চমক আসছে


রানীর একমাত্র পুত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধী! পুত্রকে নিয়ে রানীর দুশ্চিন্তার শেষ নাই। দেশের জনগণ নিশ্চই একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে মেনে নিবেনা!
রানী পরিকল্পনা করলেন, ছেলেকে প্রমান করতে হবে যোগ্যতায় কোন অংশে সে কম নয়।
প্রথমেই পরিকল্পনা করা হলো, ছেলেকে সাদা চামড়ার মেয়ে বিয়ে করানো হবে, দেশের জনগণ আবার সাদা চামড়া বলতে অজ্ঞান! হোমড়া চোমড়ারাই কেবল সাদা চামড়ার মেয়ে বিয়ে করে!

নানান দেশের নানান জাতের মেয়ে দেখা হলো, কিন্তু অন্ধ ছেলেকে বিয়ে করা যায়, বোবা ছেলেকে বিয়ে করা যায়, পঙ্গু ছেলেকে বিয়ে করা যায়, তাই বলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী!! কোন মেয়ে চাইবে, একটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলেকে বিয়ে করে নিজের জীবন বরবাদ করতে?
কেউ রাজী হলোনা, অবশেষে খুজে ফিরে এক তালাকপ্রাপ্তা নারীকে পাওয়া গেলো, যিনি বিয়ে করতে রাজী হয়েছেন। কি আর করার, তালাক প্রাপ্ত হইছে কি হইছে, সাদা চামড়া হইলেই চলবে। মহাধুম ধামের সহিত বিয়ে সম্পন্ন হইলো।
জনগণ ধন্য ধন্য করলো, পোলায় বলদ হইলে কি হইবো, বিলাতী ম্যাম নিয়া আইছে!

পরিকল্পনা করা হলো ছেলেকে জনগণের সামনে নিয়ে আসতে হবে, ভবিষ্যত রাজা হিসেবে পরিচিত করিয়ে দিতে হবে।
সারা দেশের সাংবাদিকরা এসে হাজির, দেশের রানীপুত্র বক্তব্য দিবে, অধীর হয়ে সবাই অপেক্ষা করছে। রানী শিখিয়ে দিলেন, বাবা কথা বলার সময় এমন ভাব নিবা তুমি অনেক জ্ঞানী, তুমি অনেক কিছু জানো, দেশের ব্যাপারে সকল তথ্য তোমার জানা আছে!
পোলায় কয়, ওকে মামী!
মামী না ব্যাটা, আমি তোমার মাম্মি! রানী চিন্তায় শেষ, যেই ছেলে মামী আর মাম্মীর মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনা সে কিভাবে দেশ চালাবে!
মিডিয়ার সামনে গিয়ে রানীপুত্র হাসি হাসি মুখে বক্তব্য দিলো, আমি অনেক কিছু জানি, আমার কাছে তথ্য আছে!
জনগণ কইলো সাবাশ ব্যাটা! তুই হইলি দেশের তথ্য বাবা। আমার গরু হারাইছে, কে চুরি করছে তথ্যটা তাড়াতাড়ি কইয়া ফ্যালা।

রানী দেখলেন এভাবে হবেনা, ছেলের চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দিলেন। ডাক্তার বললো ব্রেন পারমানেন্টলি ড্যাম! তবে কিছু ঔষধ দিচ্ছি, সাময়ীক ভাবে চালিয়ে নেয়া যাবে।
ঔষধ খেয়ে রানী পুত্র মোটামুটি সুস্থ, দেশে নিয়ে আসা হলো। রানী ছেলেকে ডেকে বললেন, বাবা এবার তোমাকে চমক দেখাতে হবে, দেশের জনগণকে দেখাতে হবে একমাত্র তুমিই যোগ্য রাজা।
রানী পুত্র বললো, ওকে মামী।
মামী না বাবা, মাম্মী বলো! আহারে! পোলাডা কবেযে ভাল হইবো! রানী দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
এদিকে রানীপুত্র ব্যস্ত তার চমক নিয়ে, মামী বলেছে চমক দেখাইতে হবে।
রানীপুত্র তার সেক্রেটারীকে তলব করলো, চমক লাগবে, দ্রুত চমকের ব্যবস্থা করো।
সেক্রেটারী অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, চমক কি জিনিস?
‘অতঃশত বুঝিনা! চমক লাগবে বলেছি, তুমি চমক নিয়ে আসবা, ব্যাস! মার্কেটে খুজে দেখো, দেশের মার্কেটে পাওয়া না গেলে বিদেশ হতে নিয়ে আসবে, আমি দেশের মানুষকে চমক দেখাবো’।
রানী পুত্রের হুঙ্কার শুনে সেক্রেটারী বাইরে ছুটে গেলো, এই মার্কেট সেই মার্কেট সব জায়গায় খোজা হলো, কিন্তু চমক পাওয়া গেলোনা।
ভয়ে কাপতে কাপতে সেক্রেটারী এসে জানালো, হুজুর চমক পাওয়া যায়নাই, অনেক খুজেছি!
আমি কিছু বুঝিনা, তুমি চমক এনে দিবে এটাই আমার শেষ কথা। রানীপুত্র গো ধরে বসে রইলো।
সেক্রেটারী কাপতে কাপতে বললো, হুজুর আমার এক খালাতো ভাই আছে, তার নাম চমক।
ঠিকা আছে, তাকেই নিয়ে আসো।
হুজুর, সেতো বিদেশে পড়াশোনা করে, আসতে আরো তিন-চারদিন লাগবে।
চারদিন সময় দিতে পারবোনা, তোমাকে তিনদিন সময় দিলাম এর মধ্যে চমককে হাজির করতে হবে।
সেক্রেটারী দ্রুত ফোন তুলে নিলো। হ্যালো চমক! তুই কালকেই দেশের টিকেট কাটবি, তিনদিনের মধ্যেই দেশে হাজির হতে হবে, রানীপুত্রের নির্দেশ!

দেশের সমস্ত মিডিয়া এসে হাজির, জাতীর উদ্দেশ্য রানীপুত্র বক্তব্য রাখবেন!
মাইক্রোফোন হাতে তুলে নিলেন রানীপুত্র। হাসি হাসি মুখে তিনি বক্তব্য শুরু করলেন,
শুধু একটি লাইনই তিনি উচ্চারণ করলেন।
“আপনারা অপেক্ষা করেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে চমক আসছে......”।

রানী খুশি! ছেলে সুস্থ হয়ে গেছে, নিশ্চই দারুণ কোনো চমক আসছে.........
জনগণ উৎকণ্ঠিত, বলদ পুলার চমকে দেশের কোন বারোটা বাজে আল্লাহ জানে!!

১২সেপ্টেম্বর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment