ক্যাম্পাসে শিবির------পর্ব-৮

facebook link

আমার বন্ধু আইইউসি’তে ভর্তি হবে বলেও শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিতে ভর্তি হলো। একদিন আড্ডা দিচ্ছি, দেখলাম প্রিমিয়ারের ইউনি’র ক্লাস/পরীক্ষা সিস্টেমকে গালি দিচ্ছে!
জিজ্ঞাসা করলাম কাহিনী কি? তোর তো আইইউসি’তে ভর্তি হওয়ার কথা ছিলো, প্রিমিয়ারে ভর্তি হলি কেনো?
ওর সোজা উত্তর, আর কিছু জানিনা, একটা বিষয় জানি তা হচ্ছে, আইইউসি’তে ছেলে মেয়ে আলাদা আলাদা ক্লাস হয়, ক্লাসে মজা নাই!

এক বন্ধু আক্ষেপ করে বলছিলো, তোদের শিবিরের জ্বালায়তো কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে!
কেনো, শিবির কি করেছে?
আরে কি করেনাই, সেটা বল! কলেজ লাইফ একটু এনজয় করবো, শিবির সেখানে বাধা দিচ্ছে। মেয়ে ক্লাসমেটদের সাথে একটু আড্ডা দিলেই হইছে, কোথা হতে শিবিরের দায়িত্বশীলরা এসে হাজির! এসেই বলে “ভাইয়া পরিবেশ নস্ট হচ্ছে!” এই শিবির গুলারে পরিবেশ রক্ষার দায়ীত্ব কে দিছে?
হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলাম, তোর নিজের বোনতো ওই কলেজেই পড়ে, সে কারও সাথে আড্ডা দিলে, তখন তোর কেমন লাগবে?
বন্ধুর মুখটা দেখার মতো হয়েছিলো!

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে সারা বছর শিবিরের জয় জয়কার, ছাত্র সংগঠনের মধ্যে শিবিরের মতো জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন আর নেই। কিন্তু ছাত্রসংসদ নির্বাচন এলেই শিবির পরাজিত! কারণ কি?
কারণ আর কিছুই নয়, নির্বাচনে শিবির বিজয়ী হলে স্বাধীনতা নষ্ট হবে!
হাত ধরা ধরি করে চিপায় চাপায় প্রেম করার অধিকার লঙ্ঘণ হবে, সে কারনে মেয়েরা শিবরকে ভোট দেয়না, বিশাল সংখ্যক ছাত্রীরা এন্টি শিবরকে ভোট দেয়।

চারদলীয় জোট সরকার আমলের কথা, সবেমাত্র সরকার পরিবর্তন হয়েছে। প্রথম আলো পত্রিকার ‘আলোকিত চট্টগ্রাম’ পাতায় ফিচার হয়েছিলো, চট্টগ্রাম ইউনির সেই নির্মল আড্ডা এখন আর চোখে পড়েনা, কপোত কপোতিদের হাত ধরা ধরি করে অবাধ বিচরন কিংবা প্রেয়সীর কোলে মাথা রেখে ক্লান্তি ভোলার সেই পরিবেষ নষ্ট করে দিয়েছে মৌলবাদী ছাত্রশিবির!
চট্টগ্রাম ইউনিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম সে বছরই, চমৎকার বনভূমি এবং পাহাড়ি পরিবেশে বিশাল আয়তনের বিশ্ববিদ্যালয়টি দেখে শিবিরের দায়িত্বশীলকে বলেছিলাম, জাহাঙ্গীর নগর ইউনির মতো এটাও ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রনে থাকলে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা নাতি-পুতিকে কোলে নিয়ে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো।

সর্বেশেষ একটি ঘটনার কথা বলেই লেখাটি শেষ করে দিচ্ছি, চট্টগ্রাম কলেজে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে শিবিরের দায়ীত্বশীলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন মেয়ের মা, ‘এটা আমার মেয়ে একটু দেখে শুনে রাখবা’। উল্লেখ্য মেয়ের বাবা-মা উভয়েই জামায়াতের রুকন এবং অতিরিক্ত আহ্লাদের কারণেই হোক বা অবহেলা জনিত কারনেই হোক, মেয়েকে ছাত্রী সংস্থায় দেয়া হয়নি।
একেতো বোরখা পরিহিত মেয়ে তার উপরে শিবিরের দায়িত্বশীল, ওই মেয়ের কথা তিনি ভুলেই গেলেন! কয়েক মাস পরের ঘটনা, একটি ছেলে এবং মেয়েকে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেলো। শিবিরের দায়িত্বশীল আসলেন এবং ছেলেকে হালকার উপর ধোলাই দিয়ে গার্জিয়ানকে খবর দেয়া হলো। মেয়েকে কিছু বলা হয়নাই, শুধু ছবি তুলে মেয়ের গার্জিয়ানের নাম-ঠিকানা এবং নম্বর নিয়ে পরের দিন কলেজে ডাকা হলো।
মেয়ের মা’কে দেখেতো দায়িত্বশীল অবাক, খালাম্মা এটা আপনার মেয়ে!? সব ঘটনা শুনে মেয়ের মা আকাশ হতে পড়লেন, আমার মেয়ে বোরখা ছাড়া চলাফেরা করেনা, এমন ঘটনা ঘটা অসম্ভব! তাছাড়া মেয়েরা বাবা-মায়ের যে নাম এবং ঠিকানা বলা হচ্ছে এগুলোর কোনটাই আমাদের নয়, নিশ্চই এটা অন্য কোনো মেয়ে!
দায়িত্বশীল আগের দিনে তোলা মেয়েটির ছবি দেখালেন, মেয়ের মা নির্বাক! স্তব্ধ! দু’গাল বেয়ে টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ছে হতাশা, দুঃখ!
এই সেই মেয়ে, যার বাবা-মা উভয়েই জামায়াতের রুকন। বাসা হতে বোরখা পড়ে বের হলেও কলেজে আসার পরে বোরখা হাওয়া হয়ে যেতো, আবার বাসায় যাওয়ার সময় গায়ে উঠতো বোরখা!
তার পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত, প্রতিদিন মেয়েকে সাথে করে কলেজে দিয়ে যাওয়া এবং ছুটির সময় সাথে করে নিয়ে যাওয়া। ছাত্রী সংস্থার দায়িত্বশীলার হাত-পা ধরে রিকোয়েস্ট, ‘আমার মেয়েকে একটু দেখো!’
কথায় আছেনা? “কাঁচা না নোয়াইলে বাঁশ, পাকলে করে ঠাশ! ঠাশ!”

আপনাকে বলছি, হ্যা আপনাকেই! আপনি যতবড় ইসলামিস্ট কিংবা হাম্বালীগ ধর্মের অনুসারী হননা কেনো, ছেলে-মেয়েকে যদি মানুষ করতে চান, আজই যোগাযোগ করুন নিকটস্থ শিবির অথবা ছাত্রীসংস্থার সাথে। ঘরের দায়িত্ব আপনার, ঘর-বাহির উভয়ের দায়িত্ব শিবিরের!

২১সেপ্টেম্বর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment