কসাইদের হাতে বিপদাক্রান্ত শিশু!


এক
আমার বড় আপার কাহিনী দিয়েই শুরু করলাম,
আপার বাচ্চা হবে, দুলাভাইয়ের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেলো, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সরকারী হাসপাতালের পরিবর্তে প্রাইভেট ক্লিনিকের সিডিউল নেয়া হলো, ডাক্তারের সাথে বারবার পরামর্শ চেকআপ নিয়মিত চলছে, প্রয়োজনে রক্তের জন্য ডোনার রেডি করা হলো। দুলাভাই আবার এইসব বিষয়ে মহা সচেতন।
ক্লিনিকের ডাক্তার ডেলিভারীর সম্ভাব্য একটি ডেট দিলেন, তড়িঘড়ি করে গ্রাম হতে ছোট বোনকে নিয়ে এলাম আপার বাড়তি যত্নের জন্য। কিন্তু কোথাকার কি? দেখতে দেখতে ৫/৬দিন চলে গেলো কিন্তু কোনো খবর নেই, ডাক্তার বললেন ক্লিনিকে ভর্তি করেন, সম্ভবত সিজার করতে হবে।
আপা বললেন আমিতো শারিরীক ভাবে সুস্থ আছি ক্লিনিকে ভর্তি হবো কেনো? আপা বাসায় চলে এলেন।
সম্ভাব্য ডেটের ২১ দিন পরে আমার ফুটফুটে একটি ভাগ্নীর জন্ম হলো, আলহামদুলিল্লাহ মা-মেয়ে দু’জনেই সুস্থ!
আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে ডাক্তার এতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একজন সুস্থ মানুষকে ক্লিনিকে ভর্তি করতে চাইলেন কেনো? আর সিজার অপারেশনের কথাই বা কেনো বললেন?
এটাকি মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা?
ইদানিং কারো বাচ্চা হলেই শুনি সিজার হয়েছে, স্বাভাবিক পন্থায় সন্তান দুনিয়াতে আসছেনা, যাও আসছে হাতে গোনা দুই একটা, এর পেছনের কাহিনী কি? মায়েদের অক্ষমতা নাকি ডাক্তারদের কারসাজী?

দুই
এ ব্যাপারটি নিয়ে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছেন চৌধুরী মহিবুল হাসান(বাশেরকেল্লা হতে প্রাপ্ত),
ভবিষ্যতে কেউ যদি ঢাকা এপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন তাহলে দয়া করে একটু ভেবেচিন্তে আসবেন। এই হাসপাতাল হাসপাতাল না, এটা চিকিৎসার নামে একটা সম্পূর্ণ অনৈতিক, বাণিজ্যিক ধান্দা বাজির একটা বিশাল দালান। আমার স্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে, ভয় পাইয়ে দিয়ে তারা আমার সম্পূর্ণ সুস্থ শিশুকে এক মাস আগে জন্ম দেয়ালো কোনো কারণ ছাড়াই। বলল বাচ্চার ওজন অনেক বেশি, আর আগে জন্ম হলে তাদের জন্য ম্যানেজ করা সহজ হবে। জন্মের পর দেখা গেল বাচ্চার ওজন অনেক কম এবং তাকে ইনকিউবেটরে রাখতে হবে। পরে বুঝলাম "ম্যানেজ" মানে হল শুধু মাত্র বিল বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে আগে বাচ্চা জন্ম দেয়ালো। একদিনের ভুমিষ্ট বাচ্চাকে এন্টিবায়োটিক, অক্সিজেন ইত্যাদি দিয়ে এক ভীতিকর অবস্থার সৃস্টি করল, বলল ইনফেকশন হতে পারে, ব্লাড কালচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৭২ ঘণ্টা, পুড়া সময় বাচ্চা ইন্টেন্সিভ কেয়ারে থাকবে। ৭২ ঘন্টা পর রিপোর্ট আসলো কোনো ইনফেকশন নাই। কেনও একদিনের বাচ্চাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে তিনদিন আইসিঊ তে রাখা হল? কোনো উত্তর নাই। ফাইল দেখতে চাইলে বলল রিলিজের আগে দেখানোর নিয়ম নাই। পূরো নাটকটি তাদের সাজানো। তারাই প্রথমে আমাদেরকে আগাম ডেলিভারী দিতে বাধ্য করল এইবলে বাচ্চার ওজন অতিরিক্ত, যাতে করে কিছু পয়সা অতিরিক্ত খসাতে পারে। কেনো তারা একটা বাচ্চার জীবন বিষীয়ে তুলে এই কাজটা করল? একবার ভাবলাম আমি ভুল করছি। পরে মেটারনীটি ডিপার্টমেন্টে দেখলাম তারা এই কাজ শতকরা ৬০% রোগীকে করাচ্ছে। যেই ডিপার্টমেন্ট সবচেয়ে হাসি খুসির জায়গা হওয়ার সেখানে এক ভীতিকর পরিস্থিতি। প্রত্যেক নতুন বাবা মার চোখে ব্যপক আতংক। অন্য একজনের সাথে পরিচিত হলাম, বল্লেন তার ভাইকে অস্ত্রপচার করতে প্রাথমিক ভাবে অসফল হয় হাসপাতাল, পরে ভুল স্বীকার করে আবার করে। কিন্তু বিল ঠিকই ডাবল করছে। এখানে এমনও অভিযোগ আছে মৃত রোগি আনলে তারা তাকে দুইদিন ইন্টেন্সিভ কেয়ারে রেখে দেয়, এবং এর প্রমানও পাওয়া গেছে। পরে একটু অনুসন্ধান করতে বার্ষিক রিটার্ণ দেখলাম, চক্ষু চরক গাছ। তারা ২০১১ সালেই মুনাফা করে ২৬ কোটি টাকা! আয়ের শতকরা ৪০% আসে গাইনি ও অবস্ট্রেট্রিকস ডিপার্টমেন্ট থেকে! সুতরাং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এপোলো হাসপাতালে যারা আসবেন তারা দয়া করে ভেবেচিন্তে আসবেন। এই কসাইখানা ব্যবসা চট্টগ্রামে যাওয়ার পায়তারা করছে এবং স্বল্প মূল্যে সিডিএ থেকে জমিও কিনেছে মানবিক প্রতিষ্ঠান নাম করে। এই এপোলো হাসপাতাল হল ব্যবসায়ী এম পি টিপু মুন্সি, শান্তা গ্রুপের মালিক, আর লংকা বাংলা ফাইনান্সের যৌথ প্রযোজনার এক ধান্দা বাজির দোকান যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম এস টি এস হোল্ডিং লিঃ তারা ভারতের তৃতীয় শ্রেনীর কিছু ডাক্তার এপোলো গ্রুপের সাথে যৌথ চুক্তির আওতায় এনে জনগণের সাথে ভাওতাবাজির এক ব্যপক আয়োজন করেছে। ভারতে এই ডাক্তারগূলোকে কেউ চেনা দুরে থাক চাকরি ও দেবেনা। দূর্ভাগ্যের বিষয়,এই ব্যপক লূটতরাজ দেখার, নিয়ন্ত্রন করার সংস্থা (বিএমডিসি, ডীজি হেলথ) একেবারই নিস্ক্রিয়। তাই ঢাকা এপোলো হাসপাতালে আসার আগে সুচিন্তিৎ স্বীদ্ধান্ত নিন।

আমার প্রশ্ন হলো, চিকিৎসা সেবার নামে এই সব মানুষরুপী জানোয়ারদের হাত হতে জাতিকে মুক্ত করার কোনো উপায় কি নেই?

২৩সেপ্টেম্বর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment