অদেখা ভ্যাও-এর আতঙ্কে পার হয় জীবন



প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে শিশুটি জানালার বাহিরে তাকিয়ে থাকে, লাল-নীল ডানা মেলা প্রজাপতির উড়াউড়ি কিংবা ঝিঁঝিঁ পোকার অবিরত ডাকাডাকি কৌতুহলি চোখে অবলোকন করে। দাওয়ায় বসে দেখে রোদের লুকোচুরি খেলা, দরজার ওপাশের ঘাশের ডগায় শিশির বিন্দু তাকে হাতছানি দিয়ে আহ্বান করে। শিশুটি হেসে ওঠে, ছুটে যেতে চায় প্রকৃতির বুকে, অজানা জগতটাকে জানার অদম্য আকর্ষনে ছুটে যেতে চায় প্রকৃতির কোলে। কোথা হতে ছুটে আসে মা, ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে তাকে ভুলিয়ে দিতে চায় প্রকৃতির হাতছানি, অবুঝ শিশুর তীব্র কৌতুহলী মন বারবার ছুটে যেতে চায় জানালার ওপাশে। মা তাকে ভয় দেখান ওখানে ‘ভ্যাও’ আছে, ভ্যাও তোমাকে কামড়ে দিবে। ভয়ে কুকড়ে যায় শিশু হৃদয়, সে জানেনা ভ্যাও দেখতে কেমন হয়, তবে এটুকু অন্তত বিশ্বাস করে মা নিশ্চই মিথ্যে বলবেনা! অদেখা ভ্যও-এর আতঙ্কে কেটে যায় শিশুর প্রতিটি সকাল দুপুর সন্ধ্যা।

মাদ্রাসা’র জানালায় বসে, সদ্য কৈশর উত্তীর্ণ ছাত্রটি অবাক তাকিয়ে রয়। দাড়ি নেই টুপি নেই একদল ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। না তারা মাদ্রাসায় পড়েনা, তাহলে তারা ইসলাম শিখলো কোথা থেকে? অবাক ছাত্রটি হাতড়ে বেড়ায় তার প্রশ্নের জবাব। শ্রদ্ধেও শিক্ষককে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, এখন জিহাদের সময় আসেনি, আগে ঈমান মজবুত করো। হতবাক ছেলেটি অবাক তাকিয়ে রয়, এত এত বছর কোরআনের প্রশিক্ষণ নিয়েও শিক্ষক মহাশয়ের ঈমান কি মজবুত হয়নি! তাহলে তিনি কেনো জিহাদ করছেননা। যে ছেলেটি তপ্ত বুলেটের সামনে বুক পেতে দিচ্ছে কোরআনের রাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তার ঈমানে ঘাটতি আছে! বিশ্বাস করতে কস্ট হয় তরুণ ছাত্রটির। অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ায় নিজের প্রশ্নের জবাব, কোন সে মহান শিক্ষক তাদের চোখে বুনে দিয়েছেন ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। একসময় ছাত্রটি পেয়ে যায় তার প্রশ্নের জবাব। তিনি এক মহান দার্শনিক, যিনি অসংখ্য পুস্তক রচনা করেছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি ইসলামী সংগঠন, যে সংগঠন মাদ্রাসার গন্ডি ছাড়িয়ে গিয়ে কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের কাছে ইসলামকে উপস্থাপন করেছেন সহজ সরল এবং আধুনিক পদ্ধতীতে। শত শত বছর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে একদল মরণজয়ী মুজাহিদ তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে তার লেখা বই পড়ে একজন ভার্সিটি ছাত্র এগিয়ে আসছে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।
ছাত্রটি আবার ফিরে যায় তার শিক্ষকের কাছে, জানতে চায় সেই দার্শনীক সম্পর্কে, আত্মগর্বে বলিয়ান শিক্ষকটি দ্বিধায় পড়েযায়, আতঙ্কিত বোধ করে কতৃত্ব হারানোর প্রশ্নে।
শিক্ষক ছাত্রকে আদেশ করে ওই বই পড়োনা, ওই বইতে ভুল আছে, তুমি গোমরাহ হয়ে যাবে। ঘৃণায় পূর্ণ হয়ে যায় ছাত্রটির হৃদয়, সে জানেনা কোথায় কোথায় ভুল আছে, তবে এটুকু অন্তত বিশ্বাস করে, শিক্ষক নিশ্চই মিথ্যা বলবেননা। অদেখা ভুল এর বিশ্বাসে কেটে যায় ছাত্রটির সারাটি জীবন, তার সন্তানদেরকেও শিখিয়ে যায় ওই বই পড়োনা ওখানে ভুল আছে!

২৩মে২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment