গদি সমাচার

যখন খুব ছোটো ছিলাম তখন মানুষের মুখে মুখে শুনতাম, ক্ষমতার গদির জন্য নাকি খালেদা-হাসিনা মারামারি করে। একটা গদির জন্য নাকি এতো এতো হরতাল-অবরোধ, খুনোখুনি। আমার শিশুমন অবাক হতো, সামান্য গদীর জন্য এতো কাড়াকাড়ি করার কি দরকার, গদিটাকি দেখতে খুব সুন্দর! বসতে খুব আরাম! অনেক বেশি তুলা ব্যবহার করা হয়, নাকি অন্য কিছুদিয়ে নরম করা হয়? তাদেরতো অনেক অনেক টাকা, এতো মারামারি না করে নতুন একটা স্বর্ণ খচিত গদি বানিয়ে নিলেইত হয়!
ধীরে ধীরে বয়স বাড়লো উন্নত হলো বুদ্ধি-বিবেক, দেখলাম গদির কি ক্ষমতা! এই গদির জোড়েই চোখের পলকে সংবিধান হতে বিসমিল্লাহ তুলে দেয়া যায়, রাস্ট্রধর্ম ইসলাম উৎখাতের ঘোশণা দেয়া যায়, আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস অস্বীকার করা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা যায়, মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করা যায়, ভারতের কাছে বিনামূল্যে দেশ উজার করে দেয়া যায়। আহা, গদির কি শান!

দেখলাম শুধু হাসিনা-খালেদাই নয়, গদির দিকে লোভ আছে আরো অনেকেরই, তাদের মধ্যে জামায়াত আছে, এরশাদ আছে, আছে আরো অনেকেই। এদের মধ্যে জামায়াত সহ ইসলামপন্থী আরো কিছু দল গদি চায় ভিন্ন কারণে, তাদের ইচ্ছে আরাম করে গদিতে বসে আঙুলের ইশারায় দেশে কোরআনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে, দেশকে এগিয়ে নেয়া হবে খিলাফতের স্বর্ণযুগে।

একটি দল আছে তারা গদীকে ঘৃণা করে, তাদের দৃস্টিতে ওই গদি হচ্ছে নাপাক! যারা গদীর লোভ করে তারা ইসলামের দৃস্টিতে ঘৃণীত। গদীর চেয়ে মসজিদ উত্তম, দেশের শাসন ক্ষমতা শয়তানের হাতে তুলে দিয়ে এরা মসজিদ আবাদ করে! শয়তান দেশের মানুষের হাতে জাহান্নামের টিকেট ধরিয়ে দিলেও এই দলের কিছু যায় আসেনা। এই দলের নিকট গদিপ্রেমী খিলাফতপন্থীদের চাইতে বরং কাফের মুশরিকরা উত্তম! জামায়াত শিবিরকে পারলে তারা গলাধাক্কা দিয়ে মসজিদ হতে বের করে দেয়।

আরেকটি দল আছে তারাও গদি চায় তবে একটু ভিন্ন স্টাইলে, খালেদা হাসিনা টাইপের কিংবা রাসূল (সঃ) এর সুন্নতী স্টাইলে নয়, তারা অস্ত্রের মুখে দেশের মানুষের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে গদিতে বসতে চায়। রাসূল (সঃ) মদিনার জনগনের ইচ্ছেতে/আনুগত্যে ক্ষমতায় বসেছিলেন, আর এরা অস্ত্রের জোড়ে ক্ষমতায় বসে জনগণকে আনুগত্য করতে বাধ্য করবে।

সর্বশেষ যে দলের কথা বলবো তারাও গদি চায়, তবে কিভাবে চায় সেটা তারা নিজেরাও জানেনা। তাদের ধারণা দেশের আনাচে কানাচে, পথে ঘাটে এবং বিপনী বিতানে বোমা ফাটিয়ে মানুষ মারলেই গদী পাওয়া যাবে। এই দলটি মশা মারার জন্য কয়েলের পরিবর্তে একে ফোর্টিসেভেন ইউজ করতে ইচ্ছুক। তারা কাউকে হাতের ইশারা করার পরিবর্তে বন্দুকের গুলি দিয়ে ইশারা দিতে আগ্রহী।
রাসূল (সঃ)এর কর্মপদ্ধতী ছিলো, অবস্থাভেদে যেখানে আলোচনার প্রয়োজনবোধ করেছেন সেখানে আলোচনা, যেখানে অবরোধের প্রয়োজনবোধ করেছেন সেখানে অবরোধ, যেখানে সন্ধি চুক্তির প্রয়োজনবোধ করেছেন সেখানে সন্ধিচুক্তি এবং যেখানে যুদ্ধের প্রয়োজনবোধ করেছেন সেখানে যুদ্ধ করেছেন।
কিন্তু এই শেষোক্ত দলটি রাসূল (সঃ) এর কর্মপদ্ধতী বাদ দিয়ে সবজায়গাতেই বোমাবাজি এবং হত্যাকান্ডের মাধ্যমে গদি চায়।

দেশে গোলযোগ শুরু হয়েছে, হাসিনার গদি নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত সহ ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল ১৮টি দল। একদিকে ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল শক্তি অন্যদিকে হাসিনার সাথে আছে আল্লাহদ্রোহী নাস্তিক্যবাদী শক্তি।
এই যুদ্ধে বিএনপি চায় ক্ষমতা, জামায়াত চায় ইসলামে বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে। আর আওয়ামী-বাম শক্তি চায় দেশ হতে ইসলাম নির্মূল করতে।

সিদ্ধান্ত আপনার, এই গদির লড়াইয়ে আপনি কোন পক্ষে, মুসলিম নাকি আওয়ামিলীগ?

২৬অক্টোবর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment