আমার স্বপ্নগুলো

facebook link        

২০৩০সালে কোন এক ছুটির দিনের পরন্ত বিকেলে, শামীম সাহেব বৈকালিক ভ্রমনে বের হয়েছেন তার ছেলের হাত ধরে। মাঝে মাঝেই এভাবে বের হতে হয়, ভারি দুষ্টু হয়েছে ছেলেটি, এটা কেনো, ওটা কেনো সারাক্ষণ শুধু প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে ব্যস্ত রাখে সবাইকে।
ছেলের হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে হাটতে হাটতেই ফ্লাটের অদূরে মতিঝিলের শাহদাত চত্বরে এসে হাজির হলেন।
ছেলেঃ আচ্ছা আব্বু, এটার নাম শাহদাত চত্বর কেনো রাখা হয়েছে? এখানে কি আমাদের শাহদাত মামা থাকেন?
শামীম সাহেবঃ না বাবা এটা হচ্ছে বাংলাদেশের মুসলিমদের ঐক্যের প্রতীক, এখান থেকেই শুরু হয়েছে বাংলাদেশের মুসলিমদের জাগরণ।
ছেলেঃ জাগরণ কিভাবে হলো আব্বু?
শামীম সাহেবঃ সেতো অনেক লম্বা ইতিহাস, আরেকদিন বলবো। চলো তোমাকে চকলেট কিনে দেবো।
ছেলেঃ প্রিয় চকলেটে কামড় দিতে দিতে বায়না ধরলো, বলোনা আব্বু, কিভাবে জাগরণ ঘটেছিলো? প্লিজ!
শামীম সাহেবঃ আচ্ছা তাহলে শোনো, এখন আমরা যে দেশে বাস করছি এটার নাম হচ্ছে ইসলামীক রিপাব্লিক অব বাংলাদেশ। একসময় এদেশটা এমন ছিলোনা, চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই,খুন এগুলো ছিলো অহরহ ঘটনাদিনের পর দিন মানুষ না খেয়ে থাকতো, ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে যেতো কিন্তু খাবার পেতোনা। এইযে আমরা ফুটপাত দিয়ে হাটছি এখানেই অনেক মানুষ রাত্রিযাপন করতো, তাদের কোনো ঘর বাড়ি ছিলোনা।
ছেলেঃ অবাক হয়ে, বলোকি আব্বু! খলিফা তাদের খাবার দিতোনা? তাদের জন্য ঘর তৈরী করে দিতোনা? মানুষের জাকাতের টাকা দিয়ে কি করতো?
শামীম সাহেবঃ না বাবা, তখন খিলাফত ছিলোনা। মুসলমানরা পরস্পরকে অবিশ্বাস করতো। ঈমানদার মুসলিমদের মধ্যে যারা খিলাফত চাইতো তারা ছিলো বহুদলে বিভক্ত। একদল আরেকদলকে মুনাফিক বলে গালি দিতো। একদলের উপর জুলুম হলে অন্যদল খুশি হতো। এছাড়াও কিছু আলেম ছিলো যারা সরকারকে তোশামোদ করে বখশিস গ্রহণ করতো। ফলশ্রুতিতে জালিম এবং আল্লাহদ্রোহীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলো, পরিবর্তন ছিলো অধরা।
ছেলেঃ তারপর কি হলো আব্বু?
শামীম সাহেবঃ একদিন মাদ্রাসা শিক্ষকরা জানতে পারলেন, কিছু ধর্মবিদ্বেষী ব্যক্তি আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) কে অপমান করেছে, তাকে নিয়ে মিথ্যা ও বাজে কথা লিখেছে।
ছেলেঃ চোখ বড় বড় করে, আমাদের নবীকে অপমান করেছে? কত্ত বড় সাহস। ওরাতো পঁচা। ওদেরকে মারোনি কেনো আব্বু?
শামীম সাহেবঃ হ্যা বাবা, ওরা খুব খারাপ কাজ করেছিলো। কোরআন প্রেমিক আলেম ওলামারা প্রতিবাদে ফেটে পড়লো, তারা সরকারের কাছে তেরো দফা দাবী উত্তাপন করলো। ধর্ম দ্রোহীদের ফাঁসি দাবী করলো। সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস পূণঃস্থাপন করার দাবী জানালো।
ছেলেঃ সরকার নিশ্চই তাদের দাবী মেনে নিয়েছিলো, তাইনা আব্বু?
শামীম সাহেবঃ না বাবা, তখন সরকার ছিলো আওয়ামীলীগ।
ছেলেঃ ছিঃ আব্বু তুমি পঁচা কথা বলো কেনো!? আমি দাদাকে বলে দিবো তুমি আওয়ামীলীগবলেছো।
শামীম সাহেবঃ মুচকি হেসে বললেন, বাবা তোমরা যেটাকে গালি হিসেবে জানো, সেটা একটি দলের নাম ছিলো। তাদের খারাপ কাজের জন্য এখন মানুষ আওয়ামীলীগ শব্দটাকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে।
এই আওয়ামীলীগ তখন ক্ষমতায় ছিলো। তারা দাবী মেনে নেয় নাই। তারা ধর্ম বিদ্বেষীদের পক্ষ নিয়েছিলো।
ছেলেঃ তারপর কি হলো আব্বু?
শামীম সাহেবঃ একদিন দেশের সকল ইসলাম প্রিয় মানুষ এই শাহদাত স্কয়ারে সমবেত হলো। তারা ঘোষণা করলো তাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেনা। তারা রাস্তায় বসে বসে আল্লাহর জিকির করতে শুরু করলো। কেউ কেউ সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো।
