প্রেম কইরাছে ইউসুফ নবী




দোস্ত আসার পথে তোর জানটুর সাথে দেখা হইছে।
তাই নাকি! কোথায়? টেবেলির উপর পা দুলিয়ে বসা থেকে প্রায় দাঁড়িয়ে গেলো সোহান।
ওর বাড়ির সামনে, আন্টির সাথে কোথায় যেনো যাচ্ছিলো। যা সুন্দর লাগছিলোনা দোস্ত, ইস! বলার মতোনা। রাসেলের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে ইশারা করলো ফাহিম।
দেখ ভালো হচ্ছেনা কিন্তু, আমার গার্লফ্রেন্ড সুন্দর না বান্দর তাতে তোদের কি? তোরা এভাবে তাকাবি কেনো!
 
হেহে করে হেসে উঠলো রাসেল, এই সেরেছে! আচ্ছা ফাহিম কি রঙের কাপড় পড়েছিলো তানিয়া? ওকে নীল ড্রেসটাতে যা লাগেনা, হেব্বি!
 
সোহান সার্টের হাতা গুটিয়ে ঘুসি পাকিয়ে রাসেলের দিকে তেড়ে আসলো, দাড়া ফাজলামি হচ্ছে না!?
আরে দোস্ত চ্যাতস ক্যান! আমার জিনিস মানে তোর জিনিস, তোর জিনিস মানে আমার জিনিস। তোর বউ মানে আমার বউ, আমার বউ মানে তোর ভাবী। বত্রিশটা দাত বেড় করে হেসে ওঠে ফাহিম।
শোন, পরস্ত্রীর দিকে এভাবে তাকাতে নেই গুনাহ হয়, দার্শনীক সুলভ একটা ভাব নেয় সোহান। বন্ধুর বউয়ের দিকে মায়ের দৃস্টিতে তাকাবী।
তা মিস্টার ভাবের পাগল, এখন পর্যন্ততো অফারই করতে পারলানা। তানিয়া তোমার বউ হইলো কবে থেইকা। আগে বিয়া করো তারপরে দেখা যাবে, মুখ ভেঙচিয়ে জবাব দেয় ফাহিম।
ওইযে আমাদের হীরো আসতেছে, জানালা দিয়ে আঙুলের ইশারা করে রাসেদকে দেখিয়ে দিলো রাসেল।

চরম বিরক্তি নিয়ে কাঠফাটা রোদের মধ্য দিয়েই কোচিংয়ের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করলো রাসেদ। ক্লাস রুম যেনো এখন কনসার্ট হলে পরিণত হয়েছে।
বেশুরো গলায় গান ধরেছে রাসেল, জিহবার তালুতে অদ্ভুত ভাবে যন্ত্রসংগীত সৃস্টি করেছে ফাহিম, ডিশটিং ডিশটিং অন্যদিকে টেবিলকেই তবলা মনে করে সমানে চর থাপ্পর দিয়ে যাচ্ছে সোহান।
 
প্রেম কইরাছে ইউসুফ নবী.........
তার প্রেমে জুলেখা বিবি গো............
ও সে প্রেমের দায়ে জেল খাটিল
তবু সে প্রেম ছাড়লো না দরদী।
প্রেমে মরা জলে ডোবেনা.........
ও প্রেম করতে দুইদিন ভাঙ্গতে একদিন
অমন প্রেম আর কইরো না দরদী।।
তোরা এগুলা কি শুরু করছস! কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। আজকেতো কোচিং বন্ধ, তোরা কোচিং সেন্টারে কি করস?
 
রাসেদের কথাশুনে একে অপরের দিকে একবার অর্থপূর্ণ দৃস্টিতে তাকায় ফাহিম, রাসেল ও সোহান, মুচকি হাসি দিয়ে আবার শুরু করে দেয়।
প্রেমে মরা জলে ডোবেনা.........
প্রেমে পড়ছে আইরিন আফা......
হায়রে, তার প্রেমেতে রাসেদ ভাইয়াগো......

তোরা থামবি! রাসেদ ধমকে ওঠে। এই দুপুর বেলাতে ডেকে এনে কি সব ফাজলামো করছিস? কি জন্য ডেকেছিস তাড়াতাড়ি বল।
এহ! দুনিয়ার মেয়েদের মাথা ঘুরিয়ে, এখন আসছে ব্যস্ততা দেখাতে! তোকে ডাকছি খিদা লাগছে তাই, তুই এখন মিস্টি খাওয়াবি। বলে হেহে করে হেসে ওঠে রাসেল।
মিস্টি খাওয়াবো! কেনো?
 
এহ পোলায় কিছু জানেনা! ভং করে। আইরিন তোমারে লাভ লেটার পাঠাইছে। ওইটা নিতে হইলে মিস্টি খাওয়াতে হবে, চোখে মুখে সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলে সোহান।
 
তোরা এককাজ কর ওই লাভ লেটার দিয়া কটকটি খা, যা! এইসব ফালতু কথা বলার জন্য আমাকে এখানে ডেকেছিস! আমি আরো ভাবলাম কি না কি প্রব্লেম। ধুর! নিরর্থক কষ্ট করলাম। চোখে মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে একটা হাই বেঞ্চের উপর বসে পড়ে রাসেদ।

হঠাৎই বিষন্নতায় ছেয়ে যায় রাসেদের মুখ। কি ব্যাপার রাসেদ তুই মন খারাপ করেছিস কেনো, দোস্ত? আরে, আমরা কি ইচ্ছে করে এই চিঠি এনেছি নাকি? আইরিনইতো জোর করে দিতে বললো। আমরা কত করে বললাম রাসেদ এগুলো পছন্দ করেনা, কে শোনে কার কথা। তুই মন খারাপ করিসনা দোস্ত!

না ব্যাপার সেটা নয় অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে একটু খারাপ লাগছে, একটু আগে একজন একটা কথা বললো, খুব কষ্ট পেয়েছি। কিছুটা হতাশা ঝড়ে পড়লো রাশেদের কণ্ঠ হতে।
কে তোকে উল্টাপাল্টা কথা বলছে? নাম বল! সমস্বরে চেচিয়ে উঠলো বন্ধুরা। আরেনা, আমাকে বলেনাই। একজন বলেছে আমাদের নবী নাকি বিয়ের আগে বেগানা নারীর সাথে প্রেম করতো, নবীর চরিত্রের উপর কলঙ্ক দিচ্ছিলো।

ওই শালারে ছাড়লি কেনো? উত্তেজিত হয়ে ওঠে ফাহিম, ওরেতো উচিৎ শিক্ষা দেয়া দরকার ছিলো। কত্তবড় জাহেল, বলেকিনা নবী প্রেম করছে! ওরে যদি সামনে পাইতাম নিজের হাতে খুন করতাম! হাত নিষপিশ করছে!
 
উত্তেজনায় এদিক সেদিক পায়চারী করছে রাসেল, সোহান এবং ফাহিম। ওই নাস্তিকটাকে দেখলে চিনবি? একবার চিনাইয়া দে দোস্ত, খালি একবার চিনাইয়া দে, মাথা গরম হয়ে গেছে।

রাসেদের মুখে কথা নেই, নির্লিপ্ত ভাবে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। একসময় নিরবতা ভেঙ্গে গেলো, তোরা বলেছিস। তোরা মজা করে নবীর চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করে গান করছিলি। প্রেম করেছ ইউসুফ নবী তার প্রেমেতে জুলেখা বিবি” (নাউজুবিল্লাহ)। এবার তোরাই ঠিক কর, তোদের কি শ্বাস্তি হওয়া দরকার, আল্লাহ তোদের ক্ষমা করুন।
 

রাশেদ ধীরে ধীরে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কারও মুখে কোনো কথা নেই, বাহিরে বৃস্টি হচ্ছে, বৃস্টির ঝাপটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে বন্ধুদের, মাথা নিচু করে বসে আছে তিনবন্ধু, অনুতপ্ত হৃদয়ের নীরব রক্তক্ষরণ বৃস্টি হয়ে চোখ ভাসে, গাল ভাসে, বুক ভাসে......

১জুলাই২০১৩

Post Comment

2 comments:

  1. মারদিয়া মমতাজSeptember 6, 2013 at 3:34 PM

    আপনার সবচে অসাধারণ গল্প। সত্যিকারের সত্য গল্প।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এমন গল্প আরো লিখতে চাই, দোয়া করবেন। এখনতো গল্প মানেই মসজিদ/আলেমদেরকে সমাজের নোংরা স্থানে নিক্ষেপ করা।

      Delete