কোরবানী এবং নাস্তিক্যবাদীদের দ্বিমুখী আচরণ

‘দোস্ত ভাবীর হাতের রান্না অসাধারণ! বিশাল সাইজের একটা হাড় কামড়াতে কামড়াতে রান্নার উচ্ছসিত প্রশংসা শুরু করলো নাহিদ। আচ্ছা ভাবীকে দেখছিনা, এতো সুন্দর রান্নার হাত, না জানি ভাবী কত সুন্দর!’
‘ইয়ে, তোর ভাবী একটু অসুস্থ, গতকাল কোরবানীর রান্না সামলাতে সামলাতে বেচারী কাহিল হয়ে পড়েছে’। অবলীলায় মিথ্যে কথাটি বলে ফেললো হাসান, অবশ্য মিথ্যে না বলে উপায়ও ছিলোনা, বিষাক্ত সাপকে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু একটা নাস্তিককে বিশ্বাস করা যায়না। দুনিয়ার সকল নারীই নাস্তিকের নিকটা সমান, মা এবং বোনের পার্থক্য নাস্তিকের কাছে নেই! থাকবেই বা কি করে? তাদেরতো ধর্ম নেই, পরকালের ভয় নেই, জান্নাত-জাহান্নাম নেই! সুতরাং নব্য নাস্তিক এই বন্ধুর নিকট হতে পরিবারের সদস্যদের দূরে রাখাই নিরাপদ।
‘ওহ! আচ্ছা, এতো সুন্দর রান্নার জন্য ভাবীকে আমার ধন্যবাদ জানিয়ে দিস, ততক্ষণে আরেকবাটি গোস্ত সাবাড় করে দিয়েছে নাহিদ’।

খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই জম্পেশ আড্ডায় মেতে উঠলো দুই বন্ধু!
তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে নাহিদ প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, ‘এইযে তোরা কোরবানীর নামে পশু হত্যা করছিস, এটা কি ঠিক হচ্ছে? ওই প্রাণি গুলোর জন্য তোদের কি একটুও মায়া দয়া নাই?’
মৃদু হেসে নাহিদের দিকে তাকালো হাসান। নব্য নাস্তিক এই নাহিদ, ইসলামের সব কিছুতেই খুত ধরা তার প্রিয় একটা হবি! ‘হঠাৎ এই প্রশ্ন? তুই কি গোস্ত খাসনা?’
‘গোস্ত খাবোনা কেনো? অবশ্যই খাই, আজকে এতো বেশি পরিমাণে খেয়েছি যে এখন নড়াচড়া করতে কস্ট হচ্ছে, তারপরেও প্রাণী হত্যা ব্যাপারটা কিন্তু অমানবিক!’
‘পশু জবাই না করলে গোস্ত খাবি কি করে? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে হাসান। এক কাজ কর, আজকে হতে গোস্ত খাওয়া বন্ধ করে দে, আর ভুলেও কখনো মশা-মাছি হত্যা করবিনা, মনে রাখবি ওগুলাও কিন্তু প্রাণী। ও হ্যা, বৃক্ষ লতা-পাতা এগুলোরও কিন্তু প্রাণ আছে তাই শাখ-সবজি খাওয়া চলবেনা, প্রাণ হত্যা করা অমানবিক!’
‘ধুর! কিসের মধ্যে কি নিয়ে এসেছিস, না খেয়ে থাকবো নাকি! তারপরেও দোস্ত, এভাবে একদিনে হাজার হাজার পশু জবাই করা হচ্ছে, কেমন যেনো লাগেনা?’
বন্ধুর অযৌক্তিক গোয়ার্তুমি দেখে হাসি পেলেও, চুপ করে রইল হাসান। গত কিছুদিন আগে হিন্দুদের পাঁঠাবলি অনুষ্ঠান হয়েছিলো, তোর মনে আছে?’
‘থাকবেনা কেনো? খুব মজা করেছিলাম, জটিল নাচ-গান হয়েছিলো, হালকা-পাতলা ড্রিংকও করেছিলাম। সোৎসাহে জবাব দিলো নাহিদ’।
‘খুব মজা করেছিলি, ভালো কথা। কিন্তু তখন তোর ওই প্রাণী প্রেম কোথায় ছিলো? পাঁঠাবলি দিলে মানবিকতা নষ্ট হয়না? কই তখনতো তুই এই মানবিকতা/অমানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলিসনাই!’
‘কাচু-মাচু মুখ করে ফেললো নাহিদ, আসলে ব্যাপারটা তেমন না, পাঁঠাবলিতে আর কয়টা পাঁঠা জবাই করা হয়, খুবই নগন্য সংখ্যক। তাই সে ব্যাপারে কিছু বলিনাই’।
‘আচ্ছা, তোকে একটা পরিসংখ্যান শুনাচ্ছি, প্রতিবছর শুধুমাত্র আমেরিকাতে ৯বিলিয়ন পশু জবাই করা হয়, কানাডাতে ৬৫০মিলিয়ন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৩০০মিলিয়ন পশু জবাই করা হয়। আর প্রতিদিন আমাদের ঘরের পাশের বাজারেও ৮/১০টি গরু জবাই করা হয়।
কই কখনোতো তোদের মতো নাস্তিকদের মুখে এই টাইপের সুশীল মার্কা বয়ান শুনিনাই! শোন, তোদের সমস্যা পশু হত্যা নয়, তোদের সমস্যা হচ্ছে আল্লাহর নামে পশু জবাই করাতে। প্রতিদিন গরু/মুরগী/খাসি সব খেতে পারবি, কিন্তু প্রব্লেম হচ্ছে আল্লাহর নাম! আল্লাহর নাম নিলেই তোদের মতো নাস্তিকদের চুলকানী শুরু হয়ে যায়’।
‘তারপরেও দোস্ত, একদিনে এতোগুলো প্রাণী জবাই করলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, দেশে গবাদী পশু কমে যাবে’। পিছলাতে চাচ্ছে নাহিদ।
‘আচ্ছা, আমরা এমনিতেইতো গোস্ত খাচ্ছি, খাচ্ছিনা? পার্থক্য হচ্ছে বছরের ৩৬৫দিন আমরা বাজার হতে গোস্ত কিনে নিজেরা একা একাই খাই, আর কোরবানীর ঈদে আল্লাহর উদ্দেশ্য পশু জবাই করে তার একটা অংশ গরীব এবং অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করি, এতে করে আমরা যেমন সওয়াব অর্জন করি তেমনি তারাও পুষ্টি অর্জন করে’।
‘তারপরেও দোস্ত, কথা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে, এভাবে প্রাণী হত্যাকে কিছুতেই সমর্থন দেয়া যায়না, তার উপর শিশুদের সামনে......’
‘তুইতো নাস্তিক, ব্যাপারটা বুঝতে হলে তোকেতো আস্তিকের অবস্থান হতে চিন্তা করতে হবে, শিশু বয়সটাইত শিক্ষা অর্জনের জন্য উপযুক্ত সময়, এই বয়সেই একটি শিশুকে শেখাতে হবে, আল্লাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করার মর্যাদা এবং আল্লাহর পথে কোরবানী করার মাহাত্ম!’
‘তারপরেও দোস্ত এভাবে কোরবানীর নামে পশু হত্যা মানা যায়না......’
‘তুই বারবার শুধু হত্যা হত্যা করছিস, এখানে হত্যার কি দেখলি? আল্লাহ এইসব গবাদী পশুকে সৃস্টি করেছেন আমাদের খাদ্য হিসেবে, এখন খেতে হলেতো সেটাকে প্রসেসিং করতে হবে, জবাই করতে হবে, নাকি আস্ত পশুর শরীর হতে গোস্ত কেটে খাওয়া শুরু করে দিবি? আমরা যে শাক সবজি খাচ্ছি, এটাকে তুই কিভাবে দেখবি? এটার নাম কি বৃক্ষ হত্যা?’
'তুই যাই বলিস, তারপরেও এভাবে রক্তপাত! ওফ! মানা যায়না.........'

“যারা অস্বীকার করেছে, তাদেরকে আপনি সাবধান করুন আর নাই করুন, উভয়টাই সমান, এরা কখনো বিশ্বাস স্থাপন করবে না। আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তর এবং তাদের শ্রবণশক্তি ও তাদের দৃষ্টিশক্তির উপর আবরণে ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি” [ আল কুরআন, সূরা বাকারাহ ২:৬-৭ ]

১৭অক্টোবর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment