প্যারাসিট্যামলবাদী ডাক্তার এবং সশস্ত্র বিপ্লব।

এক
বাবা বিশাল ডাক্তার, চতুর্দিকে নাম-যশ/সুখ্যাতি। এতো চমৎকার তার চিকিৎসা জ্ঞান, যে রোগীর চিকিৎসা করেছেন সে রোগীই সুস্থতা লাভ করেছেন, কোনো রোগীই তার কাছ হতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাননাই। স্বাভাবিক নিয়মেই সেই ডাক্তার একদিন ইন্তেকাল করলেন।
ডাক্তারের সন্তান ভাবনায় পড়লো, অত্র অঞ্চলের এতো এতো অসহায় মানুষ এখন কারকাছ হতে চিকিৎসা লাভ করবে? অতঃপর অনেক ভেবে চিন্তে, অসহায় মানুষের দুঃখের কথা ভেবে, ছেলে সিদ্ধান্ত নিলো বাবার দায়ীত্ব নিজ কাধে তুলে নিবে। কিন্তু সেটা কিভাবে? ছেলেতো ডাক্তারী বিদ্যায় পারদর্শী নয়!!
ছেলের মনে পড়লো, কি এক রোগের জন্য তার বাবা একজন রোগীকে প্যারাসিটেমল ট্যাবলয়েড দিয়েছিলো। ছেলে সেই মোতাবেক চিকিৎসা করবে বলে ঠিক করে নিলো।
রোগী এসে বলে, মাথা ব্যাথা- রেডি ঔষধ, খাও প্যরাসিটেমল!
রোগী আসে, পেটে ব্যাথা- খাও প্যারাসিটেমল!
বুক জ্বলে-খাও প্যারাসিটেমল!
আমার গরু হারাইয়া গেছে-খাও প্যারাসিটেমল, গরু চলে আসবে!
এভাবেই চলছে তার চিকিৎসা, আর সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে, তার এই চিকিৎসায় কিছু কিছু রোগী উপকার পাচ্ছে, তারাও সুনাম করছে, ‘ডাক্তার খুব ভালো, একেবারে বাপকা ব্যাটা!!’

দুই
চৌদ্দশত বছর পূর্বে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সঃ) মক্কী জীবনে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে নির্যাতিত হলেন, অনেক সাহাবী শহীদ হলেন, কিন্তু প্রতিরোধের জন্য আল্লাহর রাসূল (সঃ) একটি খেজুরের লাঠিও হাতে তুলে নিলেননা।
মাদানী জীবনে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের সমর্থন নিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে মদীনায় ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠিত করলেন।
মাদানী যুগের প্রথম দিকে মদীনার আশে-পাশে সাহাবীরা (রাঃ) বেশ কিছু হরতাল পালন করলেন (কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলার গমন পথে হামলা এবং বাধা প্রদান)।
বদর, ওহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে শত্রুর আক্রমনের মোকাবেলায় ইসলামী রাস্ট্রের প্রধান হিসেবে তিনি যুদ্ধের ঘোশণা দিলেন, এবং সর্বোশক্তি দিয়ে কাফেরদের আক্রমন মোকাবেলা করলেন, আল্লাহ বিজয় দান করলেন।
কাফেরদের একদলকে মোকাবেলায় অপেক্ষাকৃত ভালো অন্যদলের সাথে জোট গঠন (চুক্তি) করলেন।
তাবুকের অভিযানে শত্রুর মোকাবেলায় যুদ্ধের কৌশল হিসেবে শত্রু পক্ষ প্রস্তুত হওয়ার পূর্বেই ইসলামী রাস্ট্রের প্রধান হিসেবে তিনি সেনা অভিযান পরিচালিত করলেন।
উপরের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শত্রুর মোকাবেলায় আল্লাহর রাসূল(সঃ) অবস্থা ভেদে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, যেখনে নির্যাতন সহ্য করা প্রয়োজন সেখানে মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য করেছিলেন, যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করেননাই। এবং যেখানে শত্রুর মোকাবেলায় চুক্তি/জোট করা সম্ভব হয়েছিলো সেখানে চুক্তিও করেছিলেন। আবার যেখানে যুদ্ধ অনিবার্য সেখানে ইসলামী রাস্ট্রের পক্ষ হতে ঘোশণা দিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন।

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, উপরে ডাক্তার এবং তার ছেলের গল্প বলেছিলাম, সব যায়গাতেই প্যারাসিটেমল।
ঠিক তেমনি ইদানিং কিছু ইসলাম পন্থীর উদ্ভব হয়েছে তারা সব যায়গাতেই প্যারাসিটেমল ইউজ করতে চাইছেন।
অর্থনৈতিক সমস্যা?- শুরু করে দাও সশস্ত্র জিহাদ!
রাজনৈতিক সমস্য?- শুরু করে দাও সশস্ত্র জিহাদ!
আওয়ামিলীগ নির্যাতন করেছে?- শুরু করে দাও সশস্ত্র জিহাদ!
মিশরে নির্যাতন?- শুরু করে দাও সশস্ত্র জিহাদ!
আল্লাহর রাসূল(সঃ) যে অবস্থা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন কর্মকৌশল নির্ধারণ করেছিলেন সেটা যেনো তাদের চোখেই পড়ছেনা। তাদের একদফা একদাবী, এখনই শুরু করে দিতে হবে সশস্ত্র জিহাদ!

ওহ! ভালো কথা, এই সশস্ত্র জিহাদীদের আরেকটি সুন্দর কৌশল আছে, এরা কিন্তু নিজেরা জিহাদ করবেনা, আপনাকে ক্রমাগত খুচিয়ে খুচিয়ে প্রয়োজনীয় প্রিপারেশন ছাড়াই যুদ্ধের ময়দানে নামিয়ে পেছন হতে পালিয়ে যাবে। বিশ্বের কোথাও এই সশস্ত্র জিহাদের স্লোগানধারীদের জিহাদ চোখে পড়বেনা, এরা অন্যের ক্রেডিট ছিনতাই করতে উস্তাদ!
তারা উদাহরণ দেয়ার সময় তালেবানদের কথা বলবে, আলকায়েদার কথা বলবে। কিন্তু নিজেদের সংগঠন কবে কোথায় যুদ্ধ করেছে বা করছে সে নজীর কিন্তু তারা উপস্থাপন করতে পারবেনা।
ইদানিং তারা সিরিয়ার যুদ্ধের উদাহরণ দিচ্ছে, কিন্তু মূল কথা হচ্ছে সিরিয়ার যুদ্ধে বিরোধী মুভমেন্টের নেতৃত্বে আছে ইখওয়ান(ব্রাদারহুড), আর সেকারণেই মিশর এবং তুরস্ক দেশ দুটি, সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

অতএব, এইসব প্যারাসিট্যামলবাদী ডাক্তারদের কথা এবং কাজ হতে সাবধান, এরা আপনাকে গাছে তুলে দিয়ে মই নামিয়ে নিবে!

২০অক্টোবর২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment