ভবিষ্যৎ নির্মাণ


আর বইলেননা ভাবী, সারাদিন মেয়েদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। ওদের ভবিষ্যত নির্মানের দায়ীত্বতো আমাদেরই তাইনা?
প্রতিবেশী জেসমিন ভাবীর কথা শুনে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালেন হুমায়রা। ‘হ্যা, সেটাতো অবশ্যই, বাচ্চাদের ভালো মুসলিম বানিয়ে যেতে না পারলে আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবো?’
‘না না সেটা বলছিনা, আল্লাহ’র কাছে কি জবাব দিবো, সেটা ঠিক আছে। তারচাইতেও বড় ব্যাপার হচ্ছে সামাজিক মর্যাদা বলতে একটা কথা আছে, আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবেনা?’
‘হ্যা তাতো অবশ্যই, তাতো অবশ্যই, আমতা আমতা করে জবাব দিলো হুমায়রা’।
‘সকালে বাসায় গানের টিচার আসে, টিচার চলে যাওয়ার পরেই সাথে করে নিয়ে যাই স্কুলে। স্কুল ছুটির পরে নিয়ে যেতে হয় নাচের স্কুলে। সন্ধ্যায় আসে অঙ্ক এবং ইরেজির প্রাইভেট টিচার। সারাদিন কেটে যায় মেয়েদের নিয়ে, ওদের ভবিষ্যতের জন্য এতটুকু সেক্রিফাইসতো করতেই হবে কি বলেন ভাবি?’
হুমায়রা কোনো জবাব দেয়না, জবাব দিয়ে প্রতিবেশীর সাথে সু-সম্পর্ক নষ্ট করার মানে হয়না, চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়, নেন ভাবী চা খান।
‘আচ্ছা আপনারতো একটাই মেয়ে তাইনা? ও এবার কোন ক্লাসে? চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হুমায়রার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় জেসমিন’।
‘হ্যা, এইতো ক্লাস সিক্সে উঠেছে’।
মেয়েকে নাচ/গানের স্কুলে দিয়েছেন?
না, দেই নাই!
‘কি বলছেন আপনি? চমকে ওঠে জেসমিন! ওর প্রতিভা বিকাশের ব্যবস্থা করবেননা? ওর সময় কাটে কিভাবে?’
‘ওর সময়তো চমৎকার ভাবে কেটে যায়! স্কুল ছুটির পরে এক মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে এসে কোরআন শিখিয়ে যায়। আর বাকি সময়টা আমার সাথে হেসে খেলে, গল্প করে কাটায়। ওর আব্বুতো মেয়েটাকে একদম সময়ই দিতে পারেনা, সেই ভোর বেলা অফিসে চলে যায় আর ফিরে রাতে, এই সময়টা আমাদের মা-মেয়ের আনন্দেই কাটে’
‘তাই বলে মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করবেননা? আজ হোক কাল হোক আমরাতো এই দুনিয়াতে থাকবোনা, বাচ্চাদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে না পারলেতো মরেও যে শান্তি পাবোনা! হতাশ হয়ে জিজ্ঞাসা করে জেসমিন’।
‘মরে যেনো শান্তি পাই সেই ব্যবস্থাইতো করছি, হাসতে হাসতেই জবাব দেয় হুমায়রা’।
মানে? জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে প্রশ্ন করে জেসমিন।
উত্তরটা একটু ভিন্নভাবে দিচ্ছি। মনে মনে কথা গুছিয়ে নিচ্ছে হুমায়রা। ধরুন আপনি আজ রাতেই মারা গেলেন, আমিও মারা গেলাম! হায়াত মওতের কথাতো বলা যায়না, তাইনা?
হ্যা সেটা ঠিক, মৃত্যুতো আর বলে কয়ে আসেনা! জবাব দেয় জেসমিন।
আচ্ছা ধরা যাক আপনার মৃত্যুর পরে আপনার মেয়েরা বিখ্যাত নায়িকা/গায়ীকা হলো, তাতে আপনার কি লাভ?’
‘এটা কি বলছেন ভাবী? আমার মেয়েরা বিখ্যাত হবে, আর আপনি জিজ্ঞাসা করছেন আমার কি লাভ? অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে জেসমিন’।
‘আচ্ছা! আপনার মৃত্যুর পরে, কবরে ফেরেশতাদের সাথে যে সাওয়াল জবাব হবে সেখানে ঐ বিখ্যাত মেয়েদের কারনে স্পেশাল কোনো ফ্যাসিলিটি আপনি পাবেন? কিংবা আপনার মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা দিয়েছেন? যাতে করে তারা আপনার জন্য দোয়া করবে!
‘হতভম্ব জেসমিন! আমতা আমতা করে জবাব দেয়, না ভাবি, আরবী পড়ানোর সময় পাইনা, সারাদিন ওরা এতো ব্যস্ত থাকে!’
‘আমার হাতে কিন্তু অনেক টাইম! মাদ্রাসার মেয়েটি কোরআন শিক্ষা দিয়ে চলে যাওয়ার পরে আমি মেয়েকে নবী-রাসূল এবং সাহাবীদের গল্প শোনাই। ইসলামের বিভিন্ন বিধি নিষেধ নিয়ে মেয়ের সাথে আলোচনা করি। বিভিন্ন দোয়া শেখাই।
আমি আশা করছি, আমার মৃত্যুর পরে মেয়ে আমার জন্য সবসময় দোয়া করবে, সর্বদা সৎ জীবন যাপন করবে এবং এর বিনিময়ে আল্লাহ আখিরাতে আমাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন।
আপনার কি মনে হয় ভাবী? আমি মরে শান্তি পাবো? জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে জেসমিনের দিকে তাকিয়ে থাকে হুমায়রা’।
জেসমিনের মাথা ঘুরছে, হুমায়রার কথা তার মাথায় ঢুকছেনা। কোন মতে উঠে দাড়ালো, আজকে আসি ভাবি! আরেকদিন কথা হবে.........

১৩সেপ্টেম্বর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment