হ্যাল্লো সায়মা কেমন আছো? ফোনটা রিসিভ করেই উৎফুল্ল হয়ে ওঠে তারেক। ছাদের রেলিঙে হেলান দিয়ে যেনো চাঁদের সাথেই কথা বলছে, এমন ভঙ্গিতে আকাশের তারা গোনায় মগ্ন হয়।
ভালো, তুমি? ওপাশ থেকে সায়মার কন্ঠে ভেসে আসে।
আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো আছি।
ব্যস্ততাময় দিন পার করছি, সারাদিন লেখালেখি নিয়েই কাটে। আগামী বই মেলায় একটা নতুন উপন্যাস আসছে।
হুম।
আচ্ছা ভালো কথা, ফোন করেছ ভালোই হলো, তোমার ফোনে ব্যালেন্স আছে? থাক তুমি বরং কেটে দাও, আমিই ব্যাক করছি।
ওকে।
হ্যা সায়মা, তোমার সাথে কিছু কথা বলবো, জরুরী। মনযোগ দিয়ে শুনবে।
ওকে, শুনছি বলো।
তোমার আমার সম্পর্কটি কিসের সম্পর্ক?
হেসে ওঠে সায়মা, লাইলি মজনু সম্পর্ক। হি! হি! আই লেবু।
হুম, ভালো অনেক ভালো।
তোমাকেতো আগেই বলেছি, আমরা একটা অন্যায় করছি। বিয়ের পূর্বে এই ধরনের রিলেশন থাকা ঠিক নয়, তাইনা?
হ্যা সেটাতো সবসময়ই বলো, তারপরেওতো......আসলে আমাদের মন দূর্বল, কিছু করার নেই, দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দেয় সায়মা।
হুম সেটাই, গুনাহ করছি, আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করে দিবেন। আচ্ছা বলোতো, রিলেশনের পূর্ব শর্ত কি? একটা রিলেশন টিকিয়ে রাখতে কি কি বিষয়গুলো কাজ করে বলে তুমি মনে করো?
আজব! হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো? আচ্ছা বলছি, একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, শেয়ারিং, কেয়ারিং.........
ওকে, ওকে, মূল পয়েন্টগুলো চলে এসেছে। আচ্ছা তুমি প্রথম পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছো, একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। এই ব্যাপারটা নিয়েই একটু বলছি, তুমি আমাকে দুই দুই বার অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে পরীক্ষা করেছো। আমিকি তোমার বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম?
ধুর! আমি কি বলেছি, আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা? আমিতো যাস্ট মজা করছিলাম।
তারপরেও বলো, আমি কি তোমার প্রতি বিশ্বস্ত?
হ্যা সোনা, হ্যা। তুমি একটা আদর্শ হাজবেন্ড হতে পারবা, এবার হলোতো! আদুরে ভঙ্গিতে জবাব দেয় সায়মা।
হুম! হয়তো হতে পারবো, হয়তো নয়। আচ্ছা বাদ দাও, এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। আমার পূর্বেও তোমার কয়েকটা ছেলের সাথে রিলেশন ছিলো, তাই না?
তুমি আবার পুরানো কথা তুলছো? তোমাকে কতবার বলেছি, ওরা শুধুই আমার বন্ধু ছিলো অন্য কিছু নয়, তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা? অভিমানী কন্ঠে বললো সায়মা।
আচ্ছা, তুমি আমাকে দুই দুইবার পরীক্ষা করেছো, আমি কিন্তু তোমাকে একবারো পরীক্ষা করিনাই, এর মাধ্যমে কি বোঝা যায়, আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা?
তাহলে আমাকে খোচা দিয়ে কথা বলছো কেনো? সায়মার কন্ঠে অভিমান ঝড়ে পড়ে।
খোচা দিলাম কোথায়! আমিতো আমার কথা বলার ভূমিকা তৈরী করছি।
ওফ! এতরাতে ফোন করলাম কোথায় একটু রোমান্টিক কথা শুনাবে, তা না, কি সব বক বক শুরু করেছো।
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে তাড়েক, বক বক করছি? আচ্ছা আজকে একটু বক বক করতে দাও, কথা দিচ্ছি আর কখনো আমার বক বক শুনতে হবেনা তোমাকে।
কি হয়েছে তোমার? উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে সায়মা। তুমি আজ এমন ভাবে কথা বলছো কেনো?
কই, নাতো! কিছুই হয়নাই। আচ্ছা বাদ দাও, এবার মূল কথায় আসি, কিছুটা গম্ভির হয়ে যায় তারেকের কণ্ঠ। তুমিতো জানো আমি ইসলামী সংগঠন করি। তুমি এটাও জানো, সংগঠন যদি জানে আমি তোমার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছি, তাহলে কানে ধরে আমাকে সংগঠন থেকে বের করে দিবে!
হ্যা জানি, কিছুটা কৌতুহলী কন্ঠেই জবাব দেয় সায়মা।
তারপরেও শুধুমাত্র মানবিক দূর্বলতার কারণে, আমি তোমার সাথে রিলেশন বজায় রেখেছিলাম, সরাসরি বলতে গেলে প্রেম করছিলাম।
করছিলাম মানে কি? তুমিকি এখন আমাকে ভালোবাসোনা! উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে সায়মা।
জানিনা! হয়তো বাসি, হয়তো বাসিনা, উদাস কন্ঠে জবাব দেয়, তারেক।
তোমার কি হয়েছে তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো, আমি কিন্তু কেদে ফেলবো! ফুপিয়ে ওঠে সায়মা।
আরে বোকা মেয়ে! কাদছো কেনো? আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি? আমিতো আছি।
ওই যে বললে............
সেটা বলেছি অন্য কারণে, আমি মূল কথায় আসছি। একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
সায়মা তুমি কি জানো, এটাই আমার প্রথম প্রেম?
হ্যা জানি, এটাও জানি তুমি আমাকে অসম্ভব ভালোবাসো, একদিন কথা বলতে না পারলে তুমি পাগল হয়ে যাও। বাচ্চাদের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলো। একেবারে বউ পাগলা! আদুরে ভঙ্গিতে জবাব দেয় সায়মা।
হয়তো! শুকনো কন্ঠে জবাব দেয় তারেক।
কি হয়েছে তোমার, আবারো প্রশ্ন করে সায়মা।
আচ্ছা বলছি, সায়মা তোমার মনে পড়ে, গত তিন চার দিন আগে রাত দুটোয় তোমার নম্বরে কল দিয়েছিলাম!
হ্যা মনে থাকবেনা কেনো। হঠ্যাৎ আমার কথা মনে পড়ায় একটা মিস কল দিতে চেয়েছিলে, কিন্তু.........।
হ্যা সায়মা, মিস কল দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখলাম নম্বর বিজি। পরে কয়েকবার চেস্টা করে তোমার নম্বরে কল ঢুকলো।
তোমাকেতো বলেছিই, আমার নম্বরে কল ওয়েটিং চালু আছে, আমি তখন কারও সাথে কথা বলছিলামনা, হয়তো নেটওয়ার্ক প্রব্লেম ছিলো।
হুম নেটওয়ার্ক প্রব্লেম, সম্ভবত সেটাই হবে! গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয় তারেক।
আচ্ছা সায়মা তুমি কি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের নাম শুনেছো?
শুনবোনা কেনো? সেখানে বিশ্বের সব বড় বড় রেকর্ডের কথা উল্লেখ করা আছে।
হ্যা ঠিক বলেছো, সেখানে অনেক বড় বড় রেকর্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আচ্ছা তুমি কি সেখানে ক্রমাগত মোবাইল ডায়ালিংয়ের উপর কোনো রেকর্ড দেখেছো?
সায়মা হেসে ওঠে, অদ্ভুত প্রশ্ন!
এই বছরে সম্ভবত ওই বইতে আমার নাম উঠে আসবে।
ওয়াও! কিভাবে? উল্লাসিত কন্ঠে জানতে চায় সায়মা।
গতকাল রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা একনাগাড়ে একটা নম্বরে ডায়াল করেই যাচ্ছিলাম, এক সেকেন্ডের বিরতী না দিয়ে। যদি একটু সিরিয়াল পাই, হয়তো কলটা ঢুকবে এই আশায়। তবে রাত তিনটার পরে সে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিলো।
কি বলছো তুমি! সায়মা আকাশ থেকে পড়ে।
হ্যা তোমার নম্বরে কল দিচ্ছিলাম, কিন্তু তুমি ব্যস্ত ছিলে।
আমিতো কিছুই জানিনা! আমি আমার বান্ধীবীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেছিলাম এর মধ্যে তোমার কল। তোমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর বান্ধবীর সাথে কথা বলার সময়তো তুমি আমার নম্বর ওয়েটিং পেয়েছিলে। তার মানে আমার নম্বরে কল ওয়েটিং চালু করা আছে। বিজি থাকারতো প্রশ্নই আসেনা। আর তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করোনা? আত্মপক্ষ সমর্থন করে সায়মা।
হো হো করে হেসে ওঠে তারেক, তাচ্ছিল্যের সাথে বলে, বিশ্বাস! হ্যা বিশ্বাস করি। করবো না কেনো, অবশ্যই বিশ্বাস করি, মানুষকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করাটাই আমার মস্তবড় দূর্বলতা।
তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো? সায়মা এবার রেগে যায়।
স্যরি সায়মা তোমাকে রাগানোর জন্য কিংবা তোমার মনে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি কথাগুলো বলিনাই, যাস্ট মনের সরল অভিব্যক্তি গুলোই প্রকাশ করলাম।
কিন্তু তুমি আমাকে কস্ট দিচ্ছ, আমাকে ব্লেইম দিচ্ছ। কন্ঠে অভিমান ঝড়ে পড়ে সায়মার।
নিজের অজান্তে তোমাকে কষ্ট দেয়ার কারণে দুঃখিত সায়মা, তবে এখন তোমাকে কিছু কথা বলবো যে কথাগুলো শুনলে তুমি অবশ্যই খুশি হবে।
কি কথা? কৌতুহল ঝড়ে পড়ে সায়মার কন্ঠে।
আমি তোমাকে দুটো অপশন দিচ্ছি, তুমি চাইলে এর যেকোনো একটা বেছে নিতে পারবে।
কিসের অপশন, কি বেছে নিবো?
বলছি, একটু ধৈর্য ধরো।
অপশন এক, তোমার নম্বর চিরকালের জন্য কল ওয়েটিং এবং নম্বর বিজি শো করবেনা। তুমি আমার সাথে এই ওয়াদা করবে।
কিন্তু আমার বান্ধবীরাতো আমার নম্বর জানে, তারা আমাকে ফোন করলে?
সেটা তুমি ঠিক করবে তুমি কিভাবে ম্যানেজ করবে। প্রয়োজনবোধে সিম চেঞ্জ করবে, বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ করতে হলে পরিবারের অন্য কারও মোবাইল দিয়ে কথা বলবে।
আচ্ছা তোমার দ্বিতীয় অপশনটা বলো।
দ্বিতীয় অপশনটা একটু ব্যতিক্রম, তোমার নম্বর সারাদিন-সারারাত বিজি থাকলেও আমি তোমাকে কিছু বলবোনা, এমনকি একটা প্রশ্ন পর্যন্ত করবোনা। শুধু তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।
সায়মা কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলো, কি কাজ?
কাজটা তোমাকে এখনই করতে হবে, আমি এমনটি বলছিনা, তুমি সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে আমাকে তোমার সিদ্ধান্ত জানাবে। হুট হাট আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই। তুমি কোরআন ছুয়ে শপথ করবে, আমি যদি অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে না জড়াই, তবে তুমিও অন্য কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াবেনা, তুমি আমারই হয়ে থাকবে।
যদি আমার পরিবার অন্য কোথাও আমার বিয়ে ঠিক করে তখন? সায়মা প্রশ্ন করে।
তখন আমরা চেস্টা করবো, উভয়ের পরিবারকে ম্যানেজ করতে। ম্যানেজ না হলে পরবর্তী করণীয় দু’জনে মিলে ঠিক করবো, তবে অবশ্যই পরিবারকে সাথে নিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে একা একা কিছু করবোনা।
ওহ! আরকটা কথা, সায়মা আমি কিন্তু মরিচিকার পেছনে ছুটে বেড়াতে চাইনা। আমি তোমাকে ভালবেসেছিলাম বিয়ে করার জন্য। মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করে টাইম পাস করার মতো সস্তা টাইম আমার নেই। উপরে তোমাকে দু’টো অপশন দিলাম তুমি চাইলে যেকোনো একটা বেছে নিতে পারো। অথবা তৃতীয় একটা অপশন আছে সেটা হচ্ছে, আমাদের রিলেশন এখানেই শেষ।
ফোনের ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে সায়মা,
উদাশ নয়নে রাতের আকাশে তারা গোনে তারেক, সায়মা আমি জানি তুমি আমার শর্ত মানতে পারবেনা, যদি আমার ধারনা সত্য হয়, দয়া করে এই নম্বরে আর কখনো ফোন করবেনা। সর্বশেষ কথাটি বলেই ফোনটি রেখে দেয় তারেক।
ছাদের প্রান্তসীমায় দাড়িয়ে জ্যোৎস্নায় স্নান করে তারেক, বুক ভরে তাজা অক্সিজেন গ্রহণ করে। হো হো করে ফেটে পড়ে অট্টহাসিতে। বুকের গভীরে জমে থাকা কষ্টকে আড়াল করার নিষ্ফল প্রচেস্টা হিসেবেই হাসিটা ঝড়ে পড়ে, দু’গন্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু ধারা।
ভালো, তুমি? ওপাশ থেকে সায়মার কন্ঠে ভেসে আসে।
আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো আছি।
ব্যস্ততাময় দিন পার করছি, সারাদিন লেখালেখি নিয়েই কাটে। আগামী বই মেলায় একটা নতুন উপন্যাস আসছে।
হুম।
আচ্ছা ভালো কথা, ফোন করেছ ভালোই হলো, তোমার ফোনে ব্যালেন্স আছে? থাক তুমি বরং কেটে দাও, আমিই ব্যাক করছি।
ওকে।
হ্যা সায়মা, তোমার সাথে কিছু কথা বলবো, জরুরী। মনযোগ দিয়ে শুনবে।
ওকে, শুনছি বলো।
তোমার আমার সম্পর্কটি কিসের সম্পর্ক?
হেসে ওঠে সায়মা, লাইলি মজনু সম্পর্ক। হি! হি! আই লেবু।
হুম, ভালো অনেক ভালো।
তোমাকেতো আগেই বলেছি, আমরা একটা অন্যায় করছি। বিয়ের পূর্বে এই ধরনের রিলেশন থাকা ঠিক নয়, তাইনা?
হ্যা সেটাতো সবসময়ই বলো, তারপরেওতো......আসলে আমাদের মন দূর্বল, কিছু করার নেই, দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দেয় সায়মা।
হুম সেটাই, গুনাহ করছি, আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করে দিবেন। আচ্ছা বলোতো, রিলেশনের পূর্ব শর্ত কি? একটা রিলেশন টিকিয়ে রাখতে কি কি বিষয়গুলো কাজ করে বলে তুমি মনে করো?
আজব! হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো? আচ্ছা বলছি, একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, শেয়ারিং, কেয়ারিং.........
ওকে, ওকে, মূল পয়েন্টগুলো চলে এসেছে। আচ্ছা তুমি প্রথম পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছো, একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। এই ব্যাপারটা নিয়েই একটু বলছি, তুমি আমাকে দুই দুই বার অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে পরীক্ষা করেছো। আমিকি তোমার বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম?
ধুর! আমি কি বলেছি, আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা? আমিতো যাস্ট মজা করছিলাম।
তারপরেও বলো, আমি কি তোমার প্রতি বিশ্বস্ত?
হ্যা সোনা, হ্যা। তুমি একটা আদর্শ হাজবেন্ড হতে পারবা, এবার হলোতো! আদুরে ভঙ্গিতে জবাব দেয় সায়মা।
হুম! হয়তো হতে পারবো, হয়তো নয়। আচ্ছা বাদ দাও, এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। আমার পূর্বেও তোমার কয়েকটা ছেলের সাথে রিলেশন ছিলো, তাই না?
তুমি আবার পুরানো কথা তুলছো? তোমাকে কতবার বলেছি, ওরা শুধুই আমার বন্ধু ছিলো অন্য কিছু নয়, তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা? অভিমানী কন্ঠে বললো সায়মা।
আচ্ছা, তুমি আমাকে দুই দুইবার পরীক্ষা করেছো, আমি কিন্তু তোমাকে একবারো পরীক্ষা করিনাই, এর মাধ্যমে কি বোঝা যায়, আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা?
তাহলে আমাকে খোচা দিয়ে কথা বলছো কেনো? সায়মার কন্ঠে অভিমান ঝড়ে পড়ে।
খোচা দিলাম কোথায়! আমিতো আমার কথা বলার ভূমিকা তৈরী করছি।
ওফ! এতরাতে ফোন করলাম কোথায় একটু রোমান্টিক কথা শুনাবে, তা না, কি সব বক বক শুরু করেছো।
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে তাড়েক, বক বক করছি? আচ্ছা আজকে একটু বক বক করতে দাও, কথা দিচ্ছি আর কখনো আমার বক বক শুনতে হবেনা তোমাকে।
কি হয়েছে তোমার? উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে সায়মা। তুমি আজ এমন ভাবে কথা বলছো কেনো?
কই, নাতো! কিছুই হয়নাই। আচ্ছা বাদ দাও, এবার মূল কথায় আসি, কিছুটা গম্ভির হয়ে যায় তারেকের কণ্ঠ। তুমিতো জানো আমি ইসলামী সংগঠন করি। তুমি এটাও জানো, সংগঠন যদি জানে আমি তোমার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছি, তাহলে কানে ধরে আমাকে সংগঠন থেকে বের করে দিবে!
হ্যা জানি, কিছুটা কৌতুহলী কন্ঠেই জবাব দেয় সায়মা।
তারপরেও শুধুমাত্র মানবিক দূর্বলতার কারণে, আমি তোমার সাথে রিলেশন বজায় রেখেছিলাম, সরাসরি বলতে গেলে প্রেম করছিলাম।
করছিলাম মানে কি? তুমিকি এখন আমাকে ভালোবাসোনা! উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে সায়মা।
জানিনা! হয়তো বাসি, হয়তো বাসিনা, উদাস কন্ঠে জবাব দেয়, তারেক।
তোমার কি হয়েছে তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো, আমি কিন্তু কেদে ফেলবো! ফুপিয়ে ওঠে সায়মা।
আরে বোকা মেয়ে! কাদছো কেনো? আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি? আমিতো আছি।
ওই যে বললে............
সেটা বলেছি অন্য কারণে, আমি মূল কথায় আসছি। একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
সায়মা তুমি কি জানো, এটাই আমার প্রথম প্রেম?
হ্যা জানি, এটাও জানি তুমি আমাকে অসম্ভব ভালোবাসো, একদিন কথা বলতে না পারলে তুমি পাগল হয়ে যাও। বাচ্চাদের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলো। একেবারে বউ পাগলা! আদুরে ভঙ্গিতে জবাব দেয় সায়মা।
হয়তো! শুকনো কন্ঠে জবাব দেয় তারেক।
কি হয়েছে তোমার, আবারো প্রশ্ন করে সায়মা।
আচ্ছা বলছি, সায়মা তোমার মনে পড়ে, গত তিন চার দিন আগে রাত দুটোয় তোমার নম্বরে কল দিয়েছিলাম!
হ্যা মনে থাকবেনা কেনো। হঠ্যাৎ আমার কথা মনে পড়ায় একটা মিস কল দিতে চেয়েছিলে, কিন্তু.........।
হ্যা সায়মা, মিস কল দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখলাম নম্বর বিজি। পরে কয়েকবার চেস্টা করে তোমার নম্বরে কল ঢুকলো।
তোমাকেতো বলেছিই, আমার নম্বরে কল ওয়েটিং চালু আছে, আমি তখন কারও সাথে কথা বলছিলামনা, হয়তো নেটওয়ার্ক প্রব্লেম ছিলো।
হুম নেটওয়ার্ক প্রব্লেম, সম্ভবত সেটাই হবে! গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয় তারেক।
আচ্ছা সায়মা তুমি কি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের নাম শুনেছো?
শুনবোনা কেনো? সেখানে বিশ্বের সব বড় বড় রেকর্ডের কথা উল্লেখ করা আছে।
হ্যা ঠিক বলেছো, সেখানে অনেক বড় বড় রেকর্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আচ্ছা তুমি কি সেখানে ক্রমাগত মোবাইল ডায়ালিংয়ের উপর কোনো রেকর্ড দেখেছো?
সায়মা হেসে ওঠে, অদ্ভুত প্রশ্ন!
এই বছরে সম্ভবত ওই বইতে আমার নাম উঠে আসবে।
ওয়াও! কিভাবে? উল্লাসিত কন্ঠে জানতে চায় সায়মা।
গতকাল রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা একনাগাড়ে একটা নম্বরে ডায়াল করেই যাচ্ছিলাম, এক সেকেন্ডের বিরতী না দিয়ে। যদি একটু সিরিয়াল পাই, হয়তো কলটা ঢুকবে এই আশায়। তবে রাত তিনটার পরে সে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিলো।
কি বলছো তুমি! সায়মা আকাশ থেকে পড়ে।
হ্যা তোমার নম্বরে কল দিচ্ছিলাম, কিন্তু তুমি ব্যস্ত ছিলে।
আমিতো কিছুই জানিনা! আমি আমার বান্ধীবীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেছিলাম এর মধ্যে তোমার কল। তোমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর বান্ধবীর সাথে কথা বলার সময়তো তুমি আমার নম্বর ওয়েটিং পেয়েছিলে। তার মানে আমার নম্বরে কল ওয়েটিং চালু করা আছে। বিজি থাকারতো প্রশ্নই আসেনা। আর তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করোনা? আত্মপক্ষ সমর্থন করে সায়মা।
হো হো করে হেসে ওঠে তারেক, তাচ্ছিল্যের সাথে বলে, বিশ্বাস! হ্যা বিশ্বাস করি। করবো না কেনো, অবশ্যই বিশ্বাস করি, মানুষকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করাটাই আমার মস্তবড় দূর্বলতা।
তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো? সায়মা এবার রেগে যায়।
স্যরি সায়মা তোমাকে রাগানোর জন্য কিংবা তোমার মনে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি কথাগুলো বলিনাই, যাস্ট মনের সরল অভিব্যক্তি গুলোই প্রকাশ করলাম।
কিন্তু তুমি আমাকে কস্ট দিচ্ছ, আমাকে ব্লেইম দিচ্ছ। কন্ঠে অভিমান ঝড়ে পড়ে সায়মার।
নিজের অজান্তে তোমাকে কষ্ট দেয়ার কারণে দুঃখিত সায়মা, তবে এখন তোমাকে কিছু কথা বলবো যে কথাগুলো শুনলে তুমি অবশ্যই খুশি হবে।
কি কথা? কৌতুহল ঝড়ে পড়ে সায়মার কন্ঠে।
আমি তোমাকে দুটো অপশন দিচ্ছি, তুমি চাইলে এর যেকোনো একটা বেছে নিতে পারবে।
কিসের অপশন, কি বেছে নিবো?
বলছি, একটু ধৈর্য ধরো।
অপশন এক, তোমার নম্বর চিরকালের জন্য কল ওয়েটিং এবং নম্বর বিজি শো করবেনা। তুমি আমার সাথে এই ওয়াদা করবে।
কিন্তু আমার বান্ধবীরাতো আমার নম্বর জানে, তারা আমাকে ফোন করলে?
সেটা তুমি ঠিক করবে তুমি কিভাবে ম্যানেজ করবে। প্রয়োজনবোধে সিম চেঞ্জ করবে, বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ করতে হলে পরিবারের অন্য কারও মোবাইল দিয়ে কথা বলবে।
আচ্ছা তোমার দ্বিতীয় অপশনটা বলো।
দ্বিতীয় অপশনটা একটু ব্যতিক্রম, তোমার নম্বর সারাদিন-সারারাত বিজি থাকলেও আমি তোমাকে কিছু বলবোনা, এমনকি একটা প্রশ্ন পর্যন্ত করবোনা। শুধু তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।
সায়মা কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলো, কি কাজ?
কাজটা তোমাকে এখনই করতে হবে, আমি এমনটি বলছিনা, তুমি সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে আমাকে তোমার সিদ্ধান্ত জানাবে। হুট হাট আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই। তুমি কোরআন ছুয়ে শপথ করবে, আমি যদি অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে না জড়াই, তবে তুমিও অন্য কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াবেনা, তুমি আমারই হয়ে থাকবে।
যদি আমার পরিবার অন্য কোথাও আমার বিয়ে ঠিক করে তখন? সায়মা প্রশ্ন করে।
তখন আমরা চেস্টা করবো, উভয়ের পরিবারকে ম্যানেজ করতে। ম্যানেজ না হলে পরবর্তী করণীয় দু’জনে মিলে ঠিক করবো, তবে অবশ্যই পরিবারকে সাথে নিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে একা একা কিছু করবোনা।
ওহ! আরকটা কথা, সায়মা আমি কিন্তু মরিচিকার পেছনে ছুটে বেড়াতে চাইনা। আমি তোমাকে ভালবেসেছিলাম বিয়ে করার জন্য। মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করে টাইম পাস করার মতো সস্তা টাইম আমার নেই। উপরে তোমাকে দু’টো অপশন দিলাম তুমি চাইলে যেকোনো একটা বেছে নিতে পারো। অথবা তৃতীয় একটা অপশন আছে সেটা হচ্ছে, আমাদের রিলেশন এখানেই শেষ।
ফোনের ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে সায়মা,
উদাশ নয়নে রাতের আকাশে তারা গোনে তারেক, সায়মা আমি জানি তুমি আমার শর্ত মানতে পারবেনা, যদি আমার ধারনা সত্য হয়, দয়া করে এই নম্বরে আর কখনো ফোন করবেনা। সর্বশেষ কথাটি বলেই ফোনটি রেখে দেয় তারেক।
ছাদের প্রান্তসীমায় দাড়িয়ে জ্যোৎস্নায় স্নান করে তারেক, বুক ভরে তাজা অক্সিজেন গ্রহণ করে। হো হো করে ফেটে পড়ে অট্টহাসিতে। বুকের গভীরে জমে থাকা কষ্টকে আড়াল করার নিষ্ফল প্রচেস্টা হিসেবেই হাসিটা ঝড়ে পড়ে, দু’গন্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু ধারা।
//একবন্ধু বললো রোমান্টিক গল্প লিখতে, রোমান্টিকতার ভিতরে কৌশলে ইসলাম ঢুকাতে। কিন্তু প্রথম প্রজেক্টেই নিজেকে ব্যর্থ মনে হচ্ছে। তারপরেও কষ্ট করে লিখেছি তাই ফেলে দিলামনা, অনলাইনে দিয়ে দিলাম।//
২৯জুন২০১৩
২৯জুন২০১৩
No comments:
Post a Comment