরিক বাহিনী, মেডিকেল ইউনিট, মিডিয়া বিভাগ, শিক্ষা ব্যবস্থা, ফিলিস্তিনের বিশাল এরিয়া নিয়ন্ত্রন করে সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে তারা ইহুদীবাদী ইসরাইলের মোকাবেলা করে। সারাবিশ্বের মুসলিমদের সহানূভুতি নিয়েই তারা জিহাদ করে যাচ্ছে নিরন্ত্রর। তাহের হাতে আছে অত্যাধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র, বিমান বিধ্বংশী মিশাইল সহ ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র।

আফগানিস্থান:-
আফগানিস্থানের মুজাহিদদের কাছেও রয়েছে সর্বাধুনিক অস্ত্র-সম্ভার, মাঝে মধ্যেই খবর পাওয়া যায় বিমান বিধ্বংশী মিশাইলের সাহায্যে তারা আমেরিকার হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। আফগানিস্থানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে তালেবান প্রশাসনের নিয়ন্ত্রন। তালেবানদেরও নিজস্ব শিক্ষা বিভাগ এবং সামরিক বিভাগ রয়েছে, রয়েছে নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা।

সিরিয়া:-
সিরিয়ার মুজাহিদের কাছেও রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র সম্ভার, সেসব আধুনিক অস্ত্র দিয়ে তারা বাসার আল আসাদ সরকারকে নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে। সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে যুদ্ধ করে যাচ্ছে মুজাহিদরা। তাদের রয়েছে নিজস্ব প্রশাসন।

ইরাক:-
ইরাকে সম্প্রতি উত্থান ঘটেছে আইএসআইএস নামক চমক দেখানো মুজাহিদ গোষ্ঠির। তারা ইতোমধ্যেই ইরাকের বেশ কয়েকটি শহর দখল করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ইহুদি খৃষ্টানদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
আইএসআইএসে’র রয়েছে স্বতন্ত্র শিক্ষা বিভাগ এবং প্রশাসন, তাদের আইটি বিভাগও অত্যান্ত শক্তিশালী। সামরিক বিভাগে তাদের চমক লাগানো সংযোজন হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের বিমান চালক ও সামরিক অফিসার।

পাকিস্থানঃ-
পাকিস্থানে আছে তেহরিক ই তালিবান নামক জিহাদী সংগঠন, মাঝে মধ্যেই মসজিদ-মাদ্রাসা এবং বাজারে বোমা ফুটিয়ে তারা ইসলাম কায়েম করার কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। আফগানিস্থানে মার্কিন বোমা হামলায় নিহত হয় হাজার হাজার মুসলিম, আর তেহরিক ই তালিবান পাকিস্থানের ভেতরে ঢুকে বিমান বন্দরে হামলা করে, মালালাদের গুলি করে, শ্রীলংকান ক্রিকেট টিমের উপর হামলা করে। এভাবেই তারা সম্ভবত পাকিস্থানে ইসলাম কায়েম করে ফেলবে। পাকিস্থানী জিহাদীদের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিমান বিধ্বংশী মিশাইল।

বাংলাদেশঃ-
পাকিস্থানী জিহাদীদের চাইতে বাংলাদেশী জিহাদীরা একধাপ এগিয়ে আছে। পাকিস্থানী জিহাদীরা মাঝে মধ্যেই সামরিক বাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে থাকে, কিন্তু বাংলাদেশী জিহাদীরা অত্যান্ত ভদ্র তারা কখনোই সামরিক বাহিনীর উপর হামলা করেনা। তারা মাঝে মধ্যে চৌষট্টিটা জেলায় বোমা ফুটায়। বাজার, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে বোমা ফুটিয়ে সাধারণ মানুষ মারে।
তবে ইদানিং বাংলাদেশের জিহাদীরা আরো ভালো হয়ে গেছে, তারা এখন আর বোমা ফুটায়না। প্রতিবেশি দেশ মায়ানমারে যখন মুসলমান নিধন হয় তখন এরা ফেসবুকে বসে বসে স্ট্যাটাস দেয়। জিহাদ করতে করতে সকাল সন্ধ্যা দুই-তিনটা কী-বোর্ড ভেঙে ফেলে।
বাংলাদেশের জিহাদীদের কাছে রয়েছে ভয়ানক সব বিধ্বংশী অস্ত্র, তাদের অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে নোকিয়া ২৭০০ক্লাসিক, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এবং বেশ কিছু কী-বোর্ড। ও হ্যা বেশ কিছু চাপাতীও তাদের রয়েছে, মাঝে মধ্যেই চাপাতি হাতে তারা ঝাপিয়ে পড়ে ইসলামের দুশমনের বিরুদ্ধে।
আশা করা যায় অচিরেই বাংলাদেশে খিলাফত কায়েম হয়ে যাবে।

অফটপিকঃ
বাংলাদেশ এবং পাকিস্থান উভয় স্থানেই র'(RAW) এর কার্যক্রম এবং বাজেট খুবই শক্তিশালী।

লেখাঃ জিহাদ দেশে দেশ
© শামীম রেজা
১৭/০৬/২০১৪

Post Comment

একদিন হবে ভোর

কুপিয়ে কুপিয়ে রক্তে ডুবিয়ে নোমানিকে মারা হয়,
রাসেলের কাটা পা, তড়পায় তড়পায়, রক্তে ভেসে যায়।
বুলেটের আঘাতে ঝরে যায় শত প্রাণ, লড়ে যায় মুজাহিদ,
নাই তবু পিছুটান, করে যায় জনহিত।
মোল্লা ঝুলে যায় ফাঁসিতে, বাতিলের হাসিতে,
সাঈদি বসে রয়, জল্লাদ তেল মাখে রশিতে।
ভার্সিটি ছাত্র যত্র-তত্র কোরানের কথা কয়,
এতো মার, কাটে ঘাড়, তবু ওরা নির্ভয়।
এভাবেই রোজ রোজ, কোরবানী হর রোজ,
মুজাহিদ লড়ে যায়, জিহাদের নেয় খোঁজ।
স্বপ্ন চোখ তার দেখে যায়, অশ্রু ভেসে যায়,
শাহাদাত পিয়াসী ঠোট দুটি হেসে যায়।
একদিন হবে ভোর, রাঙা ওই আকাশে,
মুক্তির সূর্য দেখা দিবে সকাশে।

কবিতাঃ একদিন হবে ভোর
© শামীম রেজা
১৭/০৬/২০১৪

Post Comment

কুফরী গণতন্ত্র

facebook link 

 
ভাই কি করেন?
মুখ থেকে ধোঁয়া ছাড়াতে ছাড়তে ভাইয়ের জবাব, বিড়ি খাই!
‘ছিঃ ভাইয়া, আপনি না শিবির করেন?’
‘একসময় করতাম এখন করিনা। কুফরী গণতন্ত্রের দলে আমি নাই’।
‘গণতন্ত্র কুফরী হইলো কেমনে?’
‘তুমি এগুলা বুঝবানা, অবশ্য ব্রেন ওয়াশ পোলাইপাইনে এগুলা বুঝার কথাওনা। ইসলামে গণতন্ত্র হারাম’।
‘হযরত আবু বকর (রাঃ) কিভাবে খলিফা হইছিলো? অস্ত্র দিয়ে, নাকি গণতান্ত্রিক উপায়ে?’
‘ধুর মিয়া! কিসের মধ্যে কি ঢুকাও! কই আগরতলা আর কই চোকির তলা’।
‘ভাই বুঝাইয়া কইবেনতো! আমিতো বুঝিনা, বয়স কম আর আপনারমতো এতো পড়াশোনাও নাই। রাসূল (সঃ) এর ইন্তেকালের পরে তার জানাজা ফেলে রেখেই মুসলমানদের মধ্যে যখন খিলাফত নিয়ে দন্ধ লেগে গেলো তখনতো গণতান্ত্রিক উপায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে হযরত আবু বকর (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হলেন, আমিতো এটাই জানি’।
‘তোমার কথা ঠিক, তবে সেটা গণতন্ত্র ছিলোনা। গণতন্ত্রের মিনিং হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত যেদিকে যাবে সেটাই বাস্তবায়ন হবে। এখানে কোরান হাদিসের কোনো প্রাধান্য নেই’।
‘হযরত আবু বকর (রাঃ)তো সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতেই খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাহলে কি খলিফা নির্বাচন কুফরী গণতন্ত্র অনুযায়ী হয়েছিলো?’
‘তোমার মাথা হয়েছিলো! দিলাতো মেজাজটা গরম করে। এখন আরেকটা বিড়ি খাইতে হবে নইলে মাথা ঠান্ডা হবেনা’।
শোনো, গণতন্ত্র হইলো একটা কুফরী সিস্টেম, তোমাকে ব্যাক্ষা করলেই বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে যাবা। বিড়িতে বিশাল দম নিয়ে বড় ভাই একটু থামলেন।
‘ধরো সরকার গণভোটের আয়োজন করলো, দেশে ব্যাভিচারের অনুমোদন দেয়া হবে কিনা। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এটার পক্ষে ভোট দেয় তবে ব্যভিচার জায়েজ হয়ে যাবে। কিন্তু ইসলাম বলে, দুনিয়ার সবাই যদি ব্যভিচারের পক্ষ নেয় তবুও ব্যভিচার করতে দেয়া যাবেনা। এটাই হচ্ছে কুফরী গণতন্ত্র ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য’।
‘হুম, বুঝলাম! কিন্তু ভাইয়া জামায়াত-শিবিরকি কুফরী গণতন্ত্রের এই অংশটা মানে?’
‘তুমি কিযে বলোনা! অবশ্যই মানে। দেখোনা, জামায়াত কুফরী গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়’।
‘হযরত আবু বকর (রাঃ) কি তাহলে কুফরী গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচিত হয়েছিলো?’
‘তুমি কিন্তু আমার মাথা গরম করে দিচ্ছ! কিসের সাথে কি মেলাচ্ছ!’
“আমি ভুল বলেছি? হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নির্বাচনের সময় যেভাবে শুধুমাত্র গণতন্ত্রের ভালো দিকটাকে গ্রহণ করা হয়েছিলো, জামায়াত-শিবিরও তেমনি শুধুমাত্র গণতন্ত্রের ভালো দিকটা গ্রহণ করছে। অন্যান্য খারাপ দিকগুলোকে অমান্য করছে।
এইযে সেদিনকার ঘটনাই বলছি, গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকার ইসলাম বিরোধী ‘নারী নীতি’ প্রণয়ন করেছে। যেহেতু তারা নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেয়েছে সেহেতু তারা চাইলেই সেটা করতে পারে। জামায়াত কিন্তু গণতন্ত্রের এই খারাপ দিকটা গ্রহণ করেনাই। জামায়াত তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছে নারী নীতির বিরুদ্ধে”।
‘শোনো তোমাকে আরো পড়াশোনা করতে হবে, এভাবে বুঝবানা। জামায়াত যেভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে সেভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবেনা। ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপায় হচ্ছে ক্ষমতাবান মানুষের কাছে নুসরা চাইতে হবে। নুসরা নিয়ে জিহাদ করে ক্ষমতায় আসতে হবে”।
‘সুন্দর পয়েন্ট বলেছেন। কাফির মুশরিকদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে রাসূল(সঃ)তায়েফবাসী সহ মদিনার আনসারদের কাছে নুসরা চেয়েছিলেন। তাদের সে সক্ষমতা ছিলো। তায়েফ বাসী নুসরা দেয়নাই, আনসাররা দিয়েছিলো। বর্তমান বিশ্বের নিয়ম অনুযায়ী জনগণই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শক্তিমান অংশ, জামায়াত যদি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের কাছে নুসরা (ভোট/সমর্থন) চায় সেটা কি অন্যায় হবে?’
‘তোমার মাথা পুরাটাই গেছে, আজকে আর টাইম দিতে পারছিনা, গার্লফ্রেন্ড ওয়েট করতেছে, তাকে নিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা বিষয়ক একটা সেমিনারে যেতে হবে’।
‘আজব! আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে!!!’
‘হ্যা, অনেক ভালো মেয়ে, হিজাবী’।
‘ও আচ্ছা, ঠিক আছে ভাই, আল্লাহ হাফেজ’।
‘খালি মুখে চলে যাবা! কিছু খাবানা? একটা বিড়ি খাও! ও স্যরি তুমিতো আবার এগুলা খাওনা।
আল্লাহ হাফেজ!’

লেখাঃ কুফরী গণতন্ত্র
© শামীম রেজা
১৫/০৬/২০১৪

Post Comment

মিথ্যেবাদী

facebook link


তোমার ভাতে দেইনিকো ছাই,
তোমার ঘরে নেইনিকো ঠাই।
তবু কেনো মিথ্যে করে,
আমার চোখের অগোচরে,
করলে গীবত, লাভ কি হলো?
মিথ্যে বলায় কাজ কি হলো?
হিংসে করো! অনেক অনেক?
করতে থাকো!
নিজের চুলোয় জ্বলতে থাকো।

কবিতাঃ মিথ্যেবাদী
শামীম রেজা
১১/০৬/২০১৪

Post Comment

ছেলে গেছে শিবিরে

facebook link  


ওই মিয়া! ছেলে কই?

জানিনাতো গেলো কই!
কেনো ভাই, হলো কি?

জানোনা তা? বলো কি!
ছেলে গেছে শিবিরে,
ফোন করো বিবিরে,
জেনে নাও ছেলে কই,
হাতে তার কার বই!
মন তার সেকেলে,
দাম নেই বিকোলে।
চুলে তার ঝুঁটি নাই,
টুটা ফাটা প্যান্ট নাই।
কানে দুল, নাক ফুল,
জেল দিয়ে খাড়া চুল,
হিপ নামা প্যান্ট নাই,
বাহু ভরা ট্যাটু নাই।
হাত ধরা সাথী নাই।
ভুরুতেও দুল নাই।
এই তার বয়সে,
গান গাবে কোরাসে!
তা না, করে দল,
গায়ে তার কত বল!
পরো যদি বিপদে,
ফেলোনাকো আপদে,
সাবধান করলাম,
সব খুলে বললাম।

তাই নাকি! বেশ বেশ!
বুঝলাম অবশেষ,
হাড় ভাঙা করি কাজ,
সার্থক হলো আজ।
ছেলে গেছে শিবিরে,
ফোন করি বিবিরে,
বেটা মোর সাব্বাশ!
বাতিলের হাঁসফাঁস।
ওকে ভাই চললাম,
আল বিদা বললাম।

কবিতাঃ ছেলে গেছে শিবিরে
শামীম রেজা
০৫/০৬/২০১৪

Post Comment

জিনুনের বাবা

আঙ্কেল! আঙ্কেল! আমার বাবাকে বের করে দিতে পারবা?
আঙ্কেল! আমার বাবার হাত বান্ধি রাখছে। আঙ্কেল! আমার বাবা ভাত খেতে পারবে?
কোলে উঠেই একনাগারে প্রশ্নগুলো করছিলো জিনুন, জিনুনকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছি, কোনো জবাব দিতে পারিনাই। এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। এ প্রশ্নের জবাব নিরব অশ্রু, এ প্রশ্নের জবাব মাবুদের কাছে প্রশ্ন, আর কত? আর কত শিশুকে তাদের বাবার ভালোবাসা হতে বঞ্চিত করা হবে, আর কত মাকে সহ্য করতে হবে সন্তান হারানোর যন্ত্রনা, আর কত স্ত্রীকে পারি দিতে হবে অপেক্ষার দরিয়া, এ জুলুমের শেষ কোথায়?

না, জিনুনের পিতা কাউকে শীতলক্ষায় গুম করেনাই, কিংবা পুরিয়ে কাবাব বানায়নাই কোনো জ্যান্ত মানুষকে। তারপরেও জিনুনের পিতা অপরাধী, ভয়ঙ্কর অপরাধী, জামিন অযোগ্য মামলার আসামী। জিনুনের পিতা এদেশে কোরানের আইন চায়, জিনুনের পিতা এদেশে ইসলামী খিলাফত চায়। জিনুনের পিতা চায় সাম্য ও ন্যায় ভিত্তিক ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র, জিনুনের পিতা জামায়াতে ইসলামী করে, এটাই তার মূল অপরাধ, এর চাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধ আর কি হতে পারে?!
আজ ৬টি মাস শিশুটি অপেক্ষা করছে তার বাবার জন্য। কোর্ট প্রাঙ্গনে বাবাকে দেখলেই ছুটে যেতে চায়, বাবার কোলে উঠবে কিন্তু বাবার হাত বাঁধা। অসহায় দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে, পিতা-কন্যা।

ইতোপূর্বেও জাহিদ ভাইয়ের ব্যাপারে লিখেছিলাম। গভীর রাতে একদল যুবলীগ সন্ত্রাসী জাহিদ ভাইয়ের বাসায় হানা দেয়। খাওয়া দাওয়া করে সবে মাত্র ঘুমিয়েছেন তখনি ঝাপিয়ে পরে লীগের সন্ত্রাসীরা। ঘরে ঢুকেই অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় জাহিদ ভাইয়ের উপর। আলমারি খুলে নগদ টাকা, স্বর্নালঙ্কার, কম্পিউটার সহ যাবতীয় মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়, নতুন কেনা মটরসাইকেলটিও রেহাই পায় নাই। হতবিহ্বল স্ত্রী চিৎকার করে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা। ঠিক তখনি একজন গিয়ে জিনুনের গলায় ছুড়ি ঠেকিয়ে বলে চিৎকার চেঁচামেচি করলে বাচ্চাটাকে জবাই করে ফেলবো।

বিনা প্রতিরোধে লুটপাট কর্ম সম্পাদন করে জাহিদ ভাইকে মারতে মারতে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা, অতিউৎসাহি কেউ কেউতো বউটাকেও সাথে করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলো, পরবর্তীতে সিনিয়র এক নেতার কথায় সেটা সম্ভব হয় নাই। প্রতিবেশিদের অনেকেই বেরিয়ে এসেছিলো, কিন্তু সন্ত্রাসীদের গুলির হুমকির মুখে সবাই ঘরে ঢুকে যেতে বাধ্য হয়।

সারারাত একটি বস্তিতে আটকে রেখে জাহিদ ভাইয়ের উপর চালানো হয় নির্মম অত্যাচার, এরমধ্যেই বার বার বাসায় খবর পাঠানো হয়, টাকা দিতে হবে নইলে জাহিদ ভাইয়ের লাশও পাওয়া যাবেনা।

পরেরদিন সকাল বেলা জাহিদ ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়, সাথে একটি ভাঙাচোরা পাইপগান। পুলিশের মামলায় লেখা হয়, “স্থানীয় জনতার হাতে অস্ত্র সহ আটক জামায়াত ক্যাডার জাহিদ”।

জাহিদ ভাই এখনো জামিন পান নাই, দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারনে চাকরী চলে গেছে। ছোট খাটো কিছু ব্যবসা ছিলো, ব্যবসাও শেষ।
না, জিনুনের পিতার সব হারানোর বিচার আমরা দুনিয়ার কোনো আদালতে দিবোনা। এই বিচারের দায়িত্ব সকল বিচারকের যিনি প্রধান বিচারক সেই মহান রব্বুল আলামীনের হাতে সঁপে দিলাম।
জিনুনের নিষ্পাপ চোখের অসহায় দৃষ্টি অভিশাপের তীর হয়ে বিদ্ধ হোক জালিমের অন্তরে।
(ছবিঃ বাবার কোলে জিনুন)

লেখাঃ জিনুনের বাবা
শামীম রেজা
০৪/০৬/২০১৪
 



Photo: আঙ্কেল! আঙ্কেল! আমার বাবাকে বের করে দিতে পারবা?
আঙ্কেল! আমার বাবার হাত বান্ধি রাখছে। আঙ্কেল! আমার বাবা ভাত খেতে পারবে?
কোলে উঠেই একনাগারে প্রশ্নগুলো করছিলো জিনুন, জিনুনকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছি, কোনো জবাব দিতে পারিনাই। এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। এ প্রশ্নের জবাব নিরব অশ্রু, এ প্রশ্নের জবাব মাবুদের কাছে প্রশ্ন, আর কত? আর কত শিশুকে তাদের বাবার ভালোবাসা হতে বঞ্চিত করা হবে, আর কত মাকে সহ্য করতে হবে সন্তান হারানোর যন্ত্রনা, আর কত স্ত্রীকে পারি দিতে হবে অপেক্ষার দরিয়া, এ জুলুমের শেষ কোথায়?

না, জিনুনের পিতা কাউকে শীতলক্ষায় গুম করেনাই, কিংবা পুরিয়ে কাবাব বানায়নাই কোনো জ্যান্ত মানুষকে। তারপরেও জিনুনের পিতা অপরাধী, ভয়ঙ্কর অপরাধী, জামিন অযোগ্য মামলার আসামী। জিনুনের পিতা এদেশে কোরানের আইন চায়, জিনুনের পিতা এদেশে ইসলামী খিলাফত চায়। জিনুনের পিতা চায় সাম্য ও ন্যায় ভিত্তিক ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র,  জিনুনের পিতা জামায়াতে ইসলামী করে, এটাই তার মূল অপরাধ, এর চাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধ আর কি হতে পারে?!
আজ ৬টি মাস শিশুটি অপেক্ষা করছে তার বাবার জন্য। কোর্ট প্রাঙ্গনে বাবাকে দেখলেই ছুটে যেতে চায়, বাবার কোলে উঠবে কিন্তু বাবার হাত বাঁধা। অসহায় দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে, পিতা-কন্যা।

ইতোপূর্বেও জাহিদ ভাইয়ের ব্যাপারে লিখেছিলাম। গভীর রাতে একদল যুবলীগ সন্ত্রাসী জাহিদ ভাইয়ের বাসায় হানা দেয়। খাওয়া দাওয়া করে সবে মাত্র ঘুমিয়েছেন তখনি ঝাপিয়ে পরে লীগের সন্ত্রাসীরা। ঘরে ঢুকেই অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় জাহিদ ভাইয়ের উপর। আলমারি খুলে নগদ টাকা, স্বর্নালঙ্কার, কম্পিউটার সহ যাবতীয় মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়, নতুন কেনা মটরসাইকেলটিও রেহাই পায় নাই। হতবিহ্বল স্ত্রী চিৎকার করে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা। ঠিক তখনি একজন গিয়ে জিনুনের গলায় ছুড়ি ঠেকিয়ে বলে চিৎকার চেঁচামেচি করলে বাচ্চাটাকে জবাই করে ফেলবো।

