আওয়ামিলীগের তর্জন-গর্জন এবং অন্তস্বার শূণ্যতা

সাঈদ আল সাহফের কথা মনে আছে আপনাদের? ইরাকের সাদ্দাম হোসেন শাসনের সর্বশেষ তথ্যমন্ত্রী ছিলেন এই সাইদ আল সাহাফ, মুসলিম বিশ্বের তরূনদের আইকনে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
চমৎকার একটি গুণ ছিলো এই ব্যক্তির, তা হচ্ছে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে শত্রুকে ধোঁকা দিয়ে নিজের পক্ষের জনমতকে উদ্দীপ্ত করা।
মনে পরে, টিভি পর্দায় কিংবা পত্রিকার পাতায় সাঈদ আল সাহাফের নাম দেখলেই রক্তের মধ্যে তীব্র উদ্দীপনা অনুভব করতাম। তিনি বারবার বিবৃতি দিতেন, ইরাক হামলা হলে মার্কিন বাহিনীর কবর রচিত হবে, প্রয়োজনে আমেরিকায় গিয়ে পাল্টা হামলা চালানো হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রতিদিনই বেশ কয়েকবার সংবাদ সম্মেলন করে এমনভাবে বক্তব্য রাখতেন সাঈদ আলা সাহাফ, মনে হতো মার্কিন বাহিনী ইরাকের কিছুই করতে পারবেনা, লেজ তুলে পালাবে। ইরাক যদি ফু দেয়, তবে মার্কিন বাহিনী বাতাসে উড়ে যাবে।
এমনকি মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী বাগদাদ বিমানবন্দর দখল নেয়ার পরেও সাহাফ বলেছিলেন তারা এখনো ফোরাত নদী অতিক্রম করতে পারেনাই। তারপরের ইতিহাসতো সবারই জানা, দুই/তিনদিনের লড়াইয়ের পরেই সাদ্দাম বাহিনীর শোচনীয় পরাজয়। আমি হয়তো সাদ্দাম হোসেনকে একসময় ভুলে যাবো কিন্তু সাঈদ আল সাহাফের সেই জ্বালাময়ী বক্তব্য ভোলা অসম্ভব!

আজ যখন টিভি কিংবা পত্রিকার পাতায় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামিলীগের মন্ত্রী-এম্পি কিংবা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনি, তখন কেবলি সাঈদ আল সাহাফের কথা মনে পরে যায়। প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় আওয়ামি মন্ত্রী-এম্পিদের হুঙ্কার শুনে কেবলি হাসি পায়। সাধারণ জনতা কিন্তু হাসেনা, তারা ভয় পায়। তাদের ধারণা হয়, নিশ্চই খুটিতে জোড় আছে নয়তো এমন কনফিডেন্স নিয়ে কথা বলে কিভাবে!?
অথচ ভেতরের খবর সম্পূর্ণ ভিন্ন, ইতোমধ্যেই আওয়ামিপন্থী দুই হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ছুটির জন্য আবেদন করেছে, অনেক মন্ত্রী-এম্পি তাদের পরিবারকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন শুধুই অপেক্ষা, গণধোলাই হতে রেহাই পাওয়ার জন্য কবে উড়াল দিতে পারবে।
সাগরের পানিতে ডুবন্ত ব্যাক্তি যেমন খুড়কুটো ধরে ভেসে থাকতে চায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামিলীগ তেমন সাঈদ আল সাহাফের মতো করেই মিডিয়ার উপর ভরসা করে ভেসে থাকতে চায়। চাপাবাজি হুঙ্কার দিয়ে বিরোধী শক্তিকে ভড়কে দিতে চায়।

আওয়ামি সরকার চরম সুন্দর একটা কৌশল হাতে নিয়েছিলো, চমৎকার একটি ফাঁদ তৈরী করেছিলো। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত বিরোধী শিবির আগেই সতর্ক থাকায় এই ফাদ কার্যকর হয়নাই।
তারা শেষ মুহূর্তে এসে সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ফাসির রায় ঘোশণা করে বিরোধী দলকে উস্কে দিতে চেয়েছিলো। আর বিরোধী দল যদি আগে পিছে না ভেবে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলতো, তখনি ঘটতো অঘটন, নির্বিচারে গুলি করে সেই আন্দোলন বাঞ্চাল করে দেয়া হতো। প্রশাসন সরকারের প্রতি আশ্বস্ত হতো, সরকারের প্রতি অনুগত থাকতো, ফলে ২৪অক্টোবরের পরে তাদের ক্ষমতা চালিয়ে নিতে প্রব্লেম হতোনা। নির্মম হত্যাকান্ডের পরে বিরোধী দল শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত জনবল মাঠে নামাতে ব্যার্থ হতো।

একথা এখন দিবালোকের মতই স্পষ্ট ২৪অক্টোবরের পরে বাংলাদেশের পাড়া-মহল্লা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে আওয়ামিশক্তি হয় পালিয়ে যাবে, নয়তো গণরোশের শিকার হবে। প্রশাসনের আওয়ামীপন্থী অংশটি তখন নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমানে বিরোধী দলের নেতাদের পায়ে পড়ে থাকবে।

০৬অক্টোবর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment