আরাম কেদারায় শরীরটা এলিয়ে দিলেন পাগলা বিবি, পাশের টেবিলের উপর রাখা বোতল থেকে দুই চামচ মধু খেয়ে নিলেন, এমনিতে সকাল দুপুর সন্ধ্যা নিয়ম করে ৬চামচ খান, আজকে বিশেষ দিন আজকে ওসব নিয়ম কানুনের ধার না ধরলেও চলবে, এখন ঘড়িতে ১১টা বাজে বোতল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, মেজাজ ফুরফুরে হওয়ার এটাও একটা কারণ। বোতলের গায়ে খাঁটি মধুর স্টিকার লাগানো থাকলেও ভেতরে ফেন্সিডিল আছে।
হন্তদন্ত হয়ে হাসান রুমে প্রবেশ করলো, ম্যাডাম ডেকেছেন? হ্যা ডেকেছি! সকাল থেকে তোমাকে দেখছিনা ব্যাপার কি?
ম্যাডাম আনন্দ করছি, আপনার শত্রুর বিনাশের আনন্দ! হাসানের কণ্ঠ ভক্তিতে গদগদ।
পাগলা বিবি সন্দেহের দৃস্টিতে তাকালেন, অতিভক্তি চোরের লক্ষণ। তিনি কাউকে বিশ্বাস করতে পারেননা, এমনকি তার লাঠিয়াল বাহিনীকেওনা। বড় বজ্জাতের হাড়ি এই লাঠিয়াল বাহিনীর সর্দারগুলো, সুযোগ পেলেই মাথায় চড়ে বসে, মাথায় বসে ঘাড় মটকে দেয়। মাঝে মধ্যে মনে হয়, এগুলোকে বিদায় করে নানাবাড়ি থেকে লাঠিয়াল নিয়ে আসেন, কিন্তু গ্রামের লোকজন সেটা পছন্দ করবেনা, পাবলিক সেন্টিমেন্টের দিকেওতো লক্ষ রাখতে হবে।
কিভাবে আনন্দ করছো শুনি? পাগলা বিবির কন্ঠে তাচ্ছিল্য ঝড়ে পড়লো।
ম্যাডাম, ভোর বেলাতেই আপনারা নানা বাড়ি থেকে পাঠানো মিস্টিগুলো সকল কর্মচারীদের মাঝে বিতরণ করেছি, বিশাল বিশাল সাউন্ড বক্সে আপনার নানার অঞ্চলের গান চলছে। চারিদিকে উৎসব উৎসব পরিবেশ।
মিথ্যা কথাগুলো বলতে হাসান সাহেবের গলা একটুও কাপলোনা, সেক্রেটারীদের গলা কাপতে নেই। গুছিয়ে সত্যের মতো করে মিথ্যা বলা একটা আর্ট, এই আর্ট রপ্ত করতে না পারলে চাকরী থাকবেনা। ম্যাডামের মুখের ওপরতো আর বলা যায়না, কর্মচারিরা সবাই বিমর্ষ ভাবে বসে আছে, তাদের প্রিয় হুজুর সাঈদ আলীকে হত্যার হুকুম দেয়া হয়েছে, এটা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা, আহ কত ভালো মানুষটা! লাঠিয়াল বাহিনীও ক্ষোভে ফুসছে, কিন্তু কিছু করার নাই, পাগলা বিবির নানারা খুব শক্তিশালী, কিছু করতে চাইলে নানা বাড়ি থেকে লাঠিয়াল বাহিনী পাঠিয়ে দিবে।
গ্রামের মানুষের খবর কি হাসান, তারা আমার সিদ্ধান্তকে কিভাবে নিয়েছে? ফেন্সিডিলের নেশায় বুদ হয়ে চোখ বন্ধ করেই প্রশ্ন করছেন পাগলা বিবি।
তারা খুব আন্দন্দিত ম্যাডাম, দলে দলে আপনাকে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছে এমন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য। গ্রামবাসী আনন্দ মিছিল করছে, মিস্টি বিতরণ করছে। অবলীলায় হাসি হাসি মুখে মিথ্যাগুলো বলে ফেললো হাসান।
মিথ্যা বলছো কেনো হাসান? আমার কাচারী বাড়িতে যেসব ফকির-মিসকিনদেরকে তিনবেলা খাওয়া সাপ্লাই দিচ্ছ শুধুমাত্র তারাই খাবারের গুণগাণ গাচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামের মানুষ আমার বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করছে, পাগলা বিবির চামড়া তুলে নিতে চাইছে, সত্যি কিনা?
জ্বি ম্যাডাম, আপনি ঠিকই শুনেছেন! মাথা নিচু করে জবাব দিলো হাসান। গ্রাম পুলিশ চেস্টা করছে আন্দোলন থামাতে, যারা উঁচু স্বরে মিছিল করছে তাদের গলাটিপে দিতে নির্দেশ দিয়েছে আপনার সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি, আপনি এ নিয়ে চিন্তা করবেননা।
ঠিক আছে তুমি যাও, আমার নানাবাড়ি থেকে কেউ এলে পাঠিয়ে দিও, আর যাওয়ার আগে আরেকটা বোতল দিয়ে যাও।
হাসান বেরিয়ে যায়। ভোরবেলা সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটির লোকজন তার ছোট ভাইকে গলাটিপে হত্যা করেছে। মাটিতে গড়াগড়ি করে বিলাপ করছেন হাসানের মা, পাগলা বিবিরে আল্লাহ ধবংশ করুক, ওর উপর আল্লাহর গজব নাজিল হোক। হাসানের চোখ ভিজে যায় টিস্যু পেপারে চোখ মুছে, সেক্রেটারীদের চোখে পানি থাকতে নাই, সেক্রেটারীরা কখনো কাঁদেনা।
১৭জুলাই২০১৩
No comments:
Post a Comment