বিনা প্রতিরোধে লুটপাট কর্ম সম্পাদন করে জাহিদ ভাইকে মারতে মারতে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা, অতিউৎসাহি কেউ কেউতো বউটাকেও সাথে করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলো, পরবর্তীতে সিনিয়র এক নেতার কথায় সেটা সম্ভব হয় নাই। প্রতিবেশিদের অনেকেই বেরিয়ে এসেছিলো, কিন্তু সন্ত্রাসীদের গুলির হুমকির মুখে সবাই ঘরে ঢুকে যেতে বাধ্য হয়।

সারারাত একটি বস্তিতে আটকে রেখে জাহিদ ভাইয়ের উপর চালানো হয় নির্মম অত্যাচার, এরমধ্যেই বার বার বাসায় খবর পাঠানো হয়, টাকা দিতে হবে নইলে জাহিদ ভাইয়ের লাশও পাওয়া যাবেনা।

পরেরদিন সকাল বেলা জাহিদ ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়, সাথে একটি ভাঙাচোরা পাইপগান। পুলিশের মামলায় লেখা হয়, “স্থানীয় জনতার হাতে অস্ত্র সহ আটক জামায়াত ক্যাডার জাহিদ”।

জাহিদ ভাই এখনো জামিন পান নাই, দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারনে চাকরী চলে গেছে। ছোট খাটো কিছু ব্যবসা ছিলো, ব্যবসাও শেষ।
না, জিনুনের পিতার সব হারানোর বিচার আমরা দুনিয়ার কোনো আদালতে দিবোনা। এই বিচারের দায়িত্ব সকল বিচারকের যিনি প্রধান বিচারক সেই মহান রব্বুল আলামীনের হাতে সঁপে দিলাম। 
জিনুনের নিষ্পাপ চোখের অসহায় দৃষ্টি অভিশাপের তীর হয়ে বিদ্ধ হোক জালিমের অন্তরে।
(ছবিঃ বাবার কোলে জিনুন)

লেখাঃ জিনুনের বাবা
© শামীম রেজা
০৪/০৬/২০১৪

Post Comment

সার্কাসের সিংহ

মরে গেছিস? বেশ করেছিস, মরাই তোদের কাজ,
কোন মুখেতে কইতে এলি, নেইকি তোদের লাজ?!
তোদের হাতে লক্ষিপুরে, শহীদ জামাত নেতা।
সাতক্ষিরাতে মারলি কত, হিসাব তাহার যা তা?
ভুলে গেলি? মতিঝিলে, মারলি কত শত!
কুকুর তোরা, নিমক হারাম, শেখ মুজিবের মতো।
তোদের হাতে অস্ত্র দিলাম, দিলাম বেতন টাকা,
সেই টাকাতে ফুর্তি করিস, সীমান্ত আজ ফাঁকা।
ভারতীদের গোলাম তোরা, শেখ হায়েনার দাশ,
মীর জাফরী, বেঈমানিতে, স্বাধীন গলায় ফাঁস।
চাইবি ক্ষমা, ক্ষত দিয়ে নাক, চামড়া ঘসে ঘসে,
দেশের মানুষ ক্ষমা করে যদি অবশেষে।
দেশের তরে সিংহ হবি, পঁচাত্তরের মতো,
করবি বিনাশ নিজ হাতে আজ, দালাল আছে যত।

কবিতাঃ সার্কাসের সিংহ।
শামীম রেজা
০২/০৬/২০১৪

Post Comment

সীমান্তের বাঘ

বলবো আজি পুরান কথা, বেশ কিছু কাল আগের,
সীমান্ততে বসত ছিলো, হাজার খানেক বাঘের।
বাঘগুলো সব তাগড়া জোয়ান, দাতে অনেক ধার,
সেই ধারেতে ভয়ে কাঁপে, দিল্লী রাজার হাড়।
দেশের মানুষ নিরাপদে ঘুমায় গদি খাটে,
বাঘগুলো সব পাহাড়া দেয়, জালিম শাহী হতে।
দিল্লি পাঠায় বুলেট বোমা, হাজার হাজার সেনা,
সেই সেনারা ভয় কাপে, দেখে বাঘের ছানা।
দিল্লী শাহী বাংলাদেশে ছাড়লো কিছু ছাগ,
শর্ত ছিলো, দিবে গদি, মারে যদি বাঘ।
হঠাৎ করে চুপিসারে, শত্রু ঢোকে দেশে,
দালাল যত এক হয়েছে, বাঘের জীবন নাশে।

অবশেষে বিনাশ হলো, আমার দেশের বাঘ,
ক্ষমতায় আজ বসে আছে, দিল্লি শাহীর ছাগ।
সীমান্তে আজ বসত করে, বিড়াল শাবক যত,
দিল্লি শাহী বাংলাদেশী মারছে অবিরত।

কবিতাঃ সীমান্তের বাঘ
শামীম রেজা
০১/০৬/২০১৪

Post Comment

রক্তের সম্পর্ক-২

রক্ত দিতে গিয়েছিলাম, ওয়েটিং রুমে অপেক্ষমান রক্তদাতারা। একের পর এক নাম ঘোশনা হচ্ছে আর ধুক-পুক, ধুক-পুক হৃদয়ে রক্ত দেয়ার রুমে প্রবেশ করছে রক্ত দাতারা। আমার নাম ঘোশনা করতেই উঠে দাড়ালাম, পূর্বের অভিজ্ঞতার কারণে তেমন একটা ভয় কাজ করছিলোনা।
রক্ত দেয়ার জন্য শুয়ে পড়েছি ঠিক এসময়ে বাহিরে তুমুল হৈ চৈ পড়ে গেলো। নার্সকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, নিজের নাম ঘোশনা শুনে অপেক্ষমান এক ডোনার ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন!
মনে পড়ে গেলো ইকবাল ভাইয়ের কথা, এক প্রসূতিকে রক্ত দিতে গিয়ে এভাবেই ওয়েটিং রুমে বসে ছিলেন। হঠাৎ করেই ইকবাল ভাই নিখোঁজ, এখানে সেখানে ব্যাপক খোঁজ করা হলো, নেই নেই এবং নেই, জলজ্যান্ত মানুষটা এভাবে লাপাত্তা হয়ে গেলো, সবাইতো ভয়ে অস্থির, গুম হলোনাতো?!
পরে জানা গেছে, রক্ত দেয়ার ভয় ইকবাল ভাই পালিয়ে এসেছিলেন!

হাসপাতালের চতুর্থ তলাতেই রোগীর অবস্থান, রক্ত দিয়ে সোজা চলে গেলাম রোগীর সাথে দেখা করতে। পঞ্চাশোর্ধ রোগী আমাকে দেখামাত্রই চোখের পানি ছেড়ে দিলেন, হাতটাকে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলেন, মুখে শুধু একটাই কথা, “ও পুত ও পুত, ইবা আর পুত, ইবা আরে রক্ত দিয়ে, ইবা আর পুত”। তারপরে মাথায় হাত বুলিয়ে সেকি দোয়া! যেনো দোয়ার বন্যা প্রবাহিত হচ্ছে। আমিতো এটাই চেয়েছিলাম, এভাবেই হয়তো মানুষের হৃদয় হতে উৎসারিত ভালোবাসা এবং দোয়া আমাকে পৌছে দিবে জান্নাতের সিড়িতে।
পাশেই দন্ডায়মান রোগীর স্ত্রী, তাকে ডেকে বললেন “ইবা আরার পুত” মেয়েকে ডেকে বললেন “ইবা তোর বাই”
রোগীর মেয়েটা দেখলাম ভীষণ চঞ্চল, সারাক্ষণ কথা চলছেই। ফিরে আসার সময় জিজ্ঞাসা করলাম, আপু তোমার নাম কি? এইবার মুখ বন্ধ!
কাহিনী কি! এতোক্ষন যে মেয়ে অনর্গল কথা বলছিলো সে হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো কেনো?!
একটু পরে আমতা আমতা করেই জবাব দিলো, আপনি আমাকে ‘হাসি’ করেই ডাকতে পারেন, আমার নাম ‘হাসিনা’!
বুঝলাম, ‘হাসিনা’ নামটা নিয়ে বেচারী ব্যাপক বিব্রত।
রসিকতা করার লোভ সামলাতে পারলামনা, মুচকি হেসে বললাম, তুমি কি আওয়ামীলীগ?!
এবার খালাম্মা কথা বলে উঠলেন, আওয়ামীলীগরে দুইচোখে দেখতে পারিনা, তারপরেও মাইয়ার নাম রাখছি ‘হাসিনা’

অবশেষে ফিরে এলাম, একটি পরিবারের সাথে গড়ে এলাম রক্তের সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক, ভালোবাসার সম্পর্ক।

লেখাঃ রক্তের সম্পর্ক-২
শামীম রেজা
৩১/০৫/২০১৪

Post Comment

রক্তের সম্পর্ক

চট্টগ্রাম মেডিক্যালে তখন রক্ত দেয়ার রুম ছিলো সম্ভবত তৃতীয় তলায়, রক্ত দেয়ার রুমে ঢুকতেই চোখে পড়লো ভয়ঙ্কর দর্শন বিশাল এক ফোল্ডিং চেয়ার, চেয়ারের সাথে সংযুক্ত নানান রকমের কেবল এবং রাবারের পাইপ। দেখতেই কেমন যেনো গা ছম ছম করছিলো।
লম্বা চেয়ারে সটান শুয়ে পড়লাম, আমার পাশের বেডেই রক্ত দিচ্ছিলো নাদুস নুদুস গড়নের আরেকটা ছেলে, নির্বিকার ভঙ্গিতে হাতে রাখা রাবারের বল জাতীয় কিছু একটা চাপছিলো।
বুকে কিছুটা সাহস ফিরে পেলাম। এই ছেলে পারলে আমি কেনো পারবোনা! অবশ্যই পারবো। যদিও গায়ে মাংসের চাইতে হাড়ের পরিমান বেশি, তবুও সাহস সঞ্চয় করে নিলাম।

কাহিনী হচ্ছে, ক্যান্সার আক্রান্ত এক তরুণের রক্তের প্রয়োজন, মহানগরীর দায়িত্বশীল হোসাইন ভাই এক প্রকার জোর করেই আমাকে তুলে এনেছেন রক্ত দেয়ার জন্য। মনে প্রচন্ড ভয় কাজ করলেও, আমার রক্তে একজন মানুষের জীবন রক্ষা পাবে ভেবে খুব একটা অমত করিনাই।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতের মধ্যে সুঁই ঢুকে গেলো, দেখতে দেখতেই এক ব্যাগ রক্ত শরীর হতে বেরিয়ে গেলো এবং অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, যেই নাদুস নুদুস ছেলেটিকে দেখে আমি মনে মনে সাহস সঞ্চয় করেছিলাম, তার রক্তের ব্যাগ তখনো ফিলাপ হয় নাই। বুঝে গেলাম, দেহে গোস্ত না থাকলে কি হবে, ভেতরে রক্তের পরিমাণ যথেস্ট!
আমি যেখানে রক্ত দিয়ে সাবলীল ভাবে হেটে বেড়াচ্ছিলাম, ঠিক তখনি সেই স্বাস্থবান ভাইটিকে নিয়ে টানা-হেচড়া শুরু হয়ে গেলো। রক্ত দিয়ে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন।
রক্ত দেয়ার পরে যেহেতু আমার মধ্যে কোনো দূর্বলতা অনুভব করিনাই, সেহেতু বুঝে নিলাম, “বনের বাঘে খায়না, মনের বাঘেই খায়”।

প্রথমবার রক্ত দেয়ার পরে মনের ভয় অনেকটাই দূর হয়ে গেলো, এরপরেও দুই-তিনবার রক্ত দিতে গিয়েও ফিরে এসেছি শেষ মূহুর্তে রক্তের প্রয়োজন না হওয়ার কারনে।
সেদিন সাইফুল ভাই ধরলেন তার বন্ধুর ভাগ্নীর জন্য রক্তের প্রয়োজন, রক্ত দিতে হবে। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো রক্তের প্রয়োজন হলে সংগঠনের কাউকে দিবো, বাহিরের কাউকে দিবোনা, কারণ প্রয়োজনের সময় সহজে রক্ত পাওয়া যায়না । কিন্তু সাইফুল ভাইয়ের চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেলাম।
রক্ত দেয়া শেষ হলে রোগী আমাকে দেখতে চাইলেন। সালাম বিনিময় হলো, কথা হলো, জানতে পারলাম আমার নিয়্যত ব্যর্থ হয়নাই। যাকে রক্ত দিয়েছি তিনি আমার সংগঠনেরই একজন। তিনি ছাত্রীসংস্থার অগ্রসর কর্মী।

গতকাল রক্ত চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম, রোগী আমার বন্ধুর পরিচিত। পোস্ট থেকে ফোন নম্বর নিয়ে, নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুকে কেউ একজন গিয়ে রক্ত দিয়ে এসেছেন। অনেক অনেক ভালো লাগলো, সম্পূর্ণ অজানা, অচেনা, অনাত্মীয় একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এভাবে নিস্বার্থভাবে রক্ত দেয়ার মানসিকতা নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যাবে।
রক্ত দাতার প্রতি রইলো অনেক অনেক দোয়া, আল্লাহ তার এই উদারতাকে কবুল করুন।


লেখাঃ রক্তের সম্পর্ক

শামীম রেজা
৩০/০৫/২০১৪

Post Comment