হাসি হাসি মুখে ম্যাডাম পান চিবাচ্ছেন, এমনিতে তিনি পান খাননা, যখন মন ভালো থাকে তখন পান খান, এখন মন ভালো তাই পান খাচ্ছেন। কি বুঝলা সাহিদা? পানের পিক ফেলতে ফেলতে প্রশ্ন করলেন ম্যাডাম জিয়া।
‘পানটা মজা হইছে সেইটাই বুঝলাম’
‘তোমার মাথা বুঝছো, আমি দেশের কথা জিজ্ঞাসা করছি’
‘সাহিদা চুপসে গেলো, দেশের পরিস্থিতিতো খারাপ ম্যাডাম, আপনার দূর্দিন যাচ্ছে’
‘কেনো কেনো, দূর্দীন কেনো?’
‘আপনার প্রধান মিত্র জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিয়ে দিচ্ছে, এটা আপনার জন্য খারাপ খবর না?’
‘আবার পানের পিক ফেললেন ম্যাডাম জিয়া, শোনো তোমার মাথায় ঘিলু একটু কম, অবশ্য সেটা তোমার সৌভাগ্য। আমি আবার অতিরিক্ত চালাক লোক পছন্দ করিনা, চালাক লোক সুযোগ পেলেই মানুষের ক্ষতি করার ধান্দায় থাকে, বোকারা সেটা করেনা। একারনেই তোমাকে আমি বেশি পছন্দ করি’
‘কি জানি ম্যাডাম, আমার আম্মাও বলে আমার মাথায় ঘিলু একটু কম, তবে কত গ্রাম কম সেটা বলেনাই, তবে আপনি যখন বলছেন সেটা আধাকেজির কম হবে বলে মনে হয়না।’
‘আচ্ছা যে কথা বলছিলাম, জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় দিচ্ছে, এতে কারা বেশি খুশি হচ্ছে?’
কারা আবার! আওয়ামীলীগের লোকেরাইতো খুশি হবে, কারণ আওয়ামীলীগ ভালো করেই জানে জামায়াত ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবেনা, জামায়াতকে ধ্বংস করতে পারলে বিএনপি এমনিতেই ক্ষমতার সিড়ি থেকে ছিটকে পড়বে’।
‘হুম, তোমার কথায় যুক্তি আছে, জামায়াত ছাড়া বিএনপি অচল। আচ্ছা ধরো, সরকার জামায়াতের সকল নেতাদের বেকসুর খালাস দিয়ে ফেললো, তখন কি হবে?’
‘তাহলেতো ভালোই হবে, জামায়াত নেতারা মুক্তি পেয়ে যাবে, আপনারা কাধে কাধ মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে পারবেন’।
‘এজন্যইতো বলেছি, তোমার মাথায় ঘিলু একটু কম আছে। তুমি সব কিছু সড়ল দৃস্টিতে দেখো, কিন্তু দুনিয়াতো এত সড়ল নয়, দুনিয়া অনেক জটিল, রাজনীতির হিসাব আরো জটিল।’
‘আমি সত্যিই বোকা, আমার মাথায় এইসব প্যাচ কাজ করেনা, যদি বুঝিয়ে বলেন তবে বুঝবো’।
‘আমি এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে রায়ের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনাই, কেনো দেখানিনাই! দেখাইনাই একটি মাত্র কারণে, তাহচ্ছে আমি যদি বক্তব্য রাখি তবে আমাকে একটা পক্ষ নিতে হবে, জামায়াত নেতারা দোষী অথবা নির্দোষ। যেহেতু তারা জোটের শরীক দল সেহেতু তাদের দোষী বলা যাচ্ছেনা, আবার নির্দোষ বললেও সমস্যা’।
‘কি সমস্যা?’
‘জামায়াত আজকে আমাদের জোটে আছে, কালকে আমাদের ত্যাগ করে আওয়ামীলীগের সাথে জোট করবেনা তার নিশ্চয়তা কি! তখন কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর উপায় আছে? এখন যদি তাদের নির্দোষ ঘোষণা করি, তখন আর তাদের যুদ্ধাপরাধী বলে গালি দিতে পারবোনা, সুতরাং এই ইস্যুটা হাতে রেখে দেয়া প্রয়োজন’।
কথা বলতে বলতে ম্যাডাম জিয়া হাপিয়ে উঠলেন, বাতের ব্যাথাটা ইদানিং খুব ভোগাচ্ছে, পায়ের সমস্যাটাও সামাল দেয়া যাচ্ছেনা। নাহ! আগামী সপ্তাহেই একবার সিঙ্গাপুর না গেলেই নয়। তিনি হিসিয়ে উঠলেন, সাহিদা তেল গরম করে আনো পায়ে মালিশ করতে হবে।
অনুগত ভৃত্যের মতো সাহিদা ছুটে গেলো, ম্যাডামের নির্দেশ শিরোধার্য।
সাহিদা তেল মালিশ করছে, ম্যাডাম কথা বলে যাচ্ছেন, আজকে তাকে কথার বাতিকে পেয়েছে। এমনিতে ম্যাডাম নিরব, তিনি মেপে মেপে কথা বলেন, প্রয়োজনের বাহিরে একটা অক্ষরো তার মুখ থেকে বের হবেনা। কিন্তু একান্ত ঘরোয়া পরিবেশে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা মানুষ, যখন কথা শুরু করেন তখন তাকে থামায় সে সাধ্য কার!
‘আচ্ছা ম্যাডাম আজকে আপনাকে বেশ খুশি খুশি লাগছে, সকাল থেকে একটার পরে আরেকটা পান চিবিয়েই যাচ্ছেন, কারণ জানতে পারি?’
‘আছে আছে খুশির কারণ অবশ্যই আছে, এমনিতেতো আর পান চিবোচ্ছিনা! সরকার গতকাল গোলাম আযম সাহেবকে ৯০বছরের কারাদন্ড দিয়েছে, আজ দিলো মুজাহিদ সাহেবকে মৃত্যুদন্ড, কিছুদিন পরে নিজামী সাহেবের রায় দিবে। সরকার যত রায় দিবে আমার আনন্দের সীমা তত বৃদ্ধি পাবে’।
‘কি বলছেন ম্যাডাম! জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিলেতো আপনার বিপদ, আপনার রাজনৈতিক মিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মানে আপনার ক্ষতি!’
‘আমিতো তোমার চোখে দিখিনা, আমি দেখি রাজনৈতিক দৃস্টিকোণ থেকে। শোনো সরকার জামায়াতের সাথে যত বেশি সংঘর্ষে জড়াবে, জামায়াত তত বেশি বিএনপির দিকে ঝুকে পড়বে, সরকার চাচ্ছে জামায়াত বাধ্য হয়ে আওয়ামীলীগের দিকে ঝুকে পড়ুক, কিন্তু জামায়াত কখনো ধর্মবিদ্বেষী আওয়ামীদের সাথে জোট করবেনা, এই সুযোগটাই বিএনপি গ্রহণ করবে’।
‘ধরেন জামায়াত তাদের নেতাদের ফাঁসির হাত হতে বাচাতে আওয়ামীদের সাথে আপোষ করলো, তখন কি হবে? বিএনপি’তো আর ক্ষমতায় আসতে পারবেনা’।
‘তুমি জামায়াতকে চিনতে ভুল করেছো, জামায়াত ভাঙবে কিন্তু মচকাবেনা। জামায়াতের কর্মীরাই জামায়াতকে আওয়ামীলীগের সাথে আপোষে যেতে দিবেনা, বিগত ৫টি বছর ধরে বিএনপি রাজপথের আন্দোলনে ছিলোনা, সরকারের সাথে এককভাবে জামায়াত শিবিরই লড়াই চালিয়েছে, এর ফলে যেটা হয়েছে সবচাইতে বেশি নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। বিএনপি’র লোকজন অন্তত নিজের বাড়িতে ঘুমাতে পারছে, কিন্তু সারাদেশের কোথাও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা নিজের বাড়িতে ঘুমাতে পারছেনা, তাদের এই ক্ষোভ থেকে যে প্রতিশোধস্পৃহা জন্ম হয়েছে, সে কারণেই তারা আওয়ামীলীগের সাথে আপোষ করবেনা’।
‘তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন জামায়াত নেতাদের ফাঁসি হয়ে যাবে আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সেটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে?’
একগ্লাস পানি দাও, একটু কুলি করে নেই, সাহিদা পানি এগিয়ে দিলো। গড়াগড়া করে কুলি করলেন ম্যাডাম জিয়া, দাত লাল হয়ে গেছে, ভালো করে ব্রাশ করতে হবে। এই দাত নিয়ে দলীয় প্রগ্রামে গেলে ইজ্জত থাকবেনা।
‘কি যেনো বলছিলে? ও হ্যা জামায়াত নেতাদের ফাঁসি! জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিলেও বিএনপি’র লাভ না দিলেও বিএনপি’র লাভ’।
‘কিভাবে?’
‘ধরো জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয়া হলো, ফলাফল কি হবে? জামায়াত চিরতরে আওয়ামিদের দুশমন হয়ে যাবে, এর ফলে জামায়াতের সামনে বিএনপি’র বাইরে আর কোনো মিত্র থাকবেনা। আবার ধরো জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় নির্বাচনের পূর্বে কার্যকর করা হলোনা, সেক্ষেত্রেও নেতাদের ফাঁসির দড়ি হতে রক্ষা করতে বিএনপি’র সাথে যেকোনো শর্তে জোট টিকিয়ে রাখতে জামায়াত বাধ্য হবে’।
‘আর যদি নির্বাচনের পূর্বে জামায়াত নেতারা মুক্তি পেয়ে যায়?’
‘সেক্ষেত্রে বিএনপি একটু চিপায় পড়ে যাবে, জামায়াত বিপুল জনপ্রিয় একটা দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, জোটবদ্ধ নির্বাচনে আসন বন্টনের ক্ষেত্রে জামায়াতের দাবীকে আমলে নিতে হবে। আসন বন্টন হবে জামায়াতের ইচ্ছায়, সেটা বিএনপি’র জন্য ভালো হবেনা’।
‘কিন্তু ম্যাডাম, ফাক কিন্তু একটা রয়েই যাচ্ছে’
‘কেমন?’
‘ধরেন জামায়াত তাদের নেতাদের ফাঁসির দড়ি হতে রক্ষা করতে আওয়ামীলীগের সাথে জোট বদ্ধ নির্বাচনে গেলোনা, কিন্তু তারা একক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো। সেক্ষেত্রেতো নির্বাচনে বিএনপি’র ভড়াডুবি হবে! একদিকে একক ভাবে বিএনপি’র ভোট আওয়ামীলীগের একক ভোটের চাইতে কম, অন্যদিকে আওয়ামীলীগের সাথে জাতীয় পার্টি আছে। বিএনপি’র সাথে জামায়াত না থাকলেতো বিএনপি মাঠে মারা যাবে। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতো রয়েই গেলো, জামায়াত যদি আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে রাজী হয়ে যায়, তখন বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে। বিএনপি’র সেই শক্তি নেই যে আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায় সরকার প্রতিষ্ঠা করবে কিংবা আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন বাঞ্চাল করবে। এরফলে বিএনপি রাজনীতির মাঠ হতে বিলীন হয়ে যাবে, একেবার মুসলিম লীগের পরিণতি! জামায়াত পরিণত হবে প্রধান বিরোধী দলে’।
‘ধেই ধেই করে উঠলো ম্যাডাম জিয়া, তোমার মাথায়তো দেখছি অনেক বুদ্ধি! আমিতো তোমাকে গাধা মনে করেছিলাম! যাও তোমার বেতন ২হাজার টাকা বাড়িয়ে দিলাম। তোমার ছোট ভাইয়ের কথা বলেছিলেনা, কি নাম যেনো ওর? আচ্ছা ওর চাকরিটাও হয়ে যাবে, আমি কম্পানীর ম্যানেজারকে বলে দিবো’।
বিউটিশিয়ান এসেছে, ম্যাডাম তার রুপচর্চার রুমে চলে গেলেন, একঘন্টার আগে বের হবেননা এটা নিশ্চিত! কোথাও বের হবার পূর্বে মেকাপ করতে ম্যাডাম ভুল করেননা।
সাহিদাও সুযোগটা কাজে লাগালো, চট করে লুকিয়ে রাখা গোপন মোবাইলটা বের করলো, শেখ হাসিনাকে ফোন দিতে হবে। তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে, কর্তব্য কাজে সাহিদা কখনো অবহেলা করেনা, স্পেশাল ব্রাঞ্চে সাহিদার একটা সুনাম আছে!
১৭জুলাই২০১৩
শেষ প্যরায় বিরাট ধাক্কা খেয়ে যেতে হয়, কি লিখলেন?
ReplyDeleteম্যডাম যে আসলেই এমন ভুল করছেন কি না কে জানে! অসম্ভব নাহ!
ম্যাডাম জিয়ার রুদ্ধদ্বার বৈঠকের ফলাফল বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই শেখ হাসিনার কাছে পৌছে যায়। কিভাবে যায় আল্লাহ জানে, একবার ধারণা করা হয়েছিলো কেউ হয়তো অফিসে গোপন ক্যামেরা সেট করে রেখেছে, পরে তন্ন তন্ন করে খুজেও কিছু পাওয়া যায়নাই। শর্ষের মধ্যে ভুত থাকলে ভুত তাড়াবে কিসে!?
Deleteআর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এখনো ম্যাচিউরিটি লাভ করেনাই।বিএনপি'র রাজনীতি সম্পর্কে ফরহাদ মজহার বলেছিলেন, বেসিক্যালি নো পার্টি (বিএনপি)।
আমি বলি বাংলাদেশ ননসেন্স পার্টি (বিএনপি)