ছেলেঃ তারা অনেক ভালো কাজ করেছিলো। তখন কি তুমিও এসেছিলে আব্বু?
শামীম সাহেবঃ রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে জবাব দিলেন, না বাবা আমার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা থাকার কারণে তখন আসতে পারিনাই।
ছেলেঃ তুমি কাদছো কেনো আব্বু? তবে তোমার কিন্তু আসা দরকার ছিলো। আমাদের স্যার বলেছেন, শয়তানদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরজ।
শামীম সাহেবঃ হ্যা বাবা, তবে তখন আমরা আল্লাহর নির্দেশের চেয়ে দুনিয়ার প্রয়োজনকেই বেশি গুরুত্ব দিতাম। তখনও আমরা ইসলামের শিক্ষা থেকে অনেক দূরে ছিলাম।
ছেলেঃ তারপর কি হলো আব্বু?
শামীম সাহেবঃ গভীর রাতে আওয়ামীলীগ সরকার এই শাহদাত স্কয়ারের সকল আলো নিভিয়ে দিলো, সকল সাংবাদিকদের বের করে দিলো। তারপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো নিরস্ত্র রাসূল প্রেমিক মুসলিমদের উপর। হাজার হাজার মুসলিম শহীদ হয়ে গেলো, সরকার লাশ গোপন করে ফেললো, সঠিক সংখ্যা একনো কেউ জানেনা। অসংখ্য মানুষ চিরতরে অন্ধ কিংবা পঙ্গু হয়ে গেলো বুলেটের আঘাতে।
ছেলেঃ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো, মানুষ এমন হিংস্র হয় কি করে আব্বু? তাদের কি দোষ ছিলো, তাদেরকে মারলো কেনো?
শামীম সাহেবঃ সেদিনের ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশের মুসলমানরা আত্মউপলব্ধি করতে শুরু করলো, তারা বুঝতে পারলো নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের কারণেই আজ মুসলমানরা মার খাচ্ছে। জালিম শাসক তাদের ঘারে চড়ে বসেছে। শহীদের রক্তে লাল হয়ে গেছে বাংলাদেশের মাটি।
সকল মতভেদ ভুলে ঐক্যের দাবী জোড়ালো হলো। সৃষ্টি হলো বৃহৎ ইসলামীক ঐক্য। শীষাঢালা প্রাচীরের মতো কাধে কাধ মিলিয়ে মুসলমানদের পূণঃজাগরণ সৃষ্টি হলো। আমরা পেলাম একটি ইসলামীক রাষ্ট্র, ক্ষুধা, দারীদ্র এবং জুলুম মুক্ত সমাজ। অতীতের কথা বলতে বলতে তিনি ভাবাপ্লুত হয়ে পড়লেন, চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো সেই আন্দোলন-সংগ্রামের দিনগুলো। ছেলের ডাকে তিনি সম্বিত ফিরে পেলেন।
আবার নতুন বায়না, শাহবাগের ইসলামী পূণঃজাগরণ জাদুঘর দেখবে। অগ্যতা ব্যাটারী চালিত রিক্সায় করে শাহবাগের দিকে রওয়ানা হলেন, দ্রুত যেতে হবে। মাগরীবের নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে।
ছেলেঃ শাহবাগ মোড়ের দিকে একটা স্থাপনার দিকে হাত উচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, আব্বু ওটা কি?
শামীম সাহেবঃ এখানে ধর্মদ্রোহীদের আস্তানা ছিলো, এখানে বসেই তারা দেশের আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতো। তাদের প্রতি ঘৃণার প্রতীক হিসেবে এখানে স্থাপন করা হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক টয়লেট।
নামাজের সময় হয়ে গেছে, মসজিদের নগরী ঢাকার বিভিন্ন মসজিদ হতে ভেসে আসছে হাইয়া আলাসসালাহ......
ছেলের হাত ধরে মসজিদের দিকে এগিয়ে চললেন শামীম সাহেব, চারিদিক থেকে দলে দলে মসুল্লিরা ছুটে আসছেন মসজিদ পানে, এযেনো ইসলামের সেই সোনালী যুগের দৃশ্য, ভয় শঙ্কাহীন চিত্তে প্রতিষ্ঠানের দরজা খোলা রেখেই মসজিদে আসছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে সর্বশেষ কবে চুরি হয়েছিলো সেটা মানুষ ভুলেই গিয়েছে।
ইসলামের সুশীতল আশ্রয়ে সোনায় পরিণত হয়েছে এদেশের মানুষগুলো, এটাই হচ্ছে ইসলামীক রিপাব্লিক অব বাংলাদেশ

০৭মে২